ক্যাথলিকদের বিশ্ব যুব দিবস

লেখক : জ্যাষ্টিন গোমেজ


বিশ্ব যুব দিবস হলো ক্যাথলিক মণ্ডলীর একটি যুব উৎসব যা সারা বিশ্বের যুবাদের একত্রিত করে তাদের বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিকতা চর্চা করতে। তাই তো এই যুব উৎসবে মণ্ডলীর নবারুণরা সুযোগ পায় একত্রিত হওয়ার, ঈশ্বরের আরাধনা করার এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে নিজেদের বিশ্বাস অনুধাবন করার। অংশগ্রহণকারীদের উৎসাহিত করা হয় খ্রিস্ট বিশ্বাসকে আরো গভীরভাবে উপলব্ধি করার জন্য।  

বিশ্ব যুব দিবস মূলত প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। যুব দিবসের প্রধান কার্যক্রমগুলোর মধ্যে প্রার্থনা, খ্রিস্টযাগ, আরাধনা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কার্যক্রম।  এছাড়াও এই যুব দিবসের মূল আকর্ষণ হলো, ক্যাথলিকদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ যুবাদের সাথে মিলিত হন।  তাদের সাথে একত্রিত হন। খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন এবং বানী সহভাগিতা করেন।  

বিশ্ব যুব দিবসের ইতিহাস

১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে তালপত্র রবিবারে সর্বপ্রথম পোপ ২য় জন পল যুব দিবস উদযাপনের ব্যবস্থা নেন ইতালিতে। তারপর ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে ফিলিপিনে অনুষ্ঠিত যুব দিবসে রেকর্ড সংখ্যক যুবাদের উপস্থিতি ছিলো।  পরিসংখ্যান মতে ৫ মিলিয়ন যুবাদের উপস্থিতি ছিলো সমাপনী খ্রিস্টযাগে। তার ঠিক ২০ বছর পর আবারো ফিলিপিনে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে পূন্যপিতার সমপনী খ্রিস্টযাগে ৬ মিলিয়নে রেকর্ড উত্তীর্ণ হয়।  

ক্যাথলিকদের বিশ্ব যুব দিবস



বিশ্ব যুব দিবসের সংখ্যা হিসেব করলে এখন পর্যন্ত ১১ টি বিশ্ব যুব দিবস উদযাপিত হয়েছে।  


১. প্রথম বিশ্ব যুব দিবস উদযাপিত হয়েছিল ১৯৮৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর, রোমের ইতালিতে। দিনটি ছিলো তালপত্র রবিবার।  উক্ত যুব দিবসে পুন্য পিতা জন পল ২য় এর সাথে প্রায় ৩ লক্ষাধিক যুবাদের সম্মেলন হয়েছিল সেন্ট পিটারস স্কয়ারে।  


২. ২য় যুব দিবস উদযাপিত হয় ফিলিপিনের ম্যানিলায় ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে। ২য় এই যুব দিবসে পরবর্তী ২০ বছর পর্যন্ত রেকর্ড সংখ্যক অর্থাৎ ৫ মিলিয়ন যুবার অংশগ্রহণ হয়।  

৩. তৃতীয় যুব দিবসটি উদযাপিত হয় জুবিলী বছরে। অর্থাৎ ২০০০ সালে। পোপ ২য় জন পলের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সবায় রোমে যায় এই যুব দিবস উৎযাপন করতে। এই যুব দিবসে পোপ ২য় জন পল যুবাদের কাছে অর্পণ করেন জুবিলী ক্রুশ যা তিনি তৃতীয় সহস্রাব্দের ক্রুশ বলে পরিচিত দেন।  


৪. চতুর্থ যুব দিবস উদযাপন হয় ২০০২ সালে কানাডার টরেন্টোতে। এই যুব দিবসে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই সময় পোপ ২য় জন পল শারীরিকভাবে ভীষণ দুর্বল ছিলেন।  তারপরও তিনি যুব দিবসে অংশ গ্রহণ করেন।  

৫. ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে জার্মানিতে ৫ম যুব দিবস উদযাপিত হয়। উল্লেখ্য ২০০৫ সালে পোপ ২য় জন পল গত হয়ে যান। পরবর্তী পোপ, পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট এই প্রথা অব্যাহত রাখেন।  


৬. ৬ষ্ঠ যুব দিবস উদযাপিত হয় ২০০৮ খ্রিস্টাব্দের অস্ট্রেলিয়ার সিডনীতে।  এই সময় ছিলেন পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট।  


৭. ৭ম যুব দিবস উদযাপিত হয় ২০১১ খ্রিস্টাব্দে। স্থান ছিলো স্পেন এর মাদ্রিদে।  এই সময়ও ছিলেন পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট।  

৮. ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে ৮ম যুব দিবস উদযাপিত হয় ব্রাজিলে। এই সময় উপস্থিত থাকেন পোপ ফ্রান্সিস।  


৯. ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে ৯ম যুব দিবস উদযাপিত হয় পোল্যান্ডে।  এই সময় উপস্থিত থাকেন পোপ ফ্রান্সিস।  


১০. ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বের ১০ম যুব দিবস উদযাপিত হয় পানামায়।  এই সময় উপস্থিত থাকেন পোপ ফ্রান্সিস।  

১১. এখন পর্যন্ত সর্বশেষ এবং একাদশ-তম যুব দিবসটি উদযাপন হয় পর্তুগালের লিসবনে।  এই সময়ও উপস্থিত থাকেন পোপ ফ্রান্সিস।  


১২. পরবর্তী যুব দিবস উদযাপিত হবে ২০২৭ খ্রিস্টাব্দে কোরিয়ায়। 

বিশ্ব যুব দিবস এবং ক্রুশ বহন


বিশ্ব যুব দিবসের অন্যতম একটি আকর্ষণ হলো ক্রুশ বহন।  আর বিভিন্ন বিশ্ব যুব দিবসে ক্রুশের বিভিন্ন নাম দেয়া হয়।  যেমন জুবিলী ক্রুশ, তীর্থযাত্রী ক্রুশ এবং যুব ক্রুশ।  এই ক্রুশ যুবাদের কাছে অর্পণ করা হয় আর বলা হয়, খ্রিষ্টের ভালবাসার প্রতীক হিসাবে এই ক্রুশ সারা বিশ্বে বহন করো এবং সকলের কাছে ঘোষণা করো যে শুধুমাত্র খ্রিষ্টের মৃত্যু এবং পুনরুত্থানে আমরা পরিত্রাণ এবং মুক্তি পেতে পারি। আর তাই তো যুবারা এই ক্রুশ নিয়ে তীর্থযাত্রা করছে প্যারিস থেকে প্যারিসে, ধর্মপ্রদেশ থেকে ধর্মপ্রদেশে এবং দেশ থেকে দেশান্তর পর্যন্ত।  

বিশ্ব যুব দিবস ২০২৩


এখন পর্যন্ত বিশ্বের সর্বশেষ যুব দিবস অনুষ্ঠিত হয় ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে।  পর্তুগালের লিসবনে আগস্টের ১-৬ তারিখ পর্যন্ত এই যুব দিবস উদযাপিত হয়। এবারের যুব দিবসে পোপ ফ্রান্সিস তার সহভাগিতায় বলেন ক্যাথলিক মণ্ডলী সবার জন্য উন্মুক্ত। প্রায় ১.৫ মিলিয়ন মানুষ অংশগ্রহণ করেন এই এই যুব দিবসে। খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন করেছেন অংশগ্রহণকারীরা। পোপ মহোদয়কে দেখার জন্য ৮ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষায় থেকেছেন তাকে একবার স্পর্শ করার জন্য।  

বিশ্ব যুব দিবস


বিশ্ব যুব দিবস শুধু মাত্র একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়। এটি বিশ্বব্যাপী যুবাদের মিলন মেলা, যেখানে তারা তাদের বিশ্বাস সহভাগিতা করে, একে অপরের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারে, আরো বেশী সামাজিক হতে সাহায্য করে, একে অপরের সাথে বন্ধুত্ব করতে পারে। এই বিশ্ব যুব দিবস ক্যাথলিক যুবাদের বিশ্বাসের যাত্রায় অনুপ্রাণিত করে। তাই তো প্রতি বিশ্ব যুব দিবসে সারা বিশ্ব থেকে যুবারা আসে একত্রিত হতে ও নিজেদের বিশ্বাস সহভাগিতা করতে। তাই তো  নিজেদের বিশ্বাসকে গভীর করার এবং খ্রিষ্টের কাছাকাছি হওয়ার জন্য, প্রার্থনা এবং ধর্মানুষ্ঠানের মাধ্যমে যুবারা মণ্ডলীর সাথে এক প্রাণ হয়ে উঠে।  

লেখক : জ্যাষ্টিন গোমেজ

justingomes80@gmail.com 


[জীবন ও সমাজে- পাঠাতে পারেন আপনারও বস্তুনিষ্ঠ লেখা প্রবন্ধ, গল্প ও ফিচার। 
লেখা পাঠানোর ঠিকানা : jibonoshomaj@gmail.com ] 




Post a Comment

Previous Post Next Post