শিশুশ্রম নিরসন ত্বরান্বিত হোক

সমাজের নির্মম বাস্তবতার নামই হল শিশুশ্রম। দেশের অনেক শিশুরাই দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করছে। তাছাড়া পারিবারিক ও আর্থসামাজিক পরিস্থতির শিকার হয়ে কম-বেশি বাধ্য হয়েই নিজেদের নিয়োজিত করছে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। বয়স কম ও কর্মদক্ষতার ঘাতটির ফলে বিভিন্ন কলকারখানার কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন না করায় বিভিন্ন সময়েই নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে শিশুরা জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছে। কেউবা ইটের ভাটায়, কেউবা গার্মেন্টস্ সেক্টরগুলোতে শ্রম দিচ্ছে। এদিকে মেয়ে শিশুরা পেটের দায়ে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছে কিন্তু সেখানেও প্রতিনিয়ত অত্যাচার ও অমানবিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যায় যে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিশুরা শুধু মৌলিক অধিকার থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে না, বঞ্চিত হচ্ছে সুন্দর শৈশব থেকেও। প্রশ্ন থেকেই যায়, আমাদের আগামী প্রজন্ম ও ভবিষ্যত নিয়ে আমরা কতটুকু চিন্তিত? এ দেশের শিশুরা প্রতিনিয়ত বেড়ে উঠছে দারিদ্র্যতার মত সামাজিক সমস্যা ও পারিবারিক ও বিবিধ সমস্যার যুদ্ধ করে। নিজের ও পরিবারের দৈন্যদশা মেটাতে শিশুদের নামতে হচ্ছে নিষিদ্ধ পেশায়। কর্মসংস্থানগুলোও কোন সরকারি বিধি-নিষেধের নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই বিভিন্ন বয়সের শিশুদের নিয়োগ দিচ্ছে। অন্যদিকে, পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরাও নিরূপায় হয়ে অথবা বাধ্য হয়ে তাদের সন্তানকে স্কুলে পাঠানোর পরিবর্তে কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত করছে। তাছাড়া শ্রম অধিদপ্তর এর উদাসীনতা এবং অনিয়মিত পর্যবেক্ষণ তো রয়েছেই। মূলকথা হলো এসবের নেপথ্যে রয়েছে পারিবারিক দীনতা, অজ্ঞতা, লোভনীয়তা, অসচেতনতা এবং উদাসীন মানসিকতা ইত্যাদি। এসকল কারণেই দেশে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা এবং শিশুশ্রম উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে এসব কারণেই শিশুরা বিভিন্ন সময় ছোট-বড় মর্মান্তিক দূর্ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছে। অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হারাচ্ছে, গুরুতরভাবে আহত হচ্ছে, এমনকি মৃত্যুও হচ্ছে। জীবন সংগ্রামে হেরে গিয়ে সজীব ও প্রাণচঞ্চল শিশুরা অকালেই জীবন হারাচ্ছে। বর্তমান উন্নয়নশীল সমাজ যদি দেশের শিশুদের ন্যূনতম সুরক্ষিত জীবন ও সুন্দর শৈশব দিতে না পারে, তবে আগামী কেমন হবে তা অনুমেয়।

শিশুশ্রম নিরসনে ত্বরান্বিত হোক


দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে শিশুশ্রম নিরসন অত্যাবশ্যক। কেননা যে দেশের শিশুরা তাদের খেলাধূলা ও পড়াশুনার বয়সে বিভিন্ন কায়িক শ্রমে শৈশব অতিবাহিত করে, সে দেশ শিশুদের মৌলিক চাহিদা কতটুকু পূরণে সক্ষম তা প্রশ্নাতীত। তাছাড়া যেকোন দেশেই শিশুরা হলো দেশের সম্পদ ও আগামীর অগ্রদূত, কিন্তু যদি শিশুরা তাদের প্রাপ্য সকল সুযোগ-সবিধা থেকে বঞ্চিত হয় তবে তা কারো জন্যই সুফল বয়ে আনবে না তা নিশ্চিত। যে হারে প্রতি বছর শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে তা উদ্বেগজনক। এতে শুধু দেশের ভাবমূর্তি বিকৃত হচ্ছে না, আমাদের আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। শিশুশ্রম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে আমাদের পরিবার, সমাজ ও দেশের কলুষিত সংস্কৃতি যা শিশুদের ব্যবহারে উৎসাহ যোগাচ্ছে। সে কলুষিত সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে শিশুশ্রম নিরসনে তৎপরতা বাড়াতে সমাজ তথা সকলকেই দায়বোধের পরিচয় দিতে হবে। কেননা প্রয়োজনীয় আইন থাকা সত্ত্বেও শিশুদের অনাকাঙ্ক্ষিত ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে সংশ্লিষ্টতা দিন-দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই শিশুশ্রম নিরসনে শ্রেণী-বর্ণ ভেদে সকলকে ইতিবাচক সাড়া দিতে হবে। পরিবর্তনশীল আর্থসামাজিক বিষয়াদি বিবেচনায় রেখে শিশুদের জন্য সুন্দর ও শিশুবান্ধব দেশ গড়ে তুলতে উদ্যোগী হতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন শিশুশ্রমের ফলে শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠা ব্যহত না হয়। কাজেই আসুন শিশুশ্রম নিরসনে তৎপরতা বাড়াই। কেননা শিশুশ্রম শিশুরা নয়, রুখতে হবে আমাদেরকেই ।

জাসিন্তা আরেং

জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় থেকে

Post a Comment

Previous Post Next Post