‘শিশু শিক্ষার দারিদ্র্যতা’ বিমোচনে মায়ের ভূমিকা


শিশু শিক্ষার দারিদ্র্যতা বিমোচনে শিক্ষিত মায়ের ভূমিকা অত্যাবশ্যক। বর্তমানে শিশু শিক্ষার দারিদ্র্যতা বহুমাত্রিক দারিদ্র্যতার মধ্যে অন্যতম ও আলোচিত একটি বিষয়। যা সমাজে বহুমাত্রিক প্রেক্ষাপটে উন্নয়নের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে ক্ষেত্রে পরিবারের শিক্ষিত পিতা-মাতা এবং সদস্যদের শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য করণীয় ও দায়িত্ব অপরিসীম। যদিও একজন শিশুর শিক্ষার দারিদ্র্যতা বিমোচনে পরিবারে একজন শিক্ষিত মায়ের ভূমিকাই মূখ্য। একজন শিশুর মেধা ও মনন বিকাশে এবং সুশিক্ষায় শিক্ষিতকরণে শিক্ষিত মা অনন্য ভূমিকা পালন করে। আমাদের দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে শিশুদের হাতেখড়ি হয় মায়েদের বিশেষ তত্ত্বাবধানে। তবে সেই মা যদি নিজে শিক্ষিত হয়, তবে তা তার সন্তানের জীবনেও সুফল বয়ে আনে। কেননা, একজন শিক্ষিত মা-ই জানেন তার শিশুকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার প্রয়োজনীয়তা। শিক্ষিত মা একজন সচেতন ও দায়িত্বশীল ব্যক্তির পরিচয় বহন করে। কারণ একজন শিক্ষিত মা নিরক্ষর মায়ের চেয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার শিশু সন্তানকে শিক্ষিত করার তাগিদ বোধ করে থাকেন। পরিবারে শিশু শিক্ষার দারিদ্র্যতা বিমোচনে নিরক্ষর মায়ের চেয়ে একজন শিক্ষিত মা অধিক সচেতনতা ও বিচক্ষণতার সাথে শিশু সন্তানকে প্রথম শিক্ষার পাঠ পড়াতে ও বোঝাতে সক্ষম। শিশুদের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির পূর্বেই পরিবারে শিক্ষিত মায়েরা তাদের শিশু সন্তানকে বিভিন্নভাবে হাতেখড়ি দিয়ে থাকেন। যা পরবর্তীতে নিরক্ষর মায়ের শিশুর চেয়ে শিক্ষিত মায়ের শিশুর শিক্ষায় দ্রুত অগ্রগতি লাভে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। একজন শিক্ষিত মায়ের শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয় তার শিশু সন্তানেরা। কাজেই বলা যায়, শিক্ষিত মা-ই শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সকল প্রতিকূলতা দূর করে তার জীবনে শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারে। 
‘শিশু শিক্ষার দারিদ্র্যতা’ বিমোচনে মায়ের ভূমিকা


একজন শিশুর স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে শুধু পুষ্টিসম্মত খাবার ও পরিচর্যাই নয় বরং শিক্ষারও প্রয়োজন রয়েছে। এ ক্ষেত্রে একজন শিক্ষিত মা কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। শিক্ষিত মা পরিচর্যার পাশাপাশি শিশুকে শিক্ষাও দান করতে পারে। শিক্ষিত মায়েরা শিশুদের পড়াশুনা করতে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিয়ে থাকে। নিরক্ষর মায়েরাও অভাবের তাড়নায় নিরুপায় সন্তানদের পড়াশুনা না করিয়ে শ্রমের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যা শিশুদের শুধু ন্যূনতম শিক্ষা থেকেই বঞ্চিত করছে না বরং তাদের জীবন থেকে সুন্দর শৈশবও কেড়ে নিচ্ছে। কাজেই একজন মায়ের শিক্ষিত হওয়াটাও অত্যন্ত জরুরী। অন্যদিকে, নিম্নবিত্ত পরিবারের বেশিরভাগ শিশুরাই শিক্ষা থেকে বঞ্চিত ও অবহেলিত। শিশুদের শিক্ষিত হবার ইচ্ছে ও আহ্লাদ দারিদ্র্যতার বেড়াজালে পড়ে অপূর্ণই রয়ে যায়। এমনও কিছু পরিবার আছে যারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল কিন্তু শিক্ষার বিষয়ে গোড়ামী ও কুসংস্কার থাকার ফলে অনেকেই শিশুদের শিক্ষাদানে আগ্রহী নন। তাছাড়া দরিদ্র পরিবারের শিশুদের শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ খুবই ক্ষীণ। তাই এ ক্ষেত্রে শিশুদের শিক্ষাদানে মা-কেই উদ্যোগী হতে হবে। আর সেই উপলব্ধি থেকেই হয়ত নেপোলিয়ন বলেছিলেন, “আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দিব।” সত্যিকার অর্থেই শিক্ষিত ও আলোকিত জাতি গড়তে হলে, শিক্ষিত ও আলোকিত মায়ের অবদান অনস্বীকার্য। শিক্ষিত শিশুদের ওপরই নির্ভর করে জাতির সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ নির্মাণ। যতদিন শিশুরা নিরক্ষর থাকবে, ততদিন জাতি তথা দেশের আর্থিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। কাজেই শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিশুবান্ধব নীতিমালা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে। কেননা শিক্ষা দারিদ্র্যতাকে প্রতিনিয়ত জিইয়ে রাখার নেপথ্যে কাজ করছে নিরক্ষরতা। যা দেশ ও জাতির জন্য মোটেই মঙ্গলজনক নয়। তাই আসুন শিশু শিক্ষার পাশাপাশি মায়ের শিক্ষা জোরদারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে সচেষ্ট হই। 



Post a Comment

Previous Post Next Post