মণিপুরের সহিংসতায় উত্তপ্ত গোটা ভারত

ভারতের মণিপুর এখন আসলে দু টুকরো হয়ে গেছে, যার একটা অংশে আছেন মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষ, অন্য অংশে রয়েছেন কুকিরা। মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষ কুকিদের এলাকায় জমি কিনতে পারেন না, তাই তারা উপজাতির মর্যাদা চাইছেন। স্পষ্টতই, সমস্যাটা জমির অধিকারের। আটাশ লক্ষ জনসংখ্যার অধিকাংশই মেইতেই, যারা উপত্যকা অঞ্চলে বাস করেন। আর কুকি সম্প্রদায়ের আদি বাসস্থান ছিল চারটি পার্বত্য জেলায়।


ইতিহাসের সামান্য একটু নেপথ্যে গেলে দেখা যায়, অন্তত ২০১২ সাল থেকে মেইতেইদের তফসিলি উপজাতি দাবির সমর্থনে একটি সংগঠিত চেষ্টা চলছে মণিপুরে। এই দাবির পিছনে রয়েছে মেইতেইদের সংগঠন, মণিপুরের তফসিলি উপজাতি দাবি কমিটি (এসটিডিসিএম)। মণিপুর হাইকোর্টের সামনে কমিটির সাম্প্রতিক আবেদনটি ছিল, মেইটিস বা মেইতেইদের যাতে উপজাতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ভারতীয় সংবিধানের তফসিলি উপজাতির তালিকায় যাতে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কেন্দ্রীয় তফসিলি উপজাতি মন্ত্রকের কাছে যেন এমনই আবেদন জানায় মণিপুর সরকার। কারণ, মণিপুর সরকারের সেই সুপারিশ পাওয়ার পরই কেন্দ্রীয় সরকার মেইতেইদের উপজাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে।


এই সহিংসতা এক, দুই বা চারদিনের নয়, টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে চলছে। পরিবার ধ্বংস হয়েছে, বাড়িঘর জ্বলে পুড়ে গেছে, উজাড় হয়ে গেছে গ্রাম-গঞ্জ।


যে ধরনের ফাটল দেখা যাচ্ছে মণিপুরী সমাজে, তা দীর্ঘমেয়াদের জন্যই থেকে যাবে বলেই মনে হচ্ছে।


তাই তো এখন থেকে ৫০ দিন ধরে জ্বলছে ভারতের মণিপুর। তার সঙ্গেই জ্বলছে উত্তরপূর্বাঞ্চলের এই রাজ্যটির শত শত বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য। মণিপুরের এই ইস্যু এখন পুরো ভারত জুড়ে সমালোচনার ঝড় তুলেছে। মণিপুরে বিবস্ত্র করে দুই নারীকে হাঁটানো এবং তাঁদের সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় স্থানীয় নারীসমাজ ব্যাপকভাবে ক্ষুব্ধ। এই ঘটনা গোটা ভারতের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক।

 

তাই তো জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে একটা স্বপ্ন, যেখানে মেইতেই, কুকি আর নাগা সম্প্রদায়ের মানুষরা পুরনো দ্বন্দ্ব মুছে ফেলে একসঙ্গে থাকতে পারত। আজ পারস্পরিক বিশ্বাস ঠেকেছে একদম তলানিতে, বেড়েছে হতাশা।


তারই ফল হল মণিপুরে জাতিগত সহিংসতা শুরু হওয়ার দেড় মাসেরও বেশি সময় হয়ে গেছে, কিন্তু পরিস্থিতি এখনও উত্তেজনাপূর্ণ।


মেইতেই এবং কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে চলমান এই সহিংসতায় এখন পর্যন্ত প্রাণ গিয়েছে শতাধিত মানুষের। এবং আহত হয়েছেন ৩৯০ জন যার সংখ্যা বাড়ছে। তবুও সহিংসতা থামছে না, বাঁধ ভাঙ্গছে স্থানীয় মানুষের ধৈর্যের। আর স্থানীয় মানুষের মুখে শান্তির আকুতি। তারা বলছেন, “এখানে আমাদের জীবন বিপন্ন। কখন কি হবে, কে মরবে, কেউ জানে না। 


[জীবন ও সমাজে- পাঠাতে পারেন আপনারও বস্তুনিষ্ঠ লেখা প্রবন্ধ, গল্প ও ফিচার। 
লেখা পাঠানোর ঠিকানা : jibonoshomaj@gmail.com ] 





Post a Comment

Previous Post Next Post