মানুয়েল চাম্বুগং:
মেয়েদের সুন্দরী হলেও সমস্যা, না হলেও সমস্যা। কোন এক মেয়ে যদি দেখতে সুন্দরী না হয়, ছেলেরা তার দিকে তাকায় না, তাকালেও বিষন্ন মনে তাকায়, তাকে বিয়েও করতে চাই না। অন্যদিকে, মেয়েটি যদি দেখতে শুনতে ভাল হয়, তাহলে দেখবে ছেলেরা তার দিকে অপলকভাবে হা-করে তাকিয়ে থাকে। মেয়েটির সৌন্দর্যের জন্য ঈশ্বরের প্রশংসা না’করে একটা নিশ্বাস নিয়ে মনে-মনে বলে ইস্ এমন মেয়েটাকে যদি পেতাম, তাহলে আমার কিছুই লাগত না। এই সমস্ত ছেলেরা কখনই চিন্তা করে দেখে না, সুন্দরী মেয়ে হলেই যে, তাদের অন্তর-আত্মা সুন্দর হবে-কি, হবে-না কিংবা তারা কখনই বুঝতে চেষ্টা করে না, মেয়েটি কালো হলেই যে তার হৃদয়ের মানুষটা কাল হয়-কি না। তবে প্রকৃতপক্ষে, ছেলেদের সেই মেয়েটির সন্ধান করা উচিত যে মেয়ের অন্তর ও বাহির উভয়েই সুন্দর হয়। কেনিয়া সেই ধরণের একজন মেয়ে। রূপে-গুণে, কাজে-কর্মে, আচার-ব্যবহারে কোন কিছুতেই তার কমতি নেই। এর জন্য গ্রামের সবাই তাকে পছন্দ করে। অনেক ছেলেরা তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু কেনিয়া এটে নিশ্চুপ। কাউকে সে হ্যাঁও বলে দেয় না, মানাও করে দেয় না। কারণ তার একটা স্বপ্ন- পড়াশুনা করে প্রতিষ্ঠিত হয়ে একটি চাকরী করবে, নিজের পায়ে দাঁড়াবে, তারপর দেখে-শুনে মনের মানুষকে বিয়ে করবে। পড়াশুনা করে যে প্রতিষ্ঠিত হবে, সেটি ছিল তার পক্ষে বড় কঠিন। কারণ সে পড়াশুনায় অনেক দুর্বল। তিন তিনবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েও পাশ করতে পারলো না। তাই তার বাবা-মা তাকে বকা দেন। কেনিয়া এমন এক স্বভাবের মেয়ে যে একটুকু বকাবকি সহ্য করতে পারে না। সে মনে-মনে স্থির করে যে, সে আর পড়াশুনা করবে না, ঢাকায় গিয়ে কাজ করবে। একদিন হঠাৎ করে কেনিয়া তার বাবা-মাকে তার সিদ্ধান্তের কথা জানায়। কিন্তু তার বাবা-মা তাকে যেতে দেয়নি। সে মনে-মনে জেদ ধরে বলে আমি যাবই। যেই চিন্তা, সেই কাজ। ডিসেম্বরে বড়দিনের আনন্দোৎসবের পরের দিনেই সে তার বান্ধবী মানসীর সাথে ঢাকায় আসে। মোহাম্মুদপুরে তার বান্ধুবী মানসীর বাসায় থেকে প্রতিদিন বিউটি পার্লারে রিক্সায় আসা-যাওয়া করে। রাস্তাঘাটে বখাটে ছেলেদের উৎপাত দেখে তাদের ভয় হয়। কারণ তারা তাদের লক্ষ্য তরে মুখ দিয়ে শিস্ দিতো, অশ্লীল কথা ও অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে দেখাত। কেনিয়া ও মানসী এগুলো এড়িয়ে চলে। কিন্তু একদিন হল কি! মানসীর ভীষণ জ্বর হয়। তাকে সেবা করতে-করতে কেনিয়ার সেদিন অফিসে যেতে দেরি হয়। বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় কোনো রিক্সা না পেয়ে সে হাঁটা শুরু করে। কিছু দূর যেতে না যেতেই একজন বখাটে তার পিছু নেয়।
![]() |
নির্বাক চেয়ে থাকা |
সে ভদ্রভাবে বলল, “এই যে শুনছেন, একটু দাঁড়াবেন, আপনার সাথে আমার জরুরি কথা আছে।” কেনিয়া শুনেও না শোনার ভান করে চলে যায়। ছেলেটি আবার একই কথা বললো। কেনিয়া তাতেও কোনো সাড়া দিলো না। তখন যুবকটি রেখে সামনে গিয়ে বলল, “আমি আপনাকে অনেক-অনেক ভালবাসি”। কেনিয়া রেগে অসভ্য বলে গালি দিয়ে তার গালে একটা চড় দেয়। যুবকটি এতে আরও উত্তেজিত হয়ে কেনিয়াকে ধরে আনার জন্য তার বন্ধুদের ইশারা করে। তার বন্ধুরা দৌঁড়ে গিয়ে কেনিয়াকে ধরে মুখ বন্ধ করে সিএনজিতে করে একটি ঘরে নিয়ে যাই। তাদের মধ্যে একজন কেনিয়াকে জিজ্ঞেস করে,“এই মেয়ে তোমাকে আর একবার শেষবারের মতো বলছি, তুমি যদি তাকে বিয়ে না কর, তাহলে আমরা কিন্তু সবাই একে-একে............
কেনিয়া তারপরও পাথরের মতো চুপচাপ বসে থাকে। যখন কয়েকজন যুবক তাকে ধরাধরি করতে শুরু করল, তখন সে নিরুপায় হয়ে কেঁদে-কেঁদে তাকে বিয়ের সম্মতি জানায়। এদিকে মানসী কেনিয়ার অপেক্ষায় বিছানায় শুয়ে-শুয়ে দরজার দিকে চেয়ে থাকে। রাত যতই বাড়ছে তার টেনশনটাও ততই বাড়তে থাকে। মোবাইল করে খবর যে নিবে, সেই মোবাইল পর্যন্ত কেনিয়ার নাই । পরের দিন সকালে মানসী নাস্তা খেয়ে অফিসে যায়। মানসীকে দেখা মাত্রই কেনিয়া তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলো। মানসী বলল, “কি হয়েছে রে তোর আমাকে আগে বলবি তো”। কেনিয়া কেঁদে-কেঁদে সব ঘটনা একে-একে বললো। ঘটনাটি শুনে মানসীও কেঁদে ফেললো। সে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, “এখন কেঁদে আর কি হবে। ভালো হোক, মন্দ হোক, সে এখন তোমার স্বামী; তার সাথে সুখের সংসার কর”। কেনিয়ার দাম্পত্য জীবন এক বছর বেশ ভালই কেটেছিল। কিন্তু পরবর্তী বছরে কেনিয়ার জীবনে এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। কেনিয়ার পিতামাতদের কাছ থেকে দুই লক্ষ্য টাকা চেয়ে না পাওয়ায় তার স্বামী তাকে গলা কেটে মেরে ফেলে, কেনিয়ার কি জানি হয়েছে বলে মানসীকে মোবাইল করে জানায়। খবর পেয়েই মানসী সেখানে ছুটে আসে। কিন্তু দেখতে পেল না সেই যুবককে। লাশটা নিয়ে কি করবে মানসী বুঝতে পারে না। সে হতভম্ব হয়ে লাশটার দিকে ফ্যাল-ফ্যাল করে চেয়ে থাকে।
[জীবন ও সমাজে পাঠাতে পারেন আপনারও লেখা প্রবন্ধ, গল্প ও ফিচার।
লেখা পাঠানোর ঠিকানা : jibonoshomaj@gmail.com ]