শীতের বুড়ীর সাজে বাংলার অপরূপ রূপ

জ্যাষ্টিন গোমেজ : ছাতিম ফুলের গন্ধ যখন রাতের বাতাসে ভেসে বেড়ায় তখন রাত খানিকটা হিমেল হয়ে ওঠে।  ফুলের সৌরভ যেন বলে “হে বন্ধুরা! শীত আসছে তোমাদের দুয়ারে”। পৌষ ও মাঘ মাসই প্রধানত শীতকাল। যদিও শীতের আমেজ শুরু হয়ে যায় হেমন্তের ও অগ্রায়ণের মাঝামাঝি সময়ে। হেমন্তের আমেজ শেষ হতে না হতেই প্রকৃতিতে শীতের বুড়ী এসে হাজির। আর এভাবে দেখতে-দেখতে এসে পড়ে শীতের রজনী। আমাদের দেশে ছয়টি ঋতুর মধ্যে শীত পুরোই ভিন্ন। আর ভিন্ন বিভিন্ন  বৈশিষ্টে।  সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট হল হিমশীতল আবহাওয়া। শীতের সকাল মানেই অন্যরকম দৃশ্য ও অন্য আনন্দের সুখ। গ্রামের নিরিবিলি প্রকৃতির শান্ত সবুজে উড়ে কুয়াশার সাদা পর্দা। খোলা মাঠে কুয়াশার খেলা মনকে করে তোলে আনন্দময়। বিশাল মাঠকে মনে হয় কুয়াশার বিশাল দীঘি। যেনো উপরে-নিচে কুয়াশার খেলা। আর এইতো বাংলাদেশের শীতের প্রাণময় দৃশ্য।  কুয়াশায় ঢেকে যায় নির্জন বন-মাঠ আর নদীর কূল। উত্তর দিগন্তে হিমালয়ের বরফচূড়া থেকে ছড়িয়ে পড়ে হিমশীতল নিশ্বাস। প্রকৃতি কেমন যেন জড়োসরো হয়ে যায় শীতে। বিবর্ণ হলুদ পাতারা চুপিসারে খসে পড়ে পথের ধূলোয়। গাছে-গাছে তখন পাখিদের মুখরিত কলোকাকলিতে ঘুম ভাঙে মানুষের। বাংলার শীতের সকাল সত্যিই অনেক বৈচিত্র্যময়। গাছিরা খেঁজুর রস কাঁধে সারিবদ্ধভাবে হেঁটে চলে গাঁয়ে। কুয়াশার ঘন জাল সরিয়ে মিষ্টি রোদের সূর্য নতুন মাত্রা যোগ করে শীতের সকালে।

 শীতের বুড়ীর সাজে বাংলার অপরূপে রূপ
অল্প আয়ের বা অসহায়-দুস্থ মানুষের জীবন-যাত্রা শীতে কাহিল হতেও দেখা যায়। তবুও জামাই আদর করতেই শীতঋতুকে বেছে নিয়ে সুস্বাদু রসের পিঠা তৈরি করে। বাড়ী ভর্তি আত্মীয়-স্বজনদের খাওয়া-দাওয়ার ধুম পড়ে যায়। এটিই হলো শীতকালীন এক উল্লেখযোগ্য বাংলার ঐতিহ্য। শীতে গ্রাম শহরে বলা যায় সব খানেই যেন চলে শীতকে ঘিরে নবান্নের উৎসব। এই শীতকালে মেলাসহ সর্বত্রই নানা রকম পিঠা তৈরি হয়। এমন দেশে ১৫০ বা তারও বেশি রকমের পিঠা থাকলেও মোটামুটি প্রায় তিরিশ প্রকারের সুস্বাদু পিঠার প্রচলন অনেকাংশে লক্ষ্যনীয়। তাছাড়া আরও কতো রকমারি পিঠা অঞ্চল ভেদে রয়েছে সেই গুলোর প্রচুর। উল্লেখযোগ্যভাবে বলতে গেলে - নকশি পিঠা, ভাঁপা পিঠা, ছাঁচ পিঠা, দোল পিঠা, রস পিঠা, পাকান পিঠা, চাপড়ি পিঠা, চিতই পিঠা, পাতা পিঠা, মুঠি পিঠা, ছিট পিঠা, মালাই পিঠা, গোলাপ ফুল পিঠা, ঝাল পিঠা, খেঁজুরের পিঠা, পুলি পিঠা, ডিম চিতই পিঠা, ছিটকা পিঠা, চাঁদ পাকন পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা, পানতোয়া পিঠা, জামদানি পিঠা, মালপোয়া পিঠা, তেজপাতা পিঠা, ঝালপোয়া পিঠা, কাটা পিঠা, লবঙ্গ লতিকা পিঠা, তেলপোয়া পিঠা, হাঁড়িপিঠা, মুঠিপিঠা, চুটকিপিঠা, গোকুল পিঠা, রস ফুল পিঠা, নারকেল পিঠা, পুডিংপিঠা, আন্দশা পিঠা, সুন্দরী পাকন পিঠা, মেরা পিঠা, তেলের পিঠা, চাপড়ি পিঠা, দুধ-রাজ পিঠা, সেমাই পিঠা, ঝুড়ি পিঠা, ফুল পিঠা, গোকুল পিঠা, বিবিয়ানা পিঠা, ঝিনুকপিঠা, ফুলঝুরি পিঠা, কলা পিঠা, ক্ষীরকুলি পিঠা, কুশলি পিঠা, সূর্যমুখী পিঠা, ঝাল মোয়া পিঠা, নারকেল জেলাফি পিঠা, নারকেলের ভাজা পুলি পিঠা, নারকেলের সেদ্ধ পুলি পিঠা, নারকেল-নাড়– পিঠা, ফিরনি পিঠা, চিড়ার মোয়া পিঠা কিংবা কাউনের মোয়াপিঠা ইত্যাদি নাম অঞ্চলভেদে পিঠা হিসেবেই যেন বিবেচ্য। গ্রামে-গ্রামে রং-বেরঙের পিঠা, ক্ষীর ও পায়েস খাওয়ার ধুম পড়ে শীতমৌসুমে। আর হতদরিদ্র মানুষের বাড়িতেও হরেক রকমের পিঠাপুলির আয়োজনের দৃশ্য সত্যিই যেন সর্বশ্রেণীর মানুষদেরকে আনন্দ দেয়। এমন শীতে দেশের নানা সংগঠনের পক্ষ থেকে রকমারি পিঠা উৎসব হয়। তাছাড়াও খেজুর রসের তৈরি পায়েস এবং বিভিন্ন রকম সুস্বাদু পিঠা নিয়েই যেন পৌষ-সংক্রান্তির উৎসবও জমে ওঠে। আর নিজের বাড়ি ছাড়াও সন্ধ্যায় হাট-বাজারে যেন আতপ চালের গুঁড়া, নলেন গুড় এবং নারিকেল দিয়ে গণমানুষের জন্য তৈরি করা গরম ভাপা পিঠা বা পাটিসাপটা পিঠা খাওয়ার নান্দনিক দৃশ্যগুলো উপভোগ করার মতো। অন্যকে খেতে দেখলে নিজেরও অজান্তে জিহ্বাতে পানি এসেই যায়। সকালে খেজুরের - ‘মিষ্টি রস আর মুড়ি খাওয়া সবার মন কাড়ে। গাছিরা কলস ভরে ‘রস’ নিয়ে আসার নান্দনিক দৃশ্য চমৎকার। চিত্রশিল্পীর চিত্রকর্মে শীত ঋতুর খেজুর গাছ ও গাছিরা না থাকলে শীত ঋতুর তাৎপর্য ফুটে উঠে না। খেজুরের ‘কাঁচা রস” রোদে বসে খাওয়ার মধ্যেই একটা আলাদা স্বাদ আছে। আর সুন্দর পরিবেশের মধ্যে খেজুর রসের পায়েস আর নলেন গুড়ের কথা ভাবলেই যেন মনে হয় এমন বাংলায় বারবারই ‘শীত’ ফিরে আসুক।

শহরের শীতের সকাল অন্যরকম। এখানে সকালের মিষ্টি আলো ফোটার আগেই ঘুম ভাঙে নগরবাসীর। গ্রামের মতো শীতের এতো তীব্রতা নেই শহরে। তবে ফুটপাত, বস্তি, বাসস্ট্যা- এবং রেলস্টেশনের খোলা জায়গায় ঠকঠক করে কাঁপতে থাকা দুঃখী মানুষের জড়োসরো দৃশ্য শীতের রেশ জানান দিয়ে যায় কিছুটা হলেও। এদের কেউ বা আবার ছেঁড়া কাগজ জ্বেলে আগুন পোহায়। শীতকালে বাহারি পোশাক শহরের শীতকে ভিন্নতা দান করে। নাগরিক ব্যস্ততা নিয়ে ঘুম থেকে উঠেই কর্মস্থলে ছুটে যায় শহরের মানুষ।  গ্রামের মতো শহরেও দেখা যায় সকাল বিকাল বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে চিতই ভাপা পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত কিছু ক্ষুদে ব্যাবসায়ী। পল্লী গাঁয়ের মতো শহরেও শীতকালে অতিথি পাখিদের আগমণ ঘটে। রাজধানীর বিভিন্ন লেকে অগণিত অতিথি পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত এলাকা। শহরবাসী পরিবার পরিজন নিয়ে পাখি দেখতে বেরিয়ে পড়ে লেকের ধারে। গ্রামের শীতের আমেজ চাইলেও ইট-পাথরের শহরে পাওয়া যায় না। তাই শীতের পিঠা খেতে শহরের অনেকেই চলে যান নিজ গ্রামে। শহরের কর্মময় জীবন আর বিশাল অট্টালিকার আড়ালে হারিয়ে যায় শীতের সকালের সোনালী মিষ্টি রোদ। তবুও শীত আসে শহরের নাগরিক ব্যস্ততার মাঝে। খেজুর রসের স্বাদ মানুষ ভুলতে বসেছে। ইটভাটার করালগ্রাস, গাছ রোপণ, সংরক্ষণ ও পরিচর্যার অভাব ইত্যাদি কারণে এখন গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের খেজুর গাছ বিলুপ্তির পথে। যার কারণে খেজুর রস, রসের রসদ সিন্নি, পাটালী গুড়, চিট মিঠাই দুর্লভ হয়ে ওঠেছে। গাঁয়ের পথে শিশির ভেজা ভোরে এখন আর গাছিদের হাঁক-ডাক শোনা যায় না। অতৃপ্ত স্বাদের মনমাতানো রসের গুড়ের ঘ্রাণ পাওয়া যায় না। শীতে গ্রামগঞ্জে মোয়া, জিলাপি, মুড়ি, ভাপা পিঠা, চিতল পিঠা, পায়েস, ক্ষীর, নকুলদানা, বাতাসা ইত্যাদি খাওয়ার ধুম পড়ে। শীতকালে গাঁও-গ্রামের বাড়িতে উঠানের কোণে নতুন চুলা দেখা যায়। শীতকালের মতো এমন সৌন্দর্য আর ঐশ্বর্যের মহিমা অন্য কোনো ঋতুতে দেখা যায় না।

 আমাদের বাংলা সাহিত্যেও শীতের অনেক অবদান রয়েছে। এই শীতকে নিয়ে বাংলা সাহিত্যে রয়েছে প্রচুর সাহিত্য। বাংলা কবিতায় শীত প্রবেশ করেছে মধ্যযুগে বিশেষ করে মঙ্গলকাব্যে নায়িকার বারো মাসের কষ্ট-বর্ণনার অনিবার্য-পরিসরে। ষোড়শ শতকের কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী বলেছেন: ‘পউষের প্রবল শীত সুখী যেজন। / তুলি পাড়ি আছারি শীতের নিবারণ / ফুল্লরার কত আছে কর্মের বিপাক। / মাঘ মাসে কাননে তুলিতে নাহি শাক’ পরবর্তীকালে আধুনিক কবিরাও শীতকালের বন্দনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন: ‘শীতের হাওয়া হঠাৎ ছুটে এলো। / গানের হাওয়া শেষ না হতে। / মনে কথা ছড়িয়ে এলোমেলো। / ভাসিয়ে দিল শুকনো পাতার স্রোতে। ’ শীতের শেষে বসন্তের শুরুকে আবাহন করেছেন বোধকরি কবি। অন্যত্র তিনি লিখছেন: ‘এসেছে শীত গাহিতে গীত বসন্তেরই জয়’। শীতকে তিনি মৃত্যুর প্রতীকেও প্রয়োগ করেছেন। রবিবাবু ‘শীতের প্রবেশ’ কবিতায় লিখেছেন: ‘শীত, যদি তুমি মোরে দাও ডাক দাঁড়ায়ে দ্বারে। / সেই নিমেষেই যাব নির্বাক অজানার পারে।’ জসীম উদ্দীনের কবিতায় শীতকে আমরা পাই আমাদের নিজস্ব ঋতুরূপে। শীতকালের প্রবল ও আন্তরিক বর্ণনা তার কবিতায় যেভাবে প্রকাশ পেয়েছে, বাংলা সাহিত্যে আর কোনো কবির রচনায় তেমনটা হয়নি। ‘রাখাল ছেলে’ কবিতা থেকে খানিকটা পাঠ নেওয়া যেতে পারে: “ঘুম হতে আজ জেগেই দেখি শিশির-ঝরা ঘাসে, / সারা রাতের স্বপন আমার মিঠেল রোদে হাসে। / আমার সাথে করত খেলা প্রভাত হাওয়া, ভাই,/ সরষে ফুলের পাঁপড়ি নাড়ি ডাকছে মোরে তাই। / চলতে পথে মটরশুঁটি জড়িয়ে দুখান পা, / বলছে ডেকে, ‘গায়ের রাখাল একটু খেলে যা!’... সরষে বালা নুইয়ে গলা হলদে হাওয়ার সুখে,/ মটর বোনের ঘোমটা খুলে চুমু দিয়ে যায় মুখে! / ঝাউয়ের ঝাড়ে বাজায় বাঁশী পউষ-পাগল বুড়ী, / আমরা সেথা চষতে লাঙল মুর্শিদা গান জুড়ি।” তার ‘নিমন্ত্রণ’ কবিতায় আছে শীতের অনুষঙ্গ: ‘তুমি যদি যাও দেখিবে সেখানে মটর-লতার সনে, / সীম আর সীম হাত বাড়ালেই মুঠি ভরে  সেইখানে। / তুমি যদি যাও সে-সব কুড়ায়ে, / নাড়ার আগুনে পোড়ায়ে পোড়ায়ে,/ খাব আর যত গেঁয়ো চাষীদের ডাকিয়া নিমন্ত্রণে, / হাসিয়া হাসিয়া মুঠি মুঠি তাহা বিলাইব জনে জনে।’

প্রকৃতির কবি, রূপসী বাংলার রূপকার জীবনানন্দ দাশ ‘শীতরাত’ কবিতায় লিখেছেন: ‘এইসব শীতের রাতে আমার হৃদয়ে মৃত্যু আসে; / বাইরে হয়ত শিশির ঝরছে, কিংবা পাতা।’ তার কবিতায় ঘুরে ঘুরে আসে ‘পউষের ভেজা ভোর’, ‘নোনাফল’, ‘আতাবন’ ‘চুলের উপর তার কুয়াশা রেখেছে হাত’, ‘ঝরিছে শিশির’, ‘পউষের শেষরাতে নিমপেঁচাটি’। ‘এইসব ভালো লাগে’ কবিতায় তিনি লিখেছেন: ‘জানালার ফাঁক দিয়ে ভোরের সোনালি রোদ এসে / আমারে ঘুমাতে দেখে বিছানায়, আমার কাতর চোখ, আমার বিমর্ষ ম্লান চুল— / এই নিয়ে খেলা করে: জানে সে যে বহুদিন আগে আমি করেছি কী ভুল/ পৃবিবীর সবচেয়ে ক্ষমাহীন গাঢ় এক রূপসীর মুখ ভালোবেসে,/ পউষের শেষরাতে আজো আমি দেখি চেয়ে আবার সে আমাদের দেশে/ ফিরে এলো; রং তার কেমন তা জানে ওই টসটসে ভিজে জামরুল,/ নরম জামের মতো চুল তার, ঘুঘুর বুকের মতো অস্ফুট আঙুল।’ কবিতা লেখা আর শীত রাতের হিম-প্রখরতা যেন জীবনানন্দের ভাবনায় একাকার হয়ে আছে। জানাচ্ছেন সে কথা: ‘এ-সব কবিতা আমি যখন লিখেছি ব’সে নিজ মনে একা;/ চালতার পাতা থেকে টুপ্ টুপ্ জ্যোৎস্নায় ঝরেছে শিশির;/ কুয়াশায় স্থির হয়ে ছিল ম্লান ধানসিঁড়ি নদীটির তীর;/ বাদুড় আঁধার ডানা মেলে হিম জ্যোৎস্নায় কাটিয়াছে রেখা/ আকাক্সক্ষার; নিভু দীপ আগলায়ে মনোরমা দিয়ে গেছে দেখা / সঙ্গে তার কবেকার মৌমাছির... কিশোরীর ভিড় / আমের বউল দিল শীতরাতে; আনিল আতার হিম ক্ষীর;/ মলিন আলোয় আমি তাহাদের দেখিলাম,’ 

রবীন্দ্রনাথ ঋতুভিত্তিক নাটক লিখেছেন। ‘রক্তকরবী’ (প্রকাশকাল: ডিসেম্বর ১৯২৬) শীতকালের নাটক। নাটকটির ঘটনার কাল পৌষমাস; ফসল কাটার ও নবান্নের প্রবল মৌসুমের প্রাক্কাল। শীতকালে যেমন ফসল কাটার ধুম নামে, তেমনই চলে খোদাই করে খোঁজাখুঁজির ব্যস্ততা। প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া এই দ্বন্দ্বের স্বরূপ রবীন্দ্রনাথ কৌশলে নাটকের ক্যানভাসে তুলে এনেছেন। বাংলা উপন্যাসেও আছে শীতের উপস্থিতি। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্’র ‘চাঁদের অমাবস্যা’ উপন্যাসে শীতের বর্ণনা তার পাঠককে আকৃষ্ট করে। খানিকটা পাঠ নেওয়া যাক: ‘শীতের উজ্জ্বল জ্যোৎস্নারাত, তখনো কুয়াশা নামে নাই। বাঁশঝাড়ে তাই অন্ধকারটা তেমন জমজমাট নয়। সেখানে আলো-অন্ধকারের মধ্যে যুবক শিক্ষক একটি যুবতী নারীর অর্ধ-উলঙ্গ মৃতদেহ দেখতে পায়। অবশ্য কথাটা বুঝতে তার একটু দেরি লেগেছে, কারণ তা ঝট্ করে বোঝা সহজ নয়। পায়ের ওপর এক ঝলক চাঁদের আলো। শুয়েও শুয়ে নাই। তারপর কোথায় তীব্রভাবে বাঁশি বাজতে শুরু করে। যুবতী নারীর হাত-পা নড়ে না। চোখটা খোলা মনে হয়, কিন্তু সত্যিই হাত-পা নড়ে না। তারপর বাঁশির আওয়াজ সুতীব্র হয়ে ওঠে। অবশ্য বাঁশির আওয়াজ সে শোনে নাই। ’

গ্রাম এবং শহরের সকল মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হওয়ার জন্যেই শীতে কালের নিস্তব্ধ জনজীবন বৈদ্যুতিক আলোয় আলোকিত হয়েছে। ঘরে বসে শীতবস্ত্র পরিধাণ করে টেলিভিশন, ইন্টারনেট এবং ফেসবুকের মতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেই সময় কাটায়। এ শীতকালে মানুষের জন্যে কিছু মানুষ খোঁজে পাওয়া যায়, তারাই হত-দরিদ্র মানুষকে, পথে-ঘাটে ঘুরে বেড়ানো মানুষকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। তারাই তো হলেন সরকার, দানশীল ব্যক্তি এবং বিভিন্ন সংগঠন এর ব্যক্তি। দুস্থ-গরিবদের মধ্যেই শীত বস্ত্র-বিতরণ করে মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চায়। অপরদিকে এদেশের বিত্তবানদের গরম কাপড়ের প্রদর্শনী বাংলার প্রকৃতিতে মন ভোলানো রূপ বিরাজ করে। সকল শ্রেণির মানুষের মুখে হাসি এবং তারা শীতকালের বাহারিপোষাক পরেই ফুরফুরে মেজাজে থাকে। ইতিবাচক আর নেতিবাচক যাই হোক শীতের সৌন্দর্য আমাদের প্রকৃতিকে আর জনজীবন বিমোহিত হয়। শীত আমাদের ক্লান্তির, অসহায়তার এবং বিপন্নতামোচনের কাল। 


 লেখক : জ্যাষ্টিন গোমেজ

সম্পাদনা সহযোগি,

সাপ্তাহিক প্রতিবেশী, 

justingomes80@gmail.com 


কৃতজ্ঞতাস্বীকার : 

  • শীত - উইকিপিডিয়া 
  • সাহিত্যে শীতকাল - ফজলুল হক সৈকত - বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম 
  • শীতকালীন প্রকৃতি ও মানব জীবনের পরিবেশ দর্শন - নজরুল ইসলাম তোফা -www.protidinerchitrobd.com

[জীবন ও সমাজে   পাঠাতে পারেন আপনারও লেখা প্রবন্ধ, গল্প ও ফিচার। 

লেখা পাঠানোর ঠিকানা : jibonoshomaj@gmail.com]


Post a Comment

Previous Post Next Post