সম্পর্কের ভাঙা গড়া

জেভিয়ার শিয়োন বল্লভ : সদ্য ব্রেকআপের পর মানুষ বড্ড বেশি ঘেঁটে থাকে, কাল রাত অবধি যে মানুষটার গলার আওয়াজ না শুনলে বুক ধড়ফড় করে উঠতো, আজ তার নাম শুনলেও রাগে, ঘৃণায়, অভিমানে গা কিড়মিড় করে ওঠে।

চার বছরের সম্পর্ক হোক বা চার মাসের, ভালোবাসায় পড়লে মৃত বুকেও শালুক ফোটে, মানুষ ভালো থাকতে শুরু করে, অকারণে হাসতে শুরু করে। বিশ্বাস করতে শুরু করে যে, এই পৃথিবীতে গোটা জীবন তার পাশে কেউ থাকুক না থাকুক, একটা ব্যক্তি থাকবেই থাকবে।
এই বিশ্বাসের আলো যে কত জোরালো! যার ঠোঁটে-মুখে গায়ে লেগে থাকে এই আলো, একমাত্র সেই জানে রাত বাড়লে তার আর ঘুমের ঔষধের কোনো দরকার নেই।
সম্পর্কের ভাঙা-গড়া

মানুষ মানুষের সাথে সম্পর্কে জড়ায় একটু শান্তি পাবে বলে, এই সারাদিনে সে কোথায়-কোথায় কী কী কাজ করে বেড়ালো, সবটা একজনের কাছে উগরে দেবে বলে। হাঁটতে গিয়ে পা মুচকে গেলে সঙ্গে-সঙ্গে; ফোন করে জানাবে বলে, মা-বাবার মধ্যে অশান্তি হলে তার সাথে দেখা করে একটু কেঁদে নেবে বলে।
কিন্তু হঠাৎ করেই যখন জানতে পারে, তার আর কোথাও যাওয়ার নেই, তার জন্য আর কেউ খাবারের থালা নিয়ে ক্যান্টিনে বসে থাকবে না। ভীষণ রোদ বাড়লেও একটা ছাতা কেউ কিনে দেবে না, তাকে এক ঘটি জল এগিয়ে দেওয়ারও কোনো হাত নেই।
এসি টিভি ফ্রিজ খারাপ হলে কেউ মিস্ত্রি জোগাড় করে তার বাড়ির সামনে এসে হাজির হবে না, তখন বড্ড খালি-খালি লাগে, মাথাটা ভার হয়ে থাকে কিন্তু শরীরের বাকি অংশ যেন মনে হয়; কেউ কেটে নিয়ে গেছে, চেয়ারে বসে মুড়ি চিবোতে-চিবোতেও কান্না পায়।
সারাদিন শুয়ে কাটায় অথচ ঘুম নেই চোখে। চোখের তলায় গভীর কালি পড়ে, খেতে বসলেই অর্ধেক ভাত খেয়ে উঠে যায়। ফ্যান না চালিয়ে এলোমেলো জামা-কাপড়ে গুটিসুটি হয়ে পড়ে থাকে ঘরের কোণায়....
মানুষের সাথে কথা বলা কমিয়ে দেয়, সারাদিন ফেসবুকে পড়ে থাকে, নিউজ ফিড স্ক্রল করে, আর সেকেন্ডে-সেকেন্ডে তার প্রোফাইলে যায়, ঘুরে আসে। কোনো নতুন ছবি আপলোড করলো কিনা! কোনো কিছু লিখলে তাতে কে কে কমেন্ট করলো, তার কি রিপ্লাই দিল, সমস্তটাই খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে দেখে....
এক হাত লম্বা মেসেজ লেখে, পাঠাতে গিয়েও ডিলিট করে দেয় বার-বার, এভাবেই দিনের পর দিন কাটতে থাকে, একটা জীবন্ত লাশে পরিণত হয় মানুষ, এভাবেই অভ্যাসে পরিণত হয়।
মানুষ আবার হাসতে, কথা বলতে, মদ খেতে, পুঁজোয় ঠাকুর দেখতে, পাহাড়ে যেতে, নতুন রেসিপি ট্রাই করে খেতে, হিল তোলা জুতো পরে হাঁটতে শুরু করে।
কিন্তু....কিন্তু সবটাই কি মিথ্যে, অভিনয় মাত্র? আসলে মানুষ হাঁপিয়ে ওঠে কাঁদতে-কাঁদতে, তাই হাতপাখা দিয়ে চোখের জল শুকানোর চেষ্টা করে! বোকা মূর্খ কোথাকার। এটুকুও বোঝে না যে, নদী শুকিয়ে যায়, তাতে এক গ্লাস জল ঢাললে কি সে প্রাণ ফিরে পাবে!
যে মানুষ নিজের কাঁধেই নিজের লাশ বয়ে বেড়ায়, তার অভিনয় সবাই ধরে ফেলে কিন্তু কেউ কিছুই মুখে বলে না।
আসলে সম্পর্ক ভাঙা খুব সহজ, গড়ে তোলা আরো সহজ, কিন্তু আগলে রাখা বড় কঠিন, একজনকে একটু বেশি ঝুঁকতেই হবে, নইলে সম্পর্ক টিকবে না, এতটুকু যদি কেউ বুঝতো... তবে কেমন হতো!

[জীবন ও সমাজে   পাঠাতে পারেন আপনারও লেখা প্রবন্ধ, গল্প ও ফিচার। 

লেখা পাঠানোর ঠিকানা : jibonoshomaj@gmail.com ]  


Post a Comment

Previous Post Next Post