এক উজ্জ্বল নক্ষত্র খসে গেল অতি দ্রুত

 এক উজ্জ্বল নক্ষত্র খসে গেল অতি দ্রুত ( ব্রাদার লিটন জেরম রোজারিও সিএসসি )

সংগ্রামী মানব : মানব জীবন ক্ষণস্থায়ী। এই ক্ষণস্থায়ী জীবনের রয়েছে নিগূঢ় রহস্য। দিনের পর রাত আসে, বছর ঘুরে নব বছরের সূচনা হয়। সময়ের তাড়া দেখে মনে হয়, এই বুঝি মৃত্যুপক্ষি এসে দ্রুত আত্মাটা দেহ থেকে টেনে হিছড়ে বের করে নিয়ে যাবে। এই অকৃত্রিম সত্যটার দাপট কেন জানি বুঝে উঠা বড়ই মুশকিল। মৃত্যুপক্ষি কেন জানি প্রতিনিয়ত আমারই উপর এসে বাসা বাধঁছে। মনে হয় ও এখনই আমার আত্মাটি দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে উড়ে চলে যাবে। সত্যিই তো ও একটা রাক্ষুসী। যাকে একবার ধরে তাকে কোনক্রমেই ছাড়ে না। বারংবারই ওকে আমায় মোকাবেলা করতে হয়। আমাকে নিতে না পেরে ও আজকে আমার প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে দূর-দিগন্তে রওনা হলো। 
 এক উজ্জ্বল নক্ষত্র খসে গেল অতি দ্রুত

আমাকে একাকী বিজন, জরাজীর্ণ বনে ফেলে রেখে চলে গেল। যেই মানুষটি ছিল সদা হাস্যেজ্জ্বল, যে মানুষটি কখনও উচ্চ-বাচ্চ করেননি, যে মানুষটি আমায় ভালোবাসত, যাকে আমি অনেক বেশি ভালোবাসতাম ও শ্রদ্ধা করতাম, সে আজ মৃত। পবিত্র, কোমলমতি দেহটি ঐ দেখা যায় ঐ মৃত্যু পালংকে শায়িত। পরনে তার সাত-আট হাত সাদা কাপড়, হাতদ্বয় একসঙ্গে একতাবদ্ধ। আশেপাশে হরেক রকমের ফুলের বাহার। আমায় কেন জানি প্রিয় মানুষটির সাথে শেষ কিছু কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, কেন জানি তাকে ধরে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে। প্রিয় মুখখানি দেখে সৃষ্টিকর্তাকে প্রশ্ন করতে লাগলাম, কেন তুমি আমার আগে আমার প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে নিলে? তুমি কেন এতো নিষ্ঠুর? যেই ব্যক্তিটি আমার জীবন যাত্রায় শামিল হয়েছিল, তাকেই তুমি ডেকে নিলে। আজ আমার ডান পাশটি মৃতপ্রায়। ঐ মানুষটির মূল্যতো শত, লক্ষ-কোটি, অর্থমূল্যের চেয়েও ঢের বেশি। আমি এমন একজন মানুষকে হারিয়েছি যার বাক্যচারণ ছিল শ্রুতিমধুর, যার প্রতিটি পদযাত্রায় ছিল আধ্যাত্মিকতা, সেই মহান নক্ষত্রটি আজ আর নেই, খসে গেল অতি দ্রুত। মানুষটির মহাপ্রয়াণে দুচোখ আজ অশ্রুসিক্ত। কাঁদতে-কাঁদতে চোখাশ্রু তো শূণ্যের কোঠায় নেমে গেছে। দু-এক ফোঁটা বাকী ছিল তাও আজ ঝরে গেছে। মানুষটিকে হারিয়ে আমি আজ নিস্ব, একাকীত্ব অনুভব করছি। আমি প্রিয় মানুষটির মুখচ্ছবি দেখে শুধুই বলেছি, স্রষ্টা তুমি কেনই বা তাকে এত তাড়াতাড়ি নিয়ে নিলে, কোন দোষে তাকে দোষী করলে।  মৃত্যুপক্ষী এসে আমার আত্মাটা নিয়ে গেলেও আমি বলতাম হ্যাঁ তুমি ঠিকই করেছ। আর তো আমায় প্রিয় মানুষগুলোকে হারাতে হবে না, মৃত্যুশয্যায় শায়িত তাদের মুখচ্ছবি দেখতে হবে না। আমি যাকে উজ্জ্বল নক্ষত্রের সাথে তুলনা করেছি, তিনি সবার পরিচিত ব্রাদার লিটন জেরম রোজারিও সিএসসি। তিনি পৃথিবীবাসী থেকে চিরতরে স্বর্গবাসী হয়েছেন। তার প্রতিটি কর্ম বেঁচে আছে, বেঁচে থাকবে প্রত্যেকজন গুণগ্রাহীর হৃদয়চিত্তে। বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা শ্রদ্ধেয় ব্রাদার লিটন জেরম রোজারিও সিএসসির জন্য। ওপারে অনেক ভালো থাকেন এই কামনা করি। 

[জীবন ও সমাজে   পাঠাতে পারেন আপনারও লেখা প্রবন্ধ, গল্প ও ফিচার। 

লেখা পাঠানোর ঠিকানা : jibonoshomaj@gmail.com]


Post a Comment

Previous Post Next Post