দুই হাজার টাকা

সংগ্রামী মানব 

অরুণ সাহেব পেশায় একজন দিনমজুর। তিন সন্তানের জনক সে। স্ত্রী কনক একজন সহজ-সরল মনের মানুষ। সন্তানদের মধ্যে বড় দুই ছেলে জীবন ও জনি আর সবার ছোট মেয়ে স্নেহা। অরুণ সাহেব কাজে গেলে পরিবারের সবাই খেতে পায় নতুবা সবাইকে না খেয়েই থাকতে হয়। তাদের পারিবারিক জীবন ভালোই যাচ্ছিল। অভাব অনটন থাকা সত্ত্বেও তারা সুখী ছিল। বড় ছেলে জীবন একটি ছোটখাট চাকরি শুরু করেছে তবে পারিশ্রমিক খুবই সামান্য। জনি ও  স্নেহা পড়াশুনা করছে। অভাব অনটনের বশবর্তী হয়ে জীবন লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়েছে। কোনক্রমে সে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। মেধাবৃত্তির দিক দিয়ে জীবন, জনি ও স্নেহার মেধা খুবই প্রখর। অর্থের অভাবে অন্যের সাহায্য নিয়ে তাদেরকে লেখাপড়া চালিয়ে নিতে হচ্ছে। 



অতপর কোন একদিন অরুণ সাহেবের স্ত্রী কনকের দুই হাজার টাকার প্রয়োজন হল। কনক তার স্বামীকে দুই হাজার টাকার ব্যবস্থা করতে বলল। অরুণ সাহেব জানতে চাইলো টাকা কেন লাগবে? কনক বলল, তার পিসিমা হাসপাতালে ভর্তি, তাকে সে দেখতে যাবে ও কিছু খাবার নিয়ে যাবে। কনক আরও বলল, তার পিসিমা তাকে দেখতে চেয়েছে। অরুণ সাহেব বলল, দেখি কি করা যায়। এমতাবস্থায় অরুণ সাহেবের কাছে একটি টাকাও ছিল না। সে বিভিন্ন জায়গায় গেল টাকা যোগাড় করেতে কিন্তু কেউ তাকে সাহায্য করল না। কনকও বিভিন্ন মানুষের দ্বারে-দ্বারে ঘুরল কিন্তু মানুষ তাকে তিরষ্কার করল, টাকা দেওয়ার পরিবর্তে তাকে অপমান করল। তারা এখন নিরুপায়। কোন কূল-কিনারা পাচ্ছে না যে কিভাবে দুই হাজার টাকা যোগাড় করবে। কেউই তাদেরকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসল না। সুসময়ের বন্ধুরা তাদেরকে দূর-দূর করল। অতপর কনক পরিকল্পনা করল আগামীকাল সোমবার সে তার পিসিমাকে দেখতে যাবে। অরুণ সাহেব বলল, ঠিক আছে তুমি কালই যাবে। কিন্তু সে এখনও টাকা যোগাড় করতে পারেনি। কোন উপায়ন্তুর না পেয়ে অরুণ সাহেক স্থানীয় একটি হাসপাতালে চলে গেল। নিজ দেহের রক্ত বিক্রি করল। সর্বমোট সে এক ব্যাগ রক্ত বিক্রি করতে পারল যার বিনিময়ে সে আঠারশ টাকা পেল। সেই টাকা নিয়ে এসে কনককে দিয়ে বলল, নাও এই টাকায় তোমার হয়ে যাবে। কনক, আনন্দে কাঁদতে লাগল। কনক সময় গুনছে। আগামীকালের অপেক্ষায় রয়েছে। অসুস্থ পিসিমাকে দেখতে যাবে। কনকের আনন্দে অজস্র অশ্রু নিগর্ত হচ্ছে। কনক কাজে ব্যস্ত তখন হঠাৎই তার ফোনটা বেঁজে উঠল। ওপার থেকে আওয়াজ আসল তোমার পিসিমা আর নেই। কনকের হাত থেকে ফোনটি পরে গেল। চোখের পানি অঝরে ঝড়তে লাগল। চোখাশ্রুতে ঐ দুই হাজার টাকা তছনছ হয়ে গেল। অতপর ছোট মেয়ে স্নেহা কেঁদে-কেঁদে বলতে লাগল, এই দুই হাজার টাকার জন্যে আজ আমার মা তার পিসিমাকে শেষ দেখাও দেখতে পেল না। টাকা, তোর কেনই বা জন্ম হল? 


[  জীবন ও সমাজে  পাঠাতে পারেন আপনার অর্থপূর্ণ লেখা। 

লেখা পাঠানোর ঠিকানা : jibonoshomaj@gmail.com ]









Post a Comment

Previous Post Next Post