সংগ্রামী মানব : সতেরো বছর বয়সের মেয়ে নিকিতা। দেখতে শুনতে খুবই ভাল আর বাচনভঙ্গিতে নিদারুন মলিনতা। সুমন ও সাথীর পবিত্র ভালবাসার প্রথমজাত সন্তান এই নিকিতা। সুমন একজন প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক আর সাথী কাজ করে অন্যের বাড়িতে। কাজের খোঁজে ভোর-সকালে সাথীকে বেরিয়ে যেতে হয়। কোনদিন দেখা যায় অসংখ্য কাজের সমারোহ আবার কোনদিন কাজশূন্য। যদিও অর্থাভাব তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী, তবুও তারা পারিবারিক জীবনে সুখী ছিলেন নিকিতাকে নিয়ে। নিকিতার প্রায়শই অসংখ্য আবদার থাকত যেগুলো সুমন ও সাথীর পক্ষে মেটানো সম্ভব ছিল না। তারা দুজন-দুজনাকে প্রতিনিয়ত বলত, এভাবে আর কতদিন আমরা চলব? আর কতদিন অভাব-অনটন আমাদেরকে কাঁদাবে? সুমন, সাথীকে সান্ত্বনার স্বরে বলল, ধৈর্য ধর, সব কিছুরই সমাধান আছে। নিকিতা ধীরে-ধীরে বড় হচ্ছে। আর কিছুদিন বাদে আঠারোতে পদার্পণ করবে। এই মুহূর্তে তার দাবি-দাওয়াও অজস্র কলেজপড়ুয়া মেয়েদের এরকমই হয়ে থাকে। বর্তমানে নিকিতার মধ্যেকার পরিবর্তন অতিদ্রুত পরিলক্ষিত হচ্ছে। অল্পতে রেগে যাওয়া, স্বল্প কথা বলা, বন্ধুদের সাথে মেলামেশায় অনিহা, কর্ম ও পড়াশুনায় বিরক্তির ভাব, কারও কথা শ্রবণে অনিহা, অলসতা আরো কত কি ! এরকম অবস্থায় নিকিতাকে দেখে তার প্রিয় শিক্ষিকা শিল্পীরাণী বলল, নিকিতা, তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। তুমি কি এখন ফ্রি আছ? নিকিতার কোন সাঁড়া শব্দ নেই। শিল্পীরাণী পুনরায় বলল, নিকিতা আমি তোমায় কি বলেছি তুমি কি তা বুঝতে পেরেছ? এবার নিকিতা মাথা নেঁড়ে সায় দিল হ্যাঁ, আমি বুঝতে পেরেছি। পরক্ষণে শিল্পীরাণী বলল, তুমি কি কথা বলার জন্যে প্রস্তুত আছ? নিচুস্বরে নিকিতা বলল, হ্যাঁ ম্যাম।
![]() |
হত্যা কিন্তু কেন |
তারপর শিল্পীরাণী নিকিতার ডান হাতটি শক্ত করে চেপে ধরে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা নিকিতা তোমার কি হয়েছে? প্রায়শই তুমি মনমরা থাক, কথা বলতে চাও না, তোমার সেই হাসিমাখা মুখটিও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, কি হয়েছে তোমার? কথাগুলো শুনে, নিকিতার দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল। নিচুস্বরে বলতে আরম্ভ করল, ম্যাম আমি আর বাঁচতে চাই না। কিন্তু কেন নিকিতা, শিল্পীরাণী জিজ্ঞেস করল। ম্যাম গত মাসের শেষদিকে সজল নামের চল্লিশোর্ধ্ব এক লোক আমাদের বাড়িতে এসেছিল বাবা-মার খোঁজে। সেদিন বাবা ছিলেন স্কুলে আর মা ছিলেন অন্যের বাড়িতে। আমি একা ছিলাম বাড়িতে। লোকটি এসে বাবা-মাকে ডাকতে লাগল। আমি ডাক শুনে ঘর থেকে বের হলাম ও লোকটিকে বললাম, বাবা-মা বাড়িতে নেই, কাজে গেছে, ফিরবে বিকেলে। সজল বলল, ও আচ্ছা; ঠিক আছে। নিকিতা বলল, আপনি এখন আসতে পারেন। সজল বলল, এক গ্লাস পানি হবে, আমি বড়ই তৃষ্ণার্ত। নিকিতা সরল মনে বলল, ভিতরে আসুন। নিকিতা সজলকে বসতে বলে, পানি আনতে রান্নাঘরের দিকে যেতে লাগল। এই সুযোগে সজল ঘরের প্রধান ফটক বন্ধ করে দিল। দৌঁড়ে গিয়ে নিকিতাকে জড়িয়ে ধরল ও তার সর্বনাশ করল। বেদনাদায়ক যন্ত্রণায় নিকিতা ছটফট করছে দেখে সজল তাকে ছেড়ে দৌঁড়ে পালিয়ে গেল। শিল্পীরাণী বলল, তারপর, তারপর কি হল? নিকিতা বলল, আমি দুই-তিন সপ্তাহ পর খুবই অসুস্থ অনুভব করছিলাম। সহ্য করতে পরছিলাম না। তাই গোপনে কাউকে কিছু না জানিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলাম। ডাক্তার আমাকে দেখে কয়েকটি পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিল। আমি পরীক্ষাগুলো করালাম। অবশেষে জানতে পারলাম, আমি অন্তসত্বা। আমি শুনে হতবাক, কাঁদতে শুরু করলাম। তাৎক্ষণাত আমি এবোরশন করানোর সিদ্ধান্ত নিলাম। তা করিয়েও ফেললাম। নিষ্পাপ শিশুটির মৃত্যু হল। ঐ ঘটনার পর থেকেই মনটা কেমন জানি ভেঙ্গে গেছে! শুধু মনে হয়, সেই পবিত্র শিশুটির কথা; যাকে আমি খুন করেছি। ম্যাম, আমি আমার জীবনকে শেষ করে ফেলতে চাই। সবকিছু শোনার পর শিল্পীরাণী, নিকিতাকে উৎসাহ দিল, বাবা-মার সাথে বিষয়টি সহভাগিতার জন্য অনুপ্রাণিত করল। এভাবে নিকিতা তার জীবন নতুনভাবে সূচনা করল।
[জীবন ও সমাজে পাঠাতে পারেন আপনারও লেখা প্রবন্ধ, গল্প ও ফিচার।
লেখা পাঠানোর ঠিকানা : jibonoshomaj@gmail.com]