গণস্বপ্ন ২০৫০ : গ্রামীণ বাংলাদেশ থেকে নগরীয় বাংলাদেশ

গণস্বপ্ন ২০৫০ : গ্রামীণ বাংলাদেশ থেকে নগরীয় বাংলাদেশ 

বাংলাদেশ একসময় গ্রামীণ/কৃষিজ দেশ ছিলো। নগরায়ন দ্বারা ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ একটি গ্রামীণ-নগরীয় দেশ-এ উন্নীত হয়; এটি হল একটি মিশ্র দেশ/সমাজ, যা  নানান অনুপাতে গঠিত হয়ে থাকে, যেমন ৭৫% গ্রামীণ, ২৫% নগরীয়; ৭০% গ্রামীণ, ৩০% নগরীয়; ৬৫% গ্রামীণ, ৩৫% নগরীয়; ৬০% গ্রামীণ, ৪০% নগরীয়; ২০২০ সালে ৫০% গ্রামীণ, ৫০% নগরীয়। ৪৫% গ্রামীণ, ৫৫% নগরীয়; ৪০% গ্রামীণ, ৬০% নগরীয়; ৩৫% গ্রামীণ, ৬৫% নগরীয়; ৩০% গ্রামীণ, ৭০% নগরীয়; এবং ২৬% গ্রামীণ, ৭৪% নগরীয় ইত্যাদি। এ মিশ্র অবস্থাটি ২৫% গ্রামীণ ও ৭৫% নগরীয় হলেই বাংলাদেশ তখন হয়ে যাবে একটি নগরীয় দেশ; তার আগ (২৬% গ্রামীণ, ৭৪% নগরীয়) পর্যন্ত স্ট্যাটাস থাকবে গ্রামীণ-নগরীয় দেশ/সমাজ। প্রতিবর্ষ শেষে, দশক শেষে গ্রামীণ-নগরীয় শতাংশ দেখে বাংলাদেশে নগরায়নে অগ্রগতি কোন পর্যায়ে রয়েছে তা সহজে বোঝা যাবে। গ্রামীণ-নগরীয় মিশ্র শতাংশে ক্রমশ গ্রামীণ% শতাংশ কমতে থাকবে, নগরীয়% শতাংশ বাড়তে থাকবে। দেশে গ্রামীণ এলাকায় প্রায় ২০,০০০ (বিশ হাজার) অকৃষি উন্নয়ন হাব রয়েছে (গ্রামীণ এলাকায় অবস্থিত এসব হাঁট-বাজারকে জনাব তালেব “অকৃষি উন্নয়ন হাব” বা “অকৃষি হাব” নামকরণ করেছেন); ধারাবাহিক অর্থনৈতিক গ্রোথ, রেমিটেন্স প্রবাহ ও অন্যকিছু কারণে নতুন-নতুন অকৃষি হাব সৃষ্টি হচ্ছে এবং তা চলমান থাকবে; এসব অকৃষি হাব কেন্দ্রিক নগরীয় ইউনিট ও নগরীয় জনসংখ্যা বাড়তে থাকবে। ক্রমাগত নগরায়ন প্রক্রিয়া মাথায় নিয়ে জনাব আবু তালেব ১৯৯৭ সালে ১৩ জানুয়ারীতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত “স্থানীয় সরকার: গণতন্ত্রের অন্যতম ভিত” শীর্ষক এক জাতীয় সেমিনারে বাংলাদেশকে গ্রামীণ দেশের পরিবর্তে একটি ‘গ্রামীণ-নগরীয় দেশ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। সেসঙ্গে তিনি ঘোষণা করেন, ভবিষ্যত বাংলাদেশ হবে ২০৫০ সালের মধ্যে একটি ‘নগরীয় দেশ’; একেই জনাব তালেব ‘গণস্বপ্ন ২০৫০’ নামে অভিহিত করেন, এবং তা যেন প্রতিটি মানুষ নিজস্ব স্বপ্ন হিসেবে নেয় সেজন্য ১৯৯৭ সাল থেকে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন শুরু করেন; লক্ষ্য হল ‘গ্রামীণ-নগরীয় দেশ’ ও ‘নগরীয় দেশ তথা গণস্বপ্ন ২০৫০’ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা; সমাজ ও প্রশাসনকে গ্রামীণ-নগরীয় দেশ ও  নগরীয় দেশ উপযোগী করা; উন্নত গণতান্ত্রিক দেশ তথা গণস্বপ্ন ২০২০, গ্রামীণ-নগরীয় দেশ ও নগরীয় দেশ তথা গণস্বপ্ন ২০৫০ ভিত্তিক প্রণীত গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের রূপরেখায় জনগণ ও সরকারকে তা বাস্তবায়নে একাত্মবোধ প্রকাশ করা; অন্যান্য বিষয়েও গণস্বপ্ন ২০২০ (৫ম পৃষ্ঠায় শেষাংশ দেখুন) ও গণস্বপ্ন ২০৫০ ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করানো এবং এডহকভিত্তিক চিন্তা-ভাবনাকে ভিশনভিত্তিক করানো ইত্যাদি। ১৯৯৭ সাল থেকে সরকারগুলো গ্রামীণ দেশ থেকে গ্রামীণ-নগরীয় দেশ হওয়া এবং তা থেকে নগরীয় দেশ হয়ে ওঠতে থাকার বিষয়টি আমলে নেননি; অনেকে ‘গণস্বপ্ন ২০৫০’ নিয়ে হাসাহাসি করেছেন ও একে একটি অলীক স্বপ্ন বলেছেন; সেটি এখন দৃশ্যমান বাস্তবতায় পাল্টাচ্ছে। ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিলো, নীতিনির্ধারকগণ বিষয়টি আমলে নেননি; ক্ষমতায় পালাবদলে অন্যরাও বিষয়টি আমলে নেননি; অনেক সময় চলে গেল; একাদশ সংসদীয় নির্বাচন উপলক্ষে ঘোষিত দলীয় মেনিফেস্টোতে আওয়ামী লীগ ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ অঙ্গীকার ব্যক্ত করল; কিন্তু তাতে ‘গ্রামীণ-নগরীয় দেশ’ ও ‘গণস্বপ্ন ২০৫০’ বিষয়দ্বয় উল্লেখ করল না; এতে অনুধাবনটা খন্ডিত হয়ে প্রকাশিত হলেও নগরীয় বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়াতে আওয়ামী লীগকে ধন্যবাদ জানাই; এ বিষয়দ্বয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দল এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে; তাদেরকে গ্রামীণ-নগরীয় দেশ ও গণস্বপ্ন ২০৫০ বিষয়দ্বয় ভাবনায় নিতে হবে। সেসঙ্গে মনে রাখতে হবে গ্রামীণ দেশ থেকে নগরীয় দেশ লক্ষ্যমুখী পথযাত্রায় গ্রামীণ-নগরীয় দেশ হল একটি মধ্যবর্তী পর্যায়; এ সময়ে, বাংলাদেশকে একদিকে গ্রামীণ দেশ থেকে গ্রামীণ-নগরীয় দেশ উপযোগী হয়ে চলতে হবে; প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রামীণ-নগরীয় দেশ উপযোগী হতে হবে; সে লক্ষ্য পূরণ করতে সরকারকে প্রথমে বাংলাদেশকে একটি গ্রামীণ-নগরীয় দেশ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে; প্রশাসন ও মানুষকে গ্রামীণতা থেকে গ্রামীণ-নগরীয়তায় নিতে হবে; গ্রামীণ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে গ্রামীণ-নগরীয় জটিল সমস্যা সমাধান করা কঠিনতর, গ্রামীণ-নগরীয় দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া সমাধান প্রক্রিয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠছে; সেটি জনগণ প্রতিনিয়ত দেখছে। প্রশাসন ও মানুষকে প্রবল প্রয়াসে মানসিক ও দৃৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তনে যেতে হবে; তা নিয়ে ক্যাম্পেইন থাকলেও বিষয়গুলো সামনে নিয়ে পরিপ্রেক্ষণ প্লান, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, বাজেট ইত্যাদি প্রণীত হচ্ছে না; সেটি চলতি বাজেটে (২০২০-’২১) নেই; ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও পরিপ্রেক্ষণ প্লানে (২০৩০ ও ২০৪০) কতটুকু থাকবে ভা এখনো অজানা। সরকারকে গ্রামীণ-নগরীয় দেশ ও ‘গণস্বপ্ন ২০৫০’ নিয়ে উচ্চকণ্ঠ ও মনোযোগী হতে হবে; এটি এখন একটি দৃশ্যমান প্রক্রিয়া, তাতে জনগণ ও প্রশাসনকে সচেতনভাবে একাত্ব হতে হবে; বর্তমানে নগরীয় ইউনিটগুলিতে নগরবাসী হচ্ছেন প্রায় ৭ কোটি; ২০২০ সালে নগরীয় এলাকাগুলিতে (৩৬০টি নগরীয় ইউনিট ও ২০,০০০ অকৃষি হাব) প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জনসংখ্যা প্রায় অর্ধেকে উন্নীত হবার কথা; প্রকৃত হিসাব করলে তা অচীরেই বর্ষশেষে মিলানো যাবে। ২০৫০ সালে গোটা জনগোষ্ঠী নগরবাসী হবেন; নগরীয় জনসংখ্যারবৃদ্ধি দশকে নিয়ে ২০৩০ ও ২০৪০ সালে শতাংশ ও সংখ্যাগত হিসাবে প্রদর্শন করাও সম্ভব। নগরবাসীকে নগরীয় মননে ও নগরীয় কৃষিতে নিতে হবে; সেজন্য প্রশাসন ও মানুষকে মানসিক ও শিক্ষাগত প্রস্তুতি দ্বারা নগরীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে উন্নীত হতে হবে। নগরায়ন দ্রুতময় করতে কৃষিতে শ্রমশক্তি ৪০.৬০% থেকে কমিয়ে এনে ২০% করতে হবে; কেবল ২০% শ্রমশক্তি দিয়েই বর্তমানে খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখা সম্ভব; সে অর্থে কৃষিতে ২০% শ্রমশক্তির অপচয় হচ্ছে; এ অপচয় রোধ করতে ২০% কৃষি শ্রমশক্তিকে অকৃষি পেশায় কর্ম দিতে হবে; ভবিষ্যতে এক পর্যায়ে কৃষিতে মাত্র ১০% শ্রমশক্তি দ্বারা খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখা সম্ভব হবে, ফলে কৃষি থেকে ৩০% শ্রমমক্তি অকৃষি পেশায় নিয়ে যেতে হবে। জিডিপিতে কৃষির অবদান হচ্ছে মাত্র ১৩% শতাংশ; তা কমে প্রায় ৫% শতাংশে এসে যাবে; তবে কৃষি অতিগুরুত্ব হারায়নি, হারাবে না। অর্ধ-বেকার কৃষক-কর্মী, প্রবাসফেরত কর্মহীন কর্মী ও কর্মসন্ধানী তরুণসমাজকে কাম-কাজ যোগাতে ২০,০০০ (বিশ হাজার) অকৃষি হাব ও ৩৬০টি নগরীয় ইউনিটে অকৃষি পেশায় কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে হবে; নতুন প্রজন্ম, শিক্ষিত জনশক্তি চায় অকৃষি পেশায় কর্মসংস্থান; নতুন প্রজন্ম প্রবল আগ্রহে গ্রামীণ-নগরীয় দেশ, গণস্বপ্ন ২০৫০ ও  নগরায়নকে স্বাগত জানিয়ে আসছে; ভবিষ্যৎ প্রজন্মে নগরীয় সংস্কৃতি ও  সভ্যতাই হবে মূলকথা। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ৩৬০টি নগরীয় ইউনিট ও ২০,০০০ অকৃষি উন্নয়ন হাবে নগরীয় কৃষিতে গুরুত্ব দিতে হবে; সেজন্য ৩৬০টি নগরীয় ইউনিট ও ৪,৫৯৭টি ইউনিয়নকে দায়িত্ব দিয়ে বাজেটে গ্রামীণ ও নগরীয় কৃষিতে আলাদা বরাদ্দ দিতে হবে; সে আহ্বানটি ১৯৯৭ সাল থেকেই জনাব আবু তালেব জানিয়ে আসছেন। নারী ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়ায় তৃণমূলে নগরীয় ও গ্রামীণ ইউনিটদ্বয়ে অভিজ্ঞ, দক্ষ নারী নেতৃত্ব গড়তে আবু তালেব প্রণীত এমপো (৬ষ্ঠ পৃষ্ঠা দেখুন) ও ১১ দফার ৩য়, ৪র্থ, ৫ম ও ৬ষ্ঠ দফাগুলি বাস্তবায়ন করতে হবে (৭ম-১০ম পৃষ্ঠা দেখুন); তাহলে তৃণমূলে নারী জাগরণ সৃষ্টি হবে, গণতন্ত্র মজবুত হবে। গ্রামীণ-নগরীয় দেশ ও নগরীয় দেশভিত্তিক প্রশাসনিক ইউনিট গঠন ও তা স্তরীয় সংখ্যায় সাজাতে জনাব আবু তালেব প্রণীত স্তরবিন্যাসকরণ (১ অথবা ২) বাস্তবায়ন করতে হবে (৪র্থ, ৩য় ও ২য় পৃষ্ঠাগুলি দেখুন); দেশে স্থানীয় প্রশাসনিক ইউনিট ও স্তরীয় সংখ্যা অনেক বেশি; স্তরীয় সংখ্যা কমিয়ে এনে চারস্তরীয় থেকে দু’স্তরীয় ও ইউনিট সংখ্যা ১ম পর্যায়ে ৫,৪৯৪টি থেকে কমিয়ে এনে ২,০০০-৩,০০০টি করতে হবে, সে কৌশল স্তরীয়করণ ১ ও ২ এ ১ম অংশে রয়েছে; তাতে ছোট্ট ও দক্ষ সরকার পাওয়া যাবে; পরিচালন ব্যয় কমবে, উন্নয়ন ব্যয় বাড়ানো যাবে। বিদ্যমান গ্রামীণ-নগরীয় দেশ ও ভবিষ্যত নগরীয় দেশে পরিবেশ বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে জনাব তালেব ১৯৯৭ সালে “পরিবেশবান্ধব” টার্মটি “পরিকল্পিত” শব্দটির আগে জুড়ে দেন; অনেক সময় নিলেও এখন “পরিবেশবান্ধব পরিকল্পিত” শব্দযুগলটি বেশ পরিচিতি নিয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব বিষয় ও গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের রূপরেখা নিয়ে সিডিএলজি বুদ্ধিবৃত্তিক ক্যাম্পেইন চালিয়ে আসছে, ফলে এসব বিষয়সহ তৃণমূলীয় নগর সংসদ ও সরকারের রূপরেখা, ইউনিয়ন সংসদ ও সরকারের রূপরেখা, নাম ও পদ্ধতি পরিবর্তন বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৭ সাল থেকে জেনে, শুনে, বুঝে আসছেন; এ ক্যাম্পেইন অচিরেই ২৪ (ছব্বিশ) বর্ষ পূর্ণ করছে; তাই প্রত্যাশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এখন বিষয়গুলি বাস্তবায়ন করতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন, এবং গ্রামীণ-নগরীয় দেশ ও নগরীয় দেশ তথা গণস্বপ্ন ২০৫০ ভিত্তিক শাসনকাঠামো, নীতি, ভিশন-মিশন, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, আইন-বিধি, পরিপ্রেক্ষণ প্লান, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, বাজেট ইত্যাদি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করাবেন; এবং গণস্বপ্ন ২০২০ তথা উন্নত গণতান্ত্রিক দেশ নির্মাণকরণে নতুন সময়সীমা ঠিক করবেন। 

- ধারাবাহিক চলবে

Post a Comment

Previous Post Next Post