অসততার মোহজালে কলুষিত পৃথিবী

সংগ্রামী মানব : জেরাল্ড নামের আঠারো বছর বয়সের এক যুবক সবেমাত্র এসএসসি পরীক্ষা সমাপ্ত করেছে। জেরাল্ডের বন্ধু সাম্য একদিন জেরাল্ডকে বলল, চল এবার আমরা ঘুরতে কলিক্ষেত্র যাই। জেরাল্ড সায় দিল ঠিক আছে তবে কি করতে হবে? সাম্য বলল, আমাদেরকে পাসপোর্ট, ভিসা তৈরি করতে হবে আর আমাদের যাত্রা হবে বাইরোডে। তারা কাজ শুরু করে দিল। সবকিছু পরিকল্পনা মাফিক চলতে লাগল। তারা পাসপোর্ট ও ভিসা পেয়ে গেল। তারা সিদ্ধান্ত নিল জুন মাসের চব্বিশ তারিখ যাত্রা শুরু করবে। পরিকল্পনা মাফিক তারা বাসের টিকিট বুক দিয়ে দিল। চব্বিশ তারিখ রাতে তারা দিঘলবাড়ি থেকে কলিক্ষেত্র যাওযার জন্যে বাসে উঠল। রাত দশটা দশ নাগাদ বাসটি যাত্রা শুরু করল। চারপাশের শো-শো শব্দ, বাসের ঝাঁকুনি, এরই মধ্যে সাম্য ঘুমিয়ে পরল। বাসের লাইটগুলো বন্ধ করা হল, সবাই তখন ঘুমে বিভোর। মাঝে মধ্যে ভেসে আসা পো-পো আওয়াজ কেমন যেন অনুভূতি দিচ্ছিল। জেরাল্ডও এখন ঘুমের কাছে মাথা নত করেছে। হঠাৎই জেরাল্ডের ঘুম ভাঙ্গল। সে দেখতে পেল তাদের বাসটি বর্ডারের সন্নিকটে দাড়িয়ে আছে। বাসের চালক হঠাৎ বলে উঠল আপনারা ইমিগ্রেশন শেষ করে তাড়াতাড়ি চলে আসুন। সাম্য ও জেরাল্ড ইমিগ্রেশনের জন্যে নিচে নামল। তারা কিছুই বুঝতে পারল না যে কি করতে হবে বা কোথায় যেতে হবে। অন্য লোকদের পিছু-পিছু তারা যেতে লাগল। কিছুক্ষণ পর তারা যেখানে পাসপোর্ট ও ভিসায় সিল দেওয়া হয় সেখানে এসে সমবেত হল। তাদের ডাক আসল পাসপোর্ট জমা দেওয়ার জন্যে। অফিসার তাদের নাম জিজ্ঞেস করল। 



নাম বলার পরপরই অফিসার বলল, খ্রিস্টান। তারা বলল, হ্যাঁ আমরা খ্রিস্টান। তখন সাম্য দেখতে পেল অফিসারের সহকারী অফিসারকে কিছু বলছে। সে শুধুই শুনতে পেল ঘুষ দেওয়া যাবে। পরমুহূতে অফিসার তাদের কাছে কাগজপত্র দেখতে চাইলো। তারা কাগজপত্র বের করে দেখাল। সবকিছু ঠিকই ছিল তবুও অফিসার তাদের পাসপোর্ট দুটো তার সহকারিকে দিয়ে বলল, দেখ। সেই লোকটি পাসপোর্ট হাতে নিয়ে সাম্য ও জেরাল্ডকে একপাশে নিরিবিলিতে ডেকে নিয়ে বলল, পাসপোর্ট ও ভিসায় সমস্যা আছে তাই তোমরা যেতে পারবে না। জেরাল্ড বলল, কিন্তু কেন সবকিছু তো ঠিকঠাকই আছে। লোকটি বলল, অতসব বুঝি না, সমস্যা রয়েছে, অফিসারের সাথে কথা বলতে হবে। এই বলে লোকটি অফিসারের সাথে কথা বলতে চলে গেল। তখন আরেকজন লোক এসে সাম্য ও জেরাল্ডকে  বলল, ভাই কি হবে ঝামেলা করে, তার চেয়ে বরং কিছু টাকা দিয়ে চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর অফিসারের সহকারী এসে বলল, স্যার বলেছে তোমাদেরকে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে নতুবা তোমরা বর্ডার ক্রস করতে পারবে না। সাম্য বলল, আমাদের তো সবকিছু ঠিকঠাকই আছে তবে টাকা দিব কেন? সহকারী বলল, টাকা না দিলে তোমাদেরকে ফিরে যেতে হবে। এমতাবস্থায় বাধ্য হয়ে তাদেরকে টাকা দিতে হল এবং এর বিনিময়ে তাদের পাসপোর্ট ও ভিসায় সিল পরল। তারা পাসপোর্ট হাতে নিয়ে পুনরায় হাঁটতে লাগল। সামনে এগিয়ে দেখে বিরাট এক লাইন, দেখে মনে হবে লাইটি আদোও শেষ হবে না। তখন একজন লোক এসে তাদেরকে জিজ্ঞেস করল আগে যেতে চান?। দুইশ টাকা দিন তাহলে আমি আপনাদেরকে আগে পাঠিয়ে দিব। লাইনটি দেখিয়ে বলল এই লাইন আদোও শেষ হবে না। সাম্য উওরে বলল, লাগবে না। লোকটি চলে গেল। এর মিনিট পাঁচেকের মধ্যে লাইনটি শেষ হয়ে গেল। তারাও ইমিগ্রেশন শেষ করে বাসে উঠার জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তখন হঠাৎ একজন লোক এসে তাদেরকে বলল, পাসপোর্ট কোথায়, তারা পাসপোর্ট দিল। ডলার কোথায়, তাও দিয়ে দিল। তখন হল কি লোকটি তাদেরকে পাসপোর্ট ফেরত দিয়ে দিল ও ডলার ভেঙ্গে অর্থ দিল। সাম্য বলল, আমরা এখন ডলার ভাঙ্গাবো না। আমাদের ডলার ফেরত দিন। তাদের কোন কথাতেই কোন কাজ হল না। নতুন বিধায় কিছু বলার সাহস পেল না। বরং তারা অসততাকে প্রশয় দিয়ে বিভিন্ন চড়াই-উতরাই পার করে কলিক্ষেত্র দেশ ভ্রমণ সম্পন্ন করল। 


[  জীবন ও সমাজে  পাঠাতে পারেন আপনারও লেখা। 

লেখা পাঠানোর ঠিকানা : jibonoshomaj@gmail.com ]


Post a Comment

Previous Post Next Post