মানুয়েল চাম্বুগং :
“আমার ভালবাসা কিংবা প্রেম সংক্রান্ত
কোনো স্মৃতি নেই
যাকে ঠিক ভালোবাসা কিংবা প্রেম বলা যাবে।
একদিন টুকুদি নাকের ডগায় বিন্দু-বিন্দু ঘাম দেখে
বলেছিল, তোর বৌ তোকে খুব ভালবাসবে দেখিস্
সেই আমার প্রেম, সেই আমার সর্বপ্রথম কল্পনায়
রমণীর প্রথম প্রণয়। আর কোনও স্মৃতি নেই।”
কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতার এই পঙ্কতিমালাখানি বিশালের আবৃত্তি করতে ভাল লাগে। সময় পেলেই কবিতার এই লাইনগুলো সে বার-বার আবৃত্তি করে। আবৃত্তি করার সময় সে চিন্তা করে, কবি হয়তো তাকে নিয়েই এই কবিতাটি লিখেছেন। কারণ এই কবিতার নায়কের মতো তারও আজ পযর্ন্ত প্রেম কিংবা ভালবাসার কোনো স্মৃতি নেই। ভালবাসার স্মৃতি থাকবেই বা কেমন করে সে তো এখনো কোনো মেয়ের প্রেমে পড়ে নি। তবে কল্পনায় সে একটি রমণীর প্রেমে পড়েছে। যে রমণীটি তার মতো সুন্দর মনের মানুষ। এই স্বপ্ন নিয়ে সেদিন যাপন করে। কলেজে যায়, গির্জায় যায়। সবকিছু ঠিকমতো করে। তারপরও কেন জানি তার সময় কাটে না। নিজেকে একা-একা মনে হয়। তার কিছুই ভাল লাগে না। মনের অগোছালো ভাবনাগুলো সে প্রতিদিন মনের অগোচরে দু’একটি লাইন ফেসবুকের টাইমলাইনে লিখে। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। মনের কথাগুলো সে টাইমলাইনে লিখলো, “বন্ধুত্ব হয় সবার সাথেই, কিন্তু মনের মানুষ হয় শুধু একজনই। আর সেই মনের মানুষটা যদি তার মনের মতো হয়, তাহলে তো তার জীবনের আর বাকী সব মূল্যহীন।
![]() |
তুমি জয়ী হয়েছো |
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখ মুছতে-মুছতে সেলফোনটা খুলে বিশাল দেখলো টাইমলাইনে সব লেখাগুলো ও ছবিগুলোতে একটি মেয়ে লাইক দিয়েছে। মেয়েটিকে জানার কৌতুহল হয় বিশালের। মেয়েটির প্রোফাইলটা চেক করে। না মেয়েটিকে চিনে না সে। তারপরও মেয়েটিকে সে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। অপর প্রান্ত থেকে মেয়েটি সঙ্গে-সঙ্গে তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করে এসএমএস-এ লিখে জানায়, 'Thank you very much for accepting me as your friend' বিশালও সাথে-সাথে, “You are also most welcome” লিখে পাঠায়। মেয়েটি এবার বাংলায় লিখলো, “শুভ সকাল বিশাল”।
বিশাল উত্তর দিলো, “শুভ সকাল তোমাকেও, আপনার নাম কি আমি জানতে পারি?
-আমি মেলডিয়া। আপনি কোথায় পড়েন?
-নটর ডেম কলেজে, সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। আর আপনি?
-হলিক্রশ কলেজে ফার্স্ট ইয়ার। নাস্তা করার জন্য মা ডাকছে, বাই বলে মেলডিয়া মেসেন্জার বন্ধ করে দেয়।
এরপর থেকে প্রতিদিনই তাদের মেসেন্জারে বা ফোনে কিংবা ইমোতে কথা হয়। একে-অপরের সাথে নিজেদের সুখ-দুঃখের কথা সহভাগিতা করতে-করতে কখন যে তারা পরস্পর-পরস্পরকে ভালবেসে ফেলেছে, নিজেরাও বুঝতে পারল না। ভালবাসা আসলে এমনই মনে হয়; কখন যে মনের অজান্তেই একে-অপরকে ভালবেসে মন দেয়া-নেয়া হয়ে যায় কেউই বুঝতে পারে না।
একদিন মেলডিয়া ফোন করে বিশালকে হঠাৎ প্রশ্ন করে,
-ডিয়ার, তুমি কি আমাকে সত্যিই ভালবাস?
-কেন তুমি আজ এমন প্রশ্ন করছ ডিয়ার? বিশাল জানতে চাই।
-না, এমনই। তোমার মুখ থেকে কথা শুনতে ইচ্ছা করছিলো তাই।
-ও আচ্ছা! আমি তোমাকেও অনেক অনেক ভালবাসি ডিয়ার, সত্যিই। কারণ তুমি আমার মনের মতো একজন মেয়ে। আমি এতদিন তোমার মতো মেয়েকেই খুঁজেছিলাম। বিশ্বাস করো, সমুদ্রের পানি একসময় শুকিয়ে যেতে পারে কিংবা হিমালয়ের সমস্ত পবর্তমালা একদিন গলে শেষ হয়ে যেতে পারে কিন্তু তোমার প্রতি আমার ভালবাসা কখনই শেষ হবে না।
-তাই নাকি বিশাল ?
-হুম।
-বিশাল আমিও না তোমাকে অন্তর থেকে ভালবেসে ফেলেছি। একদিন তোমার সাথে কথা বলতে না পারলে আমার কিছুই ভাল লাগে না। মনগুলো কেমন জানি হয়ে যায়। হৃদয়ে শুন্যতা সৃষ্টি করে। তোমাকে না দেখতে খুব ইচ্ছা করছে। কবে তোমার সাথে দেখা করতে পারি, ডিয়ার?
- তোমাকেও বাস্তবে দেখতে আমারও অনেক ইচ্ছা করছে ডিয়ার। আগামীকাল শুক্রবার, আমার ছুটি। তোমার সময় কি হবে ?
- খুশী হয়ে মেলডিয়া উত্তর দেয়, হুম হবে, কোথায় দেখা করবো ডিয়ার?
-রমনা পার্কে যে রেস্তোরা আছে ওখানে।
-ওকে, ঠিক বিকাল ৩টায় আসতে হবে কিন্তু।
বাই বলে দুজনেই ফোন রেখে দেয়।
পরের দিন বিকাল ৩টা বাজার ঠিক পাঁচ মিনিট আগেই মেলডিয়া ও তাঁর বড় বোন মিলা রমনা পার্কের রেস্তোরা উপস্থিত। ঠিক বিকাল ৩টায় বিশাল রেস্তোরা ঢুকে দেখে মিলা চেয়ারে বসে আছে। সেখানে গিয়ে মলিকে মেলডিয়া মনে করে বিশ্বাস জিজ্ঞেস করলো, কতক্ষণ হলো এখানে আসা? মিলা উত্তর দেয়, এই তো কিছুক্ষণ আগে। বিশাল মিলার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো, তুমি দেখতে এত সুন্দরী আমি আগে কখনোই কল্পনা করেনি। আসলে ডিয়ার তোমার অন্তর-বাহির দুটোই সুন্দর। তার এই মন গড়া কথা শুনে মিলা মিটমিটিয়ে হাসে। তার হাসি দেখার সময় বিশাল হঠাৎ লক্ষ্য করে তার মনের মানুষ মেলডিয়া উইল চেয়ারে বসে আছে। বিশাল বিষ্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো, এ-কি করে হলো তোমার? মিলা বললো, ছয়মাস আগে নয়াপল্টনে ফুটপাথ দিয়ে হাঁটার সময় একটি ককটেল বিষ্ফোরণে আমার একটি পা পুড়ে যায়। বিশাল অন্তরে কষ্ট চেপে-রেখে মনে-মনে বলে, যাকে আমি জীবনে প্রথম ভালবেসেছি, তাকে আমি হারাতে চাই না। বিশাল তার ব্যাগ থেকে একটি লাল টুকটুকে গোলাপ ফুল বের করে মিলার দিকে বাড়িয়ে বললো, I Love You, মেলডিয়া। তখন মিলা হো...হো...করে হাসতে-হাসতে বললো, আমি তো মেলডিয়া নয়, আমি মেলডিয়ার জমজ বোন মিলা। ঐ মুর্হূতেই মেলডিয়া আইসক্রিম নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়। বিশাল অবাক হয়ে একবার মেলডিয়ার দিকে, আর একবার মিলার দিকে ফ্যাল-ফ্যাল করে তাকায়। মেলডিয়া বললো, ডিয়ার বিশাল, আমি তোমাকে পরীক্ষা করে দেখার জন্য এখানে এনেছিলাম। তুমি তাতে জয়ী হয়েছ।