দুর্নীতির মাঝে লোকচক্ষুহীন অপরাধ

সংগ্রামী মানব : সাম্য ও তরঙ্গ দুই বন্ধু। দুজনার জন্ম ও অবস্থান রায়পুরায়। গ্রীষ্মের ছুটির পূর্বে সাম্য তরঙ্গকে বলল, আমরা এই ছুটিতে চলিপুর ঘুরতে যাব। তরঙ্গ বলল কীভাবে?। সাম্য উওরে বলল, আমরা এই বার ট্রেন ভ্রমন করব। আমার অনেক দিনের শখ ট্রেনে চড়ার। তরঙ্গ বলল, ঠিক আছে। দেখতে দেখতে গ্রীষ্মের ছুটি এসে গেল। সাম্য টিকিট বুক করে ফেলল। মে মাসের চব্বিশ তারিখ রাত আটটায় তাদের যাত্রার সময়। তারা দুজনই গোঁছগাছ করে প্রস্তুত হল। সন্ধ্যা ছয়টা নাগাদ তারা ট্রেন ষ্টেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করল। ঘন্টা দেড়েকের মধ্যে তারা ষ্টেশনে এসে পড়ল।  তরঙ্গ বলল, সাম্য ট্রেন টিকিটটা বের র্ক। সাম্য ট্রেন টিকিটটা বের করে ট্রেন সংক্রান্ত তথ্যাদি জেনে নিল।  এখন তারা দুজন ট্রেন খুঁজতে লাগল। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তারা ট্রেন খুঁজে পেল না। অতপর তরঙ্গ সাম্যকে বলল, কাউকে জিজ্ঞেস করা যাক। ঐ দেখ ঐ দেখা যায় একজন টিটি, চল্ ওনাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করি। তারা দৌঁড়ে গেল ওনার কাছে, টিকিটটা হাতে দিয়ে বলল, স্যার, আপনি কি বলতে পারবেন এই ট্রেনটা কোন প্লাটফর্মে?। টিটি বলল, ওহে এই ট্রেনটি তো এক ঘন্টা আগে চলে গেছে। তোমরা কোথায় যাবে?

তরঙ্গ বলল, চলিপুর। টিটি বলল, তাই বুঝি। তারা বলল, হ্যাঁ স্যার। তোমরা দেখতে পাচ্ছ এক নম্বর পলাটফর্মে দাড়ানো ট্রেনটিও চলিপুর যাবে কিন্তু এক ঘন্টা বাদে। তোমরা যদি যেতে চাও তবে আমি ব্যবস্থা করতে পারি। কিন্তু যাওয়ার বিনিময়ে তোমাদেরকে আমায় পাঁচশত টাকা দিতে হবে। তরঙ্গ বলল, স্যার আমরা তো টিকিট বুক দিয়েছি আবার পাঁচশত টাকা কেন?। অতসব বুঝি না পাঁচশত টাকা দিলে তোমরা যেতে পারবে নতুবা না। সাম্য বলল, স্যার আমাদের কাছে অতটাকা নেই আমরা আপনাকে তিনশত টাকা দিতে পারব। টিটি বলল, যত বলেছি তত টাকার একটাকা কম হলেও হবে না। অবশেষে টিটি চলে গেল। সাম্য ও তরঙ্গ দুজনই চেয়ারে বসে পড়ল। কিছুক্ষণ পর আরেকজন মধ্য বয়স্ক লোক এসে হাজির হল। দেখে মনে হল রেলগাড়ীর কর্মচারী। আমাদের সামনে দিয়ে দু-তিন মিনিট ঘুর ঘুর করল। হঠাৎই লোকটি তরঙ্গকে লক্ষ্য করে বলল, ট্রেন মিস করেছেন বুঝি। তরঙ্গ সহজ ভাবে বলল হ্যাঁ। লোকটি বলল, আপনারা কোথায় যাবে?। সাম্য বলল, চলিপুর। লোকটি পরবর্তিতে একটি ট্রেন দেখিয়ে বলল, আমি ঐ ট্রেনের একজন কর্মচারী। ঐ ট্রেনটা চলিপুর যাবে। আমি আপনাদের জন্য ভাল সিটের ব্যবস্থা করতে পারব তবে আপনাদেরকে আমায় চারশত টাকা দিতে হবে। তরঙ্গ বলল, আমাদের কাছে তো টিকিট আছে। লোকটি বলল, ট্রেন মিস করেছেন, ঐ টিকিট এখন অর্থহীন। লোকটি বলল, তাহলে আপনারা কি যাবেন?। তারা ভেবেচিন্তে উওর দিল, হ্যাঁ যাব কিন্তু ভাই আমরা আপনাকে চারশত টাকা দিতে পারবনা কেননা অতটাকা আমাদের কাছে নেই। আমরা  আপনাকে তিনশত টাকা দিব। লোকটি বলল, ঠিক আছে। আপনারা কিছুক্ষণ সময় অপেক্ষা করুন, ট্রেন ছাঁড়লে আমারা গিয়ে ট্রেনে উঠব। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে ট্রেন ছেঁড়ে দিল।  তারা লোকটির পেছন পেছন দৌঁড়ে গিয়ে ট্রেনে উঠল। ততক্ষনে লোকটি দুইটা বস্তা বের করে টয়লেটের দরজার একপাশে রেখে বলল, যান ওখানে গিয়ে বসুন। সারারাত ওখানে বসেই বিশ্রাম নিবেন। তরঙ্গ বলল, সিট কোথায়? লোকটি বলল, আরে ভাই তিনশত টাকায় কি আপনাকে শেভন চেয়ার দেওয়া যাবে, যাবে না। তাই কথা না বাড়িয়ে বস্তার উপর গিয়ে বসুন আর বিশ্রাম নিন। সাম্য বলল, চল্ তরঙ্গ কি আর করার এভাবেই যেতে হবে। অতপর তারা দুজনই বসে পড়ল ও গভীর নিদ্রায় চলে গেল। মধ্যেরাতে টিটি টিকিট চেক করতে আসল। তাদেরকে বসে থাকতে দেখে টিটি জিজ্ঞেস করল, তোরা এখানে কি করছিস, তোদের টিকিট দেখা। সাম্য টিকিট বের করে দেখালো। টিটি বলল, এটাতো আগের ট্রেনের টিকিট। এই ট্রেনের টিকিট কোথায়?। স্যার আমাদের কাছে নেই। টিটি বলল, টিকিট ছাড়া ট্রেনে উঠেছিস কেন?। তারা বলল, আমাদেরকে একজন লোক সিট দেওয়ার নাম করে ট্রেনে উঠিয়েছে ও তিনশত টাকা দাবিও করেছে। টিটি বলল, কে উঠিয়েছে, কোথায় সেই লোক?। লোকটাকে কোথাও পাওয়া গেল না। অতপর টিটি বলল, যলদি পাঁচশত টাকা বের র্ক। অন্য লোকের কথা বলে মনে করেছিস বেঁচে যাবি। আমি তোদেরকে হাঁড়ে হাঁড়ে চিনি। প্রতিনিয়তই তোরা এই রকম কাজ করে থাকিস। সাম্য কেঁদে কেঁদে বলল, স্যার আমরা ঐ রকম মানুষ না। সব মানুষ খারাপ না। কোন কিছুতেই টিটি তাদের কথা বিশ্বাস করল না। শেষে তরঙ্গ বলল স্যার আমাদের কাছে এই চারশত টাকা আছে, দয়াকরে এই টাকাটা নিয়ে আমাদেরকে ক্ষমা করুন। টাকা নিয়ে টিটি চলে গেল।এর কিছুক্ষণ পর ঐ লোকটি এসে জিজ্ঞেস করল, সব কিছু ঠিক আছে তো?। তারা দুজনেই মাথা নেঁড়ে সায় দিল হ্যাঁ ঠিক আছে। এভাবেই বিভিন্ন অপরাধ প্রত্যক্ষ করে, বিভিন্ন চড়াই উওরাই পাড়ি দিয়ে তারা রাতটি অতিক্রম করল। লোকটি বলল আর কিছুক্ষণ পরই চলিপুর ষ্টেশন। সাম্য ও তরঙ্গ প্রস্তুতি নিচ্ছে নামার জন্যে। লোকটা পুনরায় বলল, দাদা টাকাটা। সাম্য তিনশত টাকা বের করে লোকটাকে দিয়ে দিল। লোকটি টাকা নিয়ে চলে গেল। তারা দুজনও ট্রেন থেকে নামল ও একে অন্যকে বলল সারারাত অনেক কষ্ট হয়েছে, অনেক টাকা গচ্ছাও গেছে, ভাল সিট তো পেলাম না, পেলাম শুধুই অপমান আর নির্যাতন। সাম্য বলল, বুঝলি তরঙ্গ দুর্নিতির মাঝে সততা মৃত। তরঙ্গ বলল, ঠিক বলেছিস বন্ধু, আজ তার আরেকটি চক্ষুশ প্রমাণ পেলাম। অবশেষে তারা নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হল।  


Post a Comment

Previous Post Next Post