শৈশবে মাতৃভাষার চর্চা


শৈশব থেকেই মাতৃভাষার চর্চা করা একান্ত আবশ্যক। কেননা শিশুদের সাংস্কৃতিক জীবনের বৃক্ষ এবং এর শাখা-প্রশাখা বেড়ে উঠে শৈশবেই। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, যেকোন মাতৃভাষাই নিজ সংস্কৃতির ধারক এবং বাহক। সেই সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে তা চর্চা এবং অনুশীলনের কোন বিকল্প নেই। শৈশবে মাতৃভাষার সঠিক চর্চা এবং অনুশীলন অনেকাংশেই নির্ভর করে অভিভাবকের ওপর। যদি শৈশব থেকেই যদি মাতৃভাষা চর্চার বিষয়টি জোর না দেয়া হয়, তবে সেই শিশুটি মাতৃভাষার গুরুত্ব কখনও উপলব্ধি করতে পারবে না। মাতৃভাষা চর্চা শিশুর নিজ সংস্কৃতির সাথে এক ব্যক্তিগত আত্মিক সম্পর্ক সৃষ্টি করে। সময়ের পরিক্রমায় যেমনিভাবে শিশুটি বেড়ে উঠে, তেমনিভাবে সংস্কৃতিও বিকশিত হতে থাকে। মাতৃভাষা চর্চার মাধ্যমে শুধুমাত্র সংস্কৃতির বিকাশই নয় বরং ব্যক্তিচিন্তারও চর্চার সুযোগ সৃষ্টি হয়। শৈশবে মাতৃভাষার চর্চা শিশুদের চিন্তাচর্চাকে আরো বেশি আন্দোলিত করে এবং উৎসাহিত করে। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে, দেশীয় পটভূমিতে আদিবাসিদের মাতৃভাষা অবহেলিত এবং অনুশীলনের বড়ই অভাব। তাছাড়া, জাতীয় ভাষা চর্চাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে আদিবাসীদের মাতৃভাষা চর্চায় ভাটা পড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, শিক্ষিত মা-বাবারা শিশুদের ইংরেজী মাধ্যমে পড়ানোর দিকে দিন-দিন ঝুঁকে পড়ায় শিশুরা ইংরেজীর পাশাপাশি মাতৃভাষা চর্চার সুযোগ তুলনামূলক কম পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সচেতনতা এবং কার্যকরী উদ্যোগ প্রত্যাশা করা যায়। যেন শিশুরা আন্তর্জাতিক বা অন্যকোন ভাষার পাশাপাশি মাতৃভাষা নয়, মাতৃভাষার পাশাপাশি অন্যান্য ভাষার চর্চা করে।  

 শৈশবে মাতৃভাষার চর্চা


শৈশব থেকে মাতৃভাষার অনুশীলন ও তা চর্চায় শিশুদের উৎসাহিত করতে হবে। যদি মাতৃভাষা চর্চা না করা হয়, তবে অচিরেই তা বিলুপ্তির সঙ্কট দেখা দিতে পারে। তাই নিজের সংস্কৃতি সম্পর্কে নিজেদের এবং শিশুদের মাতৃভাষার জ্ঞান চর্চা এবং তা রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। কেননা ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া মানে নিজ সংস্কৃতির বিলপ্তি। মাতৃভাষা আপন সংস্কৃতি ও সত্তার সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। তাই মাতৃভাষার গুরুত্বকে উপলব্ধি করতে শিশুদের সাহায্য করতে হবে এবং তা চর্চার পরিধি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে। শিশুদের মনে মাতৃভাষা চর্চা ও মাতৃভাষায় জ্ঞানচর্চা ও চিন্তা করার দায়িত্ববোধ জাগ্রত করতে হবে। মাতৃভাষার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে না পারলে শিশুরা কখনো সৃজনশীলতা এবং সংস্কৃতি চর্চায় মনোযোগি হতে পারবে না। শিশুরা অনুকরণপ্রিয়, তাই অভিভাবকদেরও মাতৃভাষা চর্চা এবং মাতৃভাষায় শিল্প-সাহিত্য চর্চা ও বিকাশে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। যার পরিপ্রেক্ষিতে শিশুরা শৈশবেই মাতৃভাষা বিকাশে ও মাতৃভাষার মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশে অনুরাগি হয়ে ওঠবে।  

শৈশবের যেকোন শিক্ষাই তুলনামূলক বেশি স্থায়ী হয়। তাই মাতৃভাষার প্রতি শিশুদের আগ্রহী করে তোলার উপযুক্ত সময় হলো শৈশব। তাছাড়া যেকোন ভাষাই চর্চার অভাবে মৃতপ্রায় হয়ে যায়। এমনিভাবে অনেক মাতৃভাষাই সময়ের গহ্বরে বিলীন হয়ে গেছে। তাই আমাদের মাতৃভাষাকে চর্চার মাধ্যমে টিকিয়ে রাখতে হবে। মাতৃভাষাকে টিকিয়ে রাখার অর্থই হলো নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখা। তাই, শৈশব থেকেই মাতৃভাষার সাহিত্য চর্চা, পড়া-লেখার অভ্যাস গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন। সেইসাথে প্রয়োজন সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণ, অনুপ্রেরণা ও চর্চার মনোভাব। কেননা মাতৃভাষার সঠিক ব্যবহার এবং বিকাশই আমাদের জাতীয় সত্তাকে উন্নীত করতে পারে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। কাজেই শৈশব থেকেই শিশুদের মধ্যদিয়ে বিকশিত হোক মাতৃভাষা এবং এর নিয়মিত অনুশীলনের মধ্যদিয়ে সমৃদ্ধ হোক আগামীর বাঙালি সংস্কৃতি। সর্বোপরি, মাতৃভাষার সঠিক অনুশীলনের মধ্যদিয়ে শিশুরা হয়ে উঠুক আরো বেশি চিন্তাশীল ও মননশীল এটাই প্রত্যাশা॥

লেখক: জাসিন্তা আরেং
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে



Post a Comment

Previous Post Next Post