এক ভাঙ্গারিওয়ালার অবাক চাহুনি

সংগ্রামী মানব : প্রতিদিনকার ন্যায় খেলাধুলা শেষ করে সাইকেল চালাচ্ছিলাম। একবার এদিকে যাই আরেকবার ওদিকে। বেশ কয়েকবার এই রকম করার পর আমি উপর থেকে ডাঁক শুনতে পেলাম। কেউ আমায় ডাঁকছে। আমি ঘুরে তাকাতেই দেখি মাসি আমাকে ডাঁকছে। আমি মাথা নেঁড়ে প্রশ্ন করলাম কি হল? মাসি বলল, আবর্জনার ব্যাগ ভর্তি হয়ে গেছে সেটা পরিষ্কার করতে হবে। আমি বললাম, ঠিক আছে আসছি। আমি সাইকেল রেখে চলে গেলাম মাসির কাছে। আমি বললাম, কোথায়? মাসি বলল, ঐ যে। আমি দেখতে পেলাম একটি ব্যাগ আবর্জনাতে পূর্ণ। আমি আর কথা বাড়ালাম না, ব্যাগ নিয়ে সোঁজা চলে গেলাম সাইকেলের কাছে। তদুপরী আমি সাইকেলে উঠে বসলাম। ময়লার ব্যাগটি বা হাতে চেপে ধরে, ডান হাতে সাইকেলের হাঁতল ধরে প্যাডেল ঘুরাতে লাগলাম। মিনিট দেড়েকের মাথায় ডাস্টবিনের সন্নিকটে চলে এলাম। হঠাৎই ব্যাগের বাঁধনটি খুলে গেল। আমি বুঝতে পারলাম ময়লাগুলো পড়ে যাওয়ার উপক্রম হল। তাৎক্ষণাত আমি সাইকেলের ব্রেক চেপে ধরলাম। সাইকেল থেমে গেল। আমি সাইকেল থেকে নেমে পুনরায় ব্যাগটি বাঁধতে লাগলাম। আর তখনই আমার চোখে পড়ল একজন বৃদ্ধ মানুষ একটি ভ্যান গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটিকে দেখে আমার কেমন যেন মায়া হল। উষ্ক-খুশকো চুল, শার্টটিতে অসংখ্য তিল পড়ে গেছে, লুঙ্গিটি যায় যায় উপক্রম। ভ্যান গাড়িতে চোখ পরতেই দেখতে পেলাম কিছু কাগজের ব্যাগ ও কিছু পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের দ্রব্যাদি। মনে হল লোকটি ওগুলো সংগ্রহ করছে। আমার ধারণা সত্যি হল। লোকটির দিকে পুনরায় তাকাতে সে হেঁটে আমার কাছে চলে এলো। বৃদ্ধ মানুষটি বলল, তোমার ঐ ব্যাগটা আমাকে দাও? আমি সঙ্গে সঙ্গে ব্যাগটি দিয়ে দিলাম। আমি দেখতে পেলাম, মানুষটি সেই ব্যাগ থেকে বিক্রি করা যায় এমন জিনিস সংগ্রহ করছে। আমি হতবাক হয়ে মানুষটিকে দেখছিলাম। পাশে থাকা একটি পরিত্যক্ত বালতি দেখতে পেয়ে আমি বৃদ্ধ মানুষটিকে দিয়ে বললাম, এই নিন। তিনি  আমায় বলল, ধন্যবাদ। 



আমি এই গরীব মানুষটির সরলতা দেখে বিমুগ্ধ হলাম। তখন নিজেকে দোষী মনে হচ্ছিল। আমি যে কিনা নতুন পোশাক কেটে নেঁকড়া তৈরি করি, প্রয়োজনের তুলনায় অধিক জিনিস ব্যবহার করি, প্রতিদিন অন্ন নষ্ট করি আজ আমারই জন্যে ঐ মানুষটার অমন দশা। আমি দুঃখ পেলাম। নীরবে কাঁদতে লাগলাম। আজকে সে হয়তোবা ভাঙ্গারি বিক্রি করে কিছু খেতে পারবে কিন্তু কাল, পরশু, সে কী খাবে ! আদৌ কি সে ভাঙ্গারি সংগ্রহ করতে পারবে নাকি জীবনের ইতি টানবে? সে কীভাবে বাঁচবে? কে তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে?। আদৌ কি এই রকম মানুষ পৃথিবীতে আরো রয়েছে? প্রশ্ন থেকেই যায়। 

[  জীবন ও সমাজে  পাঠাতে পারেন আপনার অর্থপূর্ণ লেখা। 

লেখা পাঠানোর ঠিকানা : jibonoshomaj@gmail.com ]


Post a Comment

Previous Post Next Post