মরণস্পটে আঁকা ছবি, বিষাক্ত করোনা ভাইরাস পর্ব ২

রত্না বাড়ৈ হাওলাদার : এর পর আবার অন্যরকম অনুভূতি যা হৃদয়কে এক্কেবারে ভস্মীভূত করে দিয়ে গেল। হঠাৎ করে আমার একমাত্র সন্তান (২৩ বছর) বেলা হয়ে গেল কিন্তু আমাকে এখনো গুড মর্নিং বলছে না । ঘুম ভাঙ্গছেনা । চিন্তা করছিলাম রাত জেগে পড়াশুনা করেছে, সেই কারণেই হয়তো বা একটু বেশীক্ষণ ঘুমোচ্ছে । মায়ের মন তো বাঁধা মানতে চাইছিল না । সরাসরি ছেলের রুমের সামনে দরজা নক করতেই, সে চিৎকাৱ করে উঠলো । মামনি তুমি আমার রুমে এসো না । বুঝতে যেন এতটুকু কষ্ট হল না। বুকের ভেতর রিদপিন্ড যেন থরথর করে কাঁপছিল । হৃদয়টা দহনে একেবারে অগ্নিদগ্ধ হয়ে গেল । কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না । তখনকার পরিস্থিতিতে করোনা ভাইরাস মানেই যেন পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়া । একবার নিজের বেডরুমে যাচ্ছি । আরেক বার লিভিং রুমে । মাথা যেন এতটুকু কাজ করছে না । ওর বাবা খাবারের প্লেট দরজার ভিতরে রেখে দিচ্ছে। যে কিনা এতবড় ছেলেকে পারলে খাইয়ে দেয়। কিন্তু সে আজ একি করছে ! যেন হৃদয়টা ভেঙ্গে খণ্ড হয়ে যাচ্ছে । পুরোটা রাত শুধু কান দুটোকে সজাগ রেখে, সোফাতে বসে থেকেছি। মূহুর্তের মধ্যে সব কিছু কেমন অধরা লাগছে । নিজের অজান্তে শুধুই সৃষ্টিকর্তার নাম জপ করতে লাগলাম। একজন মায়ের সেই করুন আকুতি আর্তনাদ কোনো ভাবেই যেন বোঝানো সম্ভব ছিল না । যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছি । টিভি খুলতেই, যেখানে কিনা শুধু , উহুঁ চোখের সামনে অগণিত মৃত্যু সংবাদ। বিভিন্ন বিদঘুটে খবর । ওদিকে এম্বোলেন্সের শব্দে একেবারে পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম । কি রোগ ঘনিভূত হল । সন্তান রুমের মধ্যে বিছানায় পড়ে কাঁতরাচ্ছে । কিন্তু মা তাকিয়ে শুধু দেখছেন । ছুঁতে পর্যন্ত পারছেন না। দরজার ফাঁকা দিয়ে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন । এর থেকে বড় কষ্ট, মর্মান্তিক যন্ত্রণা একজন মায়ের নিকট আর কি হতে পারে? তাছাড়া রোগটির তো কোন ঔষধও নেই। ডাক্তারগণ বলেন শরীরে ইমোনে পাওয়ার পর্যাপ্ত থাকলে রোগীকে অতি সহজেই আক্রমণ তথা কাবু করা সম্ভব নয় ।

ফেইজবুক বন্ধুদের বিভিন্ন ফুটেস সেখান থেকে দেখতে পেলাম একজন বিশেষজ্ঞ ইণ্ডিয়ান ডাক্তার বলেছেন এই সময় বেশী করে প্রোটিন, হিমোগ্লবিন এবং ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেতে হবে । তাই গরুর গোস্তের সুপ আরো উনি ফুটেসে বলেছিলেন সব রকমের ডাল মিশিয়ে সবুজ শাকসবজি একটু খানি চাল দিয়ে পাতলা খিচুড়ি বানিয়ে খাওয়ালে শরীরকে অনেক প্রটেক্ট করবে। সত্যিই আমি তাই করলাম। রান্না করে উষ্ণ গরম অবস্থায় ছেলেকে খাইয়ে দিলাম। সত্যি খাবার পরেই সে বলল অনেকটা সুস্থ বোধ করছে। প্রেইজ দা লর্ড । অনেক ধন্যবাদ ফেইজবুক বন্ধুদের । এর পরে শুধু উপবাস রেখে প্রার্থনা করে যাচ্ছিলাম। সবার কাছে প্রার্থনার অনুরোধ করছিলাম। সর্বশক্তিমান আমাদের সকলের প্রার্থনার উত্তর দিয়েছেন। কোন পরীক্ষা- নিরীক্ষণের আর দরকার হয়নি । তিন দিনের মধ্যে ছেলে সুস্থ হয়ে উঠল । অনেক ধন্যবাদ দিলাম সৃষ্টিকর্তাকে। তার অনুপম কৃপা ও দয়া আশীর্বাদের জন্য । কিন্তু পরের দিন আবার আমার অবস্থা ভীষণ খারাপ । ভাবলাম এবারে আর রক্ষা নেই। দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে এবারে মনে হয় চলে যেতে হবে । কারণ খবর বলছে অনেক সময় কোন উপসর্গ নেই, কিন্তু মানুষ মারা যাচ্ছে। তাছাড়া শরীরে জ্বর শুধু ওঠা নামা করছিল । ছয় ঘন্টায় জ্বরটা ফিরে আসছে। টাইনাল খাচ্ছি । পাক্কা চৌদ্দদিন একটানা জ্বর ছিল সঙ্গে মাথা ব্যথা । ভীষণ ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে পরে গিয়েছিলাম । শুধু প্রার্থনা করছিলাম। ভাবতাম জানিনা এর পরিণতি কি হবে? তখনো কোন টেস্ট করিনি। আমার স্বামী হট লাইনে ফোন করলেন । শরীরের উপসর্গের কথা জেনে তারা এপয়েনমেন্ট নিল, চার দিন পরে এসে টেস্ট করবে । কিন্তু আশ্চর্য্যের ব্যাপার হল, সেই চার দিন পঁচিশ দিনে পরিণত হলো । পঁচিশ দিন পরে তারা কল করেছে টেস্ট করতে আসবে----!

আবার পাষ্টর জসুয়া খন্দকারের টেস্টিমনি শুনলাম সেখানেও তিনি বললেন, হাসপাতালে গিয়ে টেস্ট করিয়েছেন । তখন তাকে কোন রেজাল্ট দেওয়া হয়নি । তাছাড়া কোন আইসেলেশন অথবা সোসাল ডিস্টেনস্ এর জন্য তাকে কোন পরামর্শ দেওয়া হয়নি । ঘরে তার স্ত্রী এবং ছোট ছোট তিনটি বাঁচ্চা, ছোট্ট বাঁচ্চাটির বয়স মাত্র তিন মাস । বলতে গেলে নিউ বর্ন বেবী। সেই অবস্থায় উনি তাদের সঙ্গে একত্রে ঘরে থেকেছেন। পাঁচ দিন পরে হাসপাতাল থেকে তাকে ফোন করে বলা হয় তার করোনা ভাইরাস পজেটিভ । ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাস তার স্ত্রীকে ধরে ফেলেছে । তখন পরিবারটির কি সংকটাপন্ন পরিণতি চিন্তা করা যায় ? এমতাবস্থায় কেউ কাউকে গিয়ে সাহায্যও করতে পারছে না । কেননা করোনা ভাইরাস তো একটি মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগ। কিন্তু রাখে সৃষ্টিকর্তা মারে কে? বাঁচ্চা তিনটি সম্পূর্ণ সুস্থ আছে । যেন সৃষ্টিকর্তা ওদেরকে হাতে ধরে রক্ষা করেছেন । করোনা ভাইরাস তাদের ছুতে পারেনি। এটিই প্রমাণিত হলো, বাঁচ্চাদের সঙ্গে সৃষ্টিকর্তা সর্বদা বিরাজমান । সত্যি বলতে কি? এই রোগে যারা আক্রান্ত না হয়েছে, তারা কোন ভাবেই এর ভয়াবহতা বুঝতে পারবেনা। একদিকে শরীরের বিভিন্ন উপসর্গ আরেক দিকে চলার শক্তি টুকু যেন ক্ষীণ হয়ে পরে । অন্য দিকে মৃত্যু ভয় । এহেন অবস্থায় কিভাবে যে ওনারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন । শুধু সৃষ্টিকর্তাই জানেন। আসলে খুঁজতে গেলে এই প্রান্তিক কালে, আমাদের মত এরকম অথবা এর থেকেও মর্মান্তিক ঘটনা হয়তো আরো বহু রয়েছে । যেমন, আরেকটি ঘটনা শুনলাম । নিউইৰ্য়াকের জামাইকাতে সত্যি ভীষণ মর্মান্তিক একটি কাহিনী, শরীর যেন শিহরিত হয়ে ওঠে । ঘরের প্রতিটি সদস্য অসুস্থ স্বামী বয়স ঊর্ধ চল্লিশ, স্ত্রী দুই সন্তান । সন্তান দুটো একেবারেই ছোট । স্বামী লক ডাউনের শুরু থেকে বাঁচ্চা দুটোকে নিয়ে ঘরে অবস্থান করছিল । কিন্তু স্ত্রী চাকুরি চ্যুত হবার ভয়ে কাজে যেতে বাধ্য হয়েছিল । আর সেই কারণেই ভাইরাস শত্রুকে নিয়ে ঘরে ফিরে আসাতে এই পরিণতি । তার পরেও হোম করাইন্টাইন মানতে তাঁদেরকে আলাদা রুমে থাকতে হচ্ছে । বলতে পারছিনা পরীক্ষা- নিরীক্ষার ব্যাপারটা । তবে হয়তো তার স্বামীর অবস্থা ক্রমশই খারাপের দিকে যাচ্ছিল। নিজের শরীর খারাপ থাকা সত্যেও প্রতি রাতে দূর থেকে কার কি প্রয়োজন খেয়াল করত । কোন এক রাতে স্বামীর রুমে ঢুকতেই যেন নির্বাক হয়ে গেল, তার কোন শ্বাস-প্রশাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছিল না । নিজের মৃত্যু ভয়ে সে যেন স্বামীকে স্পর্শ করতে পারল না । নির্বোধ বনে গেল। সে 911 কল করল তখন ছিল গভীর রাত । পুরোটা রাত ওই অবস্থায় ছোট্ট বাঁচ্চা দুটোকে নিয়ে এম্বোলেন্সের অপেক্ষা করছে। ভোর কেটে দুপুর গড়িয়ে বিকেলে এম্বোলেন্স এসে পরীক্ষা করতেই দেখা গেল এতক্ষণে লাশ এ পরিণত হয়েছে । উহুঁ লিখতে যেন হাত থেমে যাচ্ছে । ওই অবস্থায় স্ত্রী, সন্তানদের সম্মুখে লাশটিকে দুটো প্লাস্টিকের ব্যাগে পুড়িয়ে শক্ত করে মুড়িয়ে স্টেচারে শুয়ে ওইভাবে একেই রুমের মধ্যে রেখে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দিয়ে নো এন্ট্রি সিল্ করে চলে গেল এম্বোলেন্স ই,এম,টি। শোকাতুর অসুস্থ তিনটে প্রাণী নিরুপায় অবস্থায় অন্য রুমে কাঁচুমাচু করে সারা রাত বসে রইল। এহেন পরিস্থিতিতে নেই কোন সাহায্য সহযোগিতা । আত্মীয় স্বজন বন্ধু পরিজন কেউ যেন একটু শান্তনা বা চোখের দেখাও দেখতে আসছে না । কিভাবে আসবে করোনা ভাইরাসের ছোঁয়ায় যে কারো রক্ষা নেই। ওযে কাউকে ছেড়ে কথা বলে না । পরের দিন এম্বোলেন্স ই,এম,টি লাশটিকে নিয়ে কোথায় রেখে দিল তার খবর কে বলতে পারে? সত্যি আমেরিকার প্রতি বিশ্বাসের যেন অবক্ষয় হয়ে গেল । তার পরেও কি আর করা ---। 

আমার পিসিপি (প্রাইভেট) ডাক্তার যিনি নিরন্তন আমার চিকিৎসা করেন । উনি হলেন ডাক্তার "ফেরদৌসী হাসান" । এদেশে পিসিপির রিকোমেন্ডেশন ব্যতিরেকে কোনো ডাক্তার কাউকে চিকিৎসা করতে পারে না । কাজেই ডাক্তারকে ফোন করেছি, কিন্তু তিনি কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না । কিভাবে সিদ্ধান্ত দিবেন ? রোগটির যে কোন চিকিৎসাই নেই । তাছাড়া যেখানে কোন ঔষধ এখনও বের হয়নি ! সেখানে তার হাতও ছিল বাঁধা । তার পরেও তাকে হাজার শুকুর জানাই যে, তিনি আমাকে যথেষ্ট খোঁজ নিয়েছেন। এমন কি ভিডিও কল করে উনি চিকিৎসা দিয়েছেন । ঔষধ দিয়েছিলেন। TYLENOL 500 mg দুটো ট্যাবলেট এবং এন্টিভাওটিক একটি করে AZITHROMYCIN, 250 mg ক্যাপসুল খেতে দিয়েছেন । কখন কি অবস্থায় রয়েছি সর্বদা খোঁজ নিয়েছেন । তাছাড়া আমি যখনই ওনার চেম্বারে ট্রিটমেন্ট এর জন্য যেতাম উনি আমাকে প্রতিটি সময়েই একটি কথা বলতেন, আপনি আমার একজন ভালো পেসেন্ট, আমি আপনাকে হারাতে চাইনা। যেন ডায়লগটি আমার একেবারে মুখস্ত হয়ে গিয়েছে । ওনার কথায়-ই যেন রোগী অর্ধেকটা সুস্থ হয়ে যায় । ডাক্তার হিসেবে সত্যি ওনার তুলনা হয় না। একজন ভীষণ ভালো ডাক্তার । যেটা বলতেই হবে । আমি ওনাকে অন্য কারো সঙ্গে তুলনা করতে চাই না। এদিকে আত্মীয় স্বজন বন্ধু পরিজন চতুর দিক থেকে ফোন আর ফোন করে চলছে । সবাই বিভিন্নভাবে প্রার্থনা করছে। অনেকেই মানত রেখে প্রার্থনা করেছে । অনেকেই উপবাস রেখে প্রার্থনা করেছে । কারণ সবার ধারণা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বাঁচার কোন আশা নেই। কোন রক্ষা নেই । ভাই বোনেরা তো সবাই একেবারে কেঁদে কেটে অস্থির । তাছাড়া আমেরিকার মৃত্যুর সংবাদ সমস্ত বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে । তাইতো সবাই আরো বেশী চিন্তিত হয়ে পড়েছিল । সত্যি তাদের ভালবাসার ঋণ কোনোভাবেই শুধরাবার মত নয়। কি করে বল ? কেননা এর পরিমাপ তো টাকায় পরিমাণ সম্ভব নয় । কারণ এ যে ভালবাসার মাপযন্ত্র । জীবনটা যে কতটা ছোট্ট তা যেন চরম ভাবে নিজের অনুভূতি দিয়ে উপলব্ধি করেছি । চারদিন হয়ে গিয়েছে কিন্তু সুস্থ হবার কোন সম্ভাবনা দেখছি না । যেন ভীষণ হতাশ লাগছে । টেলিভিশন চ্যানেল গুলো সার্বিক পরিস্থিতি বিভিন্নভাবে প্রচার করছে । করোনা ভাইরাস চার দিন পর্যন্ত গলায় অবস্থান করে, তার পরে ফুসফুসকে আক্রমণ করে। তখন শ্বাস-প্রশাস নিতে প্রচণ্ড ভাবে কষ্ট হয়। আর ওই সময়টাতে এম্বোলেন্স হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভের্ন্টিলেশন লাগালে যার ইমোনে পাওয়ার শক্তিশালী সে হয়তো বেঁচে যায় । নচেৎ ডেড বডি হয়ে মর্গে চলে যায়। একে তো তখনকার পরিস্থিতিতে হাসপাতালের সিটের ব্যাপারটা ছিল খুবই সংকটাপন্ন, দুর্বিষহ । আইসিউ বেড তো সোনার হরিণের মতো অবস্থা ছিল । এমনকি ফ্লোরে পর্যন্ত কোন সিট্ ছিল না । শুনেছি মানুষের এই দুর্গতিতে, ডাক্তারগণ পর্যন্ত কেঁদেছেন। তাই তো শুধু ডাক্তারের প্রেসকাইব অনুসারে ঘরে থেকে ছয় ঘন্টা অন্তর টাইনাল এবং প্রতিদিন একটি করে এন্টিভাওটিক ক্যাপসুল খেয়েছি । সঙ্গে গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গার্গল করেছি । ভাপ নিয়েছি । এই দুটো ঘরোয়া চিকিৎসা যেন আমাকে ভীষণ ভাবে উপকারিতা দিয়েছে। তাই তো আমি সবাইকে অনুরোধ করতে চাই, এই দুটো ঘরোয়া নিজের চিকিৎসা প্রত্যেকে অবশ্যই করলে ভালো । অন্তত দুই বেলা তো করতেই হবে । পারলে যতবার সম্ভব---। 

আক্রান্ত হোক বা না হোক বাইরে থেকে ঘরে ঢুকতেই যেন এই নিজের চিকিৎসা দুটো অবশ্যই করতে হবে । এর যুক্তিও অবধারিত । কেননা করোনা ভাইরাস প্রথমে গলায় এবং নাকে গিয়ে চার দিন অবস্থান করে, তার পরে শরীরের ভিতরে প্রবেশ করে । আমি মনে করি ওই রেমেডির কারণে বাঁধা প্রাপ্ত হয়ে মারাত্মক ভাবে সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে । তাই হয়তো বা আমিও এ যাত্রা বেঁচে গিয়েছি। গরম পানিতে হলুদ ফুটিয়ে সেই পানি পান করেছি । গরম পানিতে লেবু, আপেল সাইডার ভেনিগার, আদা চা, আবার আদা লবঙ্গ দারুচিনি ইত্যাদি সব ধরনের মশলা ফুটিয়ে সেই পানি উষ্ণ অবস্থায় পান করেছি । গরুর মাংস সঙ্গে বিভিন্ন সবজি মিলিয়ে স্যুপ তৈরী করেছি। ডাক্তারগণ বলেন প্রোটিন জাতীয় খারাপ পর্যপ্ত খেতে । তাছাড়া বিভিন্ন রকমের স্যুপ জুস মোট কথা যতদূর সম্ভব তরল পদার্থ পান করেছি যাতে ফুসফুস এবং কিডনিকে কোন ভাবে আক্রান্ত করতে না পারে। ডিম, দুধ কমলালেবু, আপেল, স্ট্রবেরি, টমেটো, সঙ্গে ভিটামিন সি ট্যাবলেট মোট কথা শরীরের ইমোনে পাওয়ার পর্যাপ্ত রাখবার জন্য যা কিছু আহার করতে বলা হয়েছে, কোন কিছু বাদ রাখিনি । কালো জিরে চিবিয়ে পানি দিয়ে গিলে ফেলেছি। যে মানুষ আমি এই সবের ধার কাছেও থাকিনি। মোট কথা বাঁচবার আশায় তখন কি- না করেছি -----। ঠিক দশ দিনের মাথায় ভোর বেলা যেন নিঃশ্বাস নিতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল । শ্বাস- প্রশাস যেন টানতে পারছিলাম না । মনে হচ্ছিল দীর্ঘ শ্বাস নিতে গেলে হয়তো তখনই ভিতর থেকে ফানুস নামক যন্ত্রটি বের হয়ে চলে যাবে । সেই কারণে খুব আস্তে করে দম টানসিলাম। নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে যখন আর পারছিলাম না । তখন ছেলেকে এবং ছেলের বাবাকে বলতে বাধ্য হলাম । তারা তো সর্বক্ষণ আমাকে নিয়ে ভীষণ চিন্তা আর ভয়ের মধ্যে ছিল এবং ভীষণভাবে সুশ্রুষা করছিল । পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না। দুজনেই যেন পাগল প্রায়। ছেলে আর কোন চিন্তা না করে, 911কল করে এম্বোলেন্স ডেকে নিল । ইতিমধ্যে বাংলাদেশ তথা অন্যান্য সমস্ত আত্মীয় স্বজন সবাই মোটামুটি এই অবস্থার কথা জেনে গিয়েছে । কারণ তারা তো সার্বক্ষণিক ভাবে আমাকে অবজার্ভেশনে রাখত । কাজেই কেউ হয়তো সব সময়ই ফোন লাইনে থাকত। আর সেই কারণেই এত তাড়াতাড়ি খবরটা সবখানে পৌঁছে গেল । একদিকে ভালো যে, সেই মুহূর্তে আমার জীবনের জন্য প্রার্থনার ভীষণ দরকার ছিল । প্রিয়জনেরা আমার জন্য একন্ত ভাবে প্রার্থনা করেছিল । কিছুক্ষণের মধ্যে এম্বোলেন্স এসে হাজির । তারা তো আমাকে হাসপাতালে নিয়েই যাবে । তখন হাসপাতালের বেকায়দা অবস্থা । ওখানে গেলে আর বাঁচার আশা নেই । অনেকেই আর ফিরে আসেনি । তাইতো মনে প্রাণে শুধু সৃষ্টিকর্তাকে ডাকছিলাম। ভাই বোন আত্মীয় স্বজনরা সকলে চোখের জলে প্রার্থনা করছিল । করুণাময় সবার প্রার্থনা শুনেছেন । যার পর নাই আমি যখন এম্বোলেন্সের ই,এম,টি, কে অনুরোধ করলাম, ওনারা আমাকে কিছুটা চেক আপ করে স্থান ত্যাগ করে চলে গেলেন । যেন মাথার ভিতরে স্টাক হয়ে আছে। হৃদপিন্ড নামক ধমনিটি ভিতর-বাহির করছিল । শুধু ভাবছিলাম কোন ক্রমে যদি হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছানো হত। তাহলে হয়তো আজ আমার কবর খানি ফুলে ফুলে সজ্জিত থাকত। আবার কবর হতো কিনা সে ব্যাপারে বিরাট সন্দেহ ছিল। কেননা লাশ খুঁজে পাওয়া যে খুবই দূঃসাধ্য ব্যাপার ছিল । হতে পারত এক মাস পর খুঁজে পাওয়া ফিউনারেল হোমে ওই গলা-পচা লাশের মধ্যে আমিও শরিক থাকতাম। সত্যি মৃত্যুকে বড্ড কাছের থেকে দেখেছি । যেটা আমরণ স্মরণে থাকবে । যেন মরণস্পটে আঁকা ছবি। ভুলবার নয়। তবে সত্যি ওই মূহুর্তে নিজের জীবনকে সম্পূর্ণ রূপে সৃষ্টিকর্তার হাতে সোপর্দ করে দিয়েছিলাম । আমার মনপ্রাণ সমস্ত অন্তকরণ আমি সৃষ্টিকর্তার নিকটে উৎসর্গ করে দিয়েছিলাম। শুধু প্রার্থনা ছিল, "মহান করুণাময়ের ইচ্ছা অনুসারে আমার গতি হোক্"। সর্বান্তকরণে প্রস্তুত করে রেখেছিলাম নিজেকে । কারণ তিনি যে ক্ষমতার আঁধার, সর্বশক্তিমান । আমাকে তিনি নতুন জীবন দিয়েছেন । সকলে আমার জন্য প্রার্থনা করবেন প্লিজ ।



Post a Comment

Previous Post Next Post