সেন্ট ফিলিপস্ হাই স্কুল অ্যাণ্ড কলেজ, শিক্ষা বিস্তার ও মানবিক গঠনে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী

জ্যাষ্টিন গোমেজ: করোনাভাইরাস দুর্যোগের কারণবশত দেশব্যাপী শিক্ষাব্যবস্থায় স্বাভাবিকভাবে পরিচালনা করা কঠিন পড়েছে বর্তমানে। করোনা মহামারী থেকে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকার দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য উন্নতি না হওয়ায় প্রতিষ্ঠান এখনও তালাবদ্ধ। তাছাড়া সার্বিক পরিস্থিতি খুবই নাজুক। অবস্থার উন্নতি হতে বা ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনার মত পরিস্থিতি দেশে কবে সৃষ্টি হবে তা বলা অনিশ্চিত। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকার জীবন ও জীবিকা একত্রে পরিচালনার নীতি অনুসরণ করলেও তার ফলাফল নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা বিদ্যমান। তবে ভৌগলিক ও আনুষাঙ্গিক দুর্বলতার ফলে বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহই শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে। আবার অনেক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানই শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে অনলাইন কার্যক্রমের মধ্যদিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যা অভিভাবকদের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষক ও কর্মচারীদেরও সামর্থ অনুসারে সাহায্য-সহযোগিতা করে যাচ্ছে। দিনাজপুরের কসবাস্থ সেন্ট ফিলিপস্ স্কুল অ্যান্ড কলেজ দূর্যোগকালীন অবস্থায় অনুকরণীয় এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে শুধু তা নয়, অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থার সুযোগ ও সম্ভাবনার সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে যা যা প্রয়োজন তা ফলপ্রসুভাবে বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা রেখেছে। যা দেশে অনলাইন শিক্ষা সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ এক মাইলফলক। উক্ত সুনামধন্য কলেজের প্রিন্সিপাল ব্রাদার কাজল লিনুসের সাথে এসব বিষয়ে আলাপনে উঠে এসেছে উল্লেখযোগ্য কিছু পদক্ষেপ।

 

কলেজের প্রিন্সিপাল ব্রাদার কাজল লিনুস তার অফিসে


করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে স্কুল কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ কি ছিল?

গত ১৬ মার্চ ২০২০ খ্রিস্টাব্দে সম্ভবত দুপুরবেলা সরকারি ও বেসরকারি টেলিভিশনগুলোতে প্রচারিত খবরে এবং স্থানীয় উপজেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, করোনাভাইরাসের অবাধ সংক্রমণের ফলে দিন-দিন পরিস্থিতি আরো নাজুক হচ্ছে, তাই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবন বাঁচানোর স্বার্থে সরকার ১৭ মার্চ থেকে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার জন্য ঘোষণা দিয়েছে। দুঃখের বিষয় হলো, হঠাৎ করে ছুটি ঘোষণার কারণে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা, পরামর্শ এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বাস্তবভিত্তিক কোন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও অবগত করতে পারিনি। এমন অদ্ভুত পরিস্থিতিতে প্রথম কয়েক সপ্তাহ আমরা গভীরভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করি। অতপর শিক্ষকদের নিয়ে মিটিং করে কিছু বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করি। শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা চলমান রাখার জন্য ও সময়ের যথার্থ ব্যবহারের লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি যে, সিলেবাস অনুসারে রুটিন তৈরি করে দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষকদের দ্বারা ক্লাস রেকর্ডিং করে প্রতিষ্ঠানের ওযেবসাইটে প্রতিদিন আপলোড করা হবে যা চিঠি/নোটিশ ও এসএমএস এর মাধ্যমে পিতামাতা/অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের জানানো হবে। স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের নিয়ে মিটিং করে পরিকল্পনাগুলো অবগত করা হয় এবং বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের প্রাণপণ চেষ্টা চলমান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে আমি প্রতিনিয়ত শিক্ষকদের অনলাইন মনিটরিং করছি ও নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষকগণ নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ও তাদের অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করছেন ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।

অনলাইনে পাঠদানের পাশাপাশি পরীক্ষা নেয়া ও মূল্যায়নের পদ্ধতি কি? এক্ষেত্রে কোন বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে?

শিক্ষকগণ নিয়মিত অনলাইন ক্লাস দিচ্ছেন এবং প্রতিটি ক্লাসের পর বাড়িকাজ দিচ্ছেন ও তা সংশোধন করছেন; এভাবেই মূলত নিয়মিত মূল্যায়ন করছেন। শিক্ষার্থীগণ কোন বিষয় না বুঝলে শিক্ষকগণকে ফোন করে জেনে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। ছুটির শুরু হবার আগেই ১ম সাময়িক পরীক্ষার সিলেবাস শেষ করতে পেরেছি এবং সময়মত অনলাইনে পরীক্ষাগুলো নেয়া সম্পন্ন করেছি। শিক্ষার্থীগণ পিতা-মাতা/অভিভাবকের উপস্থিতিতে বাড়িতে বসে পরীক্ষাগুলো লিখেছেন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয়ে এসে/পোস্টে/কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে খাতা জমা দিয়েছেন এবং শিক্ষকগণ খাতা মূল্যায়নের কাজ শেষ করে রেজাল্ট প্রস্তত করেছেন। ইতোমধ্যে, আমরা ২য় সাময়িক পরীক্ষার জন্য পুরো সিলেবাসকে রিভাইসড্ করে অনলাইন ক্লাস সম্পন্ন করেছি এবং শিক্ষার্থীদের মোটামুটি প্রস্তত করে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র অনলাইনে দিয়েছি এবং শিক্ষার্থীগণ ১ম সাময়িক পরীক্ষার ন্যায় পরীক্ষাগুলো লিখছে। পরিতাপের বিষয় হলো, শতকরা ৩০/৪০ ভাগ শিক্ষার্থী বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে অনলাইন ক্লাসগুলোতে অংশগ্রহণ করতে পারছে না; তবে ক্লাসমেট/বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করে সাহায্য নিয়ে পরীক্ষাগুলোতে অংশগ্রহণ করছে। আমাদের পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে আশা করি স্কুল খুললে আমরা তা পুষিয়ে নিতে পারব। এই পদ্ধতি নিয়মিত চালিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীকে নিয়মিত পাঠের সাথে সংযুক্ত রাখা এবং বর্তমান শ্রেণিতে কাঙ্ক্ষিত শিখনফল অর্জন করে আগামী বছর নতুন শ্রেণিতে, নতুন সিলেবাসের জন্য নিজেকে পূর্ণভাবে সক্ষম করে তোলা।

নিয়মিত অনলাইন ক্লাস নিশ্চিতকরণে কতটুকু ঝুঁকি ছিল এবং তা থেকে উত্তরণে কি ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন?

প্রায় ছয় মাস যাবত আমাদের স্কুলে অনলাইন ক্লাশ চলমান রয়েছে। অনলাইন ক্লাশ পরিচালনার ক্ষেত্রে খুব বেশি একটা বেগ পেতে হয়নি যেহেতু আমাদের শিক্ষকমন্ডলী শুরু থেকে আজ অবধি এই ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক। লকডাউনের প্রথম দিনগুলোতে কিছুটা অনিশ্চিয়তা ছিল যে, শিক্ষকমন্ডলী বাসা থেকে বের হয়ে স্কুলে এসে অনলাইন ক্লাশ পরিচালনা করতে পারবেন কিনা। এই শিক্ষকদের মতামত গ্রহণের জন্য কয়েকবার শিক্ষকদের সঙ্গে মিটিং করা হয়েছে। প্রায় সব শিক্ষকই অনুভব করেছেন যে, আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য কিছু করা দরকার। সেই দায়িত্ববোধ থেকে আমাদের শিক্ষকমন্ডলীর কিছুটা ঝুঁকি থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে রুটিনানুসারে স্কুলে এসেছেন এবং অনলাইন ক্লাশ পরিচালনা করেছেন। কয়েকজন শিক্ষক শহর ছেড়ে দূরে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। সেই সকল শিক্ষকদের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে যেন তারা বাসায় বসেই অনলাইন ক্লাশের কনটেন্ট তৈরি করতে পারেন এবং স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের নিকট থেকে ইমেইলের মাধ্যমে তা সরবরাহ করতে পারেন।

বিদ্যালয়ের আধুনিক শিক্ষাপদ্ধতি শিক্ষার্থীরা কিভাবে গ্রহণ করেছে এবং এই ডিজিটাল শিক্ষাপদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষণে অভিভাবকেরা কতটুকু সহায়ক ভূমিকা পালন করছে?

এটা সত্য যে ডিজিটাল শিক্ষা পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। বিদ্যালয়ের ক্লাশরুমে শিক্ষকমন্ডলী ছাত্রছাত্রীদের সরাসরি যোগাযোগ, আলাপ-আলোচনা এবং শিক্ষাদান গ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তারপরেও আমাদের শিক্ষার্থী অভিভাবকগণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন এই নতুন পদ্ধতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে। শিক্ষিত অভিভাবকমন্ডলী এই ব্যাপারে যথেষ্ট যত্নবান সমস্যা হচ্ছে আমাদের যে সমস্ত শিক্ষার্থী গ্রাম এলাকা থেকে আসছে তাদের নিয়ে। অনেকের বাড়িতে ভালো স্মার্টফোন ইন্টারনেটের সুযোগ-সুবিধা নেই। এছাড়াও ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে আর্থিক বিষয়টিও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় অনেক পরিবারের জন্য। অনলাইন পদ্ধতিতে পাঠদান অধিক কার্যকরী বলে শিক্ষকরা মনে করেন। এতে শিক্ষার্থীরা অধিক মনোযোগী হয়। তারা স্বতস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করে।

যেসব শিক্ষার্থী আদিবাসী শিক্ষার্থীদের অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয় প্রতিষ্ঠানের বেতনাদি পরিশোধে ব্যর্থ, সেসব শিক্ষার্থীদের প্রতি আপনাদের ভূমিকা কি?

বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ প্রাদুর্ভাবের কারণে সম্প্রতি বিশ্ববাসী এক প্রকার নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে চরম সময় অতিবাহিত করছে। এই বিরূপ বৈশ্বি সঙ্কটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। গত ১৭ মার্চের পর বর্তমান সময় অবধি দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষকদের রুটিন মাফিক পাঠদান অর্থাৎ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পারস্পরিক যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক যোগাযোগ দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ রয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের অপরিমেয় ক্ষতি হয়েছে এবং হয়ে চলেছে তা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। এরূপ অনভিপ্রোত পরিস্থিতিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীবৃন্দের জ্ঞানার্জন সুন্দর ভবিষ্যৎ জীবন গঠন প্রক্রিয়ায় ছেদ পড়েছে তা সকলেই আঁচ করতে পারছেন। বিশেষভাবে অনগ্রসর সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থী যেমন- নিম্ন আয়ের অভিভাবকদের সন্তান আদিবাসী জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীবৃন্দ যারা অর্থনৈতিকভাবে অস্বচ্ছল, প্রতিষ্ঠানের মাসিক বেতন পরিশোধে তাদের নিশ্চয় অনেক বেগ পেতে হচ্ছে তা অনায়াসে অনুমান করা যায়।

এহেন অবস্থায়, অত্র প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকা হিসেবে আপনাদের করণীয় কী?

👉 ধনী স্বচ্ছল অভিভাবকদের স্বতস্ফূর্ত আর্থিক সহযোগিতা: অর্থনৈতিকভাবে অস্বচ্ছল অতি দরিদ্র শিক্ষার্থীদেরকে অপেক্ষাকৃত অধিক ধনী স্বচ্ছল অভিভাবকগণ আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসতে পারেন। আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠুভাবে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে সমাজের বিত্তবানদের আর্থিক সহযোগিতা একান্ত আবশ্যক। অতএব, এই মর্মে স্থানীয় ধনী শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে শিক্ষকদের আলাপ-আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করা আশু করণীয়।

👉 সমাজে প্রতিষ্ঠিত প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের আর্থিক অনুদান: অত্র প্রতিষ্ঠান থেকে বিদ্যার্জন করে অনেক শিক্ষার্থী এখন সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা নিশ্চয় আছে এবং থাকবে। অস্বচ্ছল-গরিব ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনা সুষ্ঠুভাবে চালিয়ে যেতে তারা প্রতিষ্ঠানকে বার্ষিক আর্থিক অনুদান দিতে পারেন।

👉 শিক্ষার্থীদের দৈনিক টিফিনের টাকায় তহবিল গঠন: আমরা জানিSelf-help is the best help  অর্থাৎ আত্মসাহায্য/স্বাবলম্বন সর্বোৎকৃষ্ট সাহায্য। সকল শিক্ষার্থীই কম-বেশি টিফিনের জন্য অভিভাবকদের কাছ থেকে বিদ্যালয়ে টাকা নিয়ে আসে। উক্ত টাকা থেকে সপ্তাহে একদিনের টিফিনের টাকা অস্বচ্ছল অতি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সাহায্যার্থে বিদ্যালয়ে একটি তহবিল গঠন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদেরকে Motivation দেওয়ার জন্য শ্রেণি শিক্ষক বিষয় শিক্ষকদের এগিয়ে আসতে হবে। 

👉 শিক্ষকমণ্ডলীর কিছু করণীয়() মোটিভেশনাল সংঘ গঠনের মাধ্যমে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের নিয়ে উদ্বুদ্ধকরণ সেমিনারের আয়োজন করা। এই সংঘের সদস্যগণ দরিদ্র শিক্ষার্থীদেরকে দীর্ঘ মেয়াদী আর্থিক সাহায্যের জন্য সামর্থবান শিক্ষার্থীদেরকে অনুপ্রাণিত করা এবং তহবিল সংগ্রহ করবে।

() প্রতিষ্ঠিত প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কল্যাণের নিমিত্তে গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে ইতিবাচক আলাপ-আলোচনা করা যাতে তারা অস্বচ্ছল-গরিব ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনায় অগ্রণী ভূমিকা রাখতে অনুপ্রাণিত হয়।

() যেসব শিক্ষার্থীর অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয় প্রতিষ্ঠানের বেতনাদি পরিশোধে ব্যর্থ শ্রেণি শাখাভিত্তিক তাদের নামের একটি তালিকা তৈরি করে অভিভাবকদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলাপ-আলোচনা করা। প্রকৃত অভাবী শিক্ষার্থীদেরকে অন্য কোনভাবে সহযোগিতা করা যায় কী না তা খতিয়ে দেখা।

পরিশেষে বলতে চাই, অত্র প্রতিষ্ঠান পিছিয়ে পড়া গরিব ও দুর্বল শিক্ষার্থীদের বিশেষভাবে আদিবাসি শিক্ষার্থীদের গত মার্চ মাস হতে প্রায় পাঁচশত শিক্ষার্থীকে অর্থ ছাড় দিয়ে আসছি। করোনাভাইরাস মহামারী চলাকালীন সময়ে আমরা প্রায় ছয়শত গরিব পরিবারকে খাবার ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছি। আগামী দিনগুলোতে অত্র প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সামর্থ অনুসারে গরিব পরিবারের শিক্ষার্থীদের বিশেষভাবে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফ অথবা বিশেষ ছাড় দিতে হবে। আমরা প্রাক্তন শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের এবং সমাজের ধনী ব্যক্তিরা  যাদের সামর্থ আছে তাদের কাছ থেকে অনুদান গ্রহণ করে গরিব ও দরিদ্র ছেলেমেদের যতটুকু সম্ভব সাহায্য করতে চেষ্টা করব যা আমাদের পরিকল্পনা মধ্যে রয়েছে। 

বৈশ্বিক মহামারীকালীন আপনার প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সেবাদানের ক্ষেত্রে কিরূপ  ভূমিকা পালন করছেন?

সেন্ট ফিলিপস্ পরিবার হিসেবে শিক্ষক কর্মচারী সকলে এই পরিবারের সদস্য/সদস্যা। করোনা মহামারীকালীন অত্র প্রতিষ্ঠানের সামর্থনুযায়ী প্রতিষ্ঠান তাদের পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে। এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব কর্তব্য যেহেতু বাস্তবতার প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষক-কর্মচারীগণ যতটুকু সম্ভব তাদের পরিশ্রম/মেধা দিয়ে যাচ্ছেন, আমাদের অভিভাবকদেরও নৈতিক দায়িত্ব পাশে থেকে তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া। শিক্ষার্থীদের কল্যাণের মঙ্গলের জন্য প্রতিষ্ঠান সুপরিকল্পিতভাবে সবই করে যাচ্ছে। আমাদের শিক্ষক-কর্মচারীগণ সকল পরিকল্পনা বাস্তবয়ানের জন্য যথেষ্ট আন্তরিক উদার। তাদের আন্তরিকতার জন্য প্রতিষ্ঠান নিশ্চয়তা দিয়েছে যে যতদিন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সামর্থ থাকবে, ততদিনই তাদের বেতন দিয়ে যাবে। আমরা সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণকে সকল আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দিয়েছি। প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন-ভাতাদি নিয়মিত প্রদান করা হচ্ছে। এমনকি প্রয়োজনে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি পালনে গুরুত্বরোপ করা হচ্ছে নিয়মিত খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।

সকল শিক্ষার্থীর পক্ষে তো অনলাইনে পাঠদান মূল্যায়নে অংশ্রগ্রহণ করার সুযোগ হচ্ছে না, সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিষ্ঠানের বিকল্প ভাবনা কি? 

ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনে পাঠদান নিশ্চয় একটি যুগোপযোগী পদ্ধতি। কিন্তু এটিও ধ্রুব সত্য যে, শ্রেণিকক্ষের বাইরে সকল শিক্ষার্থীর পক্ষে অনলাইনে পাঠদান মূল্যায়নে অংশগ্রহণ করার সুযোগ হচ্ছে না। কারণ ইন্টারনেট সুবিধা সবার জন্য নেই এবং এর ব্যবহার বিষয়েও অনেকে প্রকৃত অর্থে অবগত/ওয়াকিবহাল নয়।

এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিষ্ঠানের বিকল্প ভাবনা হলো:

👉 বিষয় শিক্ষকগণ নিজ নিজ ক্লাশের শিক্ষার্থীর জন্য সিলেবাস অনুসারে Chapter-wise lesson plan প্রস্তুত করেছেন এবং সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশ্ন তৈরি করে একদিন/দুদিন পর-পর ঐসব Home Work আকারে শিক্ষার্থীদেরকে অনলাইনে অথবা প্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ব্যাপারে শিক্ষার্থীগণ হোম ওর্য়াকের জন্য প্রতিটি বিষয়ে দুটি খাতা/নোটবুক প্রস্তুত করেছেন। শিক্ষার্থীগণ উক্ত প্রশ্নের উত্তর খাতায় লিখে বিষয় শিক্ষকের নিকট জমা দিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষক তা মূল্যায়ন করে এবং উক্ত খাতা শিক্ষার্থীকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফেরত দিচ্ছেন। বিষয় শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীর অপর খাতাটির ক্ষেত্রেও একই কাজ করে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীর সাথে শিক্ষকের উক্ত কার্যক্রমটি চক্রাকারে চলমান।

👉 বিষয় শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীর পাঠের অগ্রগতি যাচাইয়ের জন্য অভিভাবকদের সঙ্গে সরাসরি বা মোবাইলে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। অপেক্ষাকৃত দুর্বল শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোম ভিজিটও করছেন। সংক্ষেপে বলা যায়, অনলাইনে যুক্ত হওয়ার জন্য অভিভাবকদের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধকরণ। শিক্ষকদের সঙ্গে নির্দিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে যোগাযোগ রাখতে পরামর্শ প্রদান। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের ক্লাসগুলো করতে বলা। বিভিন্ন তথ্য পরামর্শ সম্বলিত স্কুল নোটিশ বোর্ড দেখা স্কুল অফিসে যোগাযোগ রাখা। সর্বোপরি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অতিরিক্ত ক্লাসের মাধ্যমে পুষিয়ে দেয়া।

 

 ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদান এবং শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ সম্পর্কে শিক্ষকদের মতামত কি?

করোনাকালীন সময়ে অত্র প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনে পাঠদান একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। আর এ বিষয়ে  আমাদের শিক্ষকদের মতামতসমূহ :

👉 পাঠদানের ক্ষেত্রে এটি একটি অত্যন্ত কার্যকরী পদ্ধতি।


👉  পদ্ধতিতে পাঠদান শিক্ষার্থী বার-বার দেখার সুযোগ পায়। ফলে পাঠদানের বিষয় তার কাছে স্পষ্ট হয়।


👉 সবার জন্য ইন্টারনেট সুবিধা না থাকায় এই পদ্ধতিতে পাঠদান গ্রহণ বিষয়ে কতিপয় শিক্ষার্থী উপকৃত হচ্ছে বলে আমরা মনে করি। কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী এই পদ্ধতিতে উপকৃত হচ্ছে না।


👉 শিক্ষার্থীদেরকে নিয়মিত পড়াশোনায় ব্যস্ত রাখতে শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদেরকে নিয়মিত হোম ওর্য়াক দিয়ে যাচ্ছেন। সর্বপরি, পদ্ধতি পাঠদান অধিক কার্যকরী বলে শিক্ষকরা মনে করেন। এতে শিক্ষার্থীরা অধিক মনোযোগী হয়। তারা স্বতস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করে।

 

 বর্তমানে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর বিষয়ে নতুন পদক্ষেপ কি

উত্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনানুসারে অনলাইনে অন্যান্য কলেজগুলোর ন্যায় আমাদের একাদশ শ্রেণির নতুন ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। অন্যান্য শ্রেণিতে ২০২১ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষার্থী ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়গুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনানুসারেই হবে। তবে প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, অনলাইনের মাধ্যমে অথবা ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে হতে পারে।  অবস্থা বুঝে প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থা নিবে। কোন বিধি-নিষেধ না থাকলে পূর্বের নিয়মানুসারে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু থাকবে। তবে ভর্তি ফরম অনলাইন ছাড়া হবে। সেই সাথে নোটিশ বোর্ডে তথ্যাদি দেওয়া হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে।

পরবর্তীকালে স্কুল-কলেজের শিক্ষাকার্যক্রম স্বাভাবিক হলে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যগত সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে ব্যতিক্রম বা সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা রয়েছে কিনা?

হ্যাঁ, অবশ্যই স্বাস্থ্যগত সুরক্ষার ওপর জোর দেওয়া হবে। শরীরের তাপ মাপা, মাস্ক পরিধান, বার-বার হাত ধোয়া, `ভিটামিন সি‘ জাতীয় খাবার গ্রহণ ইত্যাদির ওপর জোর দেওয়া হবে। দৈহিক ব্যায়াম মানসিক দৃঢ়তার ওপর জোর দেওয়া হবে। করোনা পজিটিভ হলে কোয়ারেন্টাইনে থেকে চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া।

 সকল শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আপনার মূল্যবান বক্তব্য তুলে ধরুন।

মহামারীকে ভয় না করে জয় করার মনোবল অর্জন করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে মহামারীকে এড়ানো সম্ভব। যারা মহামারীতে আক্রান্ত হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদের সাথে মানবিক আচরণ করতে হবে ও সহানুভূতিশীল হতে হবে। আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে পাঠে অধিক মনোযোগী হতে হবে।

বর্তমান বাস্তবতার দাবি আমাদের আধুনিক পদ্ধতি বিশেষভাবে ডিজিটাল  পদ্ধতি ব্যবহারে অব্যস্থ হতে হবে। আগামী দিনগুলোতে যাতে বিশেষ পরিস্থিতে ঘরে বসে ভার্চুয়াল পদ্ধতি  পাঠদান ও মূল্যায়ন কাজ শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের শতভাগ অংশগ্রহণের মাধ্যমে সম্পূর্ণ করতে পারে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকলে ঘরে বসে শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ রেখে ও তাদের নির্দেশনা মেনে প্রতিষ্ঠানের সকল পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ ও সম্পৃক্ত হয়ে প্রত্যাশিত শিখনফল অর্জন করে যোগ্যতা নিয়ে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে হবে। প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় সকলকে সমবেত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে পিতা-মাতা/অভিভাবক সাহায্য করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় দাবি/বিষয়গুলো বাদ দিয়ে অতিপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে করতে হবে। 

উপসংহার: শিক্ষক, অভিভাবক শিক্ষার্থীর যৌথ প্রয়াসে প্রতিষ্ঠানটি ঘাত-প্রতিঘাত থাকা সত্ত্বেও সফলভাবে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে হলি ক্রস ব্রাদারদের পরিচালিত সেন্ট ফিলিপস্ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ। সুযোগ্য প্রিন্সিপাল ব্রাদার কাজল লিনুস কস্তা’র নেতৃত্বে করোনাকালীন শিক্ষাবিস্তারে ও শিক্ষক এবং সেবাদানকারীদের সমর্থন করার নজির সত্যিই অনন্য এক দৃষ্টান্ত। প্রতিষ্ঠানটি বিশেষ একটি দিক শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সেবাদানকারীদের প্রতি যথেষ্ট যত্নশীল। উক্ত প্রতিষ্ঠানের অবদান ও প্রভাব যুগ-যুগ ধরে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত হোক, অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকুক হাজারো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিকট এই প্রত্যাশা।

justingomes80@gmail.com



[ পাঠকদের  দৃষ্টি আকর্ষণ:  করোনাকালে আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমন কোন অগ্রণী ভূমিকা কি ছিল যা নিয়ে জীবন ও সমাজে ফিচার হিসেবে দেয়া যেতে পারে। তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন : jibonoshomaj@gmail.com ]



[  জীবন ও সমাজে  পাঠাতে পারেন আপনারও লেখা। 

লেখা পাঠানোর ঠিকানা : jibonoshomaj@gmail.com ]



Post a Comment

Previous Post Next Post