পথশিশুদের প্রেমিক ও আশ্রয় হয়ে উঠি
অবহেলিত ও লাঞ্ছিত পথশিশুদের জীবনে মৌলিক অধিকার চর্চার যেমন অভাব তেমনি ভালবাসারও অভাব। তবে একটুখানি ভালবাসার ছোঁয়া বদলে দিতে পারে তাদের ভাসমান জীবন। ভালবাসাময় পরিচর্যা ও যত্ন পেলে পথের শিশুরাও দেশ ও জাতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। শহরের অলিতে-গলিতে, পথে-বস্তিতে অবহেলায় জীবন যাপন করছে হাজারো শিশু। যাদের অন্যান্য চাহিদার পাশাপাশি প্রয়োজন মানবিক ভালাবাসা ও সঠিক পরিচর্যা। সমাজের দরদী এবং দয়ালু হৃদয়বান মানুষদের ভালবাসার স্পর্শে নির্মল ও সরল মনের শিশুরা খুঁজে পেতে পারে নিরাপদ আশ্রয়। তাছাড়া ভালবাসার প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বিত্তবান লোকেরাও ভূমিকা রাখতে পারে পথশিশুদের জীবনে পরিবর্তন আনয়নে। রাজধানীর ফুটপাথ বা অলি-গলি দিয়ে চলার পথে পথশিশুদের সাক্ষাৎ পাওয়া শহুরে মানুষদের জন্য অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু শহরের ব্যস্ততার মাঝে সেসব সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের কথা চিন্তা করার ফুসরত কারোরই হয়ে ওঠে না। অন্যদিকে দারিদ্র্যতা, অসচেতনতা, পরিবার ভাঙ্গন, জলবায়ু পরিবর্তনের মত কারণসমূহ পথশিশুর সংখ্যা বৃদ্ধির নেপথ্যে অনবরত কাজ করছে। যদিও বর্তমানে আমাদের দেশে অনেক এনজিও ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলো পথশিশুদের সাময়িক সেবা দিয়ে থাকে যা কোনভাবেই পর্যাপ্ত নয়। আবার অনেকেই ব্যক্তিগত বা সমন্বিত উদ্যোগে অন্ন-বস্ত্র, চিকিৎসা, পড়াশুনার খরচ বহন করে থাকে কিন্তু তা পথশিশুদের ঘুরে দাঁড়াতে যথেষ্ট নয়। তাদের পথশিশু থেকে শিশুতে পরিণত করতে এবং সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে প্রয়োজন সমাজের সচেতন ব্যক্তিবর্গের কার্যকরী উদ্যোগ ও তা দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করা।
পথশিশুদের পথেই জন্ম ও জীবনধারণের নির্মম বাস্তবতায় শৈশব বলতে কোন সময় অতিবাহিত করার সুযোগ তাদের নেই। নিরক্ষরতা, অনিরাপত্তা, দারিদ্র্যতা ও অবহেলার জাঁতাকলে তাদের স্বপ্নগুলো আজ মৃতপ্রায়। ভালবাসার অভাবে আজ তারা ঝুঁকিপূর্ণ পেশা-বৃত্তির দিকে ঝুঁকে পড়ছে। যা তাদের মৌলিক অধিকারকেই খর্ব করছে এবং স্বাভাবিক জীবন যাপনকে ব্যাহত করছে। পথশিশুদের জীবনে সার্বিক পরিবর্তন আনতে হলে আমাদের ভালবাসাময় দৃষ্টিতে তাদের ঠাঁই দিতে হবে। যেন তারা অন্যান্য শিশুদের মত সুযোগ-সবিধা এবং যত্ন থেকে বঞ্চিত না হয়। বিশেষ করে, তারা যেন তাদের মৌলিক অধিকারটুকু চর্চা করতে পারে তা আমলে নিতে হবে। একমাত্র মায়া-মমতা এবং ভালবাসা দিয়েই পথশিশুদের আপন করে নেয়া সম্ভব। তাই নিজেদের সন্তানদের ভালবাসার পাশাপাশি পথশিশুদের ভালবাসার গুণটি চর্চা করাও আমাদের নৈতিকতার অংশ।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় যে, অনেকেই লোক দেখানোর অভিপ্রায়ে পথশিশুদের সাহায্য করে থাকে। যা অরুচিশীল ও নিকৃষ্ট মনুষ্যত্বের পরিচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের মন যেন আকাশের মতই উদার ও সীমহীন হয় সেটাই প্রত্যাশা। কেননা পথশিশুদের প্রতি সামান্য ভালবাসাও তাদের জীবনে বিরাট পরিবর্তন আনয়নে অনন্য ভূমিকা পালন করতে পারে। পরিশেষে সকলের নিকট এটাই প্রত্যাশা যে, ব্যক্তিগত কোন স্বার্থ নয় বরং তাদের প্রতি ভালবাসা থেকেই যেন কিছু করার অভিপ্রায় জাগ্রত হোক। তাই আসুন মনে-প্রাণে আমরা সকলেই পথশিশু প্রেমিক হয়ে উঠি যেন আমাদের ভালবাসার আশ্রয়ে পথশিশুরা খুঁজে পায় নতুন ঠিকানা। ভালবাসাময় এই নতুন ঠিকানায় বেড়ে উঠুক আমাদের সুন্দর শিশুরা।
লেখক: জাসিন্তা আরেং
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
পূর্বপ্রকাশ, সংখ্যা-০৫, ২০২০ সাপ্তাহিক প্রতিবেশী
Tags:
শিশু সমাচার