নারীদের মিছিলে সমতার আন্দোলন

জাসিন্তা আরেং 

নারীদের সমতার আন্দোলন দীর্ঘসময় ধরে চলমান রয়েছে। এই আন্দোলন পুরুষের ন্যায় নিজেকে প্রকাশের বিকাশের আন্দোলন। কিন্তু সে আন্দোলন কতটুকু পরিবর্তন ঘটাতে পেরেছে সেটাই বড় প্রশ্ন। বর্তমান যুগে লিঙ্গ বৈষম্য ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। ফলশশ্রুতিতে, এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে গোটা বিশ্বে। আজ নারীদের সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই করে চলেছে। এছাড়াও নারীদের নিরাপত্তা কন্যা শিশুদের সুরক্ষা নিয়ে সকলেই শঙ্কিত চিন্তিত। প্রতি বছরই আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদ্যাপিত হয় নারীদের স্বীকৃতি, ক্ষমতায়ন সমতার জোর দাবী নিয়ে। কিন্তু এই সমতার আন্দোলন শুধুমাত্র একদিনের নয় বরং প্রতিদিনের। প্রচলিত সমাজে বৈষম্যের স্থানে সমতার প্রতিস্থাপন করা আশু প্রয়োজন। কিন্তু পুরুষশাসিত সমাজ নারীদের অবদানকে প্রায়শই হেয় করে দেখার দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত। অনেকেই নারীদের প্রাপ্য সম্মান মর্যাদা দিতেও নারাজ। তাছাড়া সমাজের কোন-কোন শ্রেণীর লোকেরা নারীদের অগ্রগতিতে ঈর্ষা-বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে। এমনকি নারীদের এগিয়ে যাওয়ার অদম্য ইচ্ছা প্রচেষ্টাকে দমিয়ে রাখার চেষ্টাতো সমাজের প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই বর্তমানে নারী-পুরুষের বৈষম্য কমছে না বরং বেড়েই চলেছে। দেশে নারীদের প্রতি যে অবহেলা, নির্য়াতন, অত্যাচার পরিলক্ষিত হচ্ছে তা মোটেই আশানরূপ নয়। মফস্বল থেকে নগরে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করা, নিজেকে প্রকাশ বিকাশ করার অনুকূল পরিবেশ পাওয়া থেকেও নারীরা বঞ্চিত হচ্ছে। বৈষম্যকে ধারণ চর্চা করার যে সংকীর্ণ মন-মানসিকতা তৈরি হয়েছে, তা থেকে নিজেদের মুক্ত করতে হবে। নারীরা কেবলমাত্র নারী অধিকারই নয়, মানবিক অধিকার চর্চা থেকেও রীতিমত বঞ্চিত হচ্ছে। সমাজে বৈষম্যের দেয়াল ভেঙে অনুকূল পরিবেশে নারীদের নিজেকে প্রকাশ করার সুযোগ দিতে হবে। নারীদেরও সামাজিক বিধি-নিষেধ, ধর্মীয় গোড়ামীর গণ্ডি থেকে বেরিয়ে এসে নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠা সক্ষমতা সম্পর্কে সোচ্চার হতে হবে। নারীদের সমতার আন্দোলন শুধু সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা নয় বরং নারীর নিরাপত্তা জোরদার করাকেও বোঝায়।

নারীরা সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ, কাজেই নারীদের নিরাপত্তার দায়ভারও সমাজেরই। নারীরা নিজেদের সক্ষমতাকে গোটা বিশ্বের কাছে প্রমাণ করতে সর্বদা বদ্ধপরিকর। কিন্তু নারীর অগ্রগতিতে সমাজে  আবেদন রাখতে পুরুষদেরও সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে। নারীদের মিছিলে সমতার আন্দোলন আন্দোলিত করুক সমাজ, রাষ্ট্র এবং গোটা বিশ্বকে; প্রসারিত করুক সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিকে। লৈঙ্গিক সমতার এই চলমান আন্দোলন উদ্যাপিত হোক সারাটি বছর। কেননা এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই শুধুমাত্র নারীদের ক্ষমতায়ন, সম্মান মর্যাদা নিশ্চিত হবে না, বরং প্রতিষ্ঠিত হবে নারী অধিকার এবং সেই সাথে অর্জিত হবে মানবাধিকার।

 


 

Post a Comment

Previous Post Next Post