মানবতার জয় হোক, প্রসঙ্গ শিশু নির্যাতন

জ্যাষ্টিন গোমেজ :

মানুষের মধ্যে যে সমস্ত মানবিক গুণাবলীর অভাব একটা সমাজে নৈতিক অবক্ষয় ডেকে আনে সেগুলোর মধ্যে শিশু নির্যাতন অন্যতম। শিশুরা হল সুন্দরের প্রতীক, পবিত্রতার প্রতীক, নিসর্গ আনন্দের উৎস। প্রতিটি শিশুর নিরাপত্তা ও সঠিকভাবে গড়ে উঠার জন্য দরকার তার সাথে জড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর আদর-ভালবাসা-যথাযথ পরিচর্যা ও সঠিক দিক নির্দেশনা। এক কথায় একটা সুস্থ পরিবেশ ও নিরাপদ আশ্রয়। পরিতাপের বিষয় আমাদের দেশের অধিকাংশ দারিদ্র্য-পীড়িত পরিবার তাদের শিশুদের সুস্থভাবে বেড়ে উঠার উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারে না। এমনকি দারিদ্র্যের শতমুখী পীড়নে সন্তানের মুখে দুবেলা দুমুঠো আহারও তুলে দিতে পারে না। বাধ্য হয়ে তারা তাদের শিশু সন্তানকে উপার্জনমুখী কাজে লাগিয়ে দেয়। কিন্তু সেই কর্মস্থল শিশুদের জন্য কতটা নিরাপদ সেটা নিয়ে ভাবেনা কেউ। মূলত পরিবারে অধিক ছেলে-মেয়ে হওয়ার কারণে অসচ্ছল বাবা,মা, তাদের ছেলে, মেয়েদের ঠিকমতো খাবার-দাবার দিতে পারেন না ও অভাবি পরিবার তাদের ছেলে, মেয়েদের শিক্ষার কোন ব্যবস্থা করে দিতে পারেন না। ফলে দেখা যায় কি, বাবা-মা’র আর্থিক অভাবের কারণ শিশুরা অল্প বয়সেই শ্রমদিতে বাধ্য হয়। এবং যে কোন কাজে অল্প বেতনে শিশুরা নিয়োজিত হয়ে যায়। এছাড়াও আমাদের সমাজে এক ধরনের অসৎ লোক আছে যারা এই শিশুদের দিয়ে নানা অসৎ কাজ করান ও অসৎ কাজে লিপ্ত করেন। আবার সমাজের কিছু অসাধু চক্র আছেন যারা অর্থের লোভ দেখিয়ে শিশুদেরকে দূরে কাজে দেওয়ার কথা বলে বিদেশে পাচার করে দেয়। বিদেশে সেই শিশুদের দিয়ে উটের জকিন সহ নানা ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানো হয়। দেশের ভবিষ্যৎ ফুলের মতো শিশুদের মমতা আর ভালোবাসা দিয়ে সমাজের প্রতিটি নাগরিকের যেখানে আগলে রাখার কথা, সেখানে এই সমাজেরই কিছু বিকৃতমনের মানুষ তাদের ওপর চালাচ্ছে জঘন্য নির্যাতন। এমনকি ঘৃণ্য এই অপরাধের হাত থেকে মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। শুধু অপরিচিত ব্যক্তি নয়, পরিচিত, নিকটাত্মীয়, প্রতিবেশীর দ্বারাও শিশুরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আর যে ব্যক্তিরা শিশুদের ওপর এ ধরনের ঘৃণ্য নির্যাতন চালাচ্ছে তারা ভিন্ন বয়সীর কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত। এদের কেউ শিশুদের জোর করে, কেউ খাওয়ার বা খেলনার প্রলোভন দেখিয়ে নির্জন স্থানে নিয়ে এ অত্যাচার চালাচ্ছে। শুধুমাত্র ক্ষুধা, অভাব-অনটন, দারিদ্র্য, অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপের জন্যই আমাদের দেশের শিশুরা শ্রমসাধ্য কাজে নিয়োজিত হচ্ছে। 

আন্তর্জাতিক শিশু বিষয় আইন, এখন পৃথিবীর সব দেশে শিশু-অধিকার একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে বিবেচিত হয়েছে। জাতিসংঘ এ বিষয় শিশু-অধিকার সংক্রান্ত নীতিমালা প্রনয়ণ বা ঘোষণা করেছেন। জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশও এই সনদপত্রে স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। সে জন্য আমাদের দেশে শিশুদের উন্নয়ন ও নিরাপত্তার প্রতি বাংলাদেশের রাষ্ট্র সরকারের বিশেষ গুরুত্ব বা বিশেষ ভূমিকা পালন করা অতি জরুরী বা প্রয়োজন। শিশু অধিকারের আইনের আওতায় আঠারো বছরের নিচ পর্যন্ত বয়সী সকলকে শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। শিশু অধিকার আইনে স্পষ্ট লেখা বা উল্লেখ আছে যে কোন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, অর্থনৈতিকভাবে শোষণ করছে এবং শিশুদের ভবিষৎ অনিশ্চয়তার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। আমাদের দেশের শিশুদের সামাজিক উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করবে যেসব বিপদ থেকে আমাদের দেশের শিশুদের রক্ষা করতে হবে আর এ রক্ষার আমাদের দেশের রাষ্ট্রিয় সরকার ও সরকারের পাশাপাশি আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের সকল শিশুদের সকল প্রকার হয়রানি ও নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে হবে। আমাদের সকলকে লক্ষ্য রাখতে হবে শিশুদের যে কোন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে বিরত রাখতে হবে। আর এ বিষয়ে সরকারের শিশু মন্ত্রণালয়ে মনিটারিং ব্যবস্থা গ্রহন করা দরকার। আর আমাদের সকলকে শিশুশ্রমের ক্ষতিকর বিষয়গুলোর ব্যাপারে গণসচেতন বাড়াতে হবে। শিশু পাচারের ব্যাপারে সকলকে সচেতন হতে হবে। শিশু পাচারকারীদের কঠোর শাস্তি প্রধান দিতে হবে। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশে শ্রমবাজারে শিশুশ্রম একটি বিরাট অংশ জুড়ে আছে। তাই হঠাৎ করে শিশুশ্রম বন্ধ বা নিষিদ্ধ করা সম্ভব নয় সুতরাং এর জন্য বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে ।

মনে রাখতে হবে, আজকে যারা শিশু তারাই আগামীতে বড় হবে এবং সমাজের দায়িত্ব গ্রহণ করবে। সে জন্য তাদের কে নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে এবং তাদেরকে জাতির বড় ধরনের স্বার্থে যোগ্য নাগরিক হিসেবে বেড়ে ওঠার সুযোগ ও সুবিধা দিতে হবে।

পূর্ব প্রকাশকাল : দৈনিক জনকন্ঠ, পৃষ্ঠা : ৬, তারিখ : ২৩-৯-০১৭  


Post a Comment

Previous Post Next Post