ধর্ষণ কেন হয়, কারা দায়ী

জেভিয়ার শিয়োন বল্লভ 

ধর্ষণকে সাপোর্ট করার মতো মানসিকতার লোকজন আমাদের চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অবশ্য যেখানে ধর্ষণ একটা ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে, সেখানে ধর্ষণ ও ধর্ষককে সাপোর্ট করার মতো লোকজনের সংখ্যা বেশি হবেই। ধর্ষণ একটা বিকৃতকাম মানসিকতার বহিপ্রকাশ ও তীব্র পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার বহিপ্রকাশ। নিজেকে সবচেয়ে শক্তিশালী ও সর্বেসর্বা প্রমাণ করার এই যে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা, সেটাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধর্ষণের মূখ্য কারণ এবং তাছাড়াও রয়েছে রাজনৈতিক ও অন্যান্য কারণ। যাই হোক, ধর্ষণে পোষাক-আষাক বা স্বাভাবিক যৌন চাহিদাকে যারা দায়ী করে, বিষয়টি নিয়ে তাদের আরো গবেষণা করা উচিত। 

তীব্র যৌন চাহিদা বা যৌন আকর্ষণকে কন্ট্রোল করা যায়, পোষাক তো যখন-তখন পাল্টে ফেলা যায় কিন্তু বিকৃতকাম মানসিকতাকে দমন করাও যায় না, আবার পাল্টেও ফেলা যায় না। যৌনতার সাথে বা পুরুষাঙ্গের সাথে ধর্ষণের মূলত কোনো সম্পর্ক নেই। তাই সমস্ত পুরুষদের নিকট অনুরোধ, নিজেকে ধর্ষকের জাত বলা থেকে বিরত থাকুন। পুরুষতান্ত্রিক কথাটার মধ্যে পুরুষ শব্দটি থাকলেও পুরুষতান্ত্রিক মানেই পুরুষ নয়, এটা একটা মানসিকতা যা বেশিরভাগ ধর্ষকদের মধ্যে দেখা যায়। এই পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার শিকার নারী বা পুরুষ আমরা সকলেই কম বেশি। 


ধর্ষণ কেন হয়, কারা দায়ী 

ধর্ষকরা বিকৃতকাম মানসিকতার হয়, কিন্তু কোনো শিশু জন্মগত ধর্ষক বা জন্মগত বিকৃতকাম মানসিকতার হয় না। বরং শিশুটি ভয়াবহ নষ্ট ও পুরুষতান্ত্রিক পরিবেশে বেড়ে উঠতে-উঠতে ধর্ষক তৈরি হয়। পুরুষ মানেই ধর্ষক নয়, নারীরাও ধর্ষণ করে, কিন্তু তুলনামূলকভাবে এবং আপাতদৃষ্টিতে ধর্ষকের সংখ্যা পুরুষদের মধ্যে বেশি, নারীদের মধ্যে কম।ধর্ষণ হলেই সমস্ত পুরুষদের দিকে আঙুল তোলা হয়।তারপর আঙুল তোলা হয় নারীর বাহ্যিক পোশাক রূপ-রং, হাঁটা-চলার ধরণ, কথা বলার ভঙ্গিমার দিকে। কারণ পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার সবচেয়ে নোংরা নীতি হলো নারীদের দমন করা। আর সবচেয়ে বড় আক্ষেপের বিষয় হলো, নারীদের খুব সহজেই দমন করা যায়, তার চরিত্রের দিকে আঙুল তুলে কিংবা তার শারীরিক গঠন ও পোষাক-আষাক নিয়ে। এসব বিষয়সমূহ ধর্ষিতার যন্ত্রণাকে আরো বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। 

ধর্ষণ যদি অপরাধ হয়ে থাকে, তাহলে পোষাক-আষাক দেখে ধর্ষকরা উত্তেজিত হয়ে তারা ধর্ষণ করে থাকে; এই ধরনের মতামত কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।এই ধরণের দীর্ঘকালীন উস্কানিমূলক কথাবার্তায় ধর্ষকরা আরও ধর্ষণ করার সাহস পাচ্ছে। কাউকে সাময়িকভাবে উত্তেজিত করে ধর্ষণের মতো একটা এত বড় অপরাধ করানো যায় না। বরং ধর্ষণ যারা করে, তারা ছোটবেলা থেকে প্রচণ্ডভাবে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা ও ভয়াবহ উগ্রতা, কঠোর, রুক্ষ, ও ভালোবাসাহীন পরিবেশের মধ্যে বেড়ে উঠে।পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা একটা দীর্ঘকালীন মানসিক অনুশীলন, বা প্রসেস, যেখানে ছোটবেলা থেকে বেশিরভাগ পুরুষদের শেখানো হয় “আপনি সবার চেয়ে শ্রেষ্ঠ, আপনার লিঙ্গ অপর লিঙ্গের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, আপনি শক্তিশালী, আপনার অধিকার আছে সবর উপরে”। এই পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার ফলেই বেশিরভাগ নারীদের শেখানো হয়, “তুমি দুর্বল, পুরুষদের তুলনায় তোমার ভেতর শারীরিক শক্তি কম, কিন্তু তোমার ভেতর সহ্য করার মানসিক ক্ষমতা অনেক বেশি; তাই তোমায় সবকিছু সহ্য করতে হবে এবং তুমি আওয়াজ তুলতে পারবে না। তোমার নিজের শরীরকে আপাদমস্তক ঢেকে রাখতে হবে, তোমার শরীর সৃষ্টি হয়েছে পুরুষদের উত্তেজিত করার জন্য, তুমি সুন্দর তাই তুমি ভোগপণ্য, তোমার সর্বাঙ্গ শুধুমাত্র পুরুষদের সুখ দেওয়ার জন্য সৃষ্টি হয়েছে আর সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে”। যখন কোনো নারী মা হতে পারে না, তাকে আমাদের সমাজ আড়চোখে দেখে। যখন কোনো নারী বার-বার মেয়ে সন্তানের জন্ম দেয়, তখন তাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়, মফস্বল এলাকায় এই ধরণের ঘটনা সচরাচর ঘটে থাকে। শ্বশুরবাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার কাজটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারীরাই করে থাকে। 

মূলত, পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতাকে একজন নারী ধারণ ও বহন করে, আর তার বিষাক্ত বীজ বপন করে সেই পরিবারের ছেলেদের মধ্যে। যখন ধর্ষণ হয়, তার মূখ্য কারণ হয়ে দাঁড়ায়- “নারী কেন রাতে বেরুলো, নারী কেন উত্তেজক পোশাক পরলো”! নারীদের রাতে অফিস থেকে ফেরা নিয়ের মানুষের সমালোচনার শেষ নেই। যারা  পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে, তারা ধর্ষক তৈরি হয়নি, তারা মানুষ হয়েছে এবং সেইসব মানুষদের মধ্যেই পড়ে অনেকে। যারা  নারীর ধর্ষণে প্রতিবাদ করে, এগিয়ে যায়, নারীর পাশে দাঁড়ায়, লড়াই-বিক্ষোভ দেখায়, সেসব পুরুষদের পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানাই।যারা পুরুষতান্ত্রিক ধারা থেকে মুক্তি পেতে পারেনি, তারা মানুষ নয়। ফেসবুকে  লিখে বা মোমবাতি মিছিল করে কিংবা ধর্ষকদের ফাঁসি দিয়ে এই ধর্ষণ আটকানো কতটুকু সম্ভব হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

নিজের রক্ষার জন্য নারীদের ক্যারাটে শেখানোর সাথে-সাথে যৌনশিক্ষা চালু করা দরকার প্রতিটা স্কুলে। কেননা, যৌন শিক্ষাই একমাত্র পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতাকে সমূলে বিনাশ করতে পারে। সেটা একদিনে সম্ভব নয়, তার জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও তার সফল বাস্তবায়ন। প্রতিটা পরিবারে ছোট-ছোট ছেলে মেয়েদের শেখাতে হবে কেউ কারোর চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়, বরং যে যার অবস্থানে শ্রেষ্ঠ, সুন্দর এবং নারী পুরুষ এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষজনদের সম্মান করা উচিত। অবিলম্বে সরকারকে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিতে হবে, জনগণকে তথা নারীদের আলাদা করে সুরক্ষা দিতে হবে এবং ধর্ষকদের শাস্তি কঠোর থেকে কঠোরতম করতে হবে। কারণ যৌনশিক্ষা দিতে বা ক্যারাটে শেখা সময়সাপেক্ষ। তাই অবিলম্বে ধর্ষকদের শাস্তি কঠোর করে সমস্ত জনগণকে সুরক্ষা দেয়া হোক এটাই দাবী ।  

বিজ্ঞাপন :  ডোমেইন, হোস্টিং, রেডি ওয়েবসাইট, এসএসএল সার্টিফিকেট এবং বাল্ক এসএমএস সার্ভিস পেতে কত খরচের কথা চিন্তা করে নিম্ন মানের সেবা থেকে বিরত থাকুন। বাংলাদেশের বিশ্বস্ত ডোমেইন-হোস্টিং ও আইটি সেবা প্রদানকারী একটি প্রতিষ্ঠান হল : ডায়না হোস্ট লিঃ ।  

তাদের সেবা পেতে ভিজিট করুন : Diana Host Ltd.


[জীবন ও সমাজে   পাঠাতে পারেন আপনারও লেখা প্রবন্ধ, গল্প ও ফিচার। 

লেখা পাঠানোর ঠিকানা : jibonoshomaj@gmail.com ] 



Post a Comment

Previous Post Next Post