রক্তে অর্জিত স্বাধীনতা সূর্যের সুর্বণ জয়ন্তী

জ্যাষ্টিন গোমেজ : রক্তে অর্জিত স্বাধীনতা সূর্যের সুবর্ণ জয়ন্তী আজ এ যে গোটা বাঙালির স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী। আমাদের বিমোহিত মাহেন্দ্রক্ষণ যার বর্তা প্রবাসিত হচ্ছে সারা বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশ বিশ্ব আজ উন্নয়নের রোল মডেল! সমৃদ্ধির অদম্য অগ্রযাত্রার পথে রয়েছে বাংলাদেশ। সুদূর অতীতে বাঙালিকে কখনো দমিয়ে রাখা যায়নি তার প্রমাণ আমার আজ আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করছি। আমাদের রয়েছে কঠিন সংগ্রামের ইতিহাস। পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হওয়ার প্রায় ১৯০ বছর পর সৃষ্টি হয় উপমহাদেশের দুটি দেশ পাকিস্তান ও ভারত। আর পাকিস্তানের শোষণ, বঞ্চনা, বৈষম্যে ও পরাধীনতার শৃঙ্খলে বন্দী হয়ে বাঙালি তথা পূর্ব বাংলার জনগণ দিনের পর দিন নিষ্পেষিত হতে থাকে। তারপরও দমিয়ে রাখতে পারেনি এই বীর বাঙালিকে। লাখো শহিদের রক্তে রাঙানো আমাদের স্বাধীনতার সূর্য আজ সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করছে। 

 রক্তে অর্জিত স্বাধীনতা সূর্যের সুর্বণ জয়ন্তী

এবারে স্বাধীনতা অর্জনের ৫০তম বছরে এসে বিনম্রচিত্তে বীর শহীদদের স্মরণ করছে জাতি। কিন্তু এবারের বিজয় দিবসের মাহাত্ম্য, মর্মার্থ, ব্যাপ্তি, গুরুত্ব নতুন করে অনুধাবন, অনুস্মরণের আলাদা বৈশিষ্ট্য নিহিত আছে। যাদের সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা বিজয় অর্জন করেছি, তাদের প্রতি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করে আজকের দিনে আরেকবার শপথ নিতে চাই, বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে রাখবই। স্বীকার করতে হবে, পঁচাত্তরে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের জনআকাঙ্খার, জনপ্রত্যাশার বিপরীত মুখে হেঁটেছিল।

স্বাধীনতার ৫০ বছরে অনেক প্রাপ্তি, অনেক শক্তি আর অনেক অর্জন। তাই সব অক্ষমতাকে জয় করে, দেশ ও দেশের মানুষকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দিচ্ছে এই সুর্বণ জয়ন্তী। ইতোমধ্যে আমরা অর্থনৈতিকভাবে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উত্তরণ ঘটাতে সক্ষম হয়েছি। স্বাধীনতার পর থেকেই বয়ে বেড়ানো ‘স্বল্পোন্নত’ নাম ঝেড়ে ফেলাও এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। কোন একসময় বৈদেশিক অনুদান ও ঋণ ছাড়া মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন অকল্পনীয় ছিল। এখন আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা বহুমুখী সেতুর মতো বড়-বড় মেগা প্রকল্পসহ প্রমত্ত পদ্মার বুকে পদ্মা সেতু মাথা তুলে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের সক্ষমতার জয়গান গাইছে। বিচারহীনতার এক নিকষ আঁধার আমাদের ঘিরে ধরেছিল যা থেকে আমরা বের হয়ে এসেছি। সার্বিক দৃষ্টিকোণ রেখে মাননীয় প্রধনামন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে নিয়ে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর তাই তো সারা বিশ্বের আমাদের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল ও সম্ভাবনার অপার বিস্ময়কর একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশ বর্তমানে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা প্রতিবেশি দেশ ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিলাম; আর এখন বাংলাদেশই হয়ে উঠছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়, খাদ্য ও নির্ভয়ে জীবন-যাপনের জোগানদাতা। এছাড়াও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় বিশ্ব প্রচার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিইউমিনিটি’ খেতাবে ভূষিত করেছে। এটি আমাদেরই অর্জন। 

মুক্তিযুদ্ধের সময়কার তরুণদের চেতনার সঙ্গে আজকের তরুণদের একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। আজকের তরুণরা হয়তো মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পারেনি। কিন্তু প্রতিনিয়ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করছে। আজকে কোথাও যদি রাষ্ট্রবিরোধী কোনো শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তখন সর্বপ্রথম তরুণরাই প্রতিরোধ গড়ে তোলে। নিজেরা বিভিন্নভাবে এ দেশের সম্মান ছড়াচ্ছে বিদেশের মাটিতে। তারপরও বলতে হবে স্বাধীনতার ৫০ বছরে অনেক অর্জন-সাফল্যের মাঝে রয়েছে গেছে অনেক অপ্রাপ্তিও। এখনো একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন পূরণ হয়নি। সামনে সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠা ও বৈষম্যের অবসান ঘটানোই হওয়া উচিত। সেদিনই সফল হবো আমরা; যেদিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কাজে লাগিয়ে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে এগিয়ে যাবে দেশ। সেদিন থাকবে না কোনো দুর্নীতি। থাকবে না কোনো অনাহারী। থাকবে না মৌলিক অধিকারে কোনো বাঁধা। থাকবে না অশিক্ষিত মানুষ। পৃথিবীর মানচিত্রে লাল-সবুজের বাংলাদেশ হবে নবজাগরণে উদ্দীপ্ত বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশ বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে আমাদের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হবে অনুপ্রেরণা।

[`জীবন ও সমাজ' আপনাদের মূল্যবান লেখক-লেখিকাদের ওপর নির্ভরশীল। কাজেই আপনাদের মূল্যবান লেখা, বস্তুনিষ্ঠ সামাজিক কর্ম-কীর্তি ভিত্তিক প্রবন্ধ, নিবন্ধ, কলাম, গল্প ইত্যাদি ছাড়াও ধর্মীয়, নৈতিকতা ভিত্তিক লেখা, জীবনী, সাক্ষাৎকার, অবদান ইত্যাদি পাঠাতে পারেন আমাদের নিম্নলিখিত  ঠিকানায়। অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে।]

jibonoshomaj@gmail.com

Post a Comment

Previous Post Next Post