মহামারী নোভেল করোনাভাইরাসকালীন আমাদের পিছুটান ও পিছিয়ে পড়া

ফাদার রবার্ট গনসালভেছ : পাহাড়ী তৃণমূলে বসবাস। সময় ও সঙ্কটে নির্মম পরিহাসের কারণে ছিন্নমূল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পাহাড়ী উপজাতি। আদিবাসী জনগণ পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতে জর্জরিত প্রতিকারবিহীন তীব্র সমস্যা-সংকুল জাতিসত্ত্বা। পাহাড়েই জীবনগাঁথা ও দীর্ঘকালে উঁচু-উঁচু পাহাড়ের বনভূমিতে জীবন-যাপন। এ দূর্গম পাহাড়ে আঁকা-বাঁকা, উঁচু-নিচু ঝোঁপ-ঝাড়ের পথ তদুপরি পাহাড়ের পাদদেশে ছড়া, ঝিরির পানি, পাথুরে পথে চলতে অভ্যস্ত আদিবাসী  পাহাড়ী। এখানে  একদা ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দ দিকে কাপ্তাই নদীতে বাঁধ থেকে সৃষ্ট তীব্র স্রোতে উপচে পড়া পানির ঢলে কাপ্তাই, বিলাইছড়ি ও রাঙ্গামাটির তবলছড়ি বালুখালী, মরিচাবিল এলাকায় পাহাড়ী আদিবাসী বসতি ও ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ী সবই সর্বশান্ত হয়ে পানির তলদেশে নিমজ্জিত হয়ে গিয়েছে। আচমকা পানির তাণ্ডব ও প্রচণ্ড ঝাঁপটায় দিক-বিদিক শূন্য হয়ে ভাসমান ও ছিন্নমূল কাপ্তাই ও কর্ণফুলী নদী এলাকার সীমানায় বসবাসরত পাহাড়ী জনগোষ্ঠী স্থবির ও বিরানভূমি থেকে মুহূর্তের মধ্যে স্তব্ধ হয়ে পানির তলায় চলে যায়। কাপ্তাই হাইড্রোইলেট্রিক প্রজেক্ট থেকে সৃষ্ট বন্যায় পাহাড়ি নৃ-গোষ্ঠী নতুন জায়গার সন্ধানে এক বস্ত্রে পার্শ¦বর্তী খাগড়াছড়ি জেলায় দীঘিনালা, তুলাবান, ঝগড়াবিল, মারিশ্যা, পানছড়ি, কুকিছড়া, জোরমরম ও গাছবানসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে নতুন করে বসতি স্থাপন করে। 

পাহাড়ী আদিবাসীদের সাথে মাঝখানে নীল শার্টে লেখক


কষ্টে সৃষ্ট পাহাড়ী জীবনে অমানিশা নেমে আসে পার্বত্য শান্তিচুক্তির এ সময়ে। যখন শান্তিবাহিনী ও সেনাবাহিনী আশির দশকে মরিয়া লড়াই। যুদ্ধ সংঘর্ষ চলছে সে সময়। অত্যাচার, নির্যাতন, শোষণ নিষ্পেষণের বেড়াজালে ও গোলক ধাঁধাঁয় পিষ্ট হয়ে বিপদের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ী উপজাতী ভিটা-বাড়ি হতে উচ্ছেদ হয়ে রিজার্ভপাড়া নামে সেনাবাহিনী নিরাপত্তার আওতায় বসতি শুরু করে। ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ খাগড়াছড়ি পেরাছড়া ও স্ব-নির্ভর এলাকায় স্টেডিয়ামে শান্তিচুক্তি প্রতিষ্ঠার পর কঠিন জীবন বিনাশী অবস্থার সাময়িক সমাধান ও সমঝোতার সৃষ্ট হয়। অথচ  এরই  মধ্যে পাহাড়ী ও বাঙালি সেটেলারসদের বৈরি সম্পর্কে সৃষ্ট সমস্যার কারণে বিভিন্ন স্থানে আগুন, সন্ত্রাস, গোলা-বারুদের বিধ্বংসী বিষ্ফোরনজনিত প্রাণহানি, অত্যাচার-নির্যাতন নিপীড়ন ও বৈষম্যের শিকার হয়ে পাহাড়ী জমি জোরপূর্বক অন্যায়ভাবে দখল, নির্দয় ধর-পাকড় ও মোবাইল নেটওয়ার্ক না দিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে পাহাড়ীদের নিদারুণ কষ্ট ও অভাব-অনটনের শিকার হতে হয়েছিলো। বর্তমান বাস্তবতায় নিরুপায় হয়ে সংখ্যালঘু পাহাড়ী জনগণ নতুন নেতৃত্ব রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন নেতৃত্বের নির্দেশনায় ভূমি অধিকার, সংরক্ষণ ও সুরক্ষার কাজ শুরু করেন। প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবহার করে ঐতিহ্য, ভাষা, কৃষ্টি, ধর্ম, আচার-আচারণ সব কিছুর মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতির পরিবেশ গড়ে তোলা দায়িত্বশীল কর্মকাণ্ড শুরু করে। এতদিন রোগব্যাধির সাথে লড়াই করে জীবন-যাপনে অভ্যস্ত পাহাড়ী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ম্যালেরিয়া,    নিউমোনিয়া, টাইফয়েড নানাবিধ চর্মরোগসহ সর্দি, জ্বর, হাঁচি-কাশির সাথে পরিচিত ছিল। হঠাৎ জীবনের গতি, প্রকৃতি ছন্দপতন করে এ বছর ৮ মার্চ থেকে নোভেল করোনাভাইরাস নামক মরণ ভাইরাসে প্রচণ্ড সংক্রমণের অদম্য শক্তি নিয়ে বর্হিবিশ্ব হতে দরিদ্রতা নিষ্পেষণের শিকার প্রান্তিক জনগণের দ্বারপ্রান্তে এসে বাংলাদেশের সর্বত্র হানা দিয়েছে। মারাত্মক জীবন বিধ্বংসী প্রাণঘাতী নোভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রাদূর্ভাব ছড়ানোর সাম্প্রতিককালে পাহাড়ী জনগোষ্ঠী আতঙ্ক, ভীত, সন্ত্রস্ত হয়ে প্রাণভয়ে ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন, পরামর্শ দেহ, মন, হৃদয়-আত্মায় গ্রহণ করে গৃহে অন্তরীণ জীবন-যাপন এ যাবত প্রায় ৫ মাস অতিক্রান্ত হতে চলেছে। 

বিরূপ প্রতিকূলতা, বিভিন্ন স্বার্থ, দ্বন্দ্ব, প্রতিবন্ধকতা ও পাহাড়ী-বাঙালি ক্ষমতা টিকে থাকার প্রতিবন্ধকতার কোন কিছুর প্রতিকার বা প্রতিবিধানের পথ ও উপায় না থাকায় এমতাবস্তায় মরার উপর খাঁড়ার ঘা। প্রাণান্তকর অবস্থায় সুদূর চীনের উহান হতে উত্থিত মরণঘাতী প্রতিষেধকবিহীন মহামারী জনিত দীর্ঘস্থায়ী প্রকোপ পাহাড়ী বিস্তৃর্ণ জনপথকে ধোঁয়াটে ও অনিশ্চয়তায় অমিনাশায় ঠেলে দিয়ে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর মনোবলে আঘাত হেনেছে। সাধারণত প্রকৃতির এ ঋতুতে পাহাড়ী জুম চাষাবাদে অভ্যস্ত জুমচাষী, কৃষকেরা তাদের বসতি হতে নিকটতম পাহাড়-জঙ্গলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে চাষযোগ্য পাহাড় পুড়িয়ে পাহাড়-ভূমি প্রস্তুত করে জুমের নানা প্রকার ধান রোপণ করে। জুমের ক্ষেতে পাশাপাশি আদা, হলুদ, লাউ, কুমড়া, বরবটি, ঝিংগা, করলা, মারফা, ভুট্টা, কচুশাক, লালশাক, ডেংগিশাক, পুঁইশাক সহ নানাবিধ পাহাড়ী মরিচ ও সবজি চাষাবাদ করে থাকে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে এ দিনে পাকা বোরো ধান কাটা, মাড়াই, ছাটায় ও ঘরে তোলার কাজ এবং অপরদিকে একই সময়ে জুম চাষে পাহাড়ী জমিতে চুরিধান, সোনামুখিধান, চরইধান, গেলংধান, কোম্পানীধান, মধুমালতিধান, ককবরকধান ও কুলমাদামধান ইত্যাদি রকমারিক ভালো ফলনশীল ধান রোপণ কাজে পাহাড়ী নারী- পুরুষ অবিরাম সকাল-সন্ধ্যা কৃষিকাজে নিয়োজিত থাকে। এখন পাহাড় এলাকায় বিভিন্ন কৃষি খামারে ও বাগানে আম, কাঁঠাল, আনারস, লিচু, তেঁতুল, জামম্বুরা, লেবুর ভরা মৌসুম চলছে। যেখানে ক্লান্তিহীন বিরামহীন নিশ্বাস ফেলার সময় নেই সেখানে হঠাৎ এ কাজের ব্যস্ততার সময় বজ্রপাতের মত হঠাৎ প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের নির্দেশিকায় মেনে চলার স্বাস্থ্যবিধি এসেছে। তার মধ্যে লকডাউন, হোম কোয়ারেন্টাইন, আইশোলেশন, ভেন্টিলেশন, সার্জিক্যাল মাস্ক, ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাক পরিধান, ঘন-ঘন সাবান ও লোশন দিয়ে হাত ধোয়াসহ হ্যাণ্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের স্বাস্থ্যসম্মত পরীক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কঠিন বাস্তবতার আওতায় খাগড়াছড়ির দূর্গম এলাকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পাহাড়ে জনপদে সবার কাছে ভয়-আতঙ্ক নয় সচেতন হওয়ায় বার্তা ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছে। ফলত স্পর্শকাতর এ নিদারুণ সঙ্কট সৃষ্টি দুঃসংবাদে থমকে গেছে স্বাভাবিক প্রাত্যহিক কাজকর্ম ও পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর চলাফেরা ও হাঁটে-বাজারে পদচারণা শাক-সবজি বহন এবং বটতলার বাজারে, তেঁতুলতলার বাজারে, মধুপুর বাজারে টাটকা ও সদ্য পাহাড় থেকে তুলে আনা বেঁচা-কেনার বৈচিত্র্য। অনগ্রসর অবহেলিত জীবন-যাত্রায় পিছিয়ে পড়ায়   পাহাড়ী নৃ-গোষ্ঠী চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনসাধারণ স্বভাবজাতভাবে উঁচু পাহাড়ী এলাকায় বসতি স্থাপন করে আত্মীয়তার যোগবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বাঁশ-বেত-ছনের ঘর ও মাটির ঘর তৈরি করে একই জাতিসত্ত্বায় দলগত ও সমাজগত হয়ে বসবাস করে। প্রতিদিন সকালে পাহাড়ী নারী-পুরুষ কৃষিকাজ সম্পর্কিত জুম চাষ, রোপণ, আগাছা পরিষ্কার, নিড়ানীসহ বিভিন্ন আবশ্যকীয় দায়িত্ব পালনে দা, কাঁচি, কুড়াল, খোন্তা, কোদাল অপরদিকে কাল্লাং, বারেং ও কারাং নিয়ে চাষাবাদে ঘাম ঝরানো কঠিন কাজে জড়িয়ে পড়ে। গত এক বছরে বেতছড়ি খ্রিস্টান চাকমা এলাকায় আমার পালকীয় কাজের ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতায় তাদের চলাফেরা জীবন-যাপন ও নিত্য জুম এলাকায় শ্রম সাধনায় বাহারী সবজি উৎপাদনে কষ্ট ও আনন্দের জীবন দেখেছি। এখানে সাজেক পাড়া, কুলি পাড়া ও ইটছড়ির চাকমা বসতির নিকটতম জুমচাষ এলাকার মধ্যে দাঁতভাঙ্গা ছরা, পানকদাছরা, সামুদিছরা, জগনাগাছছরা, মাখনাছরার মত উঁচু পাহাড়ী বনভূমিতে জুমচাষ করে নানাবিধ শস্য ফলন ও পাশাপাশি জুমের বাঁশ কোরল, জংলী আলু, পলা আলু, গুটি আলু, খাতরা আলু ও সীমের আলু, অন্যদিকে জারা ওলকচু তাদের প্রিয় খাবার যা প্রকৃতির মধ্যে সচরাচর দেখা যায়। এছাড়া মাশরুম জাতীয় গুল্ম উদ্ভিদ মারমা ভাষায় তংবুমহন, ওরাংমো ছেংসেমো, ক্রোহ্লামো ও নিখিমো বিভিন্ন প্রকারের  মাশরুম পাহাড় জংঙ্গলে পাওয়া যায়, যা পাহাড়ীদের খুবই প্রিয় ও সুস্বাদু খাবার। অপরদিকে পাহাড় উপত্যকার ঝিরি ও ছরাতে পুঁটি মাছ, চিংড়ি, কাকড়া গুতুমমাছ, পেনুন পাতা মাছ, চোখ বাগা মাছ, পোনা ব্যাঙ, কুরকুরি ব্যাঙ, কোয়া ব্যাঙ, বৈগনা, পেলাও, কোয়া শামুক, বড় গোল আকৃতির শামুক, কুইচা ইত্যাদি পাওয়া যায়। এছাড়া শুটকি ও নাপ্পি দিয়ে রান্না ভর্তা, গুতানি ও আপ্রাইন এদের প্রিয় খাবার।       

অপ্রতিরোধ্য ভংয়কর ছোঁয়াচে ব্যাধি করোনাভাইরাস পাহাড়ী সংস্পর্শে এসে ইতোমধ্যে হানা দিয়েছে। এ কঠিন দূর্ভোগকালে মুহূর্তের মধ্যে দুর্ভাগ্যজনিত সংবাদ সবার কাছে জানাজানি হয়ে যাচ্ছে। সহজ, সরল, অল্পতেই শঙ্কিত, কাতর ও খেটে খাওয়া দিনাতিপাত করে যাওয়া পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর ওপর সর্তক দৃষ্টি আরোপ করার জন্য কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপের ফলে ভয়ে, শঙ্কায় ও আতঙ্কে পিছিয়ে পড়া হতে পিছুটান প্রকাশে অনুমতি হচ্ছে ও উপলব্ধি করা যাচ্ছে। বর্তমানে প্রশাসনিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিধি-নিষেধের কারণে মুক্ত চলাফেরায় ভাটা পড়েছে। এখানে প্রচার পত্রিকায়, মাইকিং ও মোবাইল রিংটোনে বলা হচ্ছে সুস্থ ও নিরাপদ থাকার একমাত্র উপায়  হলো ঘরে থাকা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা এবং একান্ত প্রয়োজন ব্যতীত ঘরে নিরাপদে থাকার ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। তবে খানিকটা আশার বাণী শোনা যাচ্ছে ও খবরে প্রকাশ এন্টিভাইরাল ঔষুধ রেমডেসিভির (Remdesivir Antiviral Drug) সম্প্রতি কোভিড-১৯ চিকিৎসায় যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষুধ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থায় (এফডিএ) জরুরী ব্যবহার প্রতিষেধক হিসেবে অনুমোদন পেয়েছে। বাংলাদেশের ঔষুধ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী বেক্সিমকো ফার্মা কোভিড-১৯ চিকিৎসায় সরকারি হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য রেমডেসিভির প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

স্পর্শকাতর এসময়ে করোনা মাইক্রোসফট এন্টারপ্রাইজ সফটওয়ারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পূর্বে শুনেছি যারা উচ্চ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত তারা সোশ্যাল ডিসটেনস্ বজায় রেখে কর্মস্থলে ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে সম্মান, ক্ষমতা, পেশাগত দক্ষতা, অর্জন করে দূরত্ব নিয়ে জীবন চলতো। বর্তমানে নভেল করোনা সংক্রমণে সোশ্যাল ডিসটেনস্ এর কথা বলা হচ্ছে। উদ্ভাবন ও ব্যবসা বাণিজ্যের উদীয়মান অনুশীলন আচরণবিধি অনুযায়ী ৬ফিট দূরত্ব থাকা, পরিবারের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রাখা ও ভাইরাস হতে মুক্ত থাকা। শহরবাসী ডিজিটাল ও অনলাইনের বাতাবরনে ঘরে থেকে ম্যাসেজ ও ভিডিও কনফারেন্স, অনলাইন খ্রিস্টযাগ, রোজারিমালা প্রার্থনা, রন্ধনশালায় রকমারী রান্নার স্বচিত্র প্রকাশ, ঘরে বসে কণ্ঠশিল্পীদের নবজাগরণ, শিশুদের নাচ, কবিতা আবৃত্তি, উৎপাদন ও সরবরাহ অটোমেশন প্রক্রিয়া ইত্যাদি ফেসবুক অনলাইনে সবাই উপভোগ করছে। 

মর্মস্পর্শী এ দুঃখ-যন্ত্রণায় এবং অজানা যাত্রায় আপদকালীন সময়ে অদৃশ্য জীবাণু নোভেল করোনাভাইরাস বেকারত্ব, অর্ধহারে, অনাহারে অর্থ সঙ্কটে দিন-দিন বাড়িয়ে তুলে পরিস্থিতি তীব্র ও মহাসঙ্কটে পতিত হচ্ছে। পাহাড়ীরা নিতান্তই দুঃখ-কষ্টে নিমজ্জিত থাকলেও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে ঘরে থাকে। সামাজিক সম্পর্ক টানাপোড়েন নয় বরং সুন্দর ও দৃঢ়তর সম্পর্ক আপন ও হৃদয়গ্রাহী করে তুলতে অল্প পরিসরে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও অজপাড়া গাঁয়ে নবান্ন উৎসবসহ ভিন্নি পিঠা, সাইন্না পিঠা,  বড়া পিঠা, ধুপি/ভাপা পিঠা, কলা পিঠা, মারি পিঠা, চিতই পিঠা, গোরাম পিঠা ও ছুম পিঠা তৈরি করে সামান্য আনন্দের পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। এদিকে আপারপেরাছরা কাথলিক মিশনের প্রকৃতি ও পরিবেশ পাহাড়  বনভূমি ছরা ও ধানক্ষেতসহ অনাবিল মাধুর্য ও সৌন্দর্যে বিস্তির্ণ এলাকা। এখানে মগ/মার্মা পাড়ায় এ মৌসুমে নানা ধরনের পিঠা প্রচলন রয়েছে। তার মধ্যে কর্দামু, খপমু, ছেসমমু, চিসিমু কেংদকমু, ফ্যকামুসহ রকমারি পিঠা বানিয়ে ঝিমিয়ে পড়া জীবনকে ঝকঝকে-তকতকে রাখার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। প্রাণঘাতী নোভেল করোনাভাইরাসের অদৃশ্য জীবাণুর শক্তির সাথে বসবাসের তীব্র আঘাতে পাহাড়ী জনগোষ্ঠী পরিত্রাণ পেতে ইদানিং ধর্মীয় জীবন-যাপনে আরো তৎপর ও আন্তরিকভাবে গভীর ধ্যান সাধনায় প্রার্থনা করছে। আমার কাছে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো এখানে পাহাড়ী সমাজ ধর্ম বিশ্বাসে, ভক্তি- শ্রদ্ধায় ও সৃষ্টিকর্তা মহাপরাক্রমশীল ঈশ্বর ভালোবাসায় একনিষ্ঠ হয়ে পূজার অর্ঘঢালা সাজিয়ে মন্দিরে উৎসর্গ করার নিমিত্তে ধর্মগুরু ভান্তের আশীর্বাদ যাচ্না করছে। করোনাভাইরাস হতে নিরাপদে থাকা ও সুস্থ থাকার মানসে মন্দির থেকে পবিত্র জল নিয়ে এসে নিরাময়ে অতুগ্র বাসনায় সিক্ত হয়ে নিজ-নিজ ঘরে এবং পবিত্র আসনে পবিত্র জল ছিটিয়ে দিয়ে সুস্থ, শুচিতা ও পবিত্রতার জন্য সযত্নে, স্বস্নেহে ভক্তি ভালোবাসায় ও বিনম্রতায় সিক্ত হয়ে মোমবাতি প্রজ্বলন ও ধুপারতি করে প্রার্থনা করছে। অজানা রহস্যবৃত মহামারী করোনাভাইরাস হতে মুক্তি ও স্বাধীন জীবন যাত্রা সামনের দিকে এগিয়ে চলার মনোবাসনায় আমরা স্থানীয় যাজকগণ ও সিস্টারগণ মা মারীয়ার জপমালা প্রার্থনা, সাক্রামেন্তিয় আরাধনা, খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ ও বৈশ্বিক নোভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ হতে নিরাময়ের প্রার্থনা কার্ড ব্যবহার করে সবার নিরাময়ের জন্য প্রার্থনা করে যাচ্ছি। সবার প্রতি সবিনয় আহ্বান সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এবং ঘরে থাকুন॥ 


Post a Comment

Previous Post Next Post