আসুক সমতা প্রবীণ জীবনে



 আসুক সমতা প্রবীণ জীবনে


জাসিন্তা আরেং: চক্রাকার এই মানব জীবনে চরম এক বাস্তবতার নামই হলো প্রবীণকাল। যৌবনকাল অতিবাহিত করে সকলকে একদিন প্রবীণ হতে হয়। জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ প্রবীণেরা দেশ ও দশের উন্নয়নে পরিবারে ও সমাজে অন্যান্যদের মতোই সমমর্যাদা পাওয়ার অধিকার রাখে। দীর্ঘ কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণের পর জীবনের শেষ দিনগুলো তারা আপনজনদের সান্নিধ্যে কাটাতে চান, যা তাদের অধিকারও বটে। কিন্তু তারা পরিবারে সীমাবদ্ধ সুযোগ-সুবিধা লাভের কারণে অনেক সময় তাদের মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। সমাজে ও পরিবারে প্রবীণদের প্রতি সৌজন্যমূলক আচরণ ও বাড়তি যত্ন প্রয়োজন কিন্তু এ সমাজে তার বিপরীত চিত্রেরই দেখা মেলে। যখন প্রবীণেরা বার্ধক্যজনিত কারণে আয়-উপার্জনের ক্ষমতা হারান বা শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন এবং কর্মজীবন থেকে অবসর নেন, তখন তারা সন্তানদের কাছে একপ্রকার বাড়তি বোঝা ছাড়া আর কিছুই না। প্রবীণ সদস্যদের নিয়ে পরিবারে কলহ-বিবাদ, এমনকি দায়িত্ব বণ্টন নিয়েও জটিলতা-কুটিলতার শেষ থাকে না। এসব বিষয়াদি প্রবীণদের জীবনকে নারকীয় ও অসহনীয় করে তোলে। বিভিন্ন কারণবশতই প্রবীণেরা প্রতিনিয়ত বৈষম্যের শিকার হচ্ছে ও অসহায় করে তুলছে। মূলত, প্রবীণদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের অর্থ হলো জীবনের চরম বাস্তবতাকে অস্বীকার করা। 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো আমাদের দেশেও গ্রামে বা শহরের পরিবার ও সমাজে প্রবীণদের অবমূল্যায়ন ও অসৌজন্যমূলক আচরণের শিকার হচ্ছে। তারা নিজ পরিবারেই অনাহারে-অত্যাচারে দিন কাটাচ্ছে, আবার অনেকে সন্তানদের অসৌজন্যমূলক আচরণ ও কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আশ্রয় নিচ্ছে গাছের তলায় বা বৃদ্ধাশ্রমে। আবার অনেকে পরিবারের অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হয়ে বাধ্য হয়েই দ্বারস্থ হচ্ছে প্রবীণ হিতৈষী সংগঠনগুলোতে। কিন্তু তারা সেখানেও শিকার হচ্ছে বৈষম্য, অবহেলা ও অমানবিক আচরণের যা তাদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করছে। প্রবীণদের বেঁচে থাকার অধিকার খর্ব করছে যা মোটেই আশাপ্রদ নয়। পরিবারের সদস্যদের প্রবীণদের গুরুত্ব অনুধাবন করতে আর কতো কাল লাগবে তা অজানা, তবে আগামীতে প্রবীণদের অবমূল্যায়ন, অবহেলা রুখে সমতা আনতে হলে পরিবারেই প্রবীণ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণে তৎপর হতে হবে।

উপেক্ষার শিকার প্রবীণদের দায়িত্ব গ্রহণ করা শুধুমাত্র আমাদের সামাজিক দায়ভার বা কর্তব্য নয় বরং একটি আহ্বান। তাই সকল স্তরের অসহায় প্রবীণদের বিশেষ যত্ন ও দেখাশুনার গুরুদায়িত্ব নিতে হবে পরিবারকেই। এই দায়িত্ব যেন আমরা এড়িয়ে না চলি, কেননা তারা পরিবারেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। পরিবারে ও সমাজে প্রবীণদের সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করতে বিশ্বব্যাপী গণসচেতনতা সৃষ্টি করাও এখন সময়ের দাবী। অন্যদিকে, প্রবীণদের কল্যাণে সরকার ও বিভিন্ন সংগঠনসমূহ সক্রিয়ভাবে কাজ করলেও পরিবারের উদ্যোগেই এই সমস্যা নিরসন ও নিমূলে ভূমিকা রাখতে হবে। সময়ের প্রয়োজন মেনে নিয়ে প্রবীণদের চাহিদা পূরণ, সামাজিক নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও বিনোদন ইত্যাদি নিশ্চিত করতে পুরানো নীতিমালা ও পরিকল্পনা পরিবর্তন এবং সময়োপযোগী করে তুলতে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। আসুন, বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে প্রবীণদের ভালোবাসি ও তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করি যেন তারা উপেক্ষায় নয়, ভালোবাসায় জীবন যাপন করতে পারে ॥


Post a Comment

Previous Post Next Post