স্বাগত ২০২৩ ॥ জাগুগ নতুন আশার আলো

সম্পাদকীয় ডেক্স : ঘন কুয়াশা ও হিমেল চাঁদর ছিন্ন করে নতুন আলো নিয়ে আবারও এসেছে গ্রেগরিয়ান নববর্ষ। অতীত ও আগামীর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, সাফল্য-ব্যর্থতা, আনন্দ-বেদনা, উপেক্ষা-বঞ্চনা এবং পূর্ণতা-অপূর্ণতার হিসেব করাই যেন প্রকৃতিরই নিয়ম। এই চিরায়ত সত্যকে মেনে নিয়ে ফেলে আসা দিনগুলোর হতাশার খোলা প্রান্তরেও উদিত হয়েছে সোনালী সূর্য ও হাতছানি দিচ্ছে সোনালী কিরণে উদ্ভাসিত নবজীবন। 


গত বছর কাতার আয়োজিত ফিপা বিশ্বকাপ ও আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ শিরোপা জয় যেন দেশে রীতিমত উত্তাপ ছড়িয়েছে, আর্জেন্টাইন সমর্থকদের ভাসিয়েছে আনন্দ-উল্লাসে। বিশ্বকাপের মধ্যদিয়ে দুই দেশের মানুষদের মাঝে একটা সৌহার্দ্যতার ভাব, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার বন্ধন সৃষ্টি হয়েছে, এমনই চিত্র ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে বিপুলভাবে প্রচারিত হয়েছে যা ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে ক্রীড়াঙ্গন ও আন্তর্জাতিক মহলে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নে ও একে-অপরকে অদৃশ্য এক বন্ধনে আবদ্ধ রাখতে ক্রীড়ার গুরুত্ব কতখানি তা আরও একবার প্রমাণিত হলো। অন্যদিকে, বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে প্রিয় ব্রাজিলের এমন অপ্রত্যাশিত বিদায় যেন কাঁদিয়েছে অগণিত নেইমার ও ব্রাজিল ভক্তদের। বিদায়ী বছরের এসকল অপূর্ণতা, কষ্ট, হতাশা-নিরাশা, অপ্রাপ্তির নীল বেদনা অচিরেই দূরীভূত হোক এবং ভালোবাসাময় স্মৃতি-সম্ভার নিয়ে আসন্ন বছর হয়ে উঠুক দুর্নীতিমুক্ত, শোষণমুক্ত এবং অমিত সম্ভাবনার। অন্যদিকে, দেশে প্রথম বিদ্যুৎচালিত মেট্রোরেল চালুর মধ্যদিয়ে যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার মাইলফলক স্থাপ্তিত হতে যাচ্ছে, তার সুফল যেন সকল শ্রেণির মানুষ ভোগ করতে পারে সেটাই কাম্য।



এছাড়াও, দেশের অর্থনীতিক অবস্থাকে শক্তিশালী ও গতিশীল রাখতে তৎপর হতে হবে। কেননা ২০২১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের ইতিহাসে বৈদেশিক মুদ্রার যে রিজার্ভ ৪৩.৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে এক মাইলফলক সৃষ্টি করেছিলো, তা ২০২২ খ্রিস্টাব্দে এসে অবিশ্বাস্যভাবে  হ্রাস পেয়েছে যা মোটেই আশান্বরূপ নয়। এছাড়াও, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে সকল প্রকর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। তাছাড়া, বিগত বছরে টাকার বিপরীতে নাটকীয়ভাবে ডলারের ঊর্ধ্বগতি ও নিত্য ব্যবহৃত দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি যেন সকল শ্রেণির মানুষদের অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষ করে, দ্রব্যমূল্য গরিব-অসহায় ও নিম্ন আয়ের মানুষদের হাতের নাগালের বাইরে ছিলো যা অনাহারে থাকা মানুষদের সংখ্যা দ্বিগুণ করেছে। ফলে, নি¤œশ্রেণির মানুষেরা তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব যে সারা বিশ্বের পাশাপাশি দেশেও বিরাজ করছে তা অনস্বীকার্য। সেজন্য, দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে এনে সকল শ্রেণির মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে অনতিবিলম্বে কার্যকরী করতে হবে। 


এদিকে, দেশে নানা ঘটনার জের ধরে ধর্ষণ, খুন-অপহরণ, হত্যা, চুরি-ডাকাতি ইত্যাদির সাক্ষী হয়েছে বিদায়ী বছর। তাছাড়া, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, হামলা-ভাংচুর ইত্যাদি দেশের মানুষের মধ্যে অস্থিতিশীল ও চাঞ্চল্যকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে। তাই আগামী বছর এসকল অপ্রীতিকর কর্মতকর্তা-, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা যেন না ঘটে সেটাই আশা করি। বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্যাপনের এই প্রাক্কালে মুক্তিযুদ্ধের একক ও অভিন্ন চেতনা দেশের সকল মানুষকে আবারও নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে উদ্বুদ্ধ করুক এবং দেশ ও জাতির সার্বিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে অক্লান্ত পরিশ্রম করুক মনে-প্রাণে তাই প্রত্যাশা করি। দেশকে নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে যেতে সকলকে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে এবং নানা মুনির নানা মতকে উপেক্ষা না করে যা ইতিবাচক ও মঙ্গলদায়ক তাই প্রাধান্য দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুবর্ণজয়ন্তীর শুভক্ষণে দেশের সকল স্তরের মানুষকে সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত ও সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা যেন ব্যহত না হয়, সেলক্ষ্যে আমাদের সকলকে অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে। সুতরাং, নিজেদের ভাগ্য গড়ার কারিগর নিজেদেরকেই হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন।

পরিশেষে, দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল বন্ধন আরও দৃঢ় ও জোরদার হোক। দেশের জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠন না করে তা সমৃদ্ধ, রক্ষা ও সংরক্ষণে সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত হতে হবে। সেই সাথে প্রত্যাশা করি, আগামী বছর দেশে বসবাসরত অস্বীকৃত আদিবাসীরা তাদের প্রাপ্য স্বীকৃতি ও মর্যাদা পাক, মৌলিক অধিকারবঞ্চিত মানুষের অধিকার নিশ্চিত হোক এবং দেশের মানুষ দরিদ্রতা, বঞ্চনা ও শোষণমুক্ত ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকুক। শিশুরা ভয়-ভীতি পেরিয়ে প্রাণচঞ্চল জীবন ফিরে পাক, প্রবীণেরা বেঁচে থাকার আনন্দ ও আশা খুঁজে পাক। নতুন বছর সকলের জীবনে আশার কিরণ নিয়ে আসুক এবং সকলের জীবন সোনালী আভায় ভরে উঠুক ॥


[জীবন ও সমাজে- পাঠাতে পারেন আপনারও বস্তুনিষ্ঠ লেখা প্রবন্ধ, গল্প ও ফিচার। 
লেখা পাঠানোর ঠিকানা : jibonoshomaj@gmail.com ] 

[দৃষ্টি আকর্ষণ: যদি মনে করেন এমন কোন আলোকিত ব্যক্তিকে নিয়ে আমাদের জীবন ও সমাজের অনলাইন ম্যাগাজিনে বিশেষ ফিচার করা যেতে পারে, তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। আমরা সেই ফিচার করে তার আলো ছড়াবো, যাতে অন্যরাও সেই ব্যক্তিত্বের আলোয় আলোকিত হতে পারে। 

 আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন : jibonoshomaj@gmail.com] 

[পাঠকদের  দৃষ্টি আকর্ষণ:  করোনাকালে আপনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের এমন কোন অগ্রণী ভূমিকা কি ছিল যা নিয়ে জীবন ও সমাজ-এ ফিচার করা যেতে পারে। তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন : jibonoshomaj@gmail.com] 

Post a Comment

Previous Post Next Post