ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি

প্রত্যয় কস্তা : 

মানব জীবনে চলার পথে দুর্বলতার সাথে সংগ্রাম প্রতিনিয়ত চলমান। অনেকে এই দুর্বলতাগুলোর সাথে সংগ্রাম করে পরাজয় বরণ করে, আবার অনেকেই জয়লাভ করে। তবে এসব দুর্বলতার সাথে যুদ্ধ করে জয়লাভ করে বেঁচে থাকাই মানুষের ধর্ম। যারা জীবনে চলার পথে নিজেদের দুর্বলতাকে জয় করতে ব্যর্থ হয়, তারা বেঁচে থেকেও মৃত বা জীবন্মৃত। বাস্তবতার জ্ঞানে বিবেচনা করা হলে দেখা যায় যে, পৃথিবীতে আমরা বেশিরভাগ মানুষই জীবন্মৃত। মানুষ বেশিরভাগ সময় নিজেদের দুর্বলতাগুলোকে নিয়ে বেশি চিন্তিত কিন্তু তা জয় করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণে অনিচ্ছুক। আধুনিক ও ডিজিটাল যুগে ভার্চুয়াল মিডিয়ার যে প্রচলন, তাতে মানুষের দুর্বলতা জয় করা তুলনামূলক সহজ । আজকাল ইন্টারনেট দুনিয়ায় সকল সমস্যার সমাধান সহজলভ্য। তাই মানুষ কিছু দুর্বলতাকে জয় করার জন্য ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়ে থাকে। তবে লক্ষ্যণীয়,  বেশিরভাগ মানুষ ইন্টারনেট দুনিয়ার সঠিক ব্যবহার করছে না। ফলে, অনেকে নিজেদের দুর্বলতা বাড়িয়ে তুলছে। যার কারণবশত, তারা সমাজের বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িয়ে হচ্ছে। সঙ্গত কারণেই সমাজে নানাবিধ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে। সে কারণেই আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য যত্ন করাও দরকার। 

ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি

মানসিক ব্যায়ামগুলোর মধ্যে ইয়োগা খুবই ফলপ্রসূ যা মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সহায়ক। বিশ্বের কোটিপতি লোকেরা ইয়োগার মাধ্যমে নিজেদের জীবন সুন্দর করে গড়ে তুলেছেন । নিজেদের জীবনের সমস্যা, দুর্বলতা, হতাশা ও ব্যর্থতাকে পিছনে ফেলে নিজেদের মানসিক শান্তি বজায় রাখছেন। সমাজে অনেক গণ্যমান্য মানুষকে সম্মান করে থাকি। যাদের কাছে আমরা সবসময় ভালো কাজের আশা করে থাকি কিন্তু তারাও তো মানুষ, তারাও তো ভুল করতে পারে। এই সহজ কথাটি অনেকেই ভুলে যায়। সমাজের মানুষেরা একজন নেতা সবসময় ভালো কাজ করবে এমনটাই প্রত্যাশা করে। তার মধ্যে কোন নেতিবাচক বিষয় বা অভ্যাস প্রত্যাশিত নয়। কেউ তা খুব সহজে মেনে নিতেও পারে না। তিনি যে সমাজের বিচ্ছৃংখলার কারণ হতে পারেন, তা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। যদি কেউ অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়েন, তখন তা অনেক বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়। অপরাধ নিয়ে আচার-বিচার, সালিশি আইন, থানা-হাজত পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই অপরাধীকে সমালোচনার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। কারো মতামতও তখন মূল্যহীন হয়ে পড়ে। 

তবে কিছু-কিছু সমালোচিত মানুষেরাই উন্নতি ও প্রগতি নিয়ে ভাবেন। প্রতিকূল অবস্থায় সাহসের সাথে মোকাবিলা করে থাকেন। কারো জীবন যেন ধবংসের মুখে পতিত না হয় তারা সর্বদা সেদিকে খেয়াল রাখেন। নিজেদের শ্রম ও মেধা দিয়ে জনগণের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দিতে ও পিছু পা হন না। সবসময় নিজেদের নৈতিকতা ও মূল্যবোধের চাদরে জড়িয়ে রাখার চেষ্টা করাটাই শ্রেয়। কিন্তু মানব প্রবৃত্তির জন্য দুর্বল হয়ে পড়েন ও বিভিন্ন অনৈতিক কাজের সাথে জড়িয়ে পড়েন। যার ফলে, ব্যক্তিদের মানবিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয় ও সমাজের প্রতিবাদী রোষানলে পড়ে। 

একজন মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি সবসময় সম্মুখে থেকে পরিচালনা দান করেন বলেই তাদের দুর্বলতা সহজেই দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। তাঁরা বেশিরভাগ সময় নানাভাবে সমালোচনার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। আমাদের অনেকে মিথ্যা মামলার শিকার হয়ে সমাজ থেকে নিজেদের গুটিয়ে রাখেন। সমাজে কোন ঘটনা শুনেই তার সম্বন্ধে নিজেদের মনগড়া ঘটনা তৈরি করে ফেলাটা মানবীয় স্বভাব। মূলকথা হলো, সমালোচনার পাহাড় না গড়ে সত্য উদঘাটন করার প্রচেষ্টা থাকা দরকার বেশি। ঘটনাটি ঠিক এরকম হয়, যেমন: একটি জায়গায় আগুন লাগলে দূর-দূরান্তের মানুষ ধোঁয়া দেখে অনেকে বুঝতে পারেন যে, আগুন লেগেছে। অনেকে মনে করেন যে, ঐখানে মনে হয় ইটের ভাটা আছে। আবার অনেকে ভাবেন, আবর্জনা পোড়াচ্ছেন ইত্যাদি। এটা মানুষের মনের ধারণা মাত্র। ঘটনা ঘটে এক রকম আর রটে আরেক রকম এটাই যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছোট ঘটনাগুলো অনেক সময় বড় আকার লাভ করে। ছোট-খাট অপরাধ বড় করে দেখার প্রবণতা পরিত্যাগ করা উচিত। কোন ঘটনার বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়াই নানা কটুক্তি করা অনুচিত। 

 আমাদের সমাজে নানাবিধ সামাজিক অপরাধ সংঘটিত হয়। যেখানে অপরাধের চেয়ে অপরাধীকেই বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। যে সকল অপরাধ সঠিকভাবে সমাজের মাঝে প্রকাশিত হয় না। ফলে এসব অপরাধ পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। কোন অপরাধী যেন ক্ষমতার জোরে প্রাপ্য শাস্তি থেকে যেন পার না পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। সেসব অপরাধীদের শাস্তির আওতায় এনে সংশোধন করতে হবে এবং সবার প্রতি আহ্বান রাখি যেন এসকল নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও দূর্বলতাগুলোকে জয় করে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করি।তাতে সমাজ  ও দেশ সকলেরই মঙ্গল সাধিত হবে বলে আশাবাদী।

prattoycosta2019@gmail.com



[জীবন ও সমাজে   পাঠাতে পারেন আপনারও লেখা প্রবন্ধ, গল্প ও ফিচার। 

লেখা পাঠানোর ঠিকানা : jibonoshomaj@gmail.com ] 


Post a Comment

Previous Post Next Post