সবারে বাসরে ভাল

রবীন ভাবুক বিরক্তির তো শ্বাশত রূপ। কখনো দাঁত কপাটি খুলেও হাসে। কখনো প্রেমও বিলায়। এই প্রেম বিরক্তির অভিজ্ঞতা নিতে বেশি দূর যেতে হবে না। ঝঞ্ঝাটময় রসের শহরে এটা সহজেই অভিজ্ঞতা করে নেওয়া যায়। ছেলে কি মেয়ে, এমনকি প্রাইভেটকার মালিকরাও চাইলে স্বাদটা নিয়ে দেখা যেতে পারে। তা মেট্রোরেলের সুখবরে হোক বা নিরাপদ সড়ক আন্দলনের মুখেই হোক। কর্মময় অফিস শেষে বাস স্টপিসে দাঁড়ালে বাসায় ফিরে শান্তির লেবুর শরবতের প্রশান্তি আগেই ঘুম পড়ানির গান শুনিয়ে দেয়।

শান্ত মনে স্টপিসে দাঁড়িয়ে কাঙ্ক্ষিত বাসটির জন্য অপেক্ষা। স্টপেজে সবার মনে শান্তি। বাসায় ফিরে লেবুর শরবত। দূর থেকে দেখা গেল বাসটি আসছে। গন্তব্যগামী যাত্রীগুলোর হাত-পা শক্ত হয়ে গেল, ভ্রু কুচকে, দাঁত-কপাটি কিট্মিট্ করে, চোয়াল শক্ত করে রণে নামার প্রস্তুতি। শুরু হয়ে গেল বাসে ওঠার লড়াই। কেউ আছে বাদুর ঝোলা হয়ে, কেউ রণে ভঙ্গ দিয়ে এক পা তুলে শান্তির শহরে শাস্তিভোগ করছে।





পড়ি তো মরি পেছনেই উঠলো এক মহিলা। ‘ভাই মহিলাদের ইজ্জত দিতে শিখুন’ পাশের সিটে বসে থাকা আধবোজা লোকটির ভাবের উদয় হলো। বলেই ফেললো, ভাই বাসায় কি মা-বোন নেই? এরা মায়ের জাত। সম্মানটুকু দিন। ব্যাস হয়ে গেল একরাশ প্রেম বিলানো। দমফাটানো বিরক্তির মাঝেও প্রেম বিলানো হলো।

খিস্তিখের শেষে পড়ি তো মরি বাসে এক পায়ে দাঁড়ানো জায়গাটা হলো। কন্ডাক্টর তো তখন ভগবান নমস্য। সামনে আসতেই সবাই জায়গা ছেড়ে দেয় ভাড়া আদায়ের জন্য। পথে কিছুটা বাকযুদ্ধ চলে দু-একটা দুপেয় লজিস্টিকের সাথে। কানে বাজে সুমধুর প্রেমময় গান। এই জাদুর শহরে কত কিছুই তো পাওয়া যায়।

বহু কষ্টে পাশে দাঁড়ানো মহিলার ভিমরুলের চাকের মতো খোঁপা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা। ব্রেক কসলো তো সামনে-পেছনে। ড্রাইভার সাহেবেরও প্রেম বিলানোর বদান্যতা। পাশে থাকা আধপাঁকা লোকটির হক, মুরব্বিদের সম্মান করতে জান না? বেহায়া পা এই সুযোগে কখন যে মুরব্বির পায়ে গিয়ে লুটিয়ে পড়েছে, তার খেয়াল নেই। এতকিছুর পরও চোখে-মুখে বাসায় ফিরে লেবুর শরবতের ঠান্ডা স্বাদ। আপন মনে বেজে ওঠে, মেরেছ কলসির কানা, তাই বলে কি প্রেম দিব না।’

বাসের সামনে-পেছনে দুলুনির পরে আরে তোর বাসায় কি মা-বোন নেই বলেই মহিলাটি ফিরে তাকায়, এরপর আর কারো মুখে কথা নেই। আরে তুমি! হয়তো স্বামী, নাহলে পুরানো প্রণয় বা অন্য কোনো পরিচিত মুখ। খিস্তি শেষে যখন দুজনে হাত ধরে রাস্তায় নামে, তখন প্রেমের চেয়ে আর বড় মধুর কিইবা হতে পারে। তখন শুধু তুমি আর আমি। মোরা ভোরের বেলায় ফুল তুলেছি, দুলেছি দোলায়...! বিরক্তি গেল জবুথবু হয়ে গলে।  

রসময় ব্যস্ত শহরে হোক না একটু বাড়াবাড়ি খিস্তিখের। তবুও মানুষ স্বপ্ন খোঁজে, স্বপ্ন গড়ে। মানুষের জন্য মানুষের মাঝে মনটা যে বড় কাঁদে। ইট-পাথরের শক্ত দেয়ালের ফাঁকে এখনো মানুষ নামে লাখো মানুষ ঘোরে। প্রেম বিলায়, প্রেম জাগায়। সবারে বাসরে ভাল, সেই জানে॥


জীবন ও সমাজে  পাঠাতে পারেন আপনার অর্থপূর্ণ লেখা। 

লেখা পাঠানোর ঠিকানা : jibonoshomaj@gmail.com ]

Post a Comment

Previous Post Next Post