বিষাক্ত করোনাভাইরাস পর্ব ১

রত্না বাড়ৈ হাওলাদার : প্রথম অভিজ্ঞতা সাটডাউন, এর একমাত্র কারণ হল করোনা ভাইরাস। কাকতালীয় ভাবে যেন হানা দিল সমস্ত বিশ্বে, COVID-19 । যেন একটি Novel বা একটি নতুন ধরনের করোনা ভাইরাস । এর পূর্বেও বহু রকমের করোনা ভাইরাস বিভিন্ন বন্য প্রাণী কিংবা বন্য পাখি থেকে মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয়েছে।

তবে COVID-19 পৃথিবীতে এর পূর্বে কেউ কখনো দেখেনি বা শোনেনি । চায়না দেশ থেকে শুরু এবং ওদেরই নামকরণ করা। তাই তো যেন একটু ভাবিয়ে তোলে ! এত ছোট্ট একটি ভাইরাস-- মাত্র '01মাইক্রন। ভাবতে অবাক লাগছে এটমবোমের মত একটি শক্তিশালী অস্ত্র, ওই ছোট্ট ভাইরাসটির কাছে হেরে গেল? দূর্নিরীক্ষ যা কিনা অনুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যতিরেকে চোখে ধরা পড়ে না । সত্যি একটু যেন স্তম্ভিতই হলাম ! করোনা ভাইরাসের প্রপাগাণ্ডা ক্রমান্বয়ে বিশ্বের নাম্বার ওয়ান কান্ট্রি আমেরিকাকে কাঁপিয়ে দিল। বহু বছরের প্রতিষ্ঠিত অতি উন্নত মানের প্রতিষ্ঠানগুলো চোখের সামনে সাটডাউন একেবারে ক্লোস হয়ে গেল । শত সহস্র মানুষ লে- অফ কারো চাকুরি নেই । চারিদিকে হাহাকার যেন দুশ্চিন্তার ঝড় বইছে । কারো চিন্তা বাড়ির মর্ডগেজ । কারো চিন্তা বাড়িভাড়া গাড়ির লোন, ক্রেডিট কার্ডের বিল, সংসারের খরচ ইত্যাদি যাবতীয়। এ যেন এক ভয়াবহ পরিস্থিতি । বিভিন্ন জনের ভিন্ন ভিন্ন মন্তব্য । কি করবে ধোঁয়াশা লাগছে । মিলিয়ে গুলিয়ে যাচ্ছে জীবনের স্বচ্ছ পাতাগুলো । কেননা আমেরিকা হয়েছে বিশ্বের এক নম্বর কান্ট্রি । যাকে আবার কখনো দ্বিতীয় স্বর্গ বলা হয়ে থাকে । একেবারে যে মিথ্যা তা বললে ভুল হবে । কারণ আর যা হউক তা হউক শান্তির ক্ষেত্রে একদম---- যেন কোন কমতি নেই । বলতে হবে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ক্ষেত্রে, ক্ষমাদানে, পরোপকারীতায়। মোট কথা প্রতিটি সম্বলহীন নাগরিকের অন্ন এদেশের সরকার যোগান দিয়ে থাকেন। সত্যি মাঝে-মধ্যে নিজেকে একজন ভাগ্যবতী বলেই মনে হয়। কেউ কেউ আবার বলে থাকে হয়তো কোন পুণ্যের ফল। যার পর নাই আজ আমেরিকাতে বাস করছে। কিন্তু চঞ্চল চিন্তা কোথায় যেন হারিয়ে ফেলছে নিজেকে । তাই হয়তো মনের অজান্তেই যেন কত কথা বের হয়ে আসছে । এই দুঃসময়ে তরতাজা মানুষগুলো টপ টপ করে চলে যাচ্ছে বিষাক্ত ওই করোনা ভাইরাসের চরম সক্রামনের প্রাদুর্ভাবে। 911 কল করলে এম্বোলেন্স এসে নিয়ে যাচ্ছে । কেউ সঙ্গে যেতে পারছে না । শতসহস্র জীবন মরণ সাগর পাড়ে চলে যাচ্ছে । হারিয়ে যাচ্ছে মৃতদেহ। শেষবারের মত প্রিয়জনকে একটি বার শেষ দেখার সৌভাগ্যটুকু কপালে জোটেনি । ভাইরাসের ভয়াবহতায় মৃতদেহটি পর্যন্ত ফিরিয়ে আনতে সাহস করেনি বা পারছে না পরিবারের স্বজনরা তাহলে যে নিজেকে সংক্রমিত হতে হবে । শুনেছি অবশেষে ইলেকট্রনিক্স পদ্ধতিতে মৃতদেহটিকে পুড়িয়ে ফেলতে বাধ্য হচ্ছে । অথবা গণ কবরে শায়িত করছে অসংখ্য মরদেহ ।

আলসে সাটডাউন নিয়ে যখন ভাবনা একেবারে হাঁসফাঁস করছিল । কারণ এবারে তো শুধু আমেরিকা নয়, পুরো বিশ্বজুড়ে করোনার প্রাদুর্ভাব মহামারী দেখা দিয়েছে । যেন সৃষ্টিকর্তার অভিশাপ নেমে এসেছে বিশ্বজুড়ে । এমন ভাবনাটি যেন সকলের চিন্তার ভিতরে এসে বাসা বেঁধেছে। তাই আজ বিশ্ব জুড়ে সকল ধর্মাবলম্বীরা সৃষ্টিকর্তার আরাধনা করে চলছে । আসলে সত্যি বলতে কি এই অভিজ্ঞতাটি কোনো কালেই কারো ছিলনা।এ যেন এক নতুন অভিজ্ঞতা । এক নতুন রোগ, বিষম মহামারী । প্রাণঘাতী ছোঁয়াচে ছোবলের তান্ডব লীলা । যা কিনা ইতিহাস হয়ে থাকবে বংশানুক্রমে । যা বলছিলাম এর পরই ঘোষণা আসল "লকডাউন"। তা অনির্দিষ্টকালের জন্য । মনে হচ্ছিল এ আবার কেমন শাস্তি । কার্ফিউ জারি করা হয়েছে । একজন প্রাণীও ঘর থেকে বের হতে পারছে না। যেন গৃহবন্দীতে পড়ে গিয়েছে শতসহস্র জনসাধারণ। তবে বলা বাহুল্য লকডাউনের পূর্বকার সময় টুকু নিউইৰ্য়াকবাসী কিন্তু জীবন মরণ পণ করে, পাগল প্রায় হয়ে খাদ্য ক্রয় করেছে তাদের স্টকহোমে । কি জানি কতদিন ঘরে বন্দি থাকতে হয় । পরে আবার খাবার সামগ্রী পাওয়া যাবে কিনা । তাছাড়া ডিটার্জেন্ট টয়লেট পেপার টিসু পেপার ইত্যাদি প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি যেগুলো ব্যতিরেকে এদেশীয়েরা একেবারেই অচল । তাই তো জনগণ ভীষণভাবে সংকিত ছিল। আর এখন বাস্তবেও দেখছি তাই, কোথাও কোন দোকান পাটে এসব কিছুই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । আবার চিন্তা করতেই মনটা এত খারাপ লাগছে যে বোঝাতে পারব না । কারো ঘরে এসব জিনিসগুলো স্তূপ হয়ে পড়ে রয়েছে। ব্যবহারের সুযোগ হয়নি আর । কেননা করোনা ভাইরাস ইতিমধ্যে তাদেরকে অলরেডি তুলে নিয়েছে তাদের জীবন স্বায়ান্নে ! কিন্তু আমি মনে করি ওটাই ছিল নিউইৰ্য়াকে ভাইরাস ছড়ানোর প্রধান কারণ । যেহেতু সবারই জানা কথা এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ । আর সেই কারণেই নিউইৰ্য়াক আজ মারাত্মক ভাবে আক্রান্ত এবং মৃত্যু মুখে পতিত, বলতে হবে সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় তথা প্রথম স্থানে রয়েছে । আর মহামারীর এই প্রচণ্ডতা যখন ঘরে বাইরে সীমানা পেরিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে শতসহস্র পরিবারগুলোর মধ্যে ছুটাছুটির জোয়ার বইছিল, এত শত ভীরের মাঝেও করোনা ভাইরাস টেস্ট করনার্থে সোজা হাসপাতালগুলোতে। কিন্তু অবুঝ হৃদয় গুলো নির্বোধের মত করে যেন সক্রিয়ভাবে সংক্রমিত হয়ে বাসায় ফিরছে। হয়তো দুই অথবা তিন দিন হতেই আবার ভাইরাসের ভয়াবহতা যেন রোগীর লাং ফুসফুসকে আক্রমণ করে তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে ফেলছে। এমতাবস্থায় আর কোন উপায় না থাকায় এহেন পরিস্থিতিতে এম্বোলেন্স কল করতে হয়েছে। পর্যাপ্ত এম্বোলেন্স না থাকার কারনে হয়তো দু তিন ঘণ্টা সময় পাড় হয়ে যাওয়ায় আক্রান্ত রোগীর হসপিটালে পৌঁছাতেই অথবা তার পূর্বে তাকে এই পৃথিবী ছেড়ে চির বিদায় নিতে হয়েছে । তবে এই সময়টা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে বয়স্ক তথা হার্ট, ডায়াবেটিস, কিডনীজনিত রোগীরা খুবই হাইরিক্সের মধ্যে থাকাতে তাদের বেশীর ভাগকেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে বিদায় নিয়ে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে সেই না ফেরার দেশে । নিউইয়র্ক যেন একটি মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়ে গিয়েছে। সরকারি হিসাব অনুসারে প্রতি তিন মিনিটে একজন প্রাণ ত্যাগ করে চলে যাচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় গড়ে সাতশোর উপরে লাশ গণনা করা হচ্ছে । শুধু আকাশে-বাতাসে এম্বোলেন্সের শব্দ ভেসে আসছে । এক সেকেন্ডের জন্যও যেন অব্যাহতি ছিল না ।

এম্বোলেন্স কল করলে এসে শুধু রোগীকে একা তুলে নিয়ে যাওয়া হতো । সঙ্গে আর কোনো আত্মীয় স্বজন কাউকেই এলাও করছে না । মোট কথা কেউ যেতে পারছে না তার সঙ্গে । কারণ ছোঁয়াচে ভাইরাস। শুনেছি রোগীকে নিয়ে ইনজেকশন পুশ করে অজ্ঞান অবস্থায় ভেন্টিলেশন সেট করে ওই ভাবে শুইয়ে রাখা হত । হায়াত থাকলে তো বেঁচে যেত । নচেৎ শুনেছি লাশকে ব্লিজ ওয়াটার দিয়ে কোনো ভাবে গোসল দিয়ে ইলেকট্রনিক উপায়ে পুড়িয়ে ফেলা হত। অথবা রোগীর আত্মীয়স্বজন যদি কোন ফিউনারেলহোমের সাথে যোগাযোগ করে তাদের বাজেট অনুসারে ধার্যকৃত ডলার দিয়ে সম্ভাবত কোনো কবর স্থানে দাফন করার ব্যবস্থা করতে পারত । তবে আপন আত্মীয় স্বজন কারো সেখানে যাওয়া সম্ভব ছিল না । মাস খানেকের মধ্যে সময়টা একটু খানি শিথিল হওয়াতে ভাগ্যক্রমে কেউ কেউ দাফনে শরীক হতে পেরেছে। তা হতে পারে দু কি একজন মাত্র । তবে প্রচন্ড কষ্টের ব্যাপার হলেও এটাই সত্যি যে প্রথম অবস্থায়, আপন আত্মীয় সে হতে পারে স্বামী স্ত্রী সন্তান অতি নিকটতম কেউ একান্ত কাছের মানুষগুলোর হাতের একমুঠো মাটি পর্যন্ত কপালে জোটেনি কারোরই। সৃষ্টিকর্তার শ্রেষ্ঠ জীবেরা এবারে যেন মৃত্যুকে অতি নিকট থেকে দেখেছে । মোট কথা নিউইৰ্য়কের কোনো হাসপাতালেই আইসিউ বেড তথা কোন নরমাল বেড খালি ছিল না । সেই কারণেই অতি জরুরী ব্যতিরেকে কোনো কাউকে হাসপাতালে এলাউ ছিল না। এমন কি সেখানে যাওয়া পর্যন্ত একেবারে নিষেধ আজ্ঞা জারি করে দেয়া হয়েছিল । বিভিন্ন রকমের অসুস্থতা নিয়ে রোগীকে ঘরে বসে কাতরাতে হয়েছে । ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীকে এত হাইরিক্সের মধ্যে হাসপাতালে যেতে হয়েছে কেমোথেরাপি নেওয়ার কারণে । যার কপাল ভালো রক্ষা পেয়েছে । আর যাকে করোনা ভাইরাস ছুয়ে ফেলেছে তার হাসপাতাল থেকে আর বাড়ি ফেরার সৌভাগ্য হয়নি । যা বলছিলাম হ্যাঁ কারো অনুমতি ছিল না হাসপাতালে যাওয়ার । শুধু মাত্র ডাক্তার নার্স এবং সেখানকার কর্মকর্তা কর্মচারী ব্যতিরেকে, অন্য কারো অনুমতি ছিল না । এমনকি আক্রান্ত রোগীর আত্মীয় স্বজনদের পর্যন্ত এলাউ করা হচ্ছিল না । তাছাড়া প্রাণের ভয়ে তখন কেউ-ই সেখানে যেতে সাহস করছিল না। কারণ জানা কথা ছোঁয়াচে রোগ মৃত্যু অনিবার্য । কাজেই মৃতদেহগুলো বেওয়ারিশ লাশ হয়ে মর্গে পড়ে থাকত। সেখানে অজস্র জায়গা না থাকায় অতি দুঃখের সাথে বলতে হয়, লাশগুলোকে গণ কবরে কবরস্থ করা হত। মৃত্যুর পূর্বে এই অভাগা মানুষগুলোর শেষ গোসল টুকু পর্যন্ত কপালে জুটত না। হাজার হাজার গর্ভবতী মায়েরা ভীষণ বিপাকে পড়ে গিয়েছে । কারণ একেতো ভাইরাসের ভাবনা অন্য দিকে আত্মীয় স্বজন কোন কেউই তাদের সঙ্গে হাসপাতালে থাকতে পারছে না । এই সময়টা প্রতিটি মেয়ে মানুষের নিকটে জীবন মরণ একটি সমস্যা । সেই কারণে প্রত্যেকই চায় পরিবার তথা স্বামী তাদের কাছে থাক। তাই তো অনেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঘরে থেকে তাদের প্রসাবকাল সম্পন্ন করবে । যদি বা তাতে অনেক রিক্স থাকবে । আবার বলা যেতে পারে ভাইরাস আক্রান্ত কোনো গর্ভবতী মা তার গর্ভের সন্তানকে পর্যন্ত মুক্ত রাখতে পারবে কিনা চিন্তার বিষয় । আর তখনকার সময় এই চিন্তাটি করাই ছিল যেন স্বাভাবিক। কেননা মারাত্মক ভাইরাস বলে কথা। শুধু বিপদের আশঙ্কা । অবাক হলেও সত্য, প্রত্যেকেই মোটামুটি খাবার কিনে ঘর ভর্তি করে রেখেছে । একটি বারের জন্য কারো চিন্তায় চেতনা আসেনি, পৃথিবীর অবস্থার এই ভয়াবহ পরিণতি । কেননা বিশ্বের এই পরিস্থিতি দেখে যেখানে কারোরই বাঁচার আর কোন আশঙ্কা ছিল না বা নেই, এমতাবস্থায়--- তার পরেও কথায় বলে "মরব দেখে করব না বাঁচলে খাব কি"? এক ধরনের প্রচেষ্টা ছিল মাত্র । সত্যি জীবনটাকে এবারে অতি নিকট থেকে দেখেছি । কেননা নিউইৰ্য়াকের ম্যানহাটনে আমার বসবাস । হাসপাতাল গুলোও বাসার অতি নিকটেই। যেমন মাউন্টসিনা, প্রেসবেটিয়ান, বেলবিউ, মেট্রোপলিটন, ওয়ালকনেল মোট কথা নাম্বার ওয়ান হসপিটাল গুলো সব আমার হাতের নাগালে । মাত্র পনের মিনিটের ড্রাইভ । আর সেই কারণেই প্রতিটি মূহুর্তে এম্বোলেন্সের শব্দ যেন হৃদয়টাকে বিদীর্ণ করে ফেলছে । একেবারে হতভম্ব হয়ে পড়েছি। কিছুই যেন করবার নেই। আর কি-ইবা লাভ তাতে? রোগ-টির যে কোন চিকিৎসা নেই। এমন কি কোন ঔষধ পর্যন্ত নেই । কবে নাগাদ বের হবে তারও কোন নিশ্চয়তা নেই । আক্রান্ত হলেই শেষ চলে যেতে হবে, আর রক্ষা নেই । আক্রান্তদের ছোয়াতে পাশে যারা থাকবে তারাও শেষ হয়ে যাবে। আবার বলছি আশ্চর্য্যের ব্যাপার হলেও এটাই সত্যি, মাত্র '01মাইক্রন যা অনুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যতিরেকে চোখে ধরা পড়ে না । কিন্তু জীবাণুটি কিনা তরতাজা মানুষগুলোকে এক নিমেষে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। আসলে সত্যি কথাটি হলো পৃথিবীটা একেবারে পাপে পূর্ণ হয়ে গিয়েছে, শুধু ড্যামকেয়ারনেস্। সৃষ্টিকর্তা বলতে কেউ আছে ??? সেই দিকে কোন ভ্রুক্ষেপই নেই বা কেউ তাকায় না । তাই তো সৃষ্টিকর্তা এবারে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, তিনি একমাত্র সৃষ্টিকর্তা এবং সর্বত্রই বিরাজমান, সর্বশক্তিমান । তিনি সব কিছু দেখেন । পৃথিবীর বোকা মানব সন্তানেরা অসৎ পথে চলতে গিয়ে শুধু উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম সর্ব দিকেই তাঁকায়। কিন্তু উপর দিকে কেউ তাকায় না । সেখানে যিনি বসে আছেন তিনি সব কিছু দেখতে পান । একটি কথা না বললেই নয়, যাদেরকে আজ সশ্রদ্ধ ধন্যবাদ দিতে বাধ্য, তারা হলেন আমাদের বাংলা টেলিভিশন টিভি এন২৪ চ্যানেলটির শ্রদ্ধেয় কর্মী বৃন্দ। যারা কিনা নিজের জীবনের ঝুঁকি বহন করে, সার্বক্ষণিকভাবে নিউইৰ্য়াক সহ সমস্ত বিশ্বের সংবাদ প্রচার তথা বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উত্তর অনুষ্ঠান। তাছাড়া এই সময়ে আমাদের পাশে থেকে এতটা অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। যার পর নাই সত্যি চ্যানেলটি প্রশংসার দাবি রাখে । কেননা এই সময়টিতে চাকুরী বিহীন পাগল প্রায় মানুষগুলোকে বিভিন্ন ভাবে সরকারের সুযোগ- সুবিধা দানের খবর আদান-প্রদান করে, বাঙালি কমিউনিটিকে কিছুটা সস্থির নিঃশ্বাস ফেলতে সাহায্য করেছেন। তথা বিভিন্ন অভিজ্ঞ ডাক্তারদের করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত ভিন্ন ভিন্ন পরামর্শ বাঙালী কমিউনিটিকে এতটা সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করেছেন, যে তা ভাষায় ব্যক্ত করা সম্ভব নয় । সৃষ্টিকর্তা চ্যানেলটিকে উত্তর উত্তর বৃদ্ধি দান করুন । প্রতিদিনই প্রায় ঘন্টার পর ঘন্টা ডাক্তারগণ তাদের সব রকমের মূল্যবান পরামর্শ পেশ করতেন । বলতে গেলে ওনারা টিভি সেন্টারের ভিতর থেকে তাদের চিকিৎসা প্রদান করতেন । তার মধ্যে খুবই পরিচিত আমাদের সকলের প্রিয় ডাক্তার রেজা টিভিএন24 এ দীর্ঘদিন যাবৎ তার মূল্যবান পরামর্শ দিয়ে এসেছেন। কিন্তু এই সময় তিনিও আমাদেরকে অসহায় অবস্থায় ফেলে রেখে সৃষ্টিকর্তার দরবারে চলে গেলেন । কিন্তু অতি ভারাক্রান্ত মনে, দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ তাণ্ডব তাকেও ছেড়ে কথা কইল না। তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন সেই না ফেরার দেশে । এই ভাবে বহু ডাক্তার নার্স স্বাস্থ্যকর্মী আমাদের কাঁদিয়ে পৃথিবীর মায়া, নিজের পরিবারের মায়া ত্যাগ করে চলে গিয়েছেন। আর কোন দিন দেখা দিবেন না । ফিরে আসবেন না । শেষ বিদায় নিয়ে চলে যাওয়া সেই প্রাণের প্রিয় মানুষ গুলোর নিকটে আমারা চির কৃতজ্ঞ । সন্তান, ডাক্তার বাবার পা জড়িয়ে জোড় করে আটকিয়ে রেখেছে । বাবাকে কোন ভাবেই ঘরের বাহির হতে দিতে চাইছে না । কিন্তু বাবা ডাক্তার ময়িন উদ্দিন, সন্তানকে উপেক্ষা করে ছুটে চলে গিয়েছিলেন তার দায়িত্ব পালনের জন্য । আর শেষ দেখা হলো না ওই ছোট্ট শিশুটির আব্বুর সাথে । তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। সত্যি মহান এই বীর যোদ্ধাগণ ডাক্তার নার্স সেবাকর্মী তাদের সম্পর্কে যত অলংকার উপাধি দিয়ে লিখিনা কেন, অনেক কম লেখা হবে । কারণ তারা মৃত্যুকে ঠোঁটের মাথায় রেখে । অতি নিকটে রেখে, জীবন-মরণ বাজি রেখে, নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন । হতে পারে স্ত্রী সন্তানদের শেষবারের মত এক নজর দেখে গিয়েছে । আর ফিরে আসবে কিনা কে বলতে পারে । কেননা এত বড় বহুতল ভবন হাসপাতাল গুলোতে এতটুকু জয়গাঁ ছিল না । পুরো হাসপাতালগুলো জুড়ে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত । এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কি অসীম সাহসীকতার পরিচয় দেখিয়েছেন এই শ্রদ্ধার পাত্র পাত্রীগণ। যা কিনা যেকোন বুলেটের গুলিকেও হার মানায়। সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা রইলো হে মহান বীর তোমাদের প্রতি । সৃষ্টিকর্তা এই মহৎ হৃদয় ব্যক্তিত্ববানদের বেহেস্ত নসীব করুন । যারা পৃথিবীতে এখনো বেঁচে আছেন, ডাক্তার, সেনাবাহিনী, পোস্টম্যান, ডেলিভারিম্যান অনর্গল সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের জন্য রইল সকলের দোয়া এবং অজস্র ভালবাসা । আমাদের নিউইয়র্কের আরেক বীর যোদ্ধা যাকে নিয়ে একটু আলাদা করে লিখতে না পারলে লেখাটি যেন অসমাপ্ত থেকে যাবে। তিনি আর কেউ নন, আমাদের প্রাণের বন্ধু ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকার । যাকে আখ্যায়িত করা হয়েছে !! "মানবতার চিকিৎসক" (Doctor of humanity). যিনি নিজের চেম্বার বন্ধ করে দিয়ে, হাসপাতালে তার কর্তব্যরত সময় পাড় করে, তিনি নেমে পড়তেন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সন্ধানে । তাদের বাসায় বাসায় গিয়ে সশ্রূষা প্রদান করতেন । ঘুমানো বা বিশ্রাম তার জীবন থেকে যেন হারিয়েই গিয়েছিল। এত সাহসী বীর যে নাকি একটি বার তার নিজের মৃত্যু ভয় করছেন না । তিনি অসহায়ত্বদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতারণ তথা মৃত্যুদেহের দাফনের বন্ধবস্ত পর্যন্ত করেছেন, নিউইয়র্কের এই ভয়াবহ কঠিন পরিস্থিতিতে । তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন, বাংলাদেশের এ দুঃসময়ে তাদের সাহায্য সহযোগিতায় তাদের পাশে দাঁড়াবেন । এহেন মহামানব এখনকার দিনে সত্যি বিরল । তাই তো নিউইৰ্য়াকবাসী তাকে "হিরো" উপাধিতে ভূষিত করেছে । ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকার সম্বন্ধে যেটুকু লেখা হয়েছে তা যৎসামান্য । ওনাকে নিয়ে লিখতে গেলে একটি বইয়ের সৃষ্টি হয়ে যাবে । সেনাবাহিনীগণ যারা দেশরক্ষায় মানুষের বন্ধু হয়ে পাশে থেকে সর্বদা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের আপামর জনসাধারণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যাদের নিকটে সময়ের যেন কোন ব্যবধান নাই । দিন রাতের কোন তারতম্য ছিল না । অক্লান্ত পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে তারা তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন । স্যালুট রইল এই বীর যোদ্ধাদের প্রতি। করোনা ভাইরাস নিপাত যাক্ । দূর হোক্ মানুষের এই করুন আর্তচিৎকার। সৃষ্টিকর্তার প্রতি করজোড়ে এই অনুরোধ রইল ।






Post a Comment

Previous Post Next Post