তুলতুলির চিঠি

তুলতুল,

আমার কথার কোন শেষ নেই, শেষেরও শেষ নেই। বিভিন্ন সময়ে লেখা, আবেগের বশে, বাস্তবতার প্রেক্ষিতে লেখা; তাই অসঙ্গতি থাকতে পারে, তাই কষ্ট করে বুঝে নিও। তবে এটা মাত্র এক টুকরো চিঠি। ধরে নাও চিরকুট। বাকিটা হয়তো একদিন খুঁজে পাবে।

তুমি আমাকে বলো যে, আমি তোমার ছোট-ছোট বিষয়গুলো খেয়াল করি না, মূল্য দেই না। অথচ একটু ভেবে দেখো, আমি ছাড়া কেউ কি তোমার ছোট-ছোট বিষয়গুলো মূল্য দেয়? আমি তোমাকে কতখানি ভালোবাসি তা মেপে দেখানোর বা বুঝানোর কোন ক্ষমতা আমার নেই। তোমাকে ভালোবাসার যোগ্যতাও আমার নেই। তাতো আমি আগেই বলেছি, সব সময়ই বলি। আমি তোমার জন্য কিছু করতেও পারি না। সেটাই আমার কষ্ট। অবশ্য যা করি, সবই তোমার কাছে গার্ডিয়ানের দায়িত্ব ছাড়া কিছুই মনে হয় না। তা নিয়ে আমার কোন আক্রোশ নেই। তুমি যা দিয়ে মূল্যায়ন করতে চাও, তাই কর। 

যখন আমি তোমার সাথে থাকি, আর তুমি সিলভিয়ার কথা ভাবো, তার কথা বলো; তখন খুব কষ্ট লাগে। নিজের মানুষের কাছে অন্যের কথা শুনি, তখন একটা-আধটু খারাপ লাগে। মাঝে-মধ্যে কিছু বলতে চাই না, শুধু তোমার খারাপ লাগবে বলে। হয়তো, তোমার তার কথা বলতে, শেয়ার করতে ভালো লাগে। আমি জানি, তুমি যখন বাসা থেকে বের হও, তার সাথে দেখা হবে কিনা, তা নিয়ে চিন্তা করো। আসলে এটার জন্য তোমাকে দোষারোপ করি না, এটার জন্য আমি ছাড়া আর কেউ দোষী নয়। আমি তোমাকে সময় দেইনি, কিন্তু সে তোমাকে সময় দিয়েছে। তুমি নিজেই বলেছো। আমি না থাকলে সে তোমার খেয়াল রাখছে। সকালে বার-বার কল করে জাগিয়ে দিবে। এমন কেয়ার করা মেয়ে পাওয়া কিন্তু সত্যিই ভাগ্যের বিষয়। আমার অবর্তমানে তোমাকে সান্ত্বনা দিয়েছে, ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে, গান শুনিয়েছে; তার মনের কথা সহভাগিতা করেছে। তোমরা একসাথে ব্যবসা করবে বলে ঠিক করেছো। তোমার ভাষায়- আর কত, কতকিছু! আমার কথা মুক্তার নামে বলে হয়তো মনে সান্ত্বনা পেয়েছো, অনেক অভিমান-অনেক হতাশা জমে ছিলো। কাউকে বলতে পারছিলে না। এখন হয়তো তোমার মনটা হালকা হয়েছে তার সহানুভূতি পেয়ে। প্রয়োজনও ছিলো, এতোদিন কাউকে পেয়েছো যাকে মন খুলে কিছু বলার। যখন ক্ষমা চেয়ে, কষ্ট পেয়ে সিলভিয়াকে মেসেজ দিয়েছিলাম কথা বলার জন্য, তুমি খুশী হয়েছেলে। তবে তোমার প্রশ্ন শুনে সত্যিই অবাক হয়েছিলাম, যখন জিজ্ঞেস করেছিলে যে, আমি পারমিশন দিয়েও কেন তোমাকে কথা বলতে দিচ্ছি না, তখন বুঝেছিলাম, তার সাথে কথার ইচ্ছে কতখানি। তারপরও কিছু বলিনি তোমাকে। সেদিনিই কষ্ট লেগেছিল।

আমি হলের সামনে তোমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকি, সিলভিয়ার সাথে দেখা করছো কিনা, তা ভেবে নয়। সকাল হলেই তোমার কাছে ছুটে যেতে মন চায়, তাই যাই। সারাদিনতো পাবো না, সকালটা যেন কিছুক্ষণ তোমার আশে-পাশে থাকতে পারি, সেজন্য। জানি, তোমার কাছে অদ্ভূত লাগে, অপ্রয়োজনীয় মনে হয়। সন্দেহ করি মনে হয়। ঠিক তোমার মতো। যদি তাই হতো, তাহলে সারাক্ষণ সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকতাম। এতাটুকু ধৈর্য আমার আছে, হয়তো তোমার অজানা নেই। প্রয়োজনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে পারি, তারপরও আমি ক্লান্ত হবো না। বিরক্তও হবো না। ভেবে দেখো, যখন তুমি আমার জন্য শুধু শুক্রবারটা অপেক্ষা করতে, বিরক্ত হয়ে যেতে, আমি সেসব দিনগুলোর কথা ভেবে তোমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকি। তবে বিরক্তি নিয়ে নয়, আনন্দমনে। নিজেকে তোমার জায়গায় দাঁড় করিয়ে তোমার জন্য অপেক্ষা করি, গলির দিকে নিষ্পলকে তাকিয়ে থাকি যেন যতক্ষণে তুমি গলিতে হাঁটবে, আমি যেন প্রাণভরে তোমাকে দেখতে পারি, মনে-মনে না বলা কিছু কথা বলতে পারি। কতো কিছু বলি, তুমি শুনতে পাও না। সব রাগ, অভিমান, কষ্ট ভুলে তোমাকে ভালো রাখার দৌঁড় প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ি। তোমার জন্য কি খাওয়াবো, তুমি কি খাবে, তা নিয়ে সারাদিন ব্যস্ত থাকি। আর তুমি আমাকে সব সময় ব্যস্ত পাও। এ্যাপিকে জিজ্ঞেস করে দেখ, আমি কি করি না তোমার জন্য। সারাক্ষণ তোমার কথা বলি, দুপুর হলেই, নিজের খাওয়ার কথা না ভেবে তোমার কথা ভাবি, বিকেল হলেই, নিজের বিশ্রাম, ঘুম, স্নান বাদ দিয়ে ভাবি, আগে তোমার খাবার দিয়ে আসি। তারপর সব করবো আমি। এগুলো কিছুই নয়। এগুলো দেখা যায় বলে, মানুষ দেখে। যা দেখা যায় না, তা কিভাবে দেখাবো তোমায়। তুমি আমার জন্য কি, তা তুমি নিজেও জানো না। কখনও বুঝতেও চাওনি। এটা তোমার কোন দোষ নেই। এসবই আমার কারণ। তুমি আমাকে সম্মান দিয়েছিলে, কিন্তু আমি মর্যাদা রাখতে পারিনি। তুমি আমাকে ভালোবেসেছিলে, আমি সে ভালোবাসার মূল্য দিতে পারিনি। আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলে, কিন্তু আমি সে স্বপ্নের মূল্যায়ন করিনি। আমি আসলে কোন কিছু মূল্যায়নেরও যোগ্য নই।     

আমিতো ঘ্রাণহীন গোলাপের মতোই নিজেকে ভাবি, কখনও ভাবি না আমি সুবাস ছড়াতে পারবো। তোমাকে সুখি করতে পারবো। আমিতো কখনও তোমাকে সুখ দিতে পারিনি। আমাকে ছুঁয়ে শুধু কষ্টই পেয়েছো, আর কিছু তোমার পাওয়া হয়নি। তুমি সর্বদা আমাকে আগলে রেখেছো, যত্ন নিয়েছো, সঠিক পথে আনতে চেয়েছো। আমি হয়তো ব্যর্থ হয়েছি। নিজেকে হাজারো বার সংযমে রেখেও তোমার কাছে ভালো হতে পারিনি। বিগত একটা মাস অনেক কষ্টে কাটিয়েছো। আমার কারণে তোমার দুচোখ বিশ্রাম পায়নি। আমাকে পেতে ইচ্ছে করলেও, পাওনি, তাই ভিডিয়ো দেখে সময় কাটিয়েছো। এটা নিয়েও কোন আক্রোশ নেই আমার। নিজেকে আমার মায়া থেকে আলাদা করার জন্য মানুষও খুঁজে নিয়েছো। তার প্রতি নির্ভর করতে পেরেছো। আজকাল নির্ভর করার মতো লোক কমই আছে। তবে আমার বিশ্বাস, তোমার জন্য ঈশ্বর ও মা মারীয়া খারাপ কিছু রাখেনি। তিনি তো তোমার ভালই চান। তোমার বিশ্বাসের জোরেই তোমার যোগ্য একজনকে পাঠাবেন তোমার কাছে। আমি অযাচিত, ঝড়ের মতো এসে পড়েছি তোমার জীবনে, আর সব লন্ডভন্ড করে দিয়েছি। আমাকে নিয়ে তুমি শুধু কষ্টই পাবে, চেয়েও বিশ্বাস করতে পারবে না আমাকে। যতই ভালো থাকার চেষ্টা করি না কেন, দিন শেষে আমি খারাপই হই। আমি কি কখনো নিজেকে ভালো হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করেছি। তুমিতো আমাকে চেনো, জানে, কতটা খারাপ, কতটা ভালো সেটাও জান। যখন তুমি দাবী করো যে, তুমি ছাড়া আমাকে আর কেউ চেনে না, তখন সত্যিই ভাল লাগে, তারপরও কখনও কি বলেছি যে, ভালো লাগে, সব সময় বিপরীত উত্তরই দিয়েছি। আমাকে চেনার মতো আজও কেউ জন্মায়নি। এসবই এমনিই বলি। তুমি কি বল, তা দেখতে। 



মনে-প্রাণে প্রার্থনা চাই যেন নিজের জীবনের গতি এখানে সমাপ্ত হোক। ব্যকুলভাবে কামনা করি যেন আমি কাউকে কষ্ট দিয়ে এ ধরা থেকে বিদায় নেই। সব পথ যখন রুদ্ধ হয়ে যায়, একটা পথ যা কখনও বন্ধ হয় না, তা হলো মৃত্যুদুয়ার। 

অতীত যেমন সান্ত্বনাবিহীন ছিল, তেমনি আগমীও আসবে হয়তো । তবুও চেষ্টা করেছি নিজেকে নানান কাজে ব্যস্ত রাখতে। প্রশ্ন করেছিলাম, এতো কষ্ট দেই তাহলে আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছো না কেন? রেখেছো কেন? কষ্টতো আমি সেদিনই পেয়েছিলাম, যেদিন তুমি কোন এক সন্ধ্যায় পাশাপাশি বসে উত্তরে কত সহজেই বলেছিলে, আমিতো ব্রেকআপ করেছিলাম, তুমি আমার কাছে এসেছো; আমি তোমার কাছে যাইনি। সেই মুহূর্তে হেসে কথা বলা আমার পক্ষে কতোটা কঠিন ছিলো তুমি জানো না। সেদিনও নীরব ছিলাম। আমার নীরবতা কই কেউতো দেখেনি। বেশি কষ্ট পেলে নাকি কাঁদতে হয় না। কাঁদলেও নাকি আড়ালে কাঁদতে হয়, আঁধারে কাঁদতে হয় যেন কেউ দেখতে না পারে। 

তুমিতো প্রতিদিনই আমার জায়গা কোথায় দেখাতে চেয়েছো, শুরু আমার বুঝতে দেরী হয়েছে। তোমার কাছে ফিরে এলাম, তবুও আমাকে আপন করতে পারনি। খুচিয়ে-খুচিয়ে কথা বলে সর্বদাই কষ্ট দিয়েছো। তারপরও সব ভুলে তোমার কাছে চলে যাই, তোমার স্পর্শ পাওয়ার জন্য পাগলপ্রায় হয়ে যাই। আবদার করি। তোমাকে কখনও রোবট ভাবিনি, খেলার পুতুল ভাবিনি; কখনও অযাচিত ভাবিনি। তোমাকে আমার সবচেয়ে কাছে পেয়েছি। শরীরের নয়, মনের কাছে। যার কাছে আমার শরীর নয়, মনের মূল্য বেশি। কিন্তু তা তোমাকে বুঝানোর ভাষা নেই আমার। 

তুমি বার-বার বুঝাতে চেয়েছে, তুমি যেমন আমাকে আটকানোর পরও তার সাথে যোগাযোগ, তুমিও তাই করেছো। আমি যেন তা উপলব্ধি করি। কখন যে তোমার রোষের আগুন প্রতিশোধের অনলে পরিণত হয়েছে, তা তুমি বুঝতে পারছো না। আজ তুমি সমতার কথা ভাবছে। প্রতিশোধের নতুন নাম দিতে চাইছে। সেদিন বুঝলাম, তুমি একটুও বিশ্বাস রাখনি। আজও একই সন্দেহ তোমার মনে। আজ আমি নম্বরটা দিলে তুমি ধরে নিতে আমি বিশ্বস্ত, আজ আমি দেইনি বলে, আজ তুমি আমাকে অস্বীকার করলে। এর চেয়ে যন্ত্রনার আর কি হতে পারে বলো। দোষটা আসলে তোমার নয়। নিজের প্রতি আক্ষেপের শেষ নেই আমার। কত চেষ্টাই না করেছো তার কাছে পৌছানোর। আমি মাঝে এসে শাসন-বারণ শুরু করলাম। সবই অযাচিত। মানায় না আমাকে। জানি। তবুও মন মানে না। বেহায়ার মতো ছুটে যায় তোমার কাছে। হয়তো লাগাম দিতে শিখতে হবে।


আজ জানলাম, তোমার বিশ্বাসের ঘরটা আজ এতোটাই নড়-বড়ে হয়ে গেছে যে, কেউ আমাকে কি মেসেজ দিলো, আর তুমি আমাকে দূরে সরিয়ে সিলভিয়াকেই সম্বল করলে। আমি বুঝে নিলাম, আমি জীবনের মেলায় হারিয়ে গেছি। সত্যিই বলেছিলে, তুমি আমাকে চাওনি, আমিই কুকুরের মতো তোমার কাছে যাই। আমি এতোটাই বোকা, তুমি চেক করেছো যে তোমার ফোনে সিলভিয়ার নম্বর ডিলিট করিনি, তারপরও নিজে ডিলিট করনি। যত্ন করে আগলে রেখেছো। আমার অলটারনেটিভ তো খুঁজেই নিয়েছো। আমার আর কি দরকার। চেয়েছিলাম সত্যিই নিজেকে বেঁচে দিতে। তোমার কাছে না আমার মুল্য বাজারি মেয়ের চেয়ে কম নয়। বিয়ে করতে চেয়ে সত্যিই ভুল করেছো। বেশ্যাদের ভালোবাসতে নেই, তাদের সম্মান দিতে নেই। বাজারু হলে বাজারেই তাকে মানায়। আমাকে মানায়। আমার কষ্ট হচ্ছে না, কারণ আমার ভালোবাসার মানুষই এই তকমাটা প্রথম লাগিয়েছে। আমারও বলতে কষ্ট হয় না, তপ্ত অশ্রুতে গাল ভেজে না।

চোখ বন্ধ করে একবার আমাকে বিশ্বাস করেছিলে, সেই যে ভেঙ্গেছে, আজও তা জোড়া লাগেনি। আমার যদি দায়বদ্ধতা না থাকতো, তবে হয়তো কবেই এই অবিশ্বাসের জগৎ ছেড়ে আমি মাটির সাথে মিশে যেতাম। নিশ্চিহ্ন করে দিতাম নিজেকে, হাওয়ায়-হাওয়ায় আমার গন্ধ লেগে থাকতো। যখন ভালোবাসার ও বিশ্বাসের স্থানে সন্দেহ আর অন্য কেউ জায়গা করে নেয়, সে বার-বার সেখানেই ফিরে যেতে চায়। যে তোমার একাকীত্ব দূর করে, সেইতো আপনজন। যে কষ্টে মলম লাগায়; সেইতো তোমার আপনজন। অপেক্ষার পর উপেক্ষা আর সন্দেহ যখন জীবনে জায়গা করে নেয় পাকাপোক্তভাবে, তখন সেখানে ভালোবাসা নিশ্বাস নিতে পারে না। তুমি শুধু তোমার নীরবতা দেখেছো, আমার নীরবতা কি খেয়াল করেছো? আমার নীরবতাতো চোখে পড়ে না, সব সময় রঙিন চশমা পরে ঘুরি; কি করেই বা বুঝবে। আমাকে বুঝবার মানসিকতা তোমার আর নেই। জানো না, মাঝে-মাঝে আমি নিজেই ভাবুক হয়ে যাই এই ভেবে যে, আমার আসলে বেশ্যা হওয়াটাই যৌক্তিক কি না। 

আমি তোমার মনের কথা পড়ে ভেবেছো, কষ্ট পাবো; তাই না। পাইনি কষ্ট আমি। পরগাছার মতোই কষ্ট আমাকে জড়িয়ে আছে। আমার জীবনের অংশ হিসেবে মেনেই নিয়েছি। জানি না, আর কতোটুকু পোড়ালে তুমি আমাকে বুঝবে, আর কতোটুকু হারালে তুমি খুঁজবে আমাকে। তুমি বলেছো, যদি আমি তোমার কেয়ার করতাম, তাহলে ১ সপ্তাহ পরেই আমি ফিরে আসতাম। ১ মাসে আমি নিজেকে অনুধাবন করেছি, নিজের দোষগুলোকে আমলে নিয়েছি। তোমার কষ্টের ও রাগের কারণ বুঝতে চেয়েছি। কেন তোমাকে কল করিনি জানতে চেয়েছো। প্রতিদিনই ছাদে বসে থাকতাম অনেক রাত অবধি। কাকুর অনুপস্থিতিতে বৃষ্টিতে ভিজেছি, মিথ্যে কথা বলে দূরের ব্রিজে গিয়ে বসে থাকতাম। দাওয়াত আছে বলে কুকদের মিথ্যা কথা বলে ঘরে দরজা বন্ধ করে থাকতাম। আর ফাদার প্রবেশের বিষয়টা হলো- আমি সেখানে কাকুর সাথে দুইবার গিয়েছি। ১৬ তারিখ, যেদিন কাকু প্লিনসন তার প্যারিশে আসছে মিটিং এর-জন্য। সেদিন একসাথে দুপুরে খেয়েছি। অন্যদিন, তারিখ মনে নেই, কিন্তু যাজক দিবসের দিন ছিলো। তার ওখানে ৫টা প্যারিশের ফাদাররা ছিলো, আমি একা থাকবো, আর কাকু দাওয়াত খাবে; তাই আমাকে নিয়ে গেছিলো। একদিন, সে নিজে এসেছিল, কাকুকে ৪০ হাজার ও আমাকে দুইটা টিউবওয়েলের ৫০ হাজার টাকা দিতে আর কিছু ছবি তুলতে। এছাড়া, তার সাথে আমার কোন কথা হয়নি। বই নিয়ে যা বলার সেদিনই কথা হয়েছে। 

একবারও তো ভেবে দেখোনি। প্রতিদিন জানতে চেয়েছি, তুমি কল করবে কিনা। কথা বলবে কি না। তুমি ঘুমের নাম করে সিলভিয়ার সাথে মনের কথা বলতে। আমি নোটিফিকেশন পেতাম, কষ্ট পেতাম কিন্তু তোমার ওপর আমার বিশ্বাস ছিলো, তাই অভিমানে বেশিরভাগ সময়ই চেক করিনি। আমি জোর করে বিশ্বাসকে ধরে রাখতে চেয়েছি, অবিশ্বাসের বীজকে বেড়ে উঠতে দেইনি। বিশ্বাস করো না আর নাই কর, সেদিন সত্যিই অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। তুমি যদি আমাকে দেখাতেই চাইতে, তাহলে মেসেজ ও কল ডিউরেশন ডিলিট করতে না। তোমার যদি তার সাথে সম্পর্কে জড়ানোর কোন ইচ্ছে না থাকতো, সেটা যে কারণেই হোক, তাহলে আমাকে ফ্রেন্ড হিসেবে পরিচয় দিতে না। আমি তোমাকে সত্যিই কষ্ট দিতে চাই না। যখন আমাকে টাকার পাল্লায় মাপো, যখন ভাবো, টাকা-পয়সায় সব আমার কাছে; তখন সত্যিই মনে হয়, নিজেকে বিক্রি করে দেখি একদিন। সেই টাকায় একদিন হলেও তোমায় খুশী করতে পারবো। তুমি সন্তুষ্ট হবে এই ভেবে যে, তোমার কথাই ঠিক ছিলো।

যেদিন তোমার লেটার আপলোড করেছিলে, সেদিনই পড়েছিলাম। নেট একটু সমস্যা ছিলো কিন্তু তাও অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে পড়েছিলাম। পড়েও খুব কেদেছিলাম, অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। তোমার প্রত্যেকটা কথা আমার বুকে কাঁটার মতো বিঁধেছিলো। এতোটা নীরব হয়ে গেছিলাম যে, ভাষা খুঁজে পেতেও সময় নিয়েছি। যে কিছু লিখতেই পারিনি। কি বলবো তাই বুঝতে পারছিলাম না। তুমিতো তাৎক্ষণাক উত্তর চাইছিলে, কিন্তু আমার মনের অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করনি একবারও। তারপরও কি কিছু বলেছি তোমাকে। এখন কিছু হলেও শুধু তাকেই আশ্রয় করে চলতে চাও তুমি। তুমি সত্যিই বদলে গেছো ময়না।  তবে তা ভুল নয়, খারাপ কিছুও নয়। 

আমি যখন আস্তে-আস্তে কথা বলতাম, তখন তুমি ভাবতে কেউ শুনতে  পাবে পাছে তাই ধীরে-ধীরে কথা বলতাম। যেখানে বসে কথা বলতাম, সেই বারান্দার পাশেই ছিল ছোট ফাদারের রুম। জোরে কথা বললে বারান্দায় শোনা যেতো। আমার রুমটা ছিলো মাঝে, যার কারণে নেট পেতাম না। তাই আস্তেই কথা বলতাম। আর তুমি ভাবতে আমার কেউ শুনতে পাবে।

আমার কি আর কষ্টের সীমানা আছে বলো? তুমি যদি আমার জায়গায় থাকতে তাহলে কি করতে জানি না। ধরো, আমার মা যদি তোমাকে বলতো, তোমার কারণে মা-মেয়ের মধ্যে সমস্যা হচ্ছে, তুমি কি সুখ ভোগ করছো, কি সুবিধা পাচ্ছো, তাহলে তুমি কি বলতে? কিছু কি বলার থাকতো? আমার তো একথা শুনেই কষ্ট হয়েছিলো, বলবো আর কি? দোষ করলে প্রমাণ করতে বলো, নির্দোষ হলেও প্রমাণ করতে বল; আরও কত কিছু যে প্রমাণ করতে হবে আমার জানা নেই। আমার না হয় মানসিক টেনশন আছে, তোমার তো নেই। তোমাকেতো আমি তোমার মায়ের দায়িত্ব থেকে মুক্ত করেছি অনেক আগেই। তোমার জন্য তোমার মা কিছু করেনি, এই কথাটা মা’কে না বললেও পারতে। কিছু না করুক, জন্মতো দিয়েছে তোমাকে। তোমার জীবনটাতো তারই দান। প্রতিদিন মা তোমার জন্য প্রার্থনা করে। এতোটুকু সম্মান আমি আশা করি তোমার কাছ থেকে। পরবর্তীতে কথা বলার সময়, রাগ দেখানোর সময় একবার ভেবে দেখবে, তুমি যা বলছো তা কতটুকু জখম তৈরি করবে কারো মনে।

শারীরিক দুরত্বতো তৈরি করেছ বটেই, এখন শুধু মনের দুরত্ব তৈরি করাটাই বাকী। ‍তুমি বলেছিলে তোমার প্রিয় কাউকে, “Real love protects a lover from falling in love with any other person.” আমি আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব করেছি, তোমাকে নিজের করে রাখছে, লড়াই করেছি। শাসিয়েছি। কি জানি কি ভুল করেছি। জানি এখন তোমার আমাকে ছুঁতে ইচ্ছে করে না, চুমু খেতে ইচ্ছে করে না। আমি কখনও তোমাকে eternal kiss দিতেও পারিনি আর তুমিও উপলব্ধি করতে পারোনি। মানুষ ভালোবাসলেও বোঝা যায়, না বাসলেও বোঝা যায়। তুমিই বলেছিলে,

                                                   “ভালোবাসা সমস্ত ঋতু ও জলবায়ুর উর্ধ্বে,

সত্যিকার অর্থে একটি চিরস্থায়ী সন্ধি।”

অন্যের প্রতি অবহলা করেছো তা বুঝতে পারলে, আমাকে যে উপেক্ষা করছো, অবহেলা করছো, তা কি বুঝতে পারো না তুমি? যেদিন থেকে এসেছি, সেদিন থেকে দেখছি, উপলব্ধি করছি, আমি কতটা দূরের। তুমি সত্যিই বলেছো, তুমি অনেকটা দূরে চলে গেছ আমার থেকে। বিশ্বাস কর, সব উপলব্ধি করেছি, ঘুমানোর সময় বালিশ ভিজাই প্রতিদিন। তোমার প্রতিটা কথা, হাসির ছলে তিরষ্কার করা সবই বুঝি। তারপরও অবুঝের মতো তোমার কাছেই ছুটে যাই বারে-বারে। বেহায়া তুমি নও, বেহায়া আমি।  


তুমি যখন বলেছিলে, আমাদের সম্পর্কের কোন নাম নেই,

আমি বুঝেছিলাম, সেটা বেনামী ভালোবাসা।

তুমি যেদিন বলেছিলে, আমি তোমাকে বিয়ে করবো;

আমি বুঝেছিলাম, তুমি সংসার করতে চাও।

তুমি যখন বলেছিলে, তুমি এখন ক্লান্ত,

আমি বুঝেছিলাম, তুমি বিশ্রাম করতে চাও।

তুমি যখন বলেছিলে, আমি কি করবো?

আমি বুঝেছিলোম, তোমার আমাকে প্রয়োজন। 

তুমি যখন বলেছিলে, তোমার দুধ পছন্দ,

আমি বুঝেছিলাম দুদু দেখতে চাইছো।

তুমি যখন বলেছিলে, আমার ঠোট শুকিয়ে গেছে,

আমি বুঝেছিলাম, তুমি চুমু খেতে চাইছো,

তুমি যখন বলেছিলে, আমার প্রিয় রং নীল,

আমি বুঝেছিলাম, তোমার অনেক কষ্ট;

তুমি যখন বলেছিলে, তোমার আর এ জীবন ভালো লাগে না,

তুমি আর আমাকে সহ্য করতে পারছো না,

দুজনের মধ্যে মিল হচ্ছে না,

 আমি বুঝেছিলাম, তুমি মুক্তি চাও।


আজ কিছু আপলোড করলাম। পড়ে নিও যদি সময় হয়। জানি দেরী হয়ে গেছে, তোমার মতে। তুমিতো আমার জন্য অপেক্ষা করে নেই। আজ কিছু বলার নেই, শুধু নীরবতা....নীরবতা। খুব ভালো থেকো তুমি। তাকেও ভালো রেখো। আমি তোমাকে কখনও ত্যাগ করিনি। তোমাকে আমার হিসেবে সর্বদাই দাবী করি, দাবী করবো, কারণ তুমি আমার। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি, যার পরিমাপ করে দেখানো আমার পক্ষে হয়তো কখনই সম্ভব নয়। আমাকে না হয় গার্ডিয়ান হিসেবেই দেখো। 


ইতি,

তোমার তুলতুলি


Post a Comment

Previous Post Next Post