গল্পকার খোকন কোড়ায়া

জাসিন্তা আরেং : গল্পকার খোকন কোড়ায়া। একজন সফল লেখক ও গল্পকার হিসেবে বেশ পরিচিত রয়েছে তার। শুধু কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প নয় বরং সকল ক্ষেত্রেই তার বিচরণ প্রশংসনীয়। একাধারে তিনি পাঠক মহলে ও খ্রিস্টান সমাজে পরিচিত এক তারকার নাম। নিখুঁত এক সৃজনশীলতার শিখরে নিজেকে আসীন করেছেন, জয় করেছেন শত পাঠকদের মন। সেই সাথে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সমাজে এবং এগিয়ে যাচ্ছেন সফলতার সাথে। বর্তমানে অনেক সম্ভাবনাময় ও উদীয়মান তরুণ লেখক-লেখিকাদের কাছে তিনি অনুপ্রেরণার উৎস। ‘জীবন ও সমাজ’-এর পাঠকদের জন্য তার সফল গল্পকার ও প্রেরণাদায়ক ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠার পেছনের গল্পটি সাক্ষাৎকারের মধ্যদিয়ে। সাক্ষাৎকারটি সম্পাদনা করেছেন জাসিন্তা আরেং।  

গল্পকার খোকন কোড়ায়া


লেখক তার ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত একটি পরিচিতিতে বলেন, আমার সম্পূর্ণ নাম ভিনসেন্ট খোকন কোড়ায়া। জন্ম ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার পুরাণ তুইতাল গ্রামে। পিতা- প্রয়াত আন্তনী কোড়ায়া, মাতা- প্রয়াত খ্রীষ্টিনা কোড়ায়া। ছায়া সুনিবিড়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা গ্রামে কেটেছে শৈশব ও কৈশোর। বন্ধুদের সঙ্গে ঘুড়ি উড়িয়ে, মাছ ধরে এবং ডাংগুলি ও মার্বেল খেলতে-খেলতে কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পদার্পণ। বান্দুরা হলিক্রস হাইস্কুল থেকে এসএসসি, আনন্দমোহন কলেজ ময়মনসিংহ থেকে এইচএসসি এবং তেজগাঁও কলেজ থেকে বিকম পাশ করেছি। প্রেস ম্যানেজার হিসেবে চাকুরি জীবন শুরু। এরপর নিজেই মুদ্রণ ব্যবসা শুরু করেছি এবং অদ্যাবধি যুক্ত আছি সেই ব্যবসার সঙ্গেই। ১৯৮৬ খ্রীষ্টাব্দে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি  মিলরেড রোজলীনের সঙ্গে। তিন কন্যা সন্তানের জনক- খ্রীষ্টিনা, জেনিফার নওরিন ও সুজানা প্রকৃতি। বড় মেয়ে খ্রীষ্টিনা বিবাহিত, স্বামী এবং কন্যা সন্তানকে নিয়ে সে আমেরিকার মেরিল্যাণ্ড অঙ্গরাজ্যে বসবাস করছে। মেজো মেয়ে জেনিফার নওরিন একজন বিশেষ সন্তান (অটিস্টিক), আর ছোট মেয়ে প্রকৃতি গ্রীণহেরাল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে ও লেভেল পাশ করে এখন এ লেভেলে পড়ছে। 

লেখালেখির হাতেখড়ি সম্পর্কে তিনি বলেন যে, লেখক হবো এরকম কোন স্বপ্ন বা ইচ্ছা ছোটবেলায় আমার ছিলো না। তখন গায়ক হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। স্বাধীনতার পরে আমাদের আঠারোগ্রাম এলাকায় একটা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল গড়ে ওঠে। গান পাগল হয়ে ওঠে সবাই। তখন ভারতীয় শিল্পী লতা মঙ্গেশকর, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, শ্যামল মিত্র, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এবং আরও অনেক জনপ্রিয় শিল্পীর ভক্ত ছিলো সবাই। আমাদের এলাকার অনেক মানুষই তখন মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি করতো। তারা বিদেশ থেকে আসার সময় টুইনওয়ান কিনে নিয়ে আসতো। টুইনওয়ান মানে একসঙ্গে রেডিও এবং ক্যাসেট প্লেয়ার। তো ঐ ক্যাসেট প্লেয়ারে গান শুনতো সবাই। শুধু শুনতো না, অনেক ছেলে এবং কিছু মেয়েরাও হারমোনিয়াম বাজিয়ে ঐ গানগুলি গাওয়ার চেষ্টা করতো এবং অনেকে ভালো গাইতে পারতো। আধুনিক গানের পাশাপাশি তারা রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুল গীতি, লালন গীতি, পল্লীগীতিও গাইতো। আমারও তখন শখ চাপে আমিও গান গাবো, হারমোনিয়াম বাজানো শিখবো, তবলা বাজানো শিখবো। আমার হারমোনিয়াম ও তবলা কোনটাই ছিলো না। তবে, আমাদের যুব সংগঠন “সেন্ট যোসেফস্ ক্লাবে’র হারমোনিয়াম, তবলা ছিলো। সপ্তাহে দু‘দিন সেই হারমোনিয়াম তবলা বাজানোর সুযোগ দেয়া হতো ক্লাবের সব সদস্যদের। ঐ দুই দিনের জন্য অধীর অপেক্ষায় থাকতাম এবং নির্দিষ্ট দিন দুটিতে সবার আগে গিয়ে বসে থাকতাম ক্লাবের প্রেসিডেন্টের বাড়ির দুয়ারে, যেখানে শীতল পাটির উপর হারমোনিয়াম, তবলা রাখা হতো সবার বাজানোর জন্য। তবে, সুযোগ মিলতো একটু দেরিতে, যখন সিনিয়র ভাইদের বাজানো শেষ হতো। অন্যদের বাজানো দেখে এবং দু-একজন দাদার কাছে তালিম নিয়ে হারমোনিয়াম, তবলা দুটোই আয়ত্বে এনে ফেললাম এবং অল্প দিনের মধ্যেই কয়েকটি গানও তুলে ফেললাম হারমোনিয়ামে। আমি অবশ্য বেশি গাইতাম নজরুলগীতি এবং কিছু চটুল গান। হারিয়ে যাওয়া সেই চটুল গানগুলি ছিলো এরকম “ওকে সে হোক না কালো আমার ভালো চোখে লেগেছে”, ভজ গুরু নিরঞ্জন, তাস খেলাটি শিখা লওরে মন”, “বাশপাতা কলমীলতা অনেক জলে ভাসে”। তখন আমার গাওয়া ঐ চটুল গানগুলি না হলে গ্রামের ধোয়ানী রাতসহ কোন ধরণের জলসাই জমতো না। আমাদের পাশের গ্রামে ছিলো নাম কীর্তনের একটি দল, যারা “হরে কৃষ্ণ, হরে রাম” বলে রাম কৃষ্ণের বন্দনা গীতি গাইতো। তো সেই দলে আমার চেয়ে কয়েক বছরের বড় একটি ছেলে খোল বাজাতো। এত সুন্দর সে বাজাতো যে আমি তার ভক্ত হয়ে গেলাম। কিছুদিন পর শুনতে পেলাম সে ভারত চলে যাবে। তখন আমি প্রস্তাব দিলাম সে যেন তার খোলটি আমার কাছে বিক্রি করে যায়, সে খুশি মনেই খোলটি আমার কাছে বিক্রি করে দিয়ে গিয়েছিলো। এরপর থেকে আমি খোল বাজাতে শুরু করি এবং একসময় বেশ ভালোই রপ্ত করে ফেলি। এরপর গ্রামে কোন গানের জলসা হলেই আমার ডাক আসতো খোল বাজানোর জন্য। আর বড়দিনের সময় কীর্তনের সঙ্গে আমার খোল বাজানো ছিলো অপরিহার্য।

লেখক হবার স্বপ্ন না দেখলেও আমি ছোটবেলা থেকেই ভালো পাঠক ছিলাম। ‍বিষয়টি আমি পেয়েছি, আমার মায়ের কাছ থেকে। আমার মা-ও একজন ভালো পাঠক ছিলেন। শুধু বই নয়, ছাপানো যা কিছুই তিনি দেখতেন; পড়ে ফেলতেন, এমন কি কাগজের ঠোঙ্গা হলেও। ছোটবেলায় মায়ের সঙ্গে যখন ঢাকা থেকে লঞ্চে বাড়ি ফিরতাম, সদরঘাটে লঞ্চে অনেক ফেরিওয়ালা উঠতো। কেউ পাউরুটি, কেউ কলা, কেউ লিচু, কেউ আবার মনোহারি জিনিস বিক্রি করতো। তবে এদের কারো ঝোলায় আবার বই থাকতো। সস্তা কাগজে ছাপা, পেপারব্যাক বাঁধাই তখনকার জনপ্রিয় লেখকের বই তারা বিক্রি করতো। সেই লেখকদের মধ্যে ছিলেন, নীহাররঞ্জন গুপ্ত,, ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়, নিমাই ভট্টাচার্য, শরৎচন্দ্র, শংকর, নজরুল, জসীমউদ্দিন, রবীন্দ্রনাথ আরো অনেকে। মা দু‘তিনটে বই কিনতেন। মা পড়তেন লঞ্চে বসে এবং আমি পড়তাম বাড়ি গিয়ে। এসএসসি পাশ করার পর আমি ময়মনসিংহ শহরে চলে যাই আমার বড় ভাইয়ের কাছে। আমার দাদা এডমণ্ড কোড়ায়া সেখানে ব্যবসা করতেন এবং সপরিবারে থাকতেন। তিনি আমাকে আনন্দমোহন কলেজে ভর্তি করিয়ে দিলেন। আমি গ্রামের ছেলে। ষোলটি বছর আমার গ্রামে কেটেছে। গ্রামের সঙ্গে একট নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে আমার। গ্রামকে যদি একটি বৃক্ষ মনে করি, তবে, আমি ছিলাম তার একটি ছোট শাখা। গ্রামের ছেলে শহরের ভিন্ন পরিবেশে এসে খাপ খাইয়ে নিতে একটু কষ্ট হলো। খুব মিস করতে লাগলাম মাকে, আমার গ্রামকে আর গ্রামের খেলার সাথীদের। আমার দাদা সাপ্তাহিক প্রতিবেশীর গ্রাহক ছিলেন। প্রতি রোববার গির্জা থেকে প্রতিবেশী আনা হতো বাসায়। প্রতিবেশীর প্রথম পৃষ্ঠা থেকে শেষ পৃষ্ঠা পযর্ন্ত আমি একবার বসেই পড়ে ফেলতাম। তখন প্রতিবেশীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিভাগ ছিলো “ছোটদের আসর”। ছোটদের আসরের গল্প, কবিতাগুলো পড়তে ভালো লাগতো আমার। বিকেলে যেতাম স্টেশন রোডে “গস্পেল হল ও রিডিং রুম”-এ। এটি প্রটেস্টানদের একটি পাঠাগার। সেখানে থাকতো দৈনিক পত্রিকা, বাইবেল, ধর্মীয় বই, কিছু গল্প-উপন্যাস এবং একটি মাসিক পত্রিকা “নবযুগ”। নবযুগ পত্রিকাটাই আমি বেশি পড়তাম কারণ ওখানে প্রকাশিত গল্প, কবিতাগুলো আমার ভালো লাগতো। এ ছাড়া দৈনিক ইত্তেফাকের সাহিত্য সাময়ীকিতে প্রকাশিত গল্পগুলো ভীষণ ভালো লাগতো আমার। কলেজে তখনো আমার বন্ধু তৈরি হয়নি। তাই কলেজের অফ পিরিয়ডে আমি চলে যেতাম ব্রক্ষ্ণপুত্র নদের পাড়ে। নদের খুব কাছে বসে থাকতাম। ভাবতাম, এই নদীর সঙ্গে আমার নদী ইছামতির কোন যোগসূত্র আছে। আমার মনে তখন অনেক কথা জমে আছে। কিছু কথা আমি বলতাম ব্রক্ষ্ণপুত্র নদের সাথে। তারপরও মনে হতো আমার কথাগুলো আমি বলতে চাই, কিন্তু কাকে বলবো, কিভাবে বলবো! হঠাৎ একদিন মনে হলো গল্প, কবিতা লিখলে কেমন হয়? কিন্তু আমি কি পারবো? একদিন সাহস করে লিখে ফেললাম একটি কবিতা। কবিতার নাম-

ব্যতিক্রম

যদি কখনো তোমাকে কামড়ায় কুকুরে

খবরদার কভু ছাড়িও না তারে

যদি না পার কামড়াইতে তারে

করিও প্রচণ্ড আঘাত 

মাথা তাক করে। 

জোর যার মুলুক তার

এই দুনিয়ার নিয়ম

নম্রতা দেখানো এতে

অরণ্যে রোদন।


আরও সাহস করে ডাকযোগে পাঠিয়ে দিলাম প্রতিবেশীর ঠিকানায়। ভাবিনি ছাপা হবে কারণ প্রতিবেশীর নীতিমালার সঙ্গে আমার কবিতাটি যায় না। যেখানে যীশুখ্রিস্ট বলেছেন ক্ষমা করতে আর আমি কিনা বলছি প্রতিশোধ নিতে! কিন্তু আমাকে অবাক করে এবং আনন্দে ভাসিয়ে দু’সপ্তাহ পরে আমার কবিতাটি প্রতিবেশীর “ছোটদের আসর” বিভাগে ছাপা হলো। তখন ছোটদের আসরের দায়িত্বে ছিলেন প্রয়াত শ্রদ্ধেয় মার্ক ডি’কস্তা। তার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ কারণ তিনি যদি আমার ঐ কবিতাটি না ছাপতেন, তবে, আমি পরবর্তীতে আর কিছু লিখতাম কিনা সন্দেহ আছে। আমার পরবর্তী রচনা ছিলো ছোটগল্প, সেটাও প্রতিবেশীতেই ছাপা হয়েছিলো। বলা যায়, এভাবেই আমার লেখালেখির হাতেখড়ি।

লেখকের বণার্ধ্যময় জীবনের পাশাপাশি কর্মময় জীবনটাও নিশ্চয় আরও কতই না অভিজ্ঞতার তাতে কোন সন্দেহ নেই। এছাড়াও, তিনি বর্তমানে লেখালেখি ও প্রকাশনা ছাড়াও যেসব কাজের সাথে সম্পৃক্ত আছেন তা সহভাগিতা করেন। তিনি বলেন যে, “সমবিকাশ প্রিন্টার্স ” নামের একটি প্রিন্টিং প্রেসের ম্যানেজারের চাকরি দিয়ে আমার পেশাগত জীবনের শুরু। তখন আমার বয়স মাত্র বাইশ বছর। বয়সের তুলনায় আমাকে আরো কম বয়সের মনে হতো। একটা এনজিওর প্রিন্টিং এর কাজ করতাম। সেখানকার চিফ একাউনটেন্ট ছিলেন একজন মহিলা। তিনি মজা করে আমাকে ডাকতেন, বাচ্চা ম্যানেজার। যাই হোক, চাকরিটা পেয়ে ভালোই হয়েছিলো। একদিকে, উপার্জন, অন্যদিকে, আড্ডা দেয়ার একটা জায়গা পেয়ে গেলাম। তখন আমরা যারা লেখালেখি করতাম, আমার অফিসটা ছিলো আমাদের আড্ডাস্থল। চাকরি পাওয়ার ছয় বছর পর বিয়ে করলাম, বিয়ের এক বছর পর নিজেই একটি প্রেস করলাম “খ্রীষ্টিনা প্রিন্টিং প্রেস” নামে। এখনো আছি সেই ব্যবসা নিয়েই। ব্যবসা এবং লেখালেখি ছাড়া আমি “স্বজন” নামে একটি সমবায় সমিতির সঙ্গে যুক্ত আছি অনেক বছর যাবত। এই সমিতির একটি বৈশিষ্ট হলো সব ধর্মের এবং সব শ্রেণির মানুষ এই সমিতির সদস্য।

‘লেখক জীবন ও ব্যক্তিগত জীবন’ এই দুটোকে সমন্বয় করে চলতে হয়। একজন সফল ব্যক্তি বা গল্পকার হওয়ার পেছনে পরিবারের ভূমিকা কম-বেশি থাকেই। লেখক এবিষয়ে সহভাগিতা করে বলেন, ‘লেখক জীবন ও ব্যক্তিগত জীবন’ এই দুটোকে সমন্বয় করা আসলে খুব কঠিন। কথায় বলে, একসঙ্গে দুই প্রভুর সেবা করা যায় না, বিষয়টি অনেকটা সেরকম। আমি মনে করি, লেখালেখি করে কেউ যদি প্রতিষ্ঠিত হতে চায়, তবে তার বিয়ে না করাই উচিত। বিয়ে মানে সংসার, আর সংসার মানে দায়িত্ব। একজন লেখকের পক্ষে আসলে খুব কঠিন লেখালেখি এবং সংসার দুইদিকে পর্যাপ্ত সময় দান করা। অনেক সময় দেখা যায় যে, লেখক তার লেখালেখিতে নিবেদিতপ্রাণ হতে পারছে না, আবার পরিবারের সদস্যদেরও খুশি রাখতে পারছে না। তবে, এর ব্যতিক্রমও আছে। অনেক পরিবারে দেখা যায় পরিবারের অন্য সদস্যরা লেখককে সংসারের সব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে লেখালেখির জন্য সুযোগ করে দিচ্ছে। পরিবার আমার লেখালেখিতে কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি, এটাই পরিবারের বড় ভূমিকা।

এ সমাজে লেখালেখি করে উপার্জন করাটা কঠিন। তবে, বিষয়টা লেখকের ক্ষেত্রে কেমন এবং সফলতার মুখ দেখতে কতখানি লড়াই করতে হয়েছে তা নিয়ে তিনি বলেন, লেখালেখি করে আয় করা যায় তবে সেই আয় দিয়ে জীবন চলে না, সংসার চলে না। যারা অনুবাদের কাজ করেন অথবা ফরমায়েশী প্রবন্ধ লিখেন, তারা বেশ ভালো অংকের সম্মানী বা পারিশ্রমিক পান। কিন্তু গল্প, কবিতা লিখে যা পাওয়া যায় তা নগণ্য। তবে, কিছু লেখক আছেন, বই বিক্রীর রয়্যালিটি থেকে যারা ভালো আয় করেন। বাংলাদেশে হাতেগোনা কয়েকজন লেখক আছেন শুধু লেখালেখির আয়ের উপর নির্ভর করেই যারা জীবন অতিবাহিত করেন। জাতীয় পত্র-পত্রিকায় লিখে আমি সম্মানী পেয়েছি, আবার আমাদের সমাজের কিছু পত্রিকা আছে যারা লেখকদের সম্মানী প্রদান করে থাকেন। অনেক আগে চাঁদপুর-কুমিল্লা থেকে “নবযুগ” নামে একটি মাসিক সাহিত্য পত্রিকা বের হতো (এখন বের হয় কিনা জানি না।) তো ওখানে আমি নিয়মিত লিখতাম। লেখা ছাপা হলে ওরা মানি অর্ডার করে লেখককে টাকা পাঠাতো। ডাকপিওনের কাছ থেকে যখন সই করে টাকা গ্রহণ করতাম, তখন কি যে আনন্দ হতো! নিজেকে সত্যিকারের লেখক মনে হতো তখন। জাতীয় চার্চ পরিষদের একটি সাহিত্য পত্রিকা ছিলো সমতান নামে। সেই পত্রিকায় লিখেও অনেক সম্মানী পেয়েছি। এখন মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান হাউজিং সোসাইটি তাদের মুখপত্র “নীড়” এ প্রকাশিত লেখার জন্য লেখকদের সম্মানী দেয়। শুনেছি, ঢাকা ক্রেডিটও “সমবার্তা”য় লেখার জন্য সম্মানী দেয়। এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। তবে, যে পত্রিকায় আমার সবচেয়ে বেশি লেখা ছাপা হয়েছে সেই “প্রতিবেশী” থেকে জীবনে একবার মাত্র ৫০০ টাকা সম্মানী পেয়েছি ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে, প্রতিবেশীর জয়ন্তী সংখ্যায় একটি বড় গল্প লিখে। 

 

করোনাকাল সকল লেখকদের জীবনেই কোন না কোনভাবে প্রভাব ফেলেছে। অনেকটা সময় বাড়িতে কাটাতে হয়েছে, সেসময়টিকে কিভাবে কাজে লাগিয়েছেন এবং সেই মহামারীকালীন প্রভাব কি আপনার লেখক জীবনে ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন যে, করোনাকালে সময় ব্যয় করেছি লেখালেখি করে, বই পড়ে, টিভিতে করোনার খবর দেখে, দুঃচিন্তা করে এবং লাগামহীন বিশ্রাম করে। মহামারী করোনা আমার ব্যক্তি জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেললেও আমার লেখক জীবনে ইতিবাচক প্রভাবই রেখেছে। সেই সময় যথেষ্ট সময় এবং রসদ পেয়েছি লেখার। করোনার সময় আমার বেশ কয়েকটি গল্প প্রথম আলোর “অন্য আলো”তে এবং অনেক কবিতা প্রথম আলোর “বন্ধুসভা”র পাতায় প্রকাশিত হয়েছে। আসলে, করোনা সৃজনশীল মানুষদের উপকারই করেছে। অনেক সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটেছে সেই সময়।

লেখকের জাতীয় পর্যায়েও লেখালেখি করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে, এই অভিজ্ঞতা ব্যক্তি বিশেষে স্বতন্ত্র। তাই লেখকের জাতীয় পর্যায়ে লেখা প্রকাশের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির কথা এবং  নতুন লেখকদের কাছে তার প্রত্যাশার কথা জানতে চাইলে, তিনি জানান যে, বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় অনিয়মিতভাবে আমার অনেক লেখা ছাপা হয়েছে। আমার প্রথম গল্প ছাপা হয়েছিলো দৈনিক বাংলার বাণীতে। সম্ভবত উনিশ’শ বিরাশি/ তিরাশি খ্রিস্টাব্দে। সেই গল্প লেখার পিছনেও একটি গল্প আছে। আমরা সাহিত্যপাগল চার বন্ধু তখন একটি ফোরাম তৈরি করেছি “প্রত্যয় সাহিত্য চক্র” নামে। আমাকে ছাড়া বাকি তিনজন হলেন খ্রীষ্টফার পিউরীফিকেশন, প্রয়াত স্বপন খ্রীষ্টোফার পিউরীফিকেশন এবং মার্শেল এ গমেজ। তো আমরা তখন প্রায়ই প্রতিবেশী অফিসে যেতাম আড্ডা দিতে। মাঝে-মাঝে সন্ধ্যার পর যেতাম লেখক নিধন ডি’রোজারিওর বাসায়, জেন কুমকুমদির বাসায়। কবি-গীতিকার উইলিয়াম অতুল কুলুন্তুনু তখন প্রতিবেশী ছেড়ে বাংলার বাণীতে প্রুফ রিডারের চাকরি নিয়েছেন (বিসিএস পাশ করে তখনো তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেননি)। সেখানেও যেতাম আড্ডা দিতে। একদিন বাংলার বাণী অফিসে গিয়ে দেখি অতুলদা কাজে খুব ব্যস্ত। তিনি আমাদের দিকে এক নজর তাকিয়ে বললেন, তোমরা একটা কাজ কর, কবি নির্মলেন্দু গুণ ইত্তেফাক থেকে বাংলার বাণীতে  সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে জয়েন করেছেন, তার সঙ্গে দেখা করে এসো। গুণদাকে আগে থেকেই চিনতাম। গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ইত্তেফাকের চাকরিটা ছেড়ে দিলেন দাদা? গুণদা একটু বিষণ্ণ কন্ঠে বললেন, আমি ছাড়িনি, ওরাই আমাকে ছাড়িয়ে দিয়েছে। এই হলো কবি নির্মলেন্দু গুণ, সত্য কথা বলে ফেলেন নিঃদ্বির্ধায়, তা সে প্রিয় হোক বা অপ্রিয়। বললেন, খোকন, তুমিতো গল্প লেখ, তাই না? বললাম, চেষ্টা করি দাদা। গুণদা বললেন, এই যে আজকাল মানুষ মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার জন্য পাগল, জমি জমা বিক্রি করে টাকা এনে আদম ব্যাপারীদের দিচ্ছে, তারপর প্রতারিত হচ্ছে, সর্বশান্ত হচ্ছে,এ বিষয়ের উপরে আমাকে একটি গল্প লিখে দিতে পারবে। বললাম, হ্যাঁ, পারবো। কয়েকদিনের মধ্যেই গল্পটি লিখে গুণদাকে দিয়ে আসলাম এবং পরের সপ্তাহের সাহিত্য সাময়িকীর পাতায় ছাপা হলো জাতীয় পত্রিকায় আমার প্রথম গল্প, “পিয়ার আলীর কুয়েত যাত্রা।” আমার আনন্দ আর ধরে না। মনে হলো, গল্পকার হিসেবে আমি এখন স্বীকৃত। পরবর্তীতে ইত্তেফাক, জনকন্ঠ, সংবাদ, প্রথম আলো এবং অনেক সাপ্তাহিক ও পাক্ষিকে আমার গল্প ছাপা হয়েছে। নব্বইয়ের দশকে পাক্ষিক “যোগাযোগ বার্তা” নামে একটি ম্যাগাজিন বের হতো,সেটার প্রতিটি ঈদ সংখ্যায় আমার গল্প ছাপা হতো। পরে অবশ্য পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়।  প্রথম আলোর বন্ধুসভা থেকে ‘তারুণ্য’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশিত হয়, সেখানেও আমার অনেক গল্প ছাপা হয়েছে।

বর্তমানে যারা লেখালেখি করতে আগ্রহী বা লেখালেখি করছে, তাদের জন্য আপনার মূল্যবান পরামর্শ এবং লেখক হতে গেলে যেসব বিষয় সম্পর্কে ধারণা রাখা উচিত সেসম্পর্কে লেখক বলেন, বর্তমানে যারা লেখালেখি করছেন তাদের অনেকেই ভালো লিখেন। আর দেখা যায়, যারা লিখছেন, তাদের শতকরা নব্বই ভাগই কবিতা লিখছেন। লেখালেখির ব্যাপারে প্রথম যে কথাটা বলতে চাই সেটা হলো, লিখতে হলে পড়তে হবে। এক পাতা লিখতে হলে একশ’ পাতা পড়তে হবে। যারা গল্প লিখেন, তাদের বিভিন্ন সময়ের মাস্টারপিস গল্পগুলো পড়তে হবে এবং বর্তমান  সময়ে যারা ভালো লিখছেন, তাদের গল্পও পড়তে হবে। কবিতার বেলায়ও তাই। তবে, যে যে বিষয়ে লিখেন, তাকে সেই বিষয়ের লেখাতো পড়তেই হবে, অন্য বিষয় পড়তে হবে। উদাহরণস্বরুপ বলা যায় যে, কেউ যদি উপন্যাস লিখেন বা লিখতে চান; তবে, উপন্যাসতো তার পড়তেই হবে পাশাপাশি সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ধর্মগ্রন্থ, রাজনীতি, অর্থনীতিসহ  অন্যান্য বিষয়ের উপরও তার জ্ঞান থাকতে হবে। যারা কবিতা লিখেন কবিতাতো তারা পড়বেনই, কবিতা সম্পর্কীয় বইও তাদের পড়তে হবে এবং ছন্দ ও মাত্রা সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা থাকতে হবে। আজকাল যারা ফেসবুকে কবিতা লিখেন, তাদের অনেকের ধারণা যা লিখি, সেটাই হয়ে যায় কবিতা। আসলে তা নয়, কবিতা এত সহজ নয়। কবিতা একটি উচ্চাঙ্গ সাহিত্য। অনেকে আবার মনে করেন গদ্য কবিতায়  ছন্দ থাকে না। ভুল, গদ্য কবিতা বা আধুনিক কবিতায় অন্তমিল নেই, কিন্তু ছন্দ আছে। আর একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, যে রচনার মধ্যে কাব্য নেই, সেটা কবিতা হতে পারে না। বানানের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। ফেসবুকের অনেক লেখার মধ্যেই দেখা যায় বানান ভুল। এটা লেখকের একটি বড় অযোগ্যতা। অনেকে দেখা যায়, প্রতিদিন তিন/চারটা করে কবিতা লিখেন, ফেসবুকে পোস্ট করার আগে হয়তো নিজে একবার পড়েও দেখেন না। এত লিখে লাভ কি, লেখার বিচার হয় পরিমাণ দিয়ে নয়, মান দিয়ে। তাই কম লিখুন কিন্তু মানসম্মত লিখুন। আর একটি বিষয় বলতে চাই অনেকেই দেখি লেখালেখি শুরু করেই হুটহাট করে বই বের করে ফেলছেন, আমি মনে করি এটাও ঠিক নয়।  আগে পত্র-পত্রিকায় কিছু লেখা ছাপা হোক, একটু পরিপক্কতা আসুক, তারপর বই বের করার চিন্তা করেন। আমার পরিচিত অনেক প্রতিষ্ঠিত লেখকও আছেন যারা এই ভুলটি করেছিলেন। এখন তারা অপরিপক্ক হাতের লেখা তাদের প্রথম বইটির পরিচয় দিতেও লজ্জাবোধ করেন।

যারা লেখালেখি করেন তাদের মধ্যে অবশ্যই সততা থাকতে হবে, সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলার সৎ সাহস থাকতে হবে। লেখককে হতে হবে মানবিক এবং সমাজ সচেতন। ভালো-মন্দ সব মানুষের জন্য তার মধ্যে ভালোবাসা থাকতে হবে। 

প্রত্যেক লেখকেরই নিজস্বতা ও আলাদা প্রকৃতি থাকে। আপনার লেখনিতে কোন বিশেষত্বটি অন্যদের চেয়ে আপনাকে আলাদা করে বলে আপনি মনে করেন এবং লেখক হিসেবে সমাজের কাছে লেখকের প্রত্যাশার কথা জানতে চাইলে তিনি অকপটে বলেন যে, আমার কিছু পাঠক আছে, তারা সেটাই বলেন। আমার নাম যদি নাও থাকে, লেখা পড়েই নাকি তারা বলে দিতে পারবেন এটা আমার লেখা। আমিও চেষ্টা করি আমার লেখায় একটা নিজস্বতা বজায় রাখার জন্য। সমাজের কাছে আমার প্রত্যাশা আমাদের সমাজ যেন পাঠক সমাজ হয়। লেখকদের তারা যেন মূল্যায়ন করে। 

গল্পকার হিসেবে পরিচিতি পেয়ে আপনার অনুভূতি কেমন তা জানতে চাইলে তিনি বলেন যে, কেউ যদি আমাকে গল্পকার বলে সম্বোধন করে, ভালোই লাগে আমার। কেউ যদি আমাকে গল্পকার হিসেবে অন্য কারো সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় একটু লজ্জা লাগলেও বিষয়টি উপভোগ করি আমি। তবে আমি কতটুকু কি সেটা আমি জানি। তাই নিজেকে নিয়ে অহংকারও করি না আবার নিজেকে ধুলায়ও লুটাতে দেই না।

লেখকের পুরস্কার ও সম্মাননার বিষয়ে বলতে গিয়ে তিন বলেন, পাঠকের ভালোবাসাই আমার সবচেয়ে বড় পুরস্কার। তারপরও কিছু পুরস্কার এবং সম্মাননা পেয়েছি, যা না বললে যারা আমাকে সম্মান দিয়েছেন তাদের ছোট করা হবে। প্রথম পুরস্কারটি পেয়েছিলাম আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে। তুমিলিয়া মিশনের চড়াখোলা গ্রাম থেকে “রংধনু”নামে বড়দিনে একটি ম্যাগাজিন বের হতো। সেখানে “দুর্বলতা “নামে আমার একটি গল্প পড়ে রঞ্জন গমেজ নামের এক ভদ্রলোক আমার জন্য পঞ্চাশ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন। এটা ছিলো আমার জন্য বিশাল অনুপ্রেরণার মতো। খুব কম বয়সেই পাই “আর্চবিশপ গাঙ্গুলী  সাহিত্য পুরস্কার”। এরপর রমনা প্রগতি সংঘ থেকে পর-পর তিনবার এবং ত্রিবেণী ছাত্র কল্যাণ সংঘ থেকেও পর পর তিনবার শ্রেষ্ঠ গল্পকারের পুরস্কার এবং সম্মাননা লাভ করি। জাতীয় চার্চ পরিষদ শ্রেষ্ঠ ছোট গল্পকার হিসেবে আমাকে  সম্মানিত ও পুরস্কৃত করে। এরপর বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন তাদের ৫০ বছরের জুবিলীতে  সাহিত্যে অবদানের জন্য আমাকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেন। এরকম আরো কিছু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছি, তবে, আগেই বলেছি আমার সবচেয়ে বড় পুরস্কার আমার পাঠক। তাদের ভালোবাসায় আমি অনুপ্রাণিত হই, উজ্জিবীত হই।

লেখক লেখালেখির পাশাপাশি সম্পাদনার কাজেও সম্পৃক্ত ছিলেন, সেবিষয়েই তিনি বিশদভাবে জানান যে, কিছু সম্পাদনার কাজ আমি করেছি। সেই আশির দশকে আমরা যখন “প্রত্যয় সাহিত্য চক্র” থেকে ‘প্রত্যয়’ নামের একটি লিটল ম্যাগাজিন বের করতাম, সেটার সম্পাদনা করেছি । “বাংলাদেশ খ্রিস্টান লেখক ফোরাম”র লিটল ম্যাগ ‘আর্শি’র সম্পাদনা করেছি। তবে, সম্পাদনার যে বড় কাজটি করেছি, সেটা হচ্ছে বাংলা ভাষার সবচেয়ে ছোটতম কবিতাপত্র ‘আমলকী’র সম্পাদনা। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে আমি এবং বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় শিশু সাহিত্যিক অনুকাব্যখ্যাত দন্তস্য রওশন মিলে বের করি ৪.৩৫x২.৭৫ সাইজের এই কবিতাপত্রটি। বলা যায় চার/ছয় লাইনের কবিতার চর্চা আমাদের ‘আমলকী’র মাধ্যমেই শুরু। ৪১টি সংখ্যা বের হওয়া ‘আমলকী’একসময় খুব জনপ্রিয় ছিলো। শামসুর রহমান থেকে শুরু করে বাংলাদেশের এমন কোন উল্লেখযোগ্য কবি নেই যার কবিতা ‘আমলকী’তে ছাপা হয়নি।

গল্পকার খোকন কোড়ায়া “বাংলাদেশ খ্রিস্টান লেখক ফোরাম”র সভাপতি হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। এই সংগঠন সম্পর্কে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ খ্রিস্টান লেখক ফোরাম” একটি অরাজনৈতিক, অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে এর জন্ম হয়। এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন বেঞ্জামিন গমেজ। “বাংলাদেশ খ্রিস্টান লেখক ফোরাম” প্রতিষ্ঠা হয়েছে যে সব উদ্দেশ্য সামনে রেখে তাদের মধ্যে অন্যতম লেখক সৃষ্টি করা, লেখকদের পরিচর্চা করা এবং লেখকদের জন্য প্ল্যাটফর্ম তৈরী করা। আমরা বর্তমান বোর্ডে যারা আছি, তারা সবাই ফোরামের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। আমরা নিয়মিত সাহিত্য আড্ডা করি, নিয়মিত আমাদের লিটল ম্যাগাজিন ‘আর্শি’ প্রকাশ করি, লেখকদের নিয়ে কর্মশালা করি। এবারের একুশের বইমেলায় আমরা লিটিল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়নে “বাংলাদেশ খ্রিস্টান লেখক ফোরাম”এর নামে স্টল নিয়েছিলাম। এতে জাতীয় পর্যায়ে আমাদের পরিচিতি অনেক বেড়েছে। আমরা অচিরেই খ্রিস্টান লেখকদের বই নিয়ে  একটি বইমেলার আয়োজন করতে যাচ্ছি।

পরিশেষে বলা যায়, লেখক খোকন কোড়ায়া সমাজে একজন আলোকিত ব্যক্তিত্ব। যিনি সমাজে বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তার ব্যক্তি জীবনে অনুকরণীয় এক নতুন দৃ্ষ্টান্ত সৃষ্টি করছেন। তার সৃজনশীল গল্পের মধ্যদিয়ে তিনি তার চেতনা, সুচিন্তিত বক্তব্য, সমাজের সঙ্গতি-অসঙ্গতি তুলে ধরার চেষ্টা করছেন।  তার গল্পগুলি এ খ্রিস্টান সমাজকে আগামীতে দিবে নতুন পথের দিশা এবং উদীয়মান লেখক ও কবিদের জন্য হবে অনুপ্রেরণার উৎসধারা।। তার বস্তুনিষ্ঠ ও অর্থপূর্ণ সহভাগিতা পাঠকদের মন জুড়াবে বলে আশা রাখি। সেইসাথে লেখক ও বিশিষ্ট গল্পকারের সুদীর্ঘ জীবন কামনা করি। এভাবেই আপনার জীবন হোক আরও বর্ণার্ধ্যময় ও গল্পময় । জীবন ও সমাজ-এর পক্ষ থেকে অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।


[জীবন ও সমাজে- পাঠাতে পারেন আপনারও বস্তুনিষ্ঠ লেখা প্রবন্ধ, গল্প ও ফিচার। 
লেখা পাঠানোর ঠিকানা : jibonoshomaj@gmail.com ] 

Post a Comment

Previous Post Next Post