বৈশ্বিক মহামারীকালীন বাংলাদেশে শিশুশিক্ষা কার্যক্রম

জাসিন্তা আরেং : বৈশ্বিক মহামারী পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে শিশুশিক্ষা কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে। বর্তমানে শুধু শিশুশিক্ষা নয় বরং গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাই শোচনীয় অবস্থার মধ্যদিয়ে অতিক্রম করছে। নজীরবিহীন এ পরিস্থিতিতে ধারাবাহিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যার ফলে এখন পর্যন্ত বিদ্যালয় ও শিশুশিক্ষা কেন্দ্রগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া বিদ্যালয় ও শিশুশিক্ষা কার্যক্রমসমূহ বন্ধ থাকার ফলে শিশুদের সম্ভাবনাসমূহ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমনকি ব্যবহারিক শিক্ষার অভাবে শিশুদের ভবিষ্যত অনিশ্চিয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে। অনেকদিন যাবত পড়ালেখা ও শিক্ষা থেকে দূরে অবস্থান করার ফলে শিশুদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। প্রসঙ্গতই বাংলাদেশ ইউনিসেফের প্রতিনিধি তোমো হোজুমি বলেছেন, ‘অন্যান্য দেশের মত শিশু ও সম্পৃক্তদের করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে বাংলাদেশেও স্কুল-কলেজ বন্ধ করা হয়েছে এবং বাড়িতে শিশুদের বিকল্প শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে পড়াশুনা অব্যাহত রাখতে এবং জরুরী অবস্থায় শিশু ও সমাজকে নেতিবাচক প্রভাব থেকে রক্ষা করতে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।’ বর্তমানে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলা করে শিশুশিক্ষা অব্যাহত রাখতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রনালয় অবিরাম চেষ্টা করে যাচ্ছে যেন শিশুরা বাড়িতে থেকে অভিভাবকের সহায়তায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা লাভ করতে পারে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমনন্ত্রী মো: জাকির হোসেনের দেয়া তথ্যমতে, শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা অব্যাহত রাখতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ২ কোটি শিশুদের জন্য অনলাইন শিক্ষা অর্থাৎ টেলিভিশন, মোবাইল অ্যাপস্ ও বেতারের মাধ্যমে শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্যদিকে, বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহ অনলাইনে পরীক্ষা এবং পাঠদান উভয়ই সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে। এক্ষেত্রে ইউনিসেফের মত আন্তর্জাতিক সংস্থা ও অন্যান্য শিশুশিক্ষা বিষয়ক সংগঠনগুলো সহায়তা করে যাচ্ছে। 



অন্যদিকে, অনলাইনে শিক্ষাদান পদ্ধতি শতভাগ সফলতার আশা নিয়ে অগ্রসর হলেও তা কতটুকু ফলপ্রদ হচ্ছে তা উপলব্ধির বিষয়। তাছাড়া, প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা এবং উন্নত মোবাইল ও কম্পিউটার সহজলভ্য না হওয়ায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিশুশিক্ষা কার্যক্রম সকল শিশুর দোর-গোড়ায় পৌঁছে দেয়া এবং তা সফলভাবে নিশ্চিত করা খুব একটা সহজ কাজ নয়। এক্ষেত্রে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষকে শহর-গ্রামাঞ্চলে শিশুশিক্ষা নিশ্চিত করতে যথাযথ পদক্ষেপ করতে হবে। জরুরী পরিস্থিতিতে শিশুশিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে ও পদক্ষেপসমূহ যথাযথভাবে বাস্তবায়নের সুযোগ ও পরিবেশ সৃষ্টিতে আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতেও যেন শিশুরা তাদের শিক্ষার অধিকার থেকে যেন বঞ্চিত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অনলাইন শিক্ষার পাশাপাশি ব্যবহারিক শিক্ষার প্রতিও জোর দিতে হবে যেন শিশুরা পড়াশুনার আগ্রহ না হারিয়ে ফেলে। শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণের মধ্যদিয়ে সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি হোক। এমনিভাবেই শিশুদের সাক্ষরতার মধ্যদিয়ে দেশে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানসিক মুক্তি আসুক এবং শান্তি স্থাপিত হোক।


পূর্ব প্রকাশ : সাপ্তাহিক প্রতিবেশী, সংখ্যা - ৩২, ২০২০ 


Post a Comment

Previous Post Next Post