সংগ্রামী মানব : কালো ধোয়াশে রঙের কাকাতোয়াটির বসবাস ছোট শিমুল গাছের শিখরে। বাসা বলতে দু-তিনটে কাঠের টুকরো, কিছু পাতা-লতা আর কিছু আগাছা। আত্মীয়-পরিজন তেমন কেউ নেই । সপ্তাহ দুয়েক আগে তার বোন ছিল। কিন্তু শিকারিরা এসে তার বোনকে মেরে ফেলল। সে এখন একা। সকাল হলেই খাবারের সন্ধানে বেড়িয়ে পড়ে আর ঘরে ফিরে সন্ধ্যারাতে। কোন একদিন কাকাতোয়াটি বের হল খাবারের সন্ধানে। উড়তে-উড়তে সে মাইলের পর মাইল পাড়ি দিল। কিন্তু কোথাও কোন খাবার পেল না। একটা সময় সে উড়ন্ত অবস্থায় আর থাকতে পারল না। মাথা ঘুরে পড়ে গেল। গায়ে বড্ড জ্বর। যে কেউ দেখলে বলবে হয়তোবা মরে গেছে। কিন্তু না এখনও মারা যায়নি বরং ক্ষুধার জ্বালায় অজ্ঞান হয়ে গেছে মাত্র। হঠাৎই শালকপলু নামের এক অদ্ভুত প্রাণীর আবির্ভাব হল। সে কাকাতোয়াটিকে দেখতে পেল। সঙ্গে সঙ্গে কাকাতোয়াটির কাছে চলে গেল। শালকপলু ভাবল, হয়তোবা মরে গেছে। না একবার ধরেই দেখি, বলল শালকপলু। সে কাকাতোয়াটিকে স্পর্শ করল। এতো মারা যায়নি । শালকপলু হু–ড়মুড়িয়ে জল ও খাবারের ব্যবস্থা করল। ঘন্টা দেড়েক পর সে দেখতে পেল, কাকাতোয়াটি ডানা ঝাঁপটাচ্ছে। শালকপলু খাবার দিয়ে জিজ্ঞেস করল, কেমন অনুভব করছ এখন। কাকাতোয়াটি বলল, ভাল। শালকপলু বলল, তোমার কি হয়েছিল? কাকাতোয়াটি বলল, ক্ষুধার জ্বালায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। ও, তো তুমি কোথা থেকে এসেছ? আমি জিগজগত বন থেকে এসেছি। ওখানেই থাকি আমি। শালকপলু বলল, তোমার কে কে আছে? কাকাতোয়াটি বলল, আমার কেউ নেই। শালকপলু জিজ্ঞেস করল, কিন্তু কেন? সে অনেক কথা। আমাকে বলবে, প্লিজ? কাকাতোয়াটি বলল, আচ্ছা ঠিক আছে তবে শোন---
আমরা একশজনের একটি দল ছিলাম। জীবন যাপন খুবই সুখময় ছিল। সকাল হলেই খাবারের সন্ধানে বেড়িয়ে পড়তাম আর ফিরতাম সন্ধ্যার পর। কোন কিছুতেই কমতি ছিল না যেন। কত আনন্দ, কত প্রাণখোলা হাসি। কার না ভালো লাগত! কিন্তু হল কি, আমাদের বনের পাশে রয়েছে একটি মনুষ্য গ্রাম। শুরুর দিকে দু-তিনটে পরিবার ছিল আর এখন তা বেড়ে হয়েছে হাজার খানেক। সত্য কথা বলতে কি, ওখানে মানুষরূপী কিছু দস্যু বাস করে। ঐ দস্যুগুলো প্রতিনিয়ত আমাদের আবাসস্থলকে ধ্বংস করতে বনে চলে আসে। ওরা গভীর রাতে এসে গাছ কেঁটে নিয়ে যায়। কিছুদিন পূর্বে হল কি, আমাদের এক বয়স্ক কাকাতোয়া অসুস্থ ছিল। একটু নড়াচড়া করবে সেই শক্তিটুকুও তার ছিল না। একদিন এক গভীর রাতে কয়েকজন দস্যু এসে বয়স্ক কাকাতোয়াটি যে গাছে থাকতো, সেই গাছটি কেটে নিয়ে যায়। গাছের নিচে চাপা পড়ে কাকাতোয়াটি মারা যায়। এখন জিগজগৎ বন বৃক্ষশূন্য। দস্যুরা আমাদের আবাসস্থল ধ্বংস করে দিয়েও ওরা ক্ষান্ত হয়নি। আমরা শেষ-মেস বনের সবশেষ গাছ বড়বৃক্ষে আশ্রয় নিলাম। কিন্তু ওরা এসে আমাদের সবাইকে মেরে ফেলল ও গাছটি কেঁটে নিয়ে গেল। কিন্তু ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাই আমি। আমার কুলে আর কেউ নেই বলে কাকাতোয়াটি কাঁদতে লাগল। শালকপলু কাকাতোয়াটিকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিল । কাকাতোয়াটি বলল, শালকপলু ভাই আমি এখন মরতে চাই। বন নেই, বাসা নেই, সঙ্গী নেই আমার বেঁচে থেকে কিই বা লাভ বল্। শালকপলু বলল, ওগুলো নেই তাতে কি হয়েছে, এই দেখ এই বনটি এখনও জীবিত আছে, এখানেই বাসা তৈরি করবে, সঙ্গী-সামন্ত আমরা সবাই তোমার সাথে আছি। যদি ঔ দস্যুগুলো এখানেও হানা দেয়, তখন না হয় সবাই একসঙ্গে জীবনের ইতি টানবো।
বিজ্ঞাপন : ডোমেইন, হোস্টিং, রেডি ওয়েবসাইট, এসএসএল সার্টিফিকেট এবং বাল্ক এসএমএস সার্ভিস পেতে কত খরচের কথা চিন্তা করে নিম্ন মানের সেবা থেকে বিরত থাকুন। বাংলাদেশের বিশ্বস্ত ডোমেইন-হোস্টিং ও আইটি সেবা প্রদানকারী একটি প্রতিষ্ঠান হল : ডায়না হোস্ট লিঃ ।
তাদের সেবা পেতে ভিজিট করুন : Diana Host Ltd.
[ জীবন ও সমাজে পাঠাতে পারেন আপনারও লেখা প্রবন্ধ, গল্প ও ফিচার।
লেখা পাঠানোর ঠিকানা : jibonoshomaj@gmail.com ]