সম্পর্ক প্রসঙ্গ: ব্যক্তির সাথে ব্যক্তি-প্রতিবেশি ও সৃষ্টিকর্তা

লিটন ফ্রান্সিস সেন সিএসসি : যুগ-যুগ ধরেই মানুষের উন্নতির শিঁখরে পৌঁছার চেষ্টা চলেছে অবিরাম। মানুষ তার বুদ্ধি ও পরিশ্রম দ্বারা সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে আজও। আবিষ্কার করছে নতুন-নতুন তথ্য ও প্রযুক্তি। নতুনকে জানার জন্য ও অসম্ভবকে সম্ভব করার প্রচেষ্টায় নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। জীবনকে সুখী ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কত কিছুই না করছে মানুষ। তবে এসব ভাল কিছুর মাঝেও আমরা এমন কিছু করি যা সৃষ্টিকর্তা ও প্রকৃতির বিরুদ্ধে। ফলে পৃথিবীতে সৃষ্টি হচ্ছে এমন সব ভয়ঙ্কর মানবসৃষ্ট দুর্যোগ বা মহামারী যার ভুক্তভোগী হই আমরা নিজেরাই। প্রসঙ্গতই বর্তমানে সারাবিশ্বের মানুষ করোনাভাইরাসে জর্জরিত ও আতঙ্কিত অবস্থায় দিন যাপন করছে। অস্বাভাবিক জীবন যাত্রা আমাদের অনেক কিছুই বুঝতে শিখিয়েছে। উপলব্ধি করতে শিখিয়েছে যে প্রকৃতির কাছে আমরা কতটা অসহায়। তবে এতো জীবননাশ ও ক্ষয়-ক্ষতির পরেও এই মহামারীকালীন আমরা ভাল কিছু পেয়েছি যা মানব জাতির জন্য সান্ত্বনাও বটে। 

 সম্পর্ক প্রসঙ্গ: ব্যক্তির সাথে ব্যক্তি-প্রতিবেশি ও সৃষ্টিকর্তা

কোভিড-১৯ মহামারীকালীন ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও গভীরতা:

ব্যক্তিগত সচেতনতা বৃদ্ধি : করোনাকালে ব্যক্তিগতভাবে অনেক সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে এসময় নিজেকে ও পরিবেশ রক্ষার জন্য বাড়তি যত্ন  নিতে মনোযোগী হতে হয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনের এই সংযোজিত দিকটি ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে এবং জীবনে নতুন এক মাত্রা যোগ করেছে।

পরিবেশের সাথে মানিয়ে চলা : মহামারীকালীন সবচেয়ে বড় উপলব্ধি হলো, যে কোন কঠিন পরিস্থিতিতে মানিয়ে চলার সক্ষমতা। পরিবেশ ব্যক্তিগত ইচ্ছানুসারে চলে না বিধায় সব ধরনের পরিস্থিতিকে গ্রহণ করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।

বই পড়া বা জ্ঞানার্জন: মহামারীকালীন অনেকেই কর্মহীন থাকায় সময়ের সদ্বব্যহার করতে পারে বই পড়ার মধ্যদিয়ে। বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার সুযোগ রয়েছে যেমন: গল্প, উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, জ্ঞানধর্মী ইত্যাদি। এতে যেমন বিনোদন রয়েছে, তেমনি রয়েছে জ্ঞানার্জন করার সুন্দর সুযোগ।


 সৃজনশীল কাজ: এ সময়ে ব্যক্তিগত সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যেসব গুণাবলি আমাদের মাঝে লুকায়িত রয়েছে বা ব্যস্ততার ফলে চর্চা বা অনুশীলনের অভাবে অবিকশিত ও অপ্রকাশিতই থেকে যায়; সেসব অনুশীলন করার বড় একটি সুযোগ সৃষ্টি করেছে যেমন: গ্রাফিক্স ডিজাইন, কম্পিউটারে বাংলা ও ইংরেজী দ্রুত কম্পোজ করা, গিটার বাজানো, খেলায় পারদর্শীতা দেখানো ইত্যাদি।

আত্মবিশ্বাস অর্জন করা: মহামারীকালীন আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। ব্যক্তিগত অভিমত অনুযায়ী এতটুকু আত্মবিশ্বাস অর্জন করা যে, ‘আমিও পারবো’। আর সেই আত্মবিশ্বাসই নিজের মধ্যে নতুন কিছু জানার আগ্রহ সৃষ্টি করে।

ব্যক্তির সাথে প্রতিবেশির সম্পর্ক:  

সহানুভূতি: মহামারীতে মানুষের প্রতি ব্যক্তির সহানুভূতি মানুষের প্রতি পূর্বের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কালাক্রমে আরো বৃদ্ধি পাবে। এসময় গ্রামে সেবামূলক কাছে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারলে প্রতিবেশিরা উপকৃত হবে। যেমন: সরকারী ত্রাণ বিতরণে সাহায্য করা ও মাস্ক বিতরণ করা ইত্যাদি। 

পারিবারিক কাজে অংশগ্রহণ: এসময় পরিবারের সদস্যদের সাথে সময় ব্যয় করার সুযোগ রয়েছে। একসাথে পরিবারের ও প্রতিবেশীর বিভিন্ন কাজ করার সুযোগ রয়েছে এবং একে-অপরকে সাহায্য-সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে। 

অন্যের সম্পর্কে জানা : করোনা মহামারীকালীন নিজেকে যেমন জানার সুযোগ রয়েছে, তেমনি অন্যের সম্পর্কেও সুন্দর ধারণা লাভ করার সুযোগ রয়েছে। নিজেকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও অন্যের সান্নিধ্য লাভের ফলে সাম্প্রদায়িক ভ্রাতৃত্ববোধ দৃঢ়তর ও গভীর হয়েছে।

ব্যক্তির সাথে সৃষ্টিকর্তার সম্পর্ক:

সৃষ্টিকর্তার প্রতি আস্থাশীল: করোনাকালীন সৃষ্টিকর্তার প্রতি ব্যক্তিগত বিশ্বাস, ভালবাসা ও আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছে, সৃষ্টিকর্তার ওপর আস্থা রাখলে কোন কিছুই নিজের ও আপনজনের ক্ষতি করতে পারে না। 

আধ্যাত্মিকতায় বেড়ে উঠা : এসময়ে ব্যক্তিগত প্রার্থনা ও ধ্যান করার মধ্যদিয়ে সময় ব্যয় করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন আধ্যাত্মিক বই অধ্যয়ন করার সুযোগ রয়েছে যা সৃষ্টিকর্তার নির্দেশিত পথে চলার প্রেরণা যোগায়।

করোনা মহামারীর কারণে অনেক জীবন ও অর্থ সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে ঠিকই কিন্তু এর জন্য মানব জাতিই দায়ী। সৃষ্টিকর্তাকে কোনভাবেই দায়ী করা যৌক্তিক নয়। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এই মহামারীর নেতিবাচক দিকের বিপরীতে ইতিবাচক দিকসমূহ সামান্যই গুরুত্ব পায়। তবুও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন, পরোপকারী এবং সহানুভূতিশীল মনোভাব ও উদার মানসিকতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে এই মহামারী সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। মহামারীর ফলেই সৃষ্টিকর্তার ভালবাসা গভীরভাবে বুঝতে ও উপলব্ধি করতে শিখিয়েছি এবং নিজের ও পরিবেশের প্রতি অধিক সচেতন হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। তাই আসুন আমরা ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং আধ্যাত্মিক জীবনকে মহামারীকালীন ভিন্ন ধারায় অনুধ্যান করি এবং বিদ্যমান সম্পর্কগুলোকে নতুনরূপে সাজাই ॥ 

পবিত্র আত্মা উচ্চ সেমিনারী থেকে


Post a Comment

Previous Post Next Post