গ্রামীণ-নগরীয় দেশ ও নগরীয় দেশ উপযোগী সরকারের স্তরবিন্যাসকরণ - ১

স্তরবিন্যাসকরণ-১ এ দু’টি অংশ রয়েছে; ১ম অংশটি হচ্ছে ‘গ্রামীণ-নগরীয় বাংলাদেশ’ এর জন্য, এবং ২য় অংশটি হচ্ছে একটি ‘নগরীয় বাংলাদেশ’ এর জন্য। জনাব আবু তালেব মনে করেন, বাংলাদেশ আর গ্রামীণ দেশ নেই; নগরায়ন দ্বারা ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ ‘গ্রামীণ দেশ’ থেকে একটি ‘গ্রামীণ-নগরীয় দেশ’ এ উন্নীত হয়, এবং গ্রামীণ-নগরীয় দেশ থেকে নগরায়ন দ্বারা ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি ‘নগরীয় দেশ’ এ উন্নীত হবে, একে তিনি “গণস্বপ্ন ২০৫০” নামে অভিহিত করেন। সেজন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত একদিকে গ্রামীণ দেশ থেকে পরিবর্তন ঘটিয়ে গ্রামীণ-নগরীয় দেশ উপযোগী হতে হবে, এবং অন্যদিকে গ্রামীণ-নগরীয় দেশ থেকে পরিবর্তন দ্বারা একটি নগরীয় বাংলাদেশ উপযোগী প্রশাসনিক কাঠামোয় উন্নীত করতে হবে। তাই তিনি গোটাদেশকে সেই স্বপ্ন ও লক্ষ্যমুখী করতে, গোটাজাতিকে মানসিক ও শিক্ষাগত প্রস্তুতিমুখী করতে গ্রামীণ-নগরীয় দেশ ও গণস্বপ্ন ২০৫০ ভিত্তিক প্রণীত স্তরবিন্যাসকরণ-১ ১৯৯৭ সালে ১৩ জানুয়ারীতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘স্থানীয় সরকার: গণতন্ত্রের অন্যতম ভিত’ শীর্ষক এক জাতীয় সেমিনারে উপস্থাপিত করেন। অনেকের কাছে তখন এটি একটি অবাস্তব কল্পনা বলে মনে হয়েছে; তবে দৃশ্যমান বাস্তবতায় ফিউচারকাস্টটি ফলতে দেখে  অনেকে তা মেনেও নিচ্ছেন। আমরা সকলকে স্তরবিন্যাসকরণ-১ এরউভয় অংশ ভালভাবে বুঝতে অনুরোধ করব, এবং ১ম অংশ থেকে ২য় অংশে উত্তরণ প্রক্রিয়াটি বুঝতে বলব; মনে রাখতে হবে, গ্রামীণ দেশ থেকে নগরীয় দেশ হওয়া পথরেখায় গ্রামীণ-নগরীয় দেশ হচ্ছে রূপান্তরকালীন পর্যায়। ১ম অংশে বিভাগ হচ্ছে গ্রামীণ-নগরীয় ইউনিট ও সর্বোচ্চ স্থানীয় ইউনিট। প্রতিটি বিভাগে একদিকে একস্তরীয় নগরীয় প্রশাসনিক ইউনিট হিসেবে নগর থাকছে, এতে বিদ্যমান পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনকে একরূপনামে “নগর” নামকরণ করা হয়েছে। অপরদিকে বিভাগে ত্রিস্তরীয় গ্রামীণ প্রশাসনিট ইউনিট হিসেবে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন থাকছে; জেলা ও উপজেলায় কোনো নগরীয় প্রশাসনিক ইউনিট থাকছেনা; জেলা ও উপজেলা হচ্ছে মধ্যবর্তী ইউনিট; সর্বনি¤œ স্থানীয় তৃণমূলীয় ইউনিটদ্বয় হচ্ছে একদিকে ইউনিয়ন ও অপরদিকে নগর। গ্রামীণ-নগরীয় দেশে তিন ধরনের স্থানীয় ইউনিট থাকছে: গ্রামীণ-নগরীয় ইউনিট, নগরীয় ইউনিট ও গ্রামীণ ইউনিট। নতুন নতুন নগর গঠন প্রক্রিয়ায় গ্রামীণ ইউনিটগুলি-জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন-একইসঙ্গে ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকবে; বিপরীতে নগরীয় ইউনিট বাড়তে থাকবে। এই প্রক্রিয়ায় গ্রামীণ দেশ থেকে গ্রামীণ-নগরীয় দেশ এবং তা থেকে একপর্যায়ে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ হবে একটি নগরীয় দেশ। তাতে অকৃষি পেশা, নগর, নগর সরকার, নগর সংসদ, নগর আদালত, নগরীয় কৃষি, নগরীয় সংস্কৃতি, নগরীয় সভ্যতা হবে মূলকথা। নগরায়ন দ্বারা চূড়ান্ত পর্যায়ে গ্রামীণ প্রশাসনিক ইউনিটগুলি-জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন-বিলুপ্ত হয়ে যাবে; ফলে ২য় অংশে প্রতিটি বিভাগে কেবল বিভাগ ও নগর নিয়ে একটি দু’স্তরবিশিষ্ট প্রশাসনিক কাঠামো দাঁড়াবে; নগরীয় দেশে এক ধরনের স্থানীয় নগরীয় ইউনিট থাকবে, অর্থাৎ গ্রামীণ-নগরীয় ইউনিট ও গ্রামীণ ইউনিট তলিয়ে যাবে। বাংলাদেশে ৫,৪৯৪টি স্থানীয় ইউনিট রয়েছে, এলোমেলোভাবে করা স্তরীয় সংখ্যাও অনেক বেশী, অর্থাৎ ৪ স্তরীয়; মূলত দেশে ২,০০০-৩,০০০ ইউনিট নিয়ে একটি দু’স্তরীয় প্রশাসনিক কাঠামো সাজানো প্রয়োজন; সে লক্ষ্যে কৌশলে ধীরলয়ে স্তরীয় ও ইউনিট সংখ্যা কমিয়ে আনতে ১ম অংশে একটি বিশেষ কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে; ১ম অংশে এটি হচ্ছে একটি বিশেষ দিক। প্রসঙ্গত বলা উচিত হবে যে, যদি ১৯৯৭ সালে ও পরবর্তীতে সরকারগুলো স্তরবিন্যাসকরণ-১ এর সুদূরপ্রসারী গুরুত্ব আমলে নিতেন, এবং তা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় যেতেন, তাহলে দেশ এখন ভিন্ন রূপে থাকতে পারতো; দীর্ঘকালেরর্চ্চায় একটি সক্ষম ও দক্ষ স্থানীয় প্রশাসনিক কাঠামো দাঁড়িয়ে যেতে পারতো। প্রসঙ্গত, উল্লেখ করা উচিত হবে, এ্ ক্যাম্পেইন ২৪ বর্ষে উপনীত হতে যাচ্ছে, এটি গ্রহণ ও বাস্তবাযনে যেতে অনেক সময় নিচ্ছে, তা খুবই দুংখজনক।

- ধারাবাহিক চলবে 


Post a Comment

Previous Post Next Post