আনুরূপ্য!

লাকী ফ্লোরেন্স কোড়াইয়া : একটি বৃক্ষ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় তার মূল বা শিকরের গুণে। প্রধান মূলের সাথে যুক্ত থাকে শাখামূল। এই প্রধান মূল ও শাখা প্রশাখা মূলগুলো খাদ্য রস সংগ্রহ করে বৃক্ষকে টিকিয়ে রাখে। ফলশালী করে তোলে। কিন্তু বৃক্ষটি যখন শুকিয়ে যায়, তখন সে তো আর ফুল ও ফল দিতেই পারে না,কেননা সে তো তখন মরেই যায়। মরে যাওয়া বৃক্ষ তো কেবল আগুনে ফেলে দেওয়ারই যোগ্য হয়ে উঠে। একটি বৃক্ষের শুকিয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক ভাবে না দেখে একটু গভীরভাবে দেখলে এর প্রকৃত কারণ জানা যায় এবং অবশ্যই এর প্রতকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে বৃক্ষকে বাঁচিয়ে তোলা যায়। আর এতে করে আমরা সকলেই লাভ বান হয়ে উঠতে পারি। কেননা বৃক্ষ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।

বৃক্ষ শুকিয়ে যাবার পিছনে কারণগুলো এভাবে ভাবা যায়-

👉 পারে পোকাতে শিকর কেটে  দিয়েছে 

👉 হতে পারে কেউ শিকর কেটে দিয়েছে।

👉 রোদের কম তাপের কম বা বেশির প্রভাব। 

👉 সঠিক পরিচর্যার অভাব।

মানুষের জীবন ও তদ্রূপ বৃক্ষের আনুরূপ্য যেন। মানুষের জীবনে সফল হতে না পারার পিছনে এবং পতন ও অধঃপতনের পিছনেও কিছু কারণ থাকে, যা কখনো দেখা যায়;কখনো অদৃশ্য রয়ে যায়। আর অদৃশ্য থাকার পিছনে কারণ হলো আমরা কারণগুলো জানার চেষ্টা ও করিনা। নিজেরাও কখনো নিজেদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে ভাবি না। তবে ভাবি আর নাই বা ভাবি, নিজেদের জীবনের পতন এবং অধঃপতনের পিছনে মারাত্মক কারণগুলো এইভাবে দেখতে পারি-

👉 ব্যক্তির নিজের নির্বুদ্ধিতার জন্য 

👉 লোভ, অহংকার, অহমিকার জন্য, হামবুড়া স্বভাবের জন্য 

👉 অন্যের কথায় প্ররোচিত হয়ে নিজের বুদ্ধির  অপব্যবহার করার ফলে।

👉 সঠিক জ্ঞানের অভাবে। 

👉 ক্ষমতা বা তার দায়িত্বের অপব্যবহারের ফলে।

👉 সময়মত সঠিক দিক নির্দেশনার ও পরিচর্যার অভাব।

👉 পরনির্ভরশীলতা।

👉 অন্যকে দেবতা মানা।

👉 মানুষ রুপী দেবতাদের মন রক্ষাকরে চলা।

👉 অহংকারী মনোভাবের জন্য। যুগে যুগে বাণী চিরন্তন - অহংকার পতনের মূল।

👉 অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে

👉 সামাজিক ও পারিবারিক নিরাপত্তার অভাবে।

আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি তাই জানান দিচ্ছে কখনো অন্যের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে বা কারো মন রক্ষার্থে অপরজনের বিরুদ্ধে কথা বলছি,পিছনে গোয়েন্দার মত লেগে থাকছি, অপপ্রচার করছি। নিজেদের অবস্থান ভুলে যাচ্ছি।কেউ ভালো কিছু করলে মেনে নিতে পারছি না।ভালো কাজের উৎসাহ দেবার বদলে তাকে নিরুৎসাহিত করছি।আর প্রশংসা তো বহু দূরের ব্যাপার!আর এসব করে কার ক্ষতি হচ্ছে? সেই তো নিজেরই, তাই নয় কি? অথচ এই সামান্য বিষয়টি বুঝার ক্ষমতাও আমাদের হচ্ছে না।কী দুর্ভাগ্য আমাদের!

তবে একথা সত্যি  যে, পৃথিবীতে সব সমস্যারই সমাধান আছে। শুধু তা বুঝে নিতে হবে।আর আমরা নিজেরাই পারি আমাদের অনেক সমস্যার সমাধান করতে।

বৃক্ষের শুকিয়ে যাওয়ার পিছনের সঠিক  কারণটি যদি জানা যায়,তবে তার সঠিক পরিচর্যা করে গাছটিকে বাঁচানো সম্ভব। একই ভাবে আমরা যদি আমাদের জীবনের দুর্বল দিকগুলো জানতে পারি, তবে আমরাও আমাদের জীবনের সমস্যাগুলোর সঠিক সমাধান করে সুন্দরভাবে জীবনকে সাজাতে পারব।আর এই ক্ষেত্রে নিজেদের সচেতন থাকা উচিৎ বলে মনে করি। তবে সংশোধনের ব্যাপারে আমরা সহজেই অন্যের মতামত গ্রহণ করতে চাই না।এটা আমাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। এই দুর্বলতা দূর করতে না পারলে টিকে থাকাটাই ভাবনার বিষয়! 

বর্তমান পরিস্থিতিতে "নিজেকে জানা'টা সবচেয়ে বেশি জরুরি। সময় এসেছে নিজেকে জানার। যদি নিজেরা বুঝতে না পারি কীভাবে ব্যক্তিগত সমস্যার সমাধান করা যায়,তবে প্রয়োজনে আমরা বিশ্বস্ত কারো সাহায্য কামনা করতে পারি এবং তার মতামতকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করে করে নিজেদের জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধি করতে পারি। নিজেদের শোধরে নিতে পারি। প্রকৃতি নানাভাবেই আমাদের শিক্ষা দেয়।প্রকৃতি থেকে শিক্ষা নিয়েও আমরা আমাদের জীবনের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে পারি।

লেখক : লাকী ফ্লোরেন্স কোড়াইায়া

শিক্ষিকা, বটমলী হোম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়

ফেইসবুক লিংক : Lucky Corraya

[দৃষ্টি আকর্ষণ: যদি মনে করেন এমন কোন আলোকিত ব্যক্তিকে নিয়ে আমাদের জীবন ও সমাজের অনলাইন ম্যাগাজিনে বিশেষ ফিচার করা যেতে পারে, তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। আমরা সেই ফিচার করে তার আলো ছড়াবো, যাতে অন্যরাও সেই ব্যক্তিত্বের আলোয় আলোকিত হতে পারে। 

 আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন : jibonoshomaj@gmail.com] 

[পাঠকদের  দৃষ্টি আকর্ষণ:  করোনাকালে আপনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের এমন কোন অগ্রণী ভূমিকা কি ছিল যা নিয়ে জীবন ও সমাজ-এ ফিচার করা যেতে পারে। তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন : jibonoshomaj@gmail.com]  

[জীবন ও সমাজে-এ পাঠাতে পারেন আপনারও বস্তুনিষ্ঠ লেখা প্রবন্ধ, গল্প ও ফিচার। 
লেখা পাঠানোর ঠিকানা : jibonoshomaj@gmail.com ]