পরিবেশ রক্ষায় সম্মিলিত যাত্রার আহ্বান পোপ ফ্রান্সিসের

ভাবানুবাদ: জাসিন্তা আরেং

ধরিত্রী  রক্ষায় এগিয়ে আসার এখনই সময়। বর্তমানে আমরা সমস্যাগ্রস্ত ও কঠিনতর ঐতিহাসিক মুহূর্তের মধ্যদিয়ে যাত্রা করছি। কাজেই, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি দ্রুত নিরসন হওয়া উচিত। বর্তমানে বৈশ্বিক মহামারী আমাদের করণীয় সম্পর্কে উদ্দীপিত করছে, পাশাপাশি কি করা অনুচিত তা নিয়ে ভাবার জন্যও তাগিদ দিচ্ছে। বৈজ্ঞানিক তথ্যমতে, আমাদের হাতে খুবই কম সময় রয়েছে, তাই জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। পরিবেশ রক্ষায় সম্মিলিত যাত্রায় অংশগ্রহণের ঔদাত্য আহ্বান জানান ভাতিকান প্রধান পোপ ফ্রান্সিস। তিনি আর বলেন, এই যাত্রাটি হবে ‘রূপান্তর’ এবং “পদক্ষেপ বা নীতিমালানুযায়ী” এক যাত্রা। এই সম্মিলিত যাত্রার উদ্দেশ্য হলো, “আগামী দশকের মধ্যে এমন একটি পৃথিবী তৈরি করা যা ভবিষ্যত প্রজন্মের সম্ভাবনার সাথে আপোসহীন মনোভাব নিয়ে সমন্বিতভাবে বর্তমান প্রজন্মকে সাড়া দিতে সক্ষম।” 

পরিবেশ রক্ষায় সম্মিলিত যাত্রার আহ্বান



মূলত, এই যাত্রার প্রথম ধাপ হলো, “আবাসস্থল যত্ন নেয়ার শিক্ষা” প্রদান করা যা “অবিচ্ছেদ্য পরিবেশ” যা পোপ মহোদয়ের সর্বজনীন পত্র ‘লাওদাতো সি’র মধ্যদিয়ে উপস্থাপন করেছেন। দ্বিতীয় ধাপ হলো, “পানি ও পুষ্টি”। নিরাপদ ও সুপেয় পানি নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক এবং মানুষের চিরন্তর অধিকার এবং অন্যদিকে, পর্যাপ্ত পুষ্টির জন্য প্রয়োজন ‘টেইসই কৃষিপদ্ধতি’ যা “গোটা খাদ্য উৎপাদন ও বণ্টন চক্রের মৌলিক উদ্দেশ্য” হওয়া উচিত। হিসেবে ব্যবহৃত হবে। তৃতীয় ধাপ হলো, “জীবাষ্ম থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালনি শক্তির দিকে অগ্রসর হওয়া”। এই যাত্রাকে শুধু তড়িৎগতিসম্পন্ন ও শুধুমাত্র ভবিষ্যত জ্বালানি শক্তির যোগান নয়, এর বিকল্প উৎস নিয়েও ভাবতে হবে। তাছাড়া, স্থানীয় জনগোষ্ঠী, দরিদ্র ও এই নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনে নিয়োজিত সকলের কথাও ভাবতে হবে। আবার, যেসব কলকারখানাগুলো অবিচ্ছেদ্য পরিবেশের নীতিমালা অনুসরণ করে না, সেসব কলকারখানাগুলোতে টাকা বিনিয়োগ না করে বরং যারা ‘অবিচ্ছেদ্য পরিবেশ’ আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত আছে তাদের পুরস্কৃত করতে হবে। 

অর্থনীতি নবায়নের বিষয়ে তিনি বলেন যে, বর্তমান অর্থনীতির কাঠামোর অবস্থা ‘টেকসই’ নয়। বর্তমানে যা জরুরী এবং নৈতিক প্রয়োজন কেননা আমাদের বিবিধ বিষয় নিয়ে যেমন: “উৎপাদন, ব্যবহার, অপচয় করার সংস্কৃতি, স্বল্পমেয়াদী নীতিমালা বা অদূরদর্শীতা, গরীবদের প্রতি অবিচার ও অত্যাচার, বৈষম্য বৃদ্ধি, এবং ক্ষতিকর জ্বালানি শক্তির উৎসের প্রতি নির্ভরশীলতা”  ইত্যাদি নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হবে। 

সম্পর্ক নবায়নের ক্ষেত্রে ধারণার বিষয়ে পোপ বলেন, “অবিচ্ছেদ্য পরিবেশ” প্রকৃতি ও মানুষের মাঝে পারস্পররিক সম্পর্ককে নতুন করে আবিষ্কার করার ইঙ্গিত দেয়। পারস্পরিক সম্পর্কের এই নতুন ধারণাই “নতুন অর্থনীতি”র দিকে পরিচালিত করবে। উৎপাদন যেমন ‘ব্যক্তির সার্বিক মঙ্গলের সাথে সম্পৃক্ত’, তেমনি ‘আমাদের আবাসস্থলের ধ্বংস নয়, বরং উন্নয়নে’র সাথেও সরাসরি সম্পৃক্ত। অর্থনীতি নবায়নের মানসিকতার সাথে রাজনীতির বিশেষ সম্পৃক্ততা রয়েছে, যদি এটা “দয়ার সর্বোচ্চ প্রকাশ” হিসেবে পরিগণিত হয়। তিনি আরও বলেন যে, “ভালবাসা হলো আর্ন্তব্যক্তিক, কিন্তু ভালবাসা রাজনীতিও বটে যা সকল পর্যায়ের মানুষ এবং প্রকৃতিকে সম্পৃক্ত করে।” পোপ বলেন, এই আহ্বানে সাড়া দিন, কেননা “কাউন্টডাউন” এই যাত্রাটি কতখানি জরুরী তারই ইঙ্গিত দেয়। আমরা অবিলম্বে এই যাত্রায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করে প্রত্যেকেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারি। কাল নয়, আজই; কেননা ভবিষ্যত আজকের ওপরই নির্ভর করে এবং একা নয়, বরং দলবদ্ধ হয়ে সৌহার্দ্যরে সাথেই গড়ে ওঠে।                                                                                          

সূত্র: ভাতিকান নিউজ


[জীবন ও সমাজে   পাঠাতে পারেন আপনারও লেখা প্রবন্ধ, গল্প ও ফিচার। 

লেখা পাঠানোর ঠিকানা : jibonoshomaj@gmail.com ] 


Post a Comment

Previous Post Next Post