এবারে আমাদের ব্যক্তিধর্মী ফিচার আয়োজনে অতিথি হলেন রত্না বাড়ৈ হাওলাদার। যদিও তিনি লেখিকা কিংবা কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত এছাড়াও তার মধ্যে রয়েছে গুণের সমাহার। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে লেখিকা রত্না বাড়ৈ হাওলাদার-এর একটি বই ‘গল্প বাড়ি নিউইৰ্য়ক’ প্রকাশ পেয়েছে। অবশ্য ইংরেজিতে অনুদিত বইটি তার আমেরিকান বন্ধু-বান্ধব এবং কলিগদের অনুরোধে প্রকাশ করা হয়েছে। পরের বছর ২০২০ সালে সেই বইটির ইংরেজি অনুবাদও বের করেছেন। এছাড়াও একই বছর আরেকটি কবিতার বই ‘বনসিক্তা’ প্রকাশিত হয়। আর অক্লান্ত পরিশ্রমে তার সৃজনশীল এই সৃষ্টিকে পাঠকরা হৃদয়ে ধারণ করেছে যার ফলে পাঠকমহলে তিনি আজ প্রশংসিত ও গৌরবান্বিত।
লেখিকার সংক্ষিপ্ত পরিচয় হলো, তিনি প্রয়াত মি. ফ্রান্সিস বিমল হাওলাদার (বিমল মাস্টার) এবং প্রয়াত মিসেস পবিত্র হাওলাদার (দিদিমণি) এর সন্তান। বরিশাল জেলার গৌরনদী দক্ষিণ পালর্দী, চৌধুরী বাড়িতে তার জম্ম। বাকেরগঞ্জ জেলার পাদ্রীশিবপুর সেন্ট আলফ্রেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে ও গৌরনদী কলেজের গণ্ডি পার করে পরবর্তীতে বড় ভাই-বোনদের সিদ্ধান্তে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তিনি মি. জেমস্ টিপু বাড়ৈ এর সহধর্মিনী হিসেবে ১৯৯১ সালের ২২ নভেম্বর বিবাহিত জীবন শুরু করেন। একমাত্র সন্তান জর্জ রাসেল বাড়ৈ (গল্প)’র জননী হিসেবে সৃষ্টিকর্তা তাকে আশীর্বাদিত করেন। তিনি বাংলাদেশ Rangs electronics ltd এর হেড অফিসে দীর্ঘ ১৬ বছর চাকুরি করেন। এসময় স্বামীর চাকুরীর সুবাদে আমেরিকার নাগরিকত্ব নিয়ে সেখানেই স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেন । সেখানে মেডিকেল রিলেটেড কিছু কোর্স সমাপ্তির পর চাকুরী জীবন আরম্ভ করেন এবং দীর্ঘ ১২ বছর যাবৎ একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন রোগীদেরকে নিয়ে ডিল করা তথা ম্যাডিকেল রিলেটেড অনেক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। আমেরিকা মেডিকেল সংক্রান্ত যে কোন কাজই ভীষণ রিস্কি ও জটিল। কর্মকর্তাদের ভুলের কারণে, ক্ষতিগ্রস্ত রোগীদের যে কোন সময় স্যু অর্থাৎ কেস করার লিগালিটি রয়েছে। আর সেকারণে কর্মীদের যে কোন সময় চাকুরীচ্যুত হবার সম্ভাবনা শিরোধার্য। বলাবাহুল্য, মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত প্রায় প্রতিটি জনগণেরই মেডিকেল ইনস্যুরেনস রয়েছে। এতো জটিলতার মাঝেও অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তার কাজ-কর্ম সম্পাদন করে যাচ্ছেন।
মূলত, তিনি বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত থাকার সুবাদে বিভিন্ন সাপ্তাহিক পত্রিকা তথা ম্যাগাজিনের নিয়মিত লেখালেখি করে নিজে অবস্থানকে দৃঢ় ও পরিস্কার করেছেন। বর্তমানে তিনি এশিয়ান ক্রিয়েটিভ ওমেন্স-এর একজন সদস্যা। সেখানে মাকে নিয়ে লেখা একশজন লেখকের গল্প নিয়ে একটি ইংরেজি বই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। সেই সংকলনটিতে মাকে নিয়ে তার লেখাটিও রয়েছে। এছাড়াও, জাকপ যৌথ কাব্যগ্রন্থ প্যানেলের উদ্যোগে সমগ্র বাংলাদেশ হতে নির্বাচিত দুইশত কবিদের সম্মিলিত সংকলনে "পয়নন্ত প্রথমায়" একটি কবিতা এবং জাকপ বরিশাল বিভাগীয় উদ্যোগে কাব্য সংকলন "কাব্য কথায় চন্দ্রদীপ" বইয়ে তার চারটি কবিতা স্থান পেয়েছে। ইতোমধ্যে, প্রতিবেশী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত গল্প বাড়ি নিউইউর্ক (২০১৯) নামক গল্পের বইটি পাঠকদের মাঝে বিপুল সাড়া জাগিয়েছে। একুশে বইমেলা বাংলা একাডেমীতে বাংলাভিশন টিভিতে সম্প্রচারিত ইন্টারভিউ বইটিকে আরও সমাদৃত করেছে। বাংলাদেশ লেখক ফোরাম কর্তৃক মহাড়ম্বরে বইটির মোড়ক উন্মোচন ও নিউইর্য়ক এর সংস্থা তথা ক্যাথরিনা লাভ ফর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা মি: ক্যালভিন মণ্ডল এবং গ্লোবাল মিশনের কর্ণধার পাস্টর যোসেফ বিশ্বাস বিশেষ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজন করেন এবং ক্রেষ্ট প্রদান করে প্রবাসীদের কাছেও লেখিকার গ্রহণযোগ্যতা ও সম্মানিত করেছেন। ইংরেজী ভাষাভাষী বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী এবং প্রতিবেশীদের অনুপ্রেরণায় গল্প বাড়ি নিউইউর্ক বইটি ইংরেজিতে ২০২০ সালে ভাষান্তরিত করা হয়। Galpo's Home New York নামে হালদার প্রকাশনী থেকে বইটি প্রকাশিত হয়েছে। বাংলা ও ইংরেজী উভয় বইটিই অমর একুশে গ্রন্থ মেলা ২০২০-এ স্থান পেয়েছিল। এছাড়াও সম্প্রতি ৬০টি কবিতা নিয়ে একটি কবিতার সংকলন ‘বনসিক্তা’ বইটি ধ্রুপদী পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে। আর এই কবি ও লেখিকা রত্না বাড়ৈয়ের গর্বের বিষয় এই যে, বাংলাদেশের খ্যাতিমান আবৃত্তিকার জনাব বদরুল আহসান খান ভালবাসার সহিত বনসিক্তা থেকে এক ঘন্টা ফেইসবুকের সমস্ত বইটি থেকে প্রায় ৩০/৩৫টি কবিতা আবৃত্তি করেছেন । তাছাড়াও, তিনি ১২টি কবিতা আবৃত্তি করে ইউটিউবে তথা ফেইসবুকে লাইভ সেশন আপলোডের ফলে জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম আরেকজন মহিলা আবৃত্তিকার রাজিয়া জামান নাফিছা। বনসিক্তা থেকে বর্ণিত ১২টি কবিতার একটি ক্যাসেট নির্মাণ করেছেন। বলাবাহুল্য, বিগত প্রথম বইটি গল্প বাড়ি নিউইৰ্য়ক পাঠককূলে যথেষ্ট সাড়া পেয়েছে, সমাদৃত হয়েছে ।
জীবন ও সমাজ: লেখালেখির সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে ভাল একটি অবস্থান গড়ে তুলেছেন। আপনার লেখালেখির সখ্যতা নিয়ে কিছু বলুন।
✩ লেখিকা : যাকে আমার সৃষ্টিকর্তা বলে স্বীকার করছি, তিনি আমার ত্রাণকর্তা, মুক্তিদাতা ও রক্ষাকর্তা। তিনিই আমার উপলব্ধি আমার অনুভূতি, আমার অনুপ্রেরণা । আমার স্থান-কাল-সময় সব কিছুর জন্য আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ। আমার ভালবাসায় আমার অনুভবতায় সর্বদা আছেন তিনি। আর সেই শক্তিকে কব্জায় রেখেই আমার পথচলা । ইচ্ছে আছে আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয় পাঠকদের আরো ভালো লেখা উপহার দিতে। পরিকল্পনার ব্যাপারটি না হয় বাস্তবায়নের উপরই ছেড়ে দিলাম। তাছাড়া, ভালো-মন্দ নিয়েই তো এ সমাজ। শত্রু, দরদী এসবের তো আর অভাব নেই । আর এসবের জন্য কারো সঙ্গে ঝগড়া করতে হয় না । একটি ভালো কাজ করলেই যথেষ্ট । তারপরও জীবন তো আর থেমে নেই। তাছাড়া, ভালো মানুষও তো আছে বৈকি। কাজেই, দুইয়ের সমন্বয়ে সীমাবদ্ধতোর মাঝেও আত্মনিবেদন করে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারাটাই যেন জীবনের সার্থকতা । আমার পরম মঙ্গলময়ের নিকট এটাই আমার প্রার্থনা ।
→ জীবন ও সমাজ: বর্তমানে বিশ্বে করোনায় কম-বেশি সবাই প্রভাবিত। আর আপনার ভাবনাতে প্রতিফলিত হয়েছে প্রচুর। তাই, ‘জীবন ও সমাজ’ অনলাইন ম্যাগাজিনে আপনার মূল্যবান ধারাবাহিক লেখা প্রকাশ পেয়েছে। করোনা নিয়ে আপনার ভাবনা কি? করোনা আপনার জীবনকে কতটুকু প্রভাবিত করেছে?
✩ লেখিকা : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পুরো পৃথিবী ছেয়ে গিয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক প্রাণ হারিয়েছি। এমনকি আমাদের ফ্রন্ট লাইনার সেই হাজার-হাজার বিশিষ্ট ডাক্তারদের আমরা হারিয়ে ফেলেছি। কতো যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন স্থানে এবং এখনো ঘটে চলছে যা ধারণাতীত। একটি মর্মান্তিক হৃদয়বিদারক ঘটনার কথা বলি। বাবা ছোট্ট শিশুদের নিয়ে ঘরে বসে আছে। মায়ের চাকুরি বাঁচাতে নিজের দায়িত্ববোধের ফলে কর্মক্ষেত্রে গিয়েছিল। নিজের অজান্তে করোনাভাইরাসকে বহন করে ঘরে নিয়ে আসে। ছোঁয়াচে মরণঘাতি ভাইরাস প্রথমেই এটাক করে ঘরের বড় কর্তাকে। করোনার প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে তখন কারোরই অতটা পরিচয় ছিল না, সখ্যতাও ছিল না। কাজেই করোনা সনাক্ত করা তাদের পক্ষে সম্ভবও হয়নি। ফলশ্রুতিতে, করোনাভাইরাস তার তন্ত্রীতে প্রবেশ করে তাকে শ্বাস-প্রশ্বাস ত্যাগে বাঁধার সৃষ্টি করে । এমতাবস্থায় তার পত্নী এম্বুলেন্স কল করলে তা আসতে প্রায় একদিন এক রাত সময় লেগেছিল। কেননা সেই সময়টাতে (ইএমটি) এম্বুলেন্স কর্মীরা পাগলপ্রায় হয়ে ছোটছুটি করছিল বিভিন্ন রোগীকে বহনে। ইতোমধ্যে, স্বামীর অবস্থা ক্রমশ অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছিল। সংক্রমণের ভয়ে স্ত্রী তার শুশ্রুষা তো দূরের কথা; রুমে ঢুকে চোখ বুলিয়ে আসার সাহস পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছিল। এম্বুলেন্স আসতে-আসতে, ততক্ষণে সে নিসঙ্গ অবস্থায় দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে পরপারে চলে যায়। অতপর এম্বুলেন্স কর্মীরা এসে তাকে মৃত ঘোষণা করে। মৃতদেহটিকে ক্লিয়ার প্লাস্টিকে মুড়িয়ে স্টেচারে রেখে দরজায় নো এন্ট্রি লিখে চলে যায়। পুরোটা রাত ছোট্ট দুই শিশুকে বুকে জড়িয়ে ধরে, স্বামীবিয়োগ পত্নী অন্য রুমে চোখের জলে বুক ভাসায়। নেই কোন সান্ত্বনাদায়ী, নেই কোন সাহায্যকারী। একটি শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। আসলে যাকে সাপ দংশন করে, সেই শুধু দংশনের জ্বালা বুঝতে পারে । আর অন্যের নিকট শুধু গল্প হয়েই থেকে যায় ।
হৃদয়বিদারক হাজারো ঘটনা রয়েছে করোনাকালীন। গত ক্রিস্টমাসকালীন সময়ে স্মৃতির অন্তরালে হারিয়ে যাওয়া স্বজন বিয়োগের সেই নিষ্ঠুর স্মৃতিকে খুঁজতে গিয়ে একাকীত্বের ফলে অনেকেই সুইসাইড করার চেষ্টাও করেছে। অনেকেই এখনো হাসপাতালের বেডে প্রতীয়মান অবস্থায় কাতরাচ্ছে । মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। একটি সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে যে, করোনার দ্বিতীয় ধাপে ৮০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করার আশংকা রয়েছে।
আসলে করোনা নিয়ে লিখতে গেলে একটি বই প্রকাশ করা যাবে। যাই হোক, প্রত্যেকেই অবগত রয়েছি ভ্যাকসিনেশন সম্পর্কে। কোন্ ভ্যাকসিন, কোন্ দেশে, কোন্ তাপমাত্রায়, কতটুকু কার্যকরী ইত্যাদি বিষয়ে বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে অহরহ বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছি। তবে আমি একটুখানি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, ভ্যাকসিন গ্রহণের পরের বিষয়গুলো যেমন সাইড-ইফেক্টতো রয়েছেই আর সেই ভয়ে অনেকেই ভ্যাকসিন গ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করছে না। একেই নিশ্চয়ই বলা হয় বিপদের-আপদ। কেননা যার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল প্রতিটি প্রাণ। আর তাকে কাছে পেয়ে কিনা আজ মিটিমিটি করে পিছনে ফিরে যাচ্ছে। অবশ্য বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ বিভিন্নভাবে মিডিয়ার মাধ্যমে সাহসের সঞ্চার করছেন। আজ করোনা সম্পর্কে কোন মন্তব্য করতে গেলে প্রথমে একটি কথাই বলতে হবে, সৃষ্টিকর্তার লীলা বোঝা বড় ভার। করোনা মানব জাতিকে অধ্যবসায় এবং নিয়মানুবর্তিতা শিখিয়েছে। তাই, মাস্ক পড়ুন, নিয়ম মেনে চলুন।
→ জীবন ও সমাজ : নিজের এই অবস্থান গড়ে তুলতে আপনি অনেক সংগ্রাম করেছেন। উল্লেখযোগ্য, কিছু বলুন যেভাবে নিজেকে গড়ে তুলেছেন যা আমাদের বর্তমান যুবাদের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক ।
✩ আমি আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের ধন্যবাদ জানাই। আমার মনসকামনা, আমার অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত করে আমার প্রিয় যুবাদল এবং মা জাতিকে একটি কথা বলতে চাই। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট এর একটি উক্তি আমাকে ভীষণভাবে মুগ্ধ করেছে। যেটি ছিল "আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি দিব"
প্রবাসে ব্যস্ততম জীবনযাত্রা পরিস্থিতির শিকারই বলা চলে। এখানে সময়ের অনেক মূল্য। মাথার ভিতরে সর্বদা কাজের চিন্তা বাসা বেঁধে থাকে। সিডিউলকৃত সাজানো জীবনের মধ্যদিয়ে লেখালেখি চালিয়ে যাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার । তারপরও চেষ্টা করি । ব্যাপারটা যদিও আমার একান্ত ব্যক্তিগত, তথাপিও সবার সঙ্গে শেয়ার করতে চাই । আমি যখনই যে অবস্থাতে লেখা আরম্ভ করি, তার পূর্বে সৃষ্টিকর্তার নাম- পিতা, পুত্র এবং পবিত্র আত্মার নামে আমি লেখা শুরু করি। তা হতে পারে একটি অক্ষরই মাত্র। আমার বিশ্বাসের ফলেই যে, পিতা ঈশ্বর আমাকে এতটা আশীর্বাদিত করছেন। কতো যে প্রতিকূল অবস্থার মধ্যদিয়ে আমাকে লিখতে হয় ! এমনো দিন ছিল যে, লিখতে বসে ভুলে গিয়েছিলাম চুলোয় রান্না। লেখায় মগ্ন হঠাৎ করে নাকে গন্ধ মনে করিয়ে দিতেই দেখি খাবার পুড়ে নস্যাৎ। অবশেষে রেস্টুরেন্ট থেকে কিনে এনে সার্প করতে হয়েছে। অনুপ্রেরণাদায়ক হাজবেন্ড তারপরও অনুপ্রেরণা দিয়েই যাচ্ছেন অনবরত। সাপ্তাহিক ছুটির পূর্বে রাত জেগে লেখালেখি নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয় । অফিসে আসা-যাওয়ার পথে পুরো ট্রেনেই লেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করি। কারণ ওই সময়টা একান্ত আমার । অন্য কোনো চিন্তা-ভাবনার ভার আমাকে হটাতে পারে না ।
মনের চিন্তা-চেতনা, ভাবনা, কল্পনা, স্বপ্ন, ইচ্ছা, অনুযোগ, অভিযোগ, রাগ, অনুরাগ, অভিমান, ভালবাসা, প্রেম ইত্যাদি প্রকাশের উদ্ভাবনী শক্তিই সম্মুখপানে তুলে নিয়ে যাবে বলে আমার ধারণা এবং সঙ্গে প্রার্থনা তো অনিবার্য। কেননা ধর্ম আমাদের ধারণ করতে শেখায়। সকলের নিকট অনুরোধ ঘোর অমানিশায় থেকে বেরিয়ে আসুন। সৎ ও সত্যের পক্ষে থাকুন তাহলেই ভালো কাজের আশীর্বাদ উপচে পড়বে বলে আমার বিশ্বাস ।
→ জীবন ও সমাজ : আপনার জীবনে এমন কোন শুভাকাঙ্ক্ষি কি রয়েছে যাদের কথা কৃতজ্ঞতাভরে উল্লেখ করতে চান বা যাদের অবদান আপনার জীবনে ভাল কিছুর সঞ্চার করেছে?
✩ লেখিকা : আমার জীবনে কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন আমার বড় ভাই প্রয়াত মাইকেল অতুল হাওলাদার। ছোটবেলায় যখন আমি অষ্টম শ্রেণীতে পড়ছি, তখন দেখতাম তিনি কবিতা, গল্প, উপন্যাস লিখতেন। এত সুন্দর লেখনী যেন পড়তেই ভীষণ অনুপ্রেরণা পেতাম। আর তখন থেকেই একটু-আধটু লেখালেখি শুরু করি। আসলে, তার জীবদ্বশায় তিনি শুধু একজন লেখক হিসেবে পরিচিত ছিলেন না। একজনবিশিষ্ট সফল ব্যবসায়ী ছিলেন বটে। মূলত, অষ্টম শ্রেণী থেকেই আমার লেখালেখির হাতেখড়ি। কবিতা লেখা ছাড়াও আমি বাস্তবভিত্তিক গল্প, প্রবন্ধ পড়তে এবং লিখতে উৎসাহবোধ করতাম। পাঠকের ভালবাসা ও গ্রহণযোগ্যতাই আমার প্রেরণার উৎস। পাঠকের সমালোচনাই যে, লেখনীর সাহিত্যে উৎকৃষ্টতা আনে। বইটি অধ্যয়ন করে তাদের আলোচনায় ছিল বইটির লেখনীতে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। কেউ আবার ফেইসবুকে কমেন্টস করেছে । আমার লেখার অপেক্ষায় রয়েছে। পাঠকদের অনুরোধ ছিল লেখাগুলো যেন বইয়ে রূপায়িত করা হয়। আসলে ওটাই ছিল আমার জীবনের পরম প্রাপ্তি ।
গল্প বাড়ি নিউইৰ্য়ক বইটিই হলো আমার জীবনের প্রথম অনুপ্রেরণা। যা প্রকাশে যথাযথভাবে সাহায্য করেছেন মূলত, আমার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী আনন্দ আগনেস ম্যাকফিল্ড । সহযোগিতায় ভিনসেন্ট খোকন কোড়াইয়া। আবার আধুনিক প্রযুক্তি কৌশল অনেক কিছুই আমার বোধগম্য ছিল না। সে ক্ষেত্রে আমার বিনম্র চিত্তের একমাত্র ছেলে জর্জ রাসেল বাড়ৈ তার বিচক্ষণতার সঙ্গে মামনির সাফল্য অর্জন করত প্রাণপণ চেষ্টা করেছে। আমার স্বামী মি: জেমস্ টিপু বাড়ৈ তার অপরিসীম ত্যাগের বিনিময় তথা যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম, যাদের অনুপ্রেরণা আমাকে সত্যিই এতদূর আসতে সাহায্য করেছে। তাদের নিকটে আমি সত্যি কৃতজ্ঞ ।
গল্প বাড়ি নিউইৰ্য়ক বইটি ইংরেজি অনুবাদ "Galpo's Home New York" নামে প্রকাশিত হয়েছে। অনুবাদক জাসিন্তা আরেং এবং অন্যান্য সহযোগিতায় জাস্টিন গোমেজ ছিলেন।পরবর্তী কবিতার বই বনসিক্তা নির্মাণে সম্পূর্ণ সহযোগিতায় ড. সৌমিত্র, অধ্যাপক (বাংলা বিভাগ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অঙ্গসজ্জ্বায় রয়েছে জাসিন্তা আরেং এবং জাস্টিন গোমেজ । তাদের দুজনকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাই না। তারা আমার জন্য যা করেছে, তা নিজের লোকেরাও করে না। ওরা সত্যিই আমার আত্মার আত্মীয় । তাছাড়া, প্রতিটি বইয়ের শুভেচ্ছা বাণী দিয়ে অনুপ্রাণিত করেছেন শ্রদ্ধেয় ফাদার স্ট্যানলি গোমেজ। সত্যি আমি তাদের সকলের নিকটে কৃতজ্ঞ । যাদের অবদান ভুলবার নয়।
→ জীবন ও সমাজ : জীবনে এগিয়ে যেতে সাধারণত পথটা মসৃণ হয় না। আপনি কি কোন উল্লেখযোগ্য প্রতিবন্ধকতা অনুভব করেছেন? আর করে থাকলে তা কিভাবে মোকাবেলা করেছেন?
✩ একজন লেখক হিসেবে এইকুটু বলতে পারি। একটি লিখিত বইয়ের মূল্য তাদের নিকটে একজন সন্তানের সমতুল্য । যে অনুভূতি কাউকে বোঝানো সম্ভব নয় । প্রশংসা শুনতে কার না ভালো লাগে? তবে তা হতে হবে সৃজনশীল । অনেক সময় সামান্য একটুখানি উৎসাহ পৌঁছে দিতে পারে জীবনের উচ্চ শিখরে। আবার একটি তিরস্কার জীবনকে ফেলে দেয় গভীর মৃত্যু মুখে। তাইতো বলতে চাই সাবধানতা অবলম্বন করেই জীবনের প্রতিটি সিড়িতে পা রেখেই সবাইকে ওপরে ওঠা উচিত । ডিঙিয়ে উঠতে গেলে পড়ে যাবার সম্ভাবনা বেশি । কাজেই অনেক প্রতিকূলতাকে অবহেলা করে চলতে পারাই বুদ্ধিমান বা বুদ্ধিমতির কাজ। একজন মা যেমনটি সন্তান প্রসবের পরে তার মুখ দেখে দশ মাস দশ দিন কষ্টের কথা ভুলে যায় । তেমনি একজন লেখকের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই । তাই আজ না হয় কোন মন্তব্য নাই করলাম ।
একজন মা যেমনটি সন্তান প্রসবের পরে, তার চেহারা দেখে দশ মাস দশ দিন কষ্টের কথা ভুলে যান । তেমনি একজন লেখকের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই । তার প্রকাশিত বইটি হাতে পেয়ে সে সব পরিশ্রমের কথা ভুলে যান । তাই আজ না হয় কোন মন্তব্য নাই করলাম ।
জীবন ও সমাজ: বর্তমানে আপনি আপনার এই জীবন নিয়ে কতটুকু সুখ অনুভব করছেন? আর তরুণদের উদ্দেশে আপনার কিছু মূল্যবান পরামর্শ দিন।
সত্যি আমার প্রকাশের ভাষা নেই । এই সুখ কাউকে বলে বোঝানো যাবে না । পৃথিবীতে সুখী ব্যাক্তিদের মধ্যে নিজেকে বন্দী রাখতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি । সত্যি আমি কৃতজ্ঞ আমার পরম শ্রদ্ধাস্পদ সৃষ্টিকর্তার প্রতি । তারপর আমার জন্মদাতা-দায়িনী পিতা-মাতার প্রতি । নম্রতার সঙ্গে বলতে ইচ্ছে করছে । পূর্বে একুশের বইমেলায় প্রবেশ গতি ছিল । একজন দর্শকদের সারিতে। আর এখন প্রবেশ করছি একজন লেখকের পদমর্যাদায়। এর থেকে সুখ একজন ব্যক্তির নিকটে আর কি হতে পারে?
আমাদের বাসস্থানরত সুন্দর পৃথিবীর সাজানো জীবনের মধ্যে অনেক ভাগাভাগি রয়েছে অনেক বৈষম্য বিভেদ রয়েছে। বলাবহুল্য, সবকিছুর ভাগাভাগি করা যায়। তরুণদের উদ্দেশ্যে করে আমি একটি কথা বলতে চাই । একটি জিনিসের কিন্তু কোন ভাগ কখনোই করা যায় না । যেটি হলো লেখাপড়া । যে, যতটুকু অর্জন করবে। ততটুকু তারই থেকে যাবে। কাজেই আমি বলব আগে বিদ্যা অর্জন কর। বুদ্ধি মেডিটেশন কর। সারাক্ষণ মনের মধ্যে বুদ্ধিকে নিয়ে আউরাতে থাক। চলার পথে যখন যেখানে সুন্দর এবং ভালো শিক্ষণীয় জিনিস গুলোকে ম্যমরাইস কর। নোট করে রাখ। খারাপকে বর্জন করে ভালোকে অর্জন কর। সাহিত্যের সাথে থাক। সৃজনশীল পদ্ধতিতে এগিয়ে যাও। কেননা হতাশা তোমাকে কিছুই দিতে পারবে না। বরং আশাগুলো বিনষ্ট করে দিবে। আশীর্বাদ করছি। তোমাদের সবার জীবন সুন্দর এবং সুখের হোক্ এই প্রত্যাশা করছি ।
জীবন ও সমাজ: কম-বেশি যাদের কাছে আপনি পরিচিত, তাদের মুখে শোনা যায়, রত্না দি এতো কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে তারপরও ক্লান্ত দেখায় না তাকে। বরং কজের পর কাজ করে যায়। মূলত কোথা থেকে এতো এ্যানার্জি পান আপনার কাজগুলো আনন্দসহকারে করতে?
✩ আসলে, সৃষ্টিকর্তা মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন দুটো জিনিস দিয়ে। একটি হয়েছে শরীর অন্যটি হয়েছে মন। মানব দেহে যতগুলো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রয়েছে । সবগুলোই তার মনের সঙ্গে ওতোপ্রতভাবে, অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। কাজেই, শরীরের শক্তি যখন ক্ষীণ হয়ে পড়ে। তখন মনের জোর একেবারেই শক্তিশালী করে ধরে রাখা উচিত । একটি কথা হলফ করে বলতে পারি । আমার এই মনের জোরকে বাঁচিয়ে রাখার কারণেই আমাকে দেখতে সকলের নিকটে এতটা শক্তি ও সামর্থ মনে হয় । হ্যাঁ ঠিক বলেছেন, আমি যে কতো রাত জেগে আমার লেখালেখিতে সময় দেই তার কোন ইয়ত্তা নেই । একবার ছেলে এসে বলে মামনি ঘুমোতে যাও। ছেলের বাবা এসে বলে শরীর খারাপ করবে ঘুমোতে যাও। কিন্তু কে শোনে কার কথা। আসলে, লেখার মুড একবার এসে গেলে তখন শেষ না করে আর উঠতে ইচ্ছা হয় না। কারণ লেখার মুড সব সময় একরকম থাকে না। তাছাড়া, ব্যস্ত দেশে থাকছি। ঘরের কাজ, বাহিরের কাজ, সামাজিক পরিমণ্ডলে বিচরণ সব কিছু নিজের দায়িত্বে সম্পূর্ণ করতে হয়। অনেক সময় আপনাদের মতো আমিও সর্বদা ভাবি, কিভাবে আমি এতকিছু একা সামলাচ্ছি ক্রমাগতভাবে। আসলে, সৃষ্টিকর্তাই বোধহয় আমার মুখমণ্ডলকে এভাবেই তৈরী করেছেন। শরীরে যতই অসুস্থতা থাক না কেন। ফেইস তা কোনভাবেই বুঝতে দেয় না। পরিশেষে এটিই বলতে হবে। এটি মনের জোরেই হচ্ছে। ফেইস তা কোনভাবেই বুঝতে দেয় না । পরিশেষে, একটি কথাই বলতে হবে। সত্যি মনের জোরেই আজ আমাকে এই তারুণ্যের উপলব্ধি যুগিয়ে দিয়েছে ।
→ জীবন ও সমাজ: সাধারণত আপনি ব্যস্ত সময় কাটান। এক্ষেত্রে পরিবার থেকে কেমন সমর্থন পান। পরিবারের সদস্যরা আপনার ব্যস্ততাকে কিভাবে দেখেন?
✩ প্রকৃতভাবে, এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কেননা আজ যদি তাদের সাহায্য সহসহযোগিতা অনুপ্রেরণা না পেতাম, তাহলে কোনভাবেই সম্ভব ছিল না লেখালেখি করে এতো দূর আসা। এর মাঝে তিনটি বই প্রকাশ করা। তথা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এতো লেখালেখি করা। স্বরচিত কবিতা পাঠ করা। তাছাড়া, ইদানিং আরেকটি ব্যস্ততা যুক্ত হয়েছে, তা হলো, যুমের মধ্যদিয়ে প্রভুর বাক্য সহভাগিতা করা ।
আমার পরিবার বলতে আমার একমাত্র ছেলে জর্জ রাসেল বাড়ৈ এবং তার বাবা আমার স্বামী মি: জেমস্ টিপু বাড়ৈ। এই তিনজনের সমন্বয়েই আমার পরিবার। পূর্বে একটি প্রশ্নের উত্তরে আমি বলেছিলাম তাদের সাহায্য-সাহচর্যের কথা। তাছাড়া প্রশংসা শুনতে কে না ভালবাসে বলুন? আপন লোকের সুনাম, সমৃদ্ধি, গৌরব, প্রশংসাকেই বা শুনতে না চায়? আর সেক্ষেত্রে তারাও এর থেকে দূরে নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে বলতে চাই, সম্ভবত নিজের একটুখানি প্রশংসাই বলা চলে। আসলে আমার পরিবার একটি নির্ঝঞ্ঝাট পরিবার। যেখানে নেই কোন বৈষম্য বিভেদ-কলহ। কারণ আমার স্বামী শিক্ষিত ও ভীষণ শান্তিপ্রিয়, ধর্মভীরু একজন ব্যক্তি। নিজে ঠকবেন কিন্তু অন্যকে ঠকাবেন না। ভীষণ হেল্পফুল। আর আমার ছেলে ওকে অনেকেই তুলনা করে কথা বলে থাকে। স্টুডেন্ট হিসেবেও ভীষণ বিচক্ষণ। এ বছরই ম্যডিকেল প্রিমেইডে ব্যাচেলর ডিগ্রি শেষ করল। সামনে তার আরো কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে। আপনাদের প্রার্থনা তার জন্য বিশেষভাবে কামনা করছি । আমি কিন্তু তাদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তা আমার লেখা পড়লেই বুঝতে পারেন। আমি ভীষণ বাস্তববাদী। সত্য কথা, উচিত কথা বলতে আমি কাউকে ভয় পাই না। ফলশ্রুতিতে, প্রায়ই নিন্দুকদের কিছু খেতাব আমাকে শুনতে হয়। তবে স্বনামধন্যরা কিন্তু আমাকে সাপোর্ট দিয়ে যান। তারপরেও আমি যার ভজনায় রয়েছি, তিনি আমাকে দেখেন এবং রক্ষা করেন।
✩→✩পরিশেষে আমি আমার অন্তরের অন্তরস্থল থেকে আপনাদের অনলাইন ম্যাগাজিন জীবন ও সমাজ’কে কৃতজ্ঞতা জানাই। নিজেকে প্রকাশের ও বিকাশের একটি সুযোগের জন্য। আপনাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি । অতপর আপনাদের পত্রিকা তথা পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত থেকে সম্পাদনা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন। এ পত্রিকায় কর্মরত সকলের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করছি। সৃষ্টিকর্তার এই আশীর্বাদ সবার জীবনে আসে না। তিনি আমাকে এই তালন্তে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তার আশীর্বাদে আশীর্বাদিত করে ধন্য করেছেন। এর থেকে বৃহত্তর অনুভূতি একজন সৃষ্টির সেরা জীবের নিকটে আর কি হতে পারে? বিনম্রচিত্তে তার ধন্যবাদ করি। একজন লেখিকা হিসেবে আপনাদের পত্রিকায় সাক্ষাৎকার সুযোগ পাবার অনুভূতিই বা কম কিসে ।
Tags:
ফিচার
These are by far the best bets in a game of roulette and the only ones a newbie ought to concentrate on to}. If eager on|you like} to put crazy and expensive bets, this isn't for you. I am here to help individuals to seek out|to search out} the best roulette strategies to win, not the most costly pastime on the earth. Most of the online video games I included in the list above settle for bets starting from €/£/$1 to 메리트카지노 €/£/$5.
ReplyDelete