বৈশ্বিক উন্নয়নে যুবাদের সম্পৃক্ততা

জাসিন্তা আরেং:  বর্তমানে বৈশ্বিক উন্নয়নে যুবারা বিপুল সম্ভাবনাময় এবং ইতিবাচক শক্তিসম। যাদের অংশগ্রহণ বৈশ্বিক যেকোন লক্ষ্য অর্জনে অনেকাংশেই অনিবার্য। বিশ্বের যেকোন দুর্যোগ মোকাবেলা এবং দুর্গত মানুষের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসার নজিরতো একমাত্র যুবাদেরই রয়েছে। এমনকি মহামারী করোনাকালীন বিপর্যয়ের সময়েও তার ব্যতিক্রম চোখে পড়েনি। কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সুহৃদ যুবসমাজ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে এসেছে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পাশে। যারা বাড়ির বাইরে আসতে পারছে না, তারাও ঘরে বসে আধুনিক প্রযুক্তির মধ্যদিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ও কোভিড-১৯ প্রতিরোধে আইন-শৃঙ্খলা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে আসছে। তাছাড়া যুবাদের কেউ-কেউ নিজ উদ্যোগে মাস্ক বিতরণ এবং বিভিন্ন জায়গায় স্যানিটাইজার বিতরণ করেছে যা অতীব প্রশংসনীয়। এছাড়াও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের যুবারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্র সেন্টার থেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রস্তুত করে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। অন্যদিকে, লকডাউনে অনাহারে কষ্ট পাওয়া অনেকের পাশেই খাবার বিতরণ এবং স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালনের মধ্যদিয়ে জনসাধারণের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে। 

বৈশ্বিক উন্নয়নে যুবাদের সম্পৃক্ততা

বৈশ্বিক পরিবর্তন বিশ্বের সকল নাগরিকেরই কাম্য এবং সেই পরিবর্তনের ধারক এবং বাহক হলো বর্তমান যুবসমাজ। স্বামী বিবেকানন্দের মত যুবারা হলো বৈশ্বিক লক্ষ্য অর্জনের অন্তিম আশা এবং অনুপ্রেরণা। কেননা একমাত্র যুবারাই পুরনোকে ভেঙে  নতুন করে গড়ে তুলতে আজ অবধি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বর্তমানে মহামারী করোনাভাইরাসের ফলে বিগত কয়েক মাসে যুবাদের জীবনে অভূত পরিবর্তন এসেছে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানসমূহ অনাকাঙ্ক্ষিত বন্ধ হওয়ায় এবং যারা বিভিন্ন পেশার সাথে জড়িত তাদের বেকার অবস্থা যুবাদের জীবনকে দুর্বষহ করে তুলেছে। যেহেতু বয়স্কদের চেয়ে যুবাদের গ্রহণ ও যেকোন পরিবর্তনকে সহজে মানিয়ে নেয়ার মন-মানসিকতা তুলনামূলকভাবে বেশি, সেহেতু করোনাভাইরাসের কারণে জন-জীবন, পরিবেশ ও ব্যক্তিগত-পেশাগত এবং পারিপার্শ্বিক জীবনে যে বিশদ পরিবর্তন এসেছে তা গ্রহণের সক্ষমতা যুবাদের রয়েছে বলে কম-বেশি সকলেই আশাবাদী। তাছাড়া অনেকের পরিকল্পনা মাফিক কোন-কোন ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে ব্যর্থতা এবং নাজুক পরিস্থিতির ফলে আকস্মিক সামাজিক দুরত্ব সৃষ্টি ইত্যাদি নানাবিধ কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। কাজেই এই সঙ্কটকালীন সময়ে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্নের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে যেন যুবারা হতাশা-নিরাশার ঘোর কাটিয়ে ওঠে সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে। এ সময়ে যুবারা যেন বিপথে না গিয়ে বরং সময়ের যথাযথ ব্যবহার করে নিজেদের মেধা ও দক্ষতার পুুনরায় প্রকাশ ও বিকাশ ঘটাতে পারে, সেদিকে পিতা-মাতা ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সচেতন দৃষ্টি রাখা বাঞ্ছনীয়।

অন্যদিকে, যুবাদের অনাবিল সক্ষমতা ও দক্ষতাকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে সামাজিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করতে হবে। যুবাদের সম্পৃক্ততা ছাড়া কখনও কোন দেশের অগ্রগতি ও চলমান উন্নয়নকে স্থিতিশীল রাখা সম্ভব নয়। তাছাড়া অনেকেই মেধা ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও সুযোগের অভাবে তার গুণাবলীর সদ্ব্যবহার করতে পারে না। তাই স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে যুবাদের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও যুবাদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধিতে সরকার ও দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষকে আরো বেশি তৎপরতার পরিচয় দিতে হবে। বর্তমানে আধুনিক থেকে আধুনিকায়নের দিকে মূল্যবোধ নিয়ে যাত্রা করা বৈশ্বিক লক্ষ্য এবং সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন ও ইতিবাচক ধারণার অধিকারী যুবাদের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং সম্পৃক্ততা অত্যন্ত প্রয়োজন। সুতরাং যুবারা যেন মানবিক ও সামাজিক মূল্যবোধ নিয়ে আগামী দিনের শুভ সূচনা করতে পারে এবং যেকোন বৈশ্বিক উন্নয়ন  কর্মে সফলভাবে ব্রতী হতে পারে সেজন্য প্রত্যেকের সহযোগিতা ও অবদান প্রত্যাশিত ।


পূর্ব প্রকাশ : সাপ্তাহিক প্রতিবেশী, সংখ্যা - ৩০, ২০২০

 



Post a Comment

Previous Post Next Post