এক পলকে একটু দেখা!

এক পলকে একটু দেখা!

লাকী ফ্লোরেন্স কোড়াইয়া 


দেশে ফিরতেই চারিদিক থেকে বায়ুর চাপের মতনই চাপ ভর করতে লাগল পলনের  উপর। এই চাপ দূর করার মন্ত্র জানা বাল্যকালের সুখ দুঃখের বন্ধু দিবাকরের বাসার দিকে ছুটল পলেন।


পারিবারিক চাপের বর্ণনা শেষ করে বলল,এবার বল তো কি করি?এ বছর বিয়া করার চিন্তা করে দেশে আসি নাই, বুঝলি?


দিবাকর বলল-তো সমস্যা  কি?সবাইকে নিয়ে মিটিং করে তোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দে। 


সে করার আর সময় কই? মনে হয় আমার দিদিমা কিছুদিনের মধ্যেই মারা যাবেন!মুখের কোনরূপ পরিবর্তন ছাড়াই বলল পলেন।

মানে কি? কি হইছে উনার?



বিয়া খাওয়ার রোগ হইছে মনে হয়! বলে কিনা নাতী বউ না দেখে মরলে নাকি শান্তি  পাইবে না।


ও, এই রোগ সব দিদিমা-দাদু, ঠাকুরমা-ঠাকুর দাদারই আছে। এর নাম হল 'ব্লাক মেইল" রোগ! নাতি-নাতনীদের বিয়ের বয়স হইলেই এই রোগ তাদের ঘাড়ে ভর করে।বুঝলি?লম্বা এক সান্ত্বনার বানী শোনালো দিবাকর।


ঘটনা সত্য! দিবাকরকে সাপোর্ট দিল পলেন। শুনছি আমার বাবার দিদিমাও এই বইল্যা আমার বাবারে বিয়েতে রাজী করাইছিল।এরে কয় রাজ কপাল!


তবে কি করবি? আমার বন্ধু মোহননের একটা বোন আছে,যাবি নাকি দেখতে?


তোর কি মনে হয় এমনিই ঘর থেকে বের হইছিনি? তবে আগে থেকে বলিস না কিছু।ভয় পাই, বুঝলি?বলেই হেসে ফেলল পলেন।


বাসা থেকে বের হতেই কোথা থেকে একটা শাটল উড়ে এসে পলেনের মাথায় পড়ল। আরে...এটা আবার কে মারল রে?মাটি থেকে শাটল তুলে নিল পলেন।


শাটলটা দেখেই দিবাকর তাকালো ছাঁদের দিকে।দিবাকরদের বাড়িটা দুইতলা।শাটলটা যে ছাঁদ থেকে এসেছে, সেটা বুজতে বাকি রইলনা।শাটলটা হাতে নিতেই উপর থেকে কেউ বলল,দাদা শাটলটা দিয়ে যা!


পলেন ছাঁদের দিকে তাকালো। একটা  মুখ দেখতে পেল।দুই হাতে রেলিং ধরে নিচের দিকে ঝুঁকে আছে মেয়েটা।


দিবাকর বলল,নিচে এসে নিয়ে যা।আমি বের হচ্ছি। শাটলটা নিচে রেখে বলল,এ হচ্ছে আমার বোন দেবযানী।তোর মনে নেই ওর কথা,মেয়েরা হঠাৎ বড় হয়ে যায়।আমার সাত বছরের ছোট। চল।এদিকে আবার দেরি হয়ে যাবে।


দিবাকর কথা বলার আগেই চোখ ফিরিয়ে নিয়েছিল পলেন।কিন্তু তখন বুঝতে পারেনি আঘাতকারী তারই বন্ধুর একমাত্র বোন।দেবযানীর সুন্দর মুখটা দ্বিতীয়বার দেখার ইচ্ছা হলেও তাকানোর সাহস হল না।


মোহনদের বাড়ি থেকে ফিরতে বেশ দেরিই হল।দিবাকর আরো দুইটা মেয়ের সংবাদ দিবে,তাই আপাততঃ চুপ থাকাই উত্তম ভেবে বাড়িতে পাত্রী  দেখার বিষয়টা চেপে গেল। 


এই যে শুনছেন? মেয়েলি কন্ঠ শুনে পিছনে তাকালো পলেন।হাত দুটো পিছনের দিকে নিয়ে আর্মিদের মত দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটি।


অবশ্যই শুনছি।আমি কালা নই, বুঝেছেন?


সে ভগবানের অশেষ দয়া আপনার উপর।মেয়েটি বলল।


মনে করিয়ে দেবার জন্য বুঝি ভগবান আপনাকে নিচে পাঠিয়েছেন?প্রশ্ন করল পলেন।


ভগবানের কি আর কোন কাজ নেই নাকি?


ও আচ্ছা,যখন ভগবানের কোন মাথা ব্যথা নেই আমাকে নিয়ে,তখন আপনার কি এত দরদ যে,আপনি আসমান থেকে নেমে এলেন?দুই হাত বুকের কাছে আড়াআড়ি রেখে প্রশ্ন করল পলেন।


মেয়েটি এতটুকুও রাগল না।কথায় হেরে গেলে মেয়েরা রেগে যায় আর সত্য কথা যত দ্রুত বলেই বিদায় হয়।কিন্তু এর বেলায় বিপরীত ই মনে হল।


জ্বি না,আমি আসমান থেকে আসিনি!ওই বাড়ির ছাঁদ থেকে নেমে এসেছি।চোখের ইশারায়  দুইতালা বাড়ির দিকে দেখাল।


খুব চেনা মনে হল বাড়িটা।


চিনতে পারেন নি তো?বাম হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,আমার শাটল দিন!


মেয়েটাকে কেমন যেন মনে হতে লাগল!


কি হল?চিনতে পারছেন না?তখন তো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলেন।মনে হয়েছিল,শাটল না হয়ে যদি ক্রিকেটের বল হত,বেশ হত!অদ্ভুত ভঙ্গিতে বলল মেয়েটা।


ও, আচ্ছা এবার চিনেছি,তারমানে তুমি দিবাকরের বোন, তাই না?


জ্বি, না, দিবাকর আমার দাদা। বুঝলেন?


হা হা হা শব্দে হেসে উঠল পলেন। তুমি দেবযানী, এটাই সত্যি।


সে যে ই হই, বলব কেন?


তা ঠিক।আমি ড্যাবড্যাব করে তাকাইনি, এটাও সত্যি। 


তাকিয়েছেন, আর দ্বিতীয়বার ও তাকাতে চেয়েছিলেন।


দেখ,দেবযানী, আমি হিসেব করেই বলে দিতে পারব, কত সেকেন্ড তাকিয়ে ছিলাম, বুঝেছ?


ও,তাই নাকি? তাহলে বলে ফেলুন। 


২৪ সেকেন্ড এর বেশি তো নয়-ই!


প্রমাণ দিন, আপনি সত্য বলেছেন!


দেখ দেবযানী, আমরা যখন কোন কিছু দেখি, তখন একটানা ২৪ সেকেন্ডের বেশি দেখি না।২৪ সেকেন্ড  =১ পলক।কি বুঝলে?


দেবযানীর মুখে অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠল।ডান হাতটা সামনে নিয়ে এল।হাতে পানির বোতল দেখতে পেল।দেবযানী  যত্ন করে বোতল টা খুলে ডান হাতের তালুতে পানি ঢেলে পলেনের উপর ছিটিয়ে দিল ভু...ল...ভু...ল...ভু...ল...বলেই দৌঁড়ে পালিয়ে গেল।


পানির ঝাপটা পরতেই পলেনের ঘুম ভেঙ্গে গেল! বাইরে দারুণ বৃষ্টি হচ্ছে।জানালা দিয়ে বৃষ্টির ঝাপটা আসছে।


সকালে দিবাকরকে ফোন দিল পলেন।


কিরে রাতে কি ঘুম হয়নি?


হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করল দিবাকর।


ঘুম তো হইছে রে দোস্ত, কিন্তু মাঝরাতের বৃষ্টি ঘুম কাইরা নিছে! পাল্টা হাসিতে উত্তর  দিল পলেন।


তবে,পাত্রী দেখা শেষ? কাজ হইছে মনে হচ্ছে!


হুম,তা বলতে পারিস এক প্রকার শেষ-ই।আমার পরিবারকে তোর বাড়িতেই পাঠাবো ভাবছি।


মানে কি রে? দিবাকর অবাক হল।


মানে হল, গতকাল শাটলের যে আঘাত পাইছি,সেটা মনে ওই খেলোয়াড় ই সাড়াতে পারবে!দোস্ত তুই ভরসা....


দেবযানীর কথা বলছিস? আমার বোন অনেক চঞ্চল, জেদী আর অভিমানীরে!দেখলি না,তোর মাথায় শাটল লেগেছে,অথচ সরি পর্যন্ত  বলল না।


তুই রাজী কি না বল? পলেনের কন্ঠে উৎকন্ঠা ধরা পরল।


তুই আসবি না?


না, আমার দেখা শেষ!যা করার তোরা করবি।শুভ দৃষ্টিতে দেবযানীর সাথে দেখা হবে আমার।


বোনটাকে নিয়ে চিন্তায় ছিলাম রে। তোর হাতে দিতে পারব সেটা ভাবিনি।ওকে,পাঠিয়ে দে তো পরিবারকে।শুভকামনা রইল!


শুভদৃষ্টি শুভই হলো।দেবযানীকে মনে হল যেন স্বর্গের দেবী।যতটা কল্পনায় ছিল,তার চেয়ে ও সুন্দরী। সুন্দরী মেয়েরা জেদী আর অভিমানী না হলে সৃষ্টির মধ্যে বুঝি অপূর্ণতা থেকে যেত।


বাসর ঘরটা দারুণ সাজিয়েছে! দেবযানী খাটের উপর বসা ছিল।পলেনকে ঘরে ঢুকতে দেখেই খাট থেকে নেমে টেবিল থেকে লাল কাপড়ে ঢাকা একটা ট্রে এনে বিছানার উপর রাখল দেবযানী। 


লাল কাপড়টা সরিয়ে নিতেই চোখ কপালে উঠে গেল পলেনের।দুটো র‍্যাকেট আর একটা শাটল রাখা।হায়রে সাধের বাসর! শেষে কিনা ব্যাট মিন্টন খেলেই রাত পার করতে হবে! মনে পরল- দেবযানী বড্ড জেদী আর অভিমানী!কাজেই স্মরণীয় সুন্দর রাতে এমন সুন্দরী বউকে না রাগানোই মঙ্গল! 


পলেন হাত বাড়িয়ে একটা র‍্যাকেট তুলে নিতেই দেবযানীর চেহারাটা উজ্জল হয়ে উঠল।


লেখক : লাকী ফ্লোরেন্স কোড়াইায়া

শিক্ষিকা, বটমলী হোম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়

ফেইসবুক লিংক : Lucky Corraya


[জীবন ও সমাজে- পাঠাতে পারেন আপনারও বস্তুনিষ্ঠ লেখা প্রবন্ধ, গল্প ও ফিচার। 
লেখা পাঠানোর ঠিকানা : jibonoshomaj@gmail.com ] 

[দৃষ্টি আকর্ষণ: যদি মনে করেন এমন কোন আলোকিত ব্যক্তিকে নিয়ে আমাদের জীবন ও সমাজের অনলাইন ম্যাগাজিনে বিশেষ ফিচার করা যেতে পারে, তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। আমরা সেই ফিচার করে তার আলো ছড়াবো, যাতে অন্যরাও সেই ব্যক্তিত্বের আলোয় আলোকিত হতে পারে। 

 আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন : jibonoshomaj@gmail.com] 

[পাঠকদের  দৃষ্টি আকর্ষণ:  করোনাকালে আপনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের এমন কোন অগ্রণী ভূমিকা কি ছিল যা নিয়ে জীবন ও সমাজ-এ ফিচার করা যেতে পারে। তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন : jibonoshomaj@gmail.com] 



Post a Comment

Previous Post Next Post