ঢাকা আর্চডায়োসিসের মান্ডলিক ইতিহাস ।। বিকৃতি ও ভ্রান্তিবিলাস এবং কিছু প্রস্তাবনা

ঢাকা আর্চডায়োসিসের মান্ডলিক ইতিহাস ।। বিকৃতি ও ভ্রান্তিবিলাস এবং কিছু প্রস্তাবনা

লেখক : ডা: নেভেল ডি’রোজারিও


প্রতিবেশী পত্রিকার সাম্প্রতিক এক সংখ্যায় প্রকাশিত এক বিজ্ঞাপনে নজরে এলো ঢাকার আর্চবিশপ হাউজের শতবর্ষ পদার্পণ উপলক্ষে ২-দিনব্যাপী এক বিরাট উৎসব আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছে। এধরণের একটা বিজ্ঞাপনে সাধারণ খ্রীষ্টভক্তদের মাঝে মিশ্র ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকের আলাপের সূত্র ধরে প্রথমেই দেখার ইন্টারনেটে খুঁজলাম আর পেলাম যে বিল্ডিংটাকে কেন্দ্র করে যে আয়োজন Internet বলে যে এর একাংশ স্থাপিত হয়েছিল ১৯২৫ সনে। আর যেটাকে আর্চবিশপ হাউস বিল্ডিং বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে, মান্ডলিক ইতিহাস ঘেঁটে দেখা গেল ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের পোপীয় ঘোষণা ভাটিকান থেকে ঘোষিত হয়েছিল ১৯৫০ সনে। এমনকি ঢাকার প্রথম আর্চবিশপ লরেন্স গ্রেণার বিশপ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন ১৯৪৭ সালে তখনকার লক্ষীবাজার ক্যাথিড্রাল গির্জায়। দেশ ভাগের পরেও ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ঢাকা ধর্মপ্রদেশ ছিল কোলকাতা আর্চডায়োসিস এর আওতাধীন ঢাকার ক্যাথেড্রাল ছিল লক্ষ্মীবাজার হলি ক্রস ক্যাথিড্রাল (Holy Cross Cathedral.)

আপনাদের সবার বিবেচনার জন্যে এ বাংলা তথা ঢাকায় খ্রীষ্টধর্ম প্রবর্তনের ঘটনাবলী Chronologically বা ধারাবাহিকতায় দালিলিক প্রমাণাদির উপর ভিত্তি করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি;



ঢাকা আর্চডায়োসিসের মান্ডলিক ইতিহাস ।। বিকৃতি ও ভ্রান্তিবিলাস এবং কিছু প্রস্তাবনা

১৬০০ সনের কোনো এক শুভক্ষণে ঐতিহাসিক যশোরের বর্তমান বাংলাদেশের সাতক্ষীরা  জিলার শ্যামনগর থানাধীন ঈশ্বরীপুরে ১লা জানুয়ারি, বাংলার বার ভূইয়ার অন্যতম রাজা প্রতাপাদিত্য‘র বদ্যানয়তায় তাঁরই দানকৃত জমিতে পর্তুগীজ জেজুটস ফাদারদের নির্মিত বাংলার প্রথম গির্জা “প্রভু যীশুর গির্জা” রাজা প্রতাপাদিত্য কর্তৃক উদ্বোধন করা হয়েছিল।

 জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে ১৬০৮ খ্রীষ্টাব্দে ইসলাম খান মোঘল রাজপ্রতিনিধিরুপে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বাংলায় আসেন এবং এখানে রাজধানীর পত্তন করেন। ১৬১২ সনে পর্তুগীজ অগাষ্টিনিয়ান সম্প্রদায় ঢাকায় প্রথম খ্রীষ্টধর্মের প্রর্বত্তন করেন।১৬১৫ খ্রীষ্টাব্দে সন্দ্বীপের পতনের পর পর্তুগীজ সর্দাররা সালভেজ নামক একজন জেসুইট পাদরীকে নবাবের নিকট প্রেরণ করেন। তিনি ছিলেন ঢাকার আগত প্রথম পুরোহিত কিন্তু ঢাকার নবাব তাঁকে সসম্মানে ঢাকায় বন্দী করে রাখেন।  ১৬১৬ খ্রীষ্টাব্দে ঢাকাতে পর্তুগীজদের মিশন প্রতিষ্ঠিত হয়।  ১৬২৮ সালে অগাষ্টিনিয়ান সম্প্রদায় নারিন্দায় (নারায়নদিয়া) ঢাকার প্রথম গির্জা "Church of the Assumption" নির্মাণ করে। ১৬৩২ খ্রীষ্টাব্দে ঢাকাতে পর্তুগীজ অগাষ্টিনিয়ান সম্প্রদায়ের একটি দূতাবাস ছিল —- তা ইতিহাসে পাওয়া যায়। মানরিক দূতাবাস সংলগ্ন গির্জাটি বলতে এ গির্জাটিরই ইঙ্গিত দান করেছেন।

১৬৬৬ খ্রীষ্টাব্দে ফরাসী পর্যটক ও মানরিক বাপ্তিস্তা তাভানিয়ে তাঁর Travels to India তে এর উল্লেখ করেছেন। টি. রাঙ্কিনও জোর দিয়ে বলেন যে, তাভারনিয়ে কর্তৃক উল্লেখিত এ গির্জাটি নারায়ণদিয়াতে অবস্থিত ছিল। মানরিক ও তাভার্নিয়েণ্ব উভয়েই এ গির্জাটির সৌন্দর্যের প্রশংসা করেছেন এবং মানরিক ও সেভেন্ট ঐ সেন্ট আগষ্টিন মঠের কথা উল্লেখ করেছেন। 

ঢাকার দ্বিতীয় গির্জা তেজগাঁতে নির্মিত হয় ১৬৭৭ সনে। ডাঃ জেমস টেলর তাঁর “Tomography of Dacca” পুস্তকে লিখেছেনঃ ভারতের দক্ষিণের নেস্তরীও উপাসনালয়গুলোর সঙ্গে তেজগাঁওয়ের এ গির্জার ঘনিষ্ঠ সাদৃশ্য থেকে বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে যে, ভের্তোমানুস বর্ণিত খ্রীষ্টান ব্যবসায়ীদের দ্বারা প্রাথমিক ভাবে এ গির্জাটি নির্মিত হয়েছিল এবং পরবর্তীকালে তা রোমান কাথলিক মিশনারীদের দ্বারা পুনঃসংস্কার বা পুনঃ নির্মিত হয় ১৭১৪ ইং।” 

সম্রাট শাহজাহান ১৬৩১ খ্রীষ্টাব্দে বাংলার রাজপ্রতিনিধি কাসিম খানকে পর্তুগীজদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেন।

১৬৩২ সনে মোগল সম্রাট বাদশাহ শাহজাহান এর আদেশে মোগল বাহিনী হূগলী আক্রমণ করে এবং প্রায় ১০ হাজার কাথলিক অধ্যুষিত ব্যান্ডেল জনবসতিটি ধূলির সাথে মিশিয়ে দেয়। হুগলী যুদ্বে মোগল সেনারা বিজয়ী হয়েও পর্তুগীজদের প্রবল প্রতিরোধের কারণে প্রতিশোধ হিসেবে হুগলীর সাধারণ নাগরিকদেরও নির্বিচারে হত্যা করতে থাকে।

মোগল বাহিনীর হূগলী দখলের সংবাদে ঢাকায় পর্তুগীজ ও স্থানীয় খ্রীষ্টান নিধন শুরূ হয়। ঢাকাতে গণ-আক্রোশের বহ্নিশিখা চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছালে হুগলী অবরোধকালেই এখানে ইসলামপুর গির্জার ফাদার ফ্রেই বার্ণাজোড যিশুকে পিটিয়ে হত্যা করা হল।

বাংলাদেশে, বিশেষতঃ ঢাকাতে পর্তুগীজদের আগমন, তাদের গতিবিধি ও কর্মকান্ড সমর্পকে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য ও তত্ত¡ পরিবেশনকারী হলেন ফ্রে সেবাষ্ট্রিয়ান ও মানরিক, যিনি ১৬৪০ খ্রীষ্টাব্দে বাংলা পরিদর্শনে আসেন এবং ১৬৪১ খ্রীষ্টাব্দের পুর্বে নির্মিত অগাষ্টিনিয়ান গির্জাসমুহের একটি তালিকা প্রণয়ণ করেছেন। তিনি বলেছেন,, “Later as time went on, our Brethern penetrated still further into the interior of those principalities until they reached the city of Daack or Daca as the Lusitanian idiom has it...... The well known suburbs of Manaxor at one end and of Narandin and Fulgari at the other serve to round off the city suitably. These suburbs are Christian settlements in which any sacred order possesses a picturesque though small monastery with a good church ….. The earliest Brethren built in this city another church attached to a Residency, and later two more in the Bandeles of Siripur and Naricul.  

বাংলার পূর্বাঞ্চলে খ্রীষ্ট ধর্ম প্রবর্তনের শুরু ও তার পরবর্তী ঘটনাবলী Chronologically বা ক্রমানুসারে তুলে ধরছি :

১৬০০ সন :  বাংলাদেশের ঐতিহাসিক যশোরের সাতক্ষীরা 

                    জিলার শ্যামনগর থানাধীন ঈশ্বরীপুর গ্রামে ১লা 

                    জানুয়ারি, বাংলার বার ভূইয়ার অন্যতম রাজা 

                     প্রতাপাদিত্য‘র বদ্যানয়তায় তাঁরই দানকৃত জমিতে 

                     পর্তুগীজ জেজুটস ফাদারদের নির্মিত বাংলার 

                      প্রথম গির্জা “ প্রভু যীশুর গির্জা”,  রাজা 

                      প্রতাপাদিত্য কর্তৃক উদ্বোধন।

একই বছর :   খ্রীষ্টবাণীতে এবং জেজুইট পাদ্রীদের জীবনযাত্রায়

                     মুগ্ধ রাজা প্রতাপাদিত্য তাঁররাজ্যে অবাধে খ্রীষ্টধর্ম

                      প্রচার ও প্রসারের ফরমান জারি ও তাঁর রাজ্যে 

                      বসবাসকারী খ্রীষ্টানদের যাবতীয় রাজকীয় কর 

                      প্রদানের মওকুফ ঘোষণা করেন।

১৬০১ সন :    গির্জার ১ম বর্ষপূর্তী উৎসবে রাজা প্রতাপাদিত্যের

                      পুত্র রাজপুত্র সত্যেন্দ্রনাথ প্রধান অতিথি।

১৬১৬ সন :     ঢাকাতে পর্তুগীজদের মিশন প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৬২৮ সন :     অগাষ্টিনিয়ানদের নারিন্দায় (নারায়নদিয়া)

                       ঢাকার প্রথম গির্জা (বর্তমানে অস্তিত্ব বিহীন 

                       “Church of the Assumption" নির্মাণ করে

১৮৩৪     সনে বিশ্বাস বিস্তার সংস্থার অধীনে ভাটিক্যানের নির্দেশে  

কোলকাতাকে কেন্দ্র করে Vicariate Apostolic of Bengal 

গঠন করা হয় যা পরবর্তীতে, 


১৮৫০ সনে : পূর্ব ও পশ্চিমান্চলরূপে দু’ভাগে কাজ শুরু করে।

১৮৫০ সনে :    লরেটো সম্প্রদায়ের সিষ্টারগণ ঢাকায় আসেন।

১৮৫২ সনে : পূর্বাঞ্চলের হেড কোর্য়াটার ঢাকায় স্থানান্তরিত হয় ১৮৫২-৫৩ঃ-  মনসিনিয়র টমাস অলিভ ভিকার এপোষ্টলিক ১৮৫৩ সনেঃ- Holy Cross মিশনারী ১ম দল ঢাকায়।

১৮৫৫- ৫৯ : Rev Louis Veritecsc Pro-Vicar apostolic ১৮৬০ সনেঃ-  রেভাঃ পিয়ারে ডুফল csc বিশপীয় বিধিবদ্ধে 

                       ক্ষমতাবিহীন Titular Bishop of Delcon 

                       হিসেবে ফ্রান্সে ভূষিত হন এবং ১৮৬১ সনে 

                       ঢাকায় এসে ১৮৭৬ পর্যন্ত ভিকার এপোষ্টলিক।

১৮৬২ সনে :    হলি  ক্রশ ফাদারদের আমলে  লক্ষীবাজারে

                       RNDM সিষ্টারদের কনভেন্টের জমিতে ‘পবিত্র 

                       ক্রুশের গির্জা’ (Holy Cross Church শুরু হয়

১৮৬৫ সন :    ধর্মপল্লীর জন্যে জমি কেনা হয়। 

১৮৬৭ সন :     সিষ্টারদের জমির উপর গীর্জার পাকা দালান।

কোন এক বিশেষ কারণে ফ্রান্স কেন্দ্রিক Holy Cross সম্প্রদায় একযোগে সবাই ১৮৭৬ সনে বাংলা ছেড়ে চলে যাওয়াতে Anglo-Belgian Benedictine Monks সম্প্রদায় দায়িত্ব নেয়।

১৮৮৬ সনে :   Fr. Dom Cuthbath Downey OSB প্রো-

                       ভিকার এপোষ্টলিক।

পরবর্তীতে :     Fr. Dom Gregory de Groove OSB 

                       প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। 

১৮৮৬ সন :   পোপ ত্রয়োদশ লিও হূমান ইস্যুকৃত ‘Salubis’   

                        নামক পোপীয় প্রৈরিতিক অনুশাসনপত্র দ্বারা 

                        ঢাকাকে ‘ধর্মপ্রদেশ’ বা Diocese ঘোষণা 

                        করেন। সে ঘোষণায় বর্তমান বাংলাদেশের 

                        চট্টগ্রাম ডায়োসিস এলাকা, আসামের শিলাচর

                        বার্মার (বর্তমান মিয়ানমার)এর প্রোম এলাকা

                        ঢাকার অন্তভুক্ত করা হয়। যশোর/খুলনা

                        ছিল কোলকাতা আর্চডায়োসিস আওতাধীন।

১৮৮৭ সন :     ঢাকা ডায়োসিস ঘোষিত হলেও ২৪শে শে ফ্রেব্রু 

                        এলাহাবাদে সর্বভারতীয় ও সিংহলী বিশপদের

                         সম্মেলনে ফাঃ ডোম গ্রেগরী OSB ঢাকার 

                         প্রতিনিধিত্ব করেন নতুন ঢাকা ডায়োসিসের 

                         প্রশাসক হিসেবে কারণ তখনো ঢাকাতে 

                         কাউকে পোপ মহোদয় কাউকে বিশপ নিযুক্ত 

                         করেননি এবং ঢাকা ডায়োসিস তখনো  

                         independent হয়নি বরং কোলকাতাধীন।

১৮৮৯ সনে :   হলি ক্রশ সংঘের পূর্ব বাংলায় পুনরাগমন।

১৮৮৯-৯১ :    কোন বিশপ না পাওয়ায় পবিত্র ক্রুশ সংঘের 

                         সুপিরিয়র ফাঃ মাইকেল ফালিজ ২য় প্রশাসক।

১৮৯০ সন :      ‘মিয়া ভাই ময়দান’ এর নাম পরিবর্তন করে   

                        এলাকার নামকরণ করা হয় লক্ষীবাজার।

১৮৯০ সন :     পরম পিতা পোপ ত্রয়োদশ লিও ৬৫ বছরের 

                        ফরাসী যাজক ফাঃ আগষ্টিন লুয়াজ csc কে 

                         ঢাকা ডায়োসিসের ১ম বিশপ মনোনীত

                         করেন।

১৮৯১ সন :     লক্ষীবাজার তখন হয়ে যায় পূর্ব বাংলার প্রথম 

                        ক্যাথিড্রাল ‘হলি ক্রশ ক্যাথিড্রাল’।

১৮৯১ সন :      নিউসীর পবিত্র ক্রুশ চ্যাপেলে ১১ই জানুয়ারী 

                         মন্ট্রিলের আর্চবিশপ ফ্যাবে কর্তৃক ঢাকার     

                         বিশপ হিসেবে অগাষ্টিন লুয়াজ csc বিশপ

                         পদে অভিষিক্ত হন।

১৮৯১ সন :       ঢাকার প্রথম  বিশপ হিসেবে অভিষিক্ত বিশপ 

                         অগাষ্টিন লুয়াজ csc ১০ ই মার্চ ঢাকার 

                         লক্ষ্মীবাজারে এসে বিশপীয় দায়িত্ব নেন। এ

                         থেকে লক্ষ্মীবাজার পরিচিত হয় লক্ষ্মীবাজার 

                         হলি ক্রুশ ক্যাথিড্রাল।

১৮৯৪ সন :       জুন মাসের ৮ তারিখে বিশপ লুয়াজের মৃত্যু 

                         হলে লক্ষ্মীবাজার ক্যাথেড্রালের ভিতরে তাঁকে 

                          সমাধিস্থ করা হয়। 

১৮৯৪ সন :        ২৬ শে জুন জার্মানিতে জন্ম গ্রহণকারী ফাঃ 

                           পিটার যোশেফ অ্যার্ত csc ঢাকার দ্বিতীয় 

                          বিশপ পদে মনোনীত হন।

১৮৯৭ সন :       ভূমিকম্পে নির্মীয়মান নতুন গির্জা, কনভেন্ট ও 

                          সেন্ট গ্রেগরী স্কুল ও গির্জা ক্ষতিগ্রস্ত।                  

১৮৯৮ সন :       ১৪ই সেপ্ট বিশপের অনুপস্থিতে ফাঃ মাইকেল 

                          ফাসিজ লক্ষীবাজার নবনির্মিত ক্যাথড্রাল 

                          উদ্ধোধন আশীর্বাদ করেন।

১৯০৮ সন :        বিশপ অ্যার্ত রমনায় জমি ক্রয় করেন।

১৯০৯ সন :        ১১ই এপ্রিল কার্ডিনাল গাত্তি কর্তৃক ৬৫ বছর 

                           বয়সী ফাঃ ফ্রান্সিস ফ্রেডারিক লিনর্বণ ঢাকার 

                            তৃতীয় বিশপ হিসেবে অভিষিক্ত।

১৯১৫ সন :           হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বিশপ ফ্রান্সিস 

                             ফ্রেডারিকের পরলোক গমন। লক্ষীবাজার 

                             ক্যাথিড্রালের ভিতরে সমাধিস্ত।

১৯১৬ সন :           ৫ই নভেম্বর বোম নগরে ঢাকার ৪র্থ বিশপ 

                             হিসেবে বিশপ ল্যাগ্রা অভিষিক্ত।

১৯২৭ সন :            বিশপ ল্যাগ্রাকে সহায়তার জন্যে পোপ 

                             একাদশ পিউস সহকারী হিসেবে তিমথী 

                             ক্রাউলী csc কে ঢাকার বিশপের উত্তরসুরী 

                             মনোনীত করেন।

১৯২৭ সন :           ১লা মে লক্ষীবাজার ক্যাথিড্রালে বিশপ  

                             পদে অধিষ্ঠিত।

১৯২৯ সন :            বিশপ ল্যাগ্রা অবসর নিলে বিশপ তিমথী 

                              জন ক্রাউলী csc ঢাকার পন্চম বিশপ 

                              হিসেবে দায়িত্ব নেন।                          

১৯৪৫ সন :            ২য় মহাযুদ্ধে মানবতাবাদী ভূমিকার জন্যে 

                              ’কাইজার-ই-হিন্দ’ উপাধিপ্রাপ্ত ও স্বর্ণপদক

                               ভূষিত বিশপ ক্রাউলী csc কোলকাতার

                               এক হাসপাতালে জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে 

                                চিকিৎসাধীন থাকাকালীন ২রা অক্টোবর 

                                মারা গেলে তাঁর মরদেহ ঢাকায় নিয়ে এনে 

                                ৪ঠা অক্টোবর লক্ষীবাজার ক্যাথিড্রাল 

                                গীর্জার ভেতরে কবরস্থ করা হয়।

১৯৪৭ সনে পাক-ভারত বিভক্তিকালেও পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকা ডায়োসিস তখনো ছিল কোলকাতা আর্চডায়োসিসের Suffragan Diocese. (Saffragan Diocese Bishop আর্চডায়োসিস ছাডা অন্য একটি ধর্মপ্রদেশ পরিচালনা করেন। 

১৯৪৭ সন :       ২২শে অক্টোবর দেশ বিভাগের যুগ সন্ধিক্ষণে    

                         লক্ষীবাজার হলি ক্রস ক্যাথিড্রালে বিশপ 

                         লরেন্স গ্রেণার csc বিশপ পদে অধিষ্ঠিত হন।

১৯৫০ সন :       ১৫ই জুলাই পোপ মহোদয় ঢাকা ডায়োসিসকে 

                          কোলকাতা মহাধর্মপ্রদেশ থেকে পৃথক করে   

                          ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশে (Ecclesiastical

                          (Province) উন্নীত করেন।   

              

একটা বিল্ডিং নিয়ে এত মাতামাতি করার এমন কি কারণ থাকতে পারে সেটা নিয়ে বোধ হয় গবেষণা প্রয়োজন। এটা কোন কুতুব মিনার, আহসান মন্জিল কিংবা শিখা অনির্বান বা জাতীয় স্মৃতি সৌধ বা কোনো উপাসনালয় নয়। আরো উল্লেখিত যে ইন্টারনেটে এর স্থাপনা কাল দে খা যাচ্ছে যে এটার অংশ বিশেষ (বর্তমান ক্যাথিড্রালের সংলগ্ন অংশে ছিল সেন্ট মার্থা নামের) চ্যাপেল। যদি ইন্টারনেটে ভুল তথ্য দিয়ে থাকে তা’হলে আমাদের বিশপ সম্মিলনী(CBC,B- Catholic Bishops Conference of Bangladesh) এর সেক্রেটারিয়েট কিংবা খ্রীষ্টিয় যোগাযোগ কেন্দ্র তা সংশোধনের জন্যে কোন ব্যবস্থা কি নিয়েছে। সেন্ট মেরীজ ক্যাথড্রালের যদি ২৫ কিংবা ৫০ এর কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন হতো, তা হলেও তার একটা যৌক্তিকতা ছিল।নিছক একটা বিল্ডিং কে জোড় করে শত বর্ষীয় বানিয়ে অহেতুক লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে আমরা কি আমাদের অখ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের নিকট wrong information দিচ্ছি না? তারা সবাই দেখবে আর বুঝবে বাংলাদেশে খ্রীষ্টধর্ম এসেছে মাত্র ১০০ বছরের।

এপার বাংলায় খ্রীষ্ট ধর্ম প্রবর্তনের ইতিহাস ৪৫০ বছরের বেশী সময়ের। আর ঈশ্বরীপুরের গির্জা স্থাপনকাল ধরলে তা ৪২৩ বছরের ঐতিহ্যমন্ডিত, যা এদেশের মাটিতে প্রোথিত। যা আমাকে করেছে গৌরবান্বিত, যা আমার ধর্মবিশ্বাসের অহংকার। যুগে যুগে যা আমার আর আগামী প্রজন্মকে অনুপ্ররণা যোগাবে ধর্মীয় বিশ্বাস ও সাহস, এনে দেবে ব্যক্তিগত, সমষ্টিগত ও সামাজিকতায় ধর্মীয় অনুশীলনীময়তা। বাংলা ভাষার ইতিহাস ঘাটলে বেরিয়ে আসে ঢাকা থেকে ২৫ কিঃমিঃ দূরের নিভৃত গ্রাম, নাগরীতে লিখা হয়েছিল বাংলাভাষায় গদ্যরীতিতে লিখা ‘ব্রাক্ষণ রোমান কাথলিক সংবাদ’, বাংলার প্রথম অভিধান। সাড়ে চার’শ বছরের বিশাল ক্যানভাসকে জোর করে মিনিয়েচার পেইন্টিং এ পরিণত করে মন্ডলীর কি স্বার্থ উদ্ধারের অপচেষ্টায় সম্পৃত্ত মন্ডলীর কর্তাব্যক্তিবর্গ? মন্ডলীর ইতিহাসের তথ্য রিকৃতি এবং ভ্রান্তিবিলাস এর পুরাতন নমুনা আছে। নাগরী গীর্জার ৩০০ বছরের জুবিলী দুই দফায় আয়োজিত হয়েছিল। প্রথমবার ১৯৬৪ সনে দ্বিতীয় বার ১৯৯৫ সনে।


বলতে কষ্ট লাগে, লজ্জাও হয়, অনেক খ্রীষ্টভক্তের আলোচনায় ও observation এ চলে এসে এক দশক ধরে মন্ডলীতে ইংরেজী অক্ষরের ট্রিপল C সমারোহ (Celebration, Construction & Congregational conflict). আমরা ব্যাথিত হই যখন দেখি বরিশালের বিশপ মনোনয়নকে কেন্দ্র করে ধর্মপ্রদেশীয়  যাজক ফাঃ লাজারুজ গমেজের FB post এ দেয়া মন্ডলীর উঁচ্চ পদধারীর প্রতি হুংকার ও প্রকাশ্য চ্যালেন্জ এবং আর এক পাদ্রীর FB post ধর্মপ্রদেশীয় যাজকের প্রতি অন্য সম্প্রদায়ের অন্য ধরণের আচরণের অভিযোগ। এ সব ঘটনা আঠারোগ্রাম এলাকায় ‘সাদা মিশন’ আর ‘কালো মিশন’ এর অগাষ্টিনিয়ান আর জেজুইটস সম্প্রদায় এবং নাগরীর ডমিনিকান আর অগাষ্টিনিয়ান সম্প্রদায়ের অহি-নকুল সর্ম্পকের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়—- আমরা আতংকিত হই।

বস্তুতপক্ষে কাকরাইলের আর্চবিশপ ভবনটা এমন কোন ঐতিহাসিক নয়। এটা কুতুব মিনার বা আহসান মন্জিল বা মুক্তিযুদ্ধের শিখা অনির্বাণ নয়—— নয় এটা স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি সৌধ। চোখের সামনেই আছে ১৬৭৭ সনের নির্মাণ তেজগাঁ ‘পবিত্র জপমালার গির্জা’। আর ৪ বছর পর ২০২৭ সনে হবে এর ৩৫০ বছর পূর্তি। আবার ঈশ্বরীপুরের বাংলার প্রথম গীর্জার প্রতিষ্ঠাকাল হিসাব করলে ৪২৫ বছর পূর্ণ হবে ২০২৫ সনের জানুয়ারি ১ তারিখে —- মাত্র ১বছর ৫ মাস ২২ দিন পরে। আমরা উদযাপন করতে পারবো সারা বাংলাদেশ ব্যাপী “425 years of Christianity in Bangla” মহাসমারোহে। আপনারা already ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন। এখন তা বাতিল করাটা কষ্টসাপেক্ষ। তাই আপনাদের ঘোষণাটাই বর্ণিত প্রোগ্রামগুলো কাট ছাঁট করে সংক্ষিপ্ত আকারে করে এটা আখ্যায়িত করুন “বঙ্গদেশে খ্রীষ্টধর্মের সোয়া চার’শ বছর পূর্তি উৎসব ১৬০০- ২০২৫” বা “425 years of Christianity in Bangla 1600– 2025”. উদযাপনের প্রাথমিক প্রস্তুতি।

৪২৫ বছর পূর্তির কিছু সুপারিশ :


১. এ গৌরব বাংলাদেশের সব অঞ্চলের সকল খ্রীষ্টানের। প্রথম অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে ঢাকায় ২০২৫ সনের ১লা জানুয়ারি। অনুষ্ঠান  উদ্বোধন করবেন রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী। উপস্থিত থাকবেন বিশপ সম্মিলনীর সব বিশপ।

২. প্রত্যেক মাসের প্রথম সপ্তাহে পালাক্রমে আয়োজিত হবে প্রতিটা ডায়োসিসে এবং প্রতিটা অনুষ্ঠানে বিশপ সম্মিলনীর সব বিশপ।

৩. বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত স্মরণিকা অনুষ্ঠান শেষে হারিয়ে যায়।

এ অনুষ্ঠানের পুস্তকের স্মরণিকা হবে শুধুমাত্র গবেষণা ও ইতিহাস ভিত্তিক। গবেষণা পত্র একক লেখক বা সমষ্টিগত লেখকের হতে পারে।

৫. এটা বিপণনে প্রতিটা ধর্মপল্লী, প্রতিষ্ঠানকে নিয়োজিত করতে হবে। প্রকাশনাটি অবশ্যিই সাবসিডাইসড হতে হবে যাতে করে অল্প পরিমাণ বিনিময় মূল্যে অধিক সংখ্যক পাঠক স্মরণিকাটা  

তাঁদের সংগ্রহে রাখতে পারে।

৬. পুরো অনুষ্ঠান আয়োজনে ব্রতধারী/ধারিণীদের সাথে অধিক সংখ্যক সাধারণ খ্রীষ্ট ভক্তের সংযুক্তি থাকতে হবে।

৭. পুস্তক সম্পাদনা পরিষদে শুধুমাত্র পদ বা পোষাকি পদধারী সন্নিবেশিত না করে যোগ্য ব্যক্তি মনোনীত করতে হবে। লেখার মানসম্পন্ন না হলে তা অবশ্যিই বাতিল করতে হবে।


[জীবন ও সমাজে- পাঠাতে পারেন আপনারও বস্তুনিষ্ঠ লেখা প্রবন্ধ, গল্প ও ফিচার। 
লেখা পাঠানোর ঠিকানা : jibonoshomaj@gmail.com ] 



Post a Comment

Previous Post Next Post