নারী লেখিকা শিলু জামান


জীবন ও সমাজ ডেস্ক : এবারের জীবন ও সমাজের বিশেষ আয়োজনে রয়েছেন নারী লেখিকা শিলু জামান।  

বাবা প্রয়াত হাজী মো: সরদার আসাদুজ্জামান ও মা প্রয়াত হাজী মৌছা: রোকেয়া জামান এর ছয় ভাই-বোনের মধ্যে লেখিকা শিলু জামান পঞ্চম। প্রতিভাবান এই লেখিকা শিলু জামানের জন্ম নড়াইল জেলার লোহাগড়া ইতনা গ্রামে। ছোটবেলা থেকে বেড়ে ওঠা ওখানেই। গ্রামের ইতনা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে হাতেখড়ি, পরবর্তীতে লেখাপড়া চালিয়ে যান দিনাজপুর শ্বশুরবাড়ি থেকে।  

সাহিত্যপ্রেমী শিলু জামান ছোটবেলা থেকেই দু্ই-একটা লাইন লিখতেন। নাটক, সিনেমা দেখার সময় দুটো কথা মনে হলে তা ডায়রিতে লিখে রাখতেন। অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন লেখার ইচ্ছেটা আরও প্রবল হতে থাকে। এবিষয়ে লেখিকা নিজেই বলেন, একদিন স্কুলের অংক খাতার উপর গানের কথা লিখেছিলাম, স্যার ওটা দেখে বলছিলো বাহ দারুন কথা লিখেছিস তো, কিন্তু আমি তো তখন গান লিখেছিলাম । পরে ভাবলাম, দেখি তো চেষ্টা করে কিছু লিখতে পারি কি না, তখন থেকেই ডায়রী লিখতাম প্রতিদিন; সেটা কখনও দৈনন্দিনের কথা বা ছড়া টাইপ কিছুএভাবেই লেখালেখির শুরু, এরপর থেকে বই পড়তাম লুকিয়ে-লুকিয়ে। তারপর এসএসসি পরীক্ষার পর বিয়ে হলো, বেশ কিছুদিন লেখা থেকে বিরত থাকার পর আবার নিয়মিত লিখতে শুরু করি। তবে অনলাইন লেখা শুরু করি ২০০৯ থেকে। 

এরপর থেকে তিনি বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত হোন এবং সক্রিয়ভাবে কাজ করতে আরম্ভ করেন। এবং অনেকগুলো বইও প্রকাশ করেন এই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ লেখিকা। তার কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে চারটি। যথাক্রমে:  

1. তিমির রাত্তির, 

2. বৃষ্টিবেলা, 

3. জ্যোৎস্নাভেজা মধ্য রাতে, 

4. বসন্তে অর্কিড।

এড়াও  ছোট গল্পের বই নাম : ‘সুদীপ্তা’ এবং উপন্যাস : ‘কোন কাননের ফুল’ ও ছোটদের ছড়া বই : বর্ণের সাথে ছড়া শিখি’



এছাড়াও যৌথ প্রকাশ করেছেন প্রায় ২৫টি। আর সেই যৌথ বইগুলো প্রকাশিত হয়েছে মাঝের বাড়ি, প্রকাশনী, লিখন প্রকাশন, ধ্রুপদী পাবলিকেশন  ও খই থেকে । এবং তিনি আশা রাখছেন ২০২২ এ দুটো বই প্রকাশ করবেন। 

জীবন ও সমাজের সাথে সাক্ষাৎকারে উঠে আসে আর আরও অনেক কিছু যা সকলের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক।

লেখককে যখন জিজ্ঞেস করা হয় সংসারের চাপ সামলেও আপনি একাধারে নারী লেখক ও গল্পকার। আপনার লেখালেখির হাতেখড়ি কবে থেকে শুরু হয় এবং আপনার লেখার মূল বৈশিষ্ট্য কি বা কি বিষয়ে লিখতে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন? তার প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, 

👉 আমি সংসারের চাপকে চাপ মনে করি না, কেননা প্রতিটা নারীর জীবনে সংসার হলো মূল চাবীকাঠি, আর আমরা নারী বলেই যে সংসারের কাজ সেরে কিছু করতে পারবো না তাতো নয়, তবে হ্যাঁ সংসারের যে কর্তা, তার সহযোগিতা থাকলে লেখা বা যে কোন কাজেই জটিলতা থাকে না, আর আমার লেখার জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় করে নেই না, দেখা যায় রান্না করছি, একটা বিষয় মাথায় আসলো, তখনি মোবাইলে থিমটা তুলে রাখি বা দু’লাইন লিখে ফেলি তখনই। যখন সংসারের কাজ শেষ করে বিশ্রাম নেই, তখন লেখাটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করি। আমি মূলত কবিতা লিখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি, তবে ছোট গল্প, উপন্যাস ও ছোটদের বইও লিখি; তবে এসবের মধ্যে কবিতার বই বেশি।

জীবন ও সমাজ : বাংলাদেশ নারী লেখক সোসাইটির সাথে আপনি কিভাবে সম্পৃক্ত? আপনাদের সোসাইটির মূল কার্যক্রম সম্বন্ধে কিছু বলেন? এছাড়াও, আপনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি। নারীদের সকল ক্ষেত্রে বিচরণকে আপনি কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেন

👉 আমি নারী লেখক সোসাইটিতে ১৬ সাল থেকে সম্পৃক্ত বইমেলা থেকে পারিচিত তখন ওখানে কাজ করেছিআমি অসহায় শিশু ও দুস্থ মহিলাদের কাজ করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করি, পথশিশুদের নিয়ে কাজ বেশি করি, ছায়াতল বাংলাদেশ নামক একটা প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। বাংলাদেশ কবি পরিষদ থেকে প্রতি বছর থেকে আমরা পথশিশুদের ঈদ সামগ্রী ও ঈদ পোষাক দিয়ে থাকি। তাছাড়া, আমি নিজ উদ্যোগে ঈদের রোজার সময় পনেরোটি পরিবারে খাদ্যসামগ্রী দিয়ে থাকি। আমার মনে হয় আমার যদি অঢেল সম্পদ থাকতো, তাহলে আমি অসহায়ের মাঝে কাজ করে একটু তৃপ্ত হতাম। 

জীবন ও সমাজ : পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীর অবস্থান আমরা কম-বেশি জানি। নারী লেখকেরা কি সমাজ এর বাইরে, আপনার কি মনে হয়? একজন নারীর লেখক হতে চাওয়াটা বা পারাটা কতোটুকু চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করেন? নারী ও পুরুষ লেখকের এই লড়াইয়ে আপনার টিকে থাকার গল্পটি জানতে চাই। 

 👉 এটা নিয়ে আমি বলতে চাই,  নারী লেখক ও পুরুষ লেখক কোন বিভেদ নাই, লেখক তো লেখকই। কিন্তু আমরা যে সমাজে আছি, আমরা নিজেরাই বিভেদ করে ফেলেছি, একজন পুরুষ যদি তার কর্ম শেষ করে লিখতে পারে; তাহলে একজন নারী কেন পারবে না? এর জন্য মনের শক্তিই বড় শক্তি আমি মনে করি। তবে হ্যাঁ, ঘরের শান্তি এড়িয়ে কখনো নারী প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না বা হলেও সেটা সমাজের চোখে সমীচিন দেখায় না। তাই আমি বলবো, একজন নারী লেখককে সংসার ধর্ম সমাজকে আয়ত্বে রেখে সংগ্রাম চালানো সম্ভব। নারী লেখক তখনি প্রতাষ্ঠিত হতে পারে, যখন সে মনে-মনে চ্যালেঞ্জ করে যে, আমি সবটা ঠিক রেখেই লেখক হবো; এই জোর আর মনের শক্তি তাকে সেই জায়গায় পৌঁছে দিতে পারে । নারীদের অনেক বাঁধা থাকে সে সব বাঁধা অতিক্রম করেই আমাদের চলতে হয় আর এই অতিক্রম করে চলার নামই সংগ্রাম সে কারণেই আমাদের সংগ্রামী নারী বলা হয়। 

জীবন ও সমাজ : একজন মা হিসেবে ব্যক্তিগত জীবন ও লেখক জীবন একসাথে কিভাবে সমন্বয় করেন? আপনার পরিবার থেকে কতটুকু উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা আপনি পান

আমার একটা সন্তান তাকে নিয়ে আমার স্বপ্ন অনেক, তাই তার ছোটবেলা থেকে আমিই তার পড়ালেখার পেছনে শ্রম দিয়েছি , তখন লেখা থেকে বিরত ছিলাম কেননা ঐসময় সে নিজের কিছুই বুঝতে শিখেনি সেই সময়টা তাকে একা ছেড়ে না দিয়ে আমি আমার লেখার সাথে স্যাক্রিফাইস করেছি, যখন ছেলে কলেজে উঠেছে তখন থেকে আবার নিয়মিত লিখতে শুরু করি। তখন আমার সন্তান বা আমার হাসবেন্ড কখনও লেখার বাঁধা হয়নি, আমি লেখার স্বাধীনতা পেয়েছি বলেই আজ আমি শিলু জামান এখানে এসেছি। আমার পরিবার যতটুকু সাপোর্ট করে যাচ্ছে, তাতে আমি আরও বেশ কিছু সংখ্যক ভালো বই প্রকাশ করার সাহস পাচ্ছি।

জীবন ও সমাজ : নারী হিসেবে নারী লেখক ও গল্পকার হিসেবে গড়ে উঠতে নবীনদের প্রতি আপনার মূল্যবান পরামর্শ কি কি

👉 নারী লেখক হতে হলে সবার আগে বিনয়ী হতে হবে, প্রচুর বই পড়তে হবে, বড় লেখকদের কাছ থেকে শিখতে হবে, দুই লাইন লিখে নিজেকে বড় মনে করে ভুল-ভাল লিখে কবিতা, গল্পে চালিয়ে দিলাম সেটা হবে না। আগে পড়তে হবে লেখা সম্পর্কে জানতে হবে বড়দের শ্রদ্ধা করতে হবে, একটা বই প্রকাশ করার আগে বড় কবিদের সাহায্য নিতে হবে, প্রবীণদের কাছে শেখার আছে অনেক কিছু যদিও একজন নারী হয়ে বাইরে গিয়ে এই কাজগুলো করা কঠিন, তবুও আমি বলবো নারীদের সাহসী হতে হবে, নারী মানেই পিছিয়ে পড়া কেউ- এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। 

শেষের কথা : একজন লেখক কিংবা কবি কিংবা গল্পকার হতে হলে অবশ্যই তাকে প্রচুর বই পড়তে হবে। এই শিলু জামান তার বিকল্পও করেননি। বই পড়েছেন প্রচুর। আর তাই পরামর্শ হিসেবে সবাইকে দিয়েছেন। তিনি বলেন, একটা গল্পের মাঝে লেখার শুরুতে যা আছে, শেষে গিয়ে যদি তা হযবরল হয় বা গোজামিল পায়, তাহলে তো পাঠক তা পড়বে না। তাই গল্পের বেলায় খেয়াল রাখতে হবে যেন প্রসঙ্গ থেকে সরে না যায়। মূলকথা হলো, প্রসঙ্গ ঠিক রেখে লেখনির আদ্যোপান্ত পর্যন্ত এগুতে হবে, তবেই পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখতে সক্ষম হবে। আমি একজন নারী লেখক হয়ে চাইবো, আগামীর নারী লেখকেরা যেন সম্পূর্ণ সাহস ও সহযোগিতার মাধ্যমে লেখার জগতে লেখনির আলো ছড়িয়ে উদিত হয়। জয় হোক সকল নারী লেখকের।

 

[দৃষ্টি আকর্ষণ: যদি মনে করেন এমন কোন আলোকিত ব্যক্তিকে নিয়ে আমাদের জীবন ও সমাজের অনলাইন ম্যাগাজিনে বিশেষ ফিচার করা যেতে পারে, তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। আমরা সেই ফিচার করে তার আলো ছড়াবো, যাতে অন্যরাও সেই ব্যক্তিত্বের আলোয় আলোকিত হতে পারে। 

 আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন : jibonoshomaj@gmail.com] 


[পাঠকদের  দৃষ্টি আকর্ষণ:  করোনাকালে আপনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের এমন কোন অগ্রণী ভূমিকা কি ছিল যা নিয়ে জীবন ও সমাজ-এ ফিচার করা যেতে পারে। তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন : jibonoshomaj@gmail.com]  


[জীবন ও সমাজে- পাঠাতে পারেন আপনারও বস্তুনিষ্ঠ লেখা প্রবন্ধ, গল্প ও ফিচার। 
লেখা পাঠানোর ঠিকানা : jibonoshomaj@gmail.com ] 


Post a Comment

Previous Post Next Post