প্রবীণদের স্বপ্ন নবীনদের অনুপ্রেরণা
চক্রাকার মানব জীবনে বার্ধ্যক্য এক চরম বাস্তবতার নাম। ব্যক্তিজীবনে সকলেই পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে বার্ধ্যক্যে উপনিত হয়। জন্ম হলে বাধ্যক্যকে বরণ করে নিতেই হবে। জীবনের একটা সময় এসে কর্মক্ষম মানুষ অক্ষম হয়ে পড়ে, পরনির্ভরশীল হয়ে পড়ে পরিবারের সদস্যের উপর কিন্তু সমাজে ও পারিবারিক জীবনে বয়োজ্যেষ্ঠদের কতখানি গুরুত্বের সাথে মূল্যায়ণ করা হয় সেটাই মূল বিষয়। তবে বাস্তবতা এই যে, যৌবনের বন্দনা গান করা সকল যুগের মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। প্রবীণেরা বয়সের ভারে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে ঠিকই কিন্তু অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান দ্বারা তারা তাদের পারিপার্শিকতা বিচার করে। শারীরিকভাবে দুর্বল হলেও তারা অভিজ্ঞতার আলোকে নবীনদের কাছে হতে পারে সঠিক পথে চলার সদুপদেশদানকারী ও সুপরামর্শদাতা। যৌবনদীপ্ত নবীনদের গুরুত্ব দিতে গিয়ে যেন যারা প্রবীণ তাদেরকে অবহেলা না করি। পরিবার, আপনজন ও সমাজের কাছে যেন তারা বোঝাসম না হয়ে পড়ে। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে যেন তারা নবীনদের দ্বারা উপেক্ষিত না হয়। পরিচিত পৃথিবী ও আপনজনের পরিবর্তে যেন বিষন্নতাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে না হয়। তারা যেন নবীনদের অনুপ্রেরণা হয়ে বৃদ্ধ বয়সেও বেঁচে থাকার মানে খুঁজে পেতে পারে সে চেষ্টাই করতে হবে।
প্রবীণদের স্বপ্ন নবীনদের অনুপ্রেরণা
দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রবীণেরা সমাজের কাছে বরণীয়। প্রবীণ ব্যক্তিত্বরা নবীনদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাছাড়া, প্রবীণদের সামাজিক মর্যাদা অন্যান্য নাগরিকের চেয়েও বেশি। কিন্তু বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রবীণেরা সামজিক মর্যাদা, সুযোগ-সুবিধা হতে বঞ্চিত। বর্তমানে নবীনেরা আধুনিক চিন্তাধারার অধিকারী। যার ফলে প্রবীণদের ধ্যান-ধারণার বিশাল পার্থক্য লক্ষণীয়। কিন্তু তাই বলে প্রবীণেরা নিতান্তই অবহেলার পাত্র নয়। প্রবীণদের অভিজ্ঞতা এবং উপদেশ আমাদের দেশ, সমাজ ও পরিবারের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী ও ফলপ্রসু। তার আত্মনির্ভরশীল নয় বলে যেন আমরা তাদের অবদানকে ভুলে না যাই। এ ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি উপলব্ধি করাও অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রবীণদের অক্ষমতার ফলে যেন পারিবারিক বন্ধন যেন শিথিল না হয়। আগামী দিনে সফলভাবে অগ্রসর হতে হলে প্রবীণদের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। তাদের প্রতি আমাদের উদাসীনতা যেন আমাদের সফলতার পথে প্রধান অন্তরায় হয়ে না দাঁড়ায়। কেননা পুরানো ধ্যান-ধারণার ও চিন্তুার সংমিশ্রণেই কিন্তু নতুন কিছুর উদ্ভব ঘটে। তাই বলা যায় যে, প্রবীণেরা নবীনদের কাছে অনুপ্রেরণার অসীম উৎস।
বর্তমান সমাজে বয়স বৈষম্যের শিকার প্রবীণদের সুরক্ষা ও অধিকার রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সকলের। প্রবীণদের সুরক্ষা ও অধিকার রক্ষা যেন শুধু মুখে চর্চা নয়, এর কার্যকারীতাও নিশ্চিত করাও আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। প্রবীণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও লব্ধ জ্ঞান ছাড়া নতুন সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। আধুনিক সমাজে প্রবীণদের পিছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। প্রবীণদের সুচিন্তিত পরামর্শ গ্রহণ ও নিরলস পরিশ্রম এবং অবদানকে স্বীকৃতি প্রদানের মধ্য সমাজকে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তাই বার্ধ্যক্যের বিষয়টি হেয় চোখে দেখার মানসিতাও পরিবর্তন করতে হবে। প্রবীণ বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের মানসিক, শারীরিক ও পারিপার্শিক বিষয়াবলি তদারকি করাও আমাদের দায়িতে¦ও মধ্যে পড়ে। বিশ^ব্যাপী ক্রমবর্ধমান প্রবীণদের সুরক্ষা, কল্যাণ ও অধিকার নিশ্চিত করতে বেসরকারী ও সরকারি ও সংশ্লিষ্ট সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকরী ভূমিকা পালনও কাম্য। সর্বোপরি, তারা যেন জীবতাবস্থায় মর্যাদার সাথে জীবনধারণে কোন সমস্যার সম্মুখিন না হয় এটাই সকলের প্রত্যাশা। নবীনেরা যেন প্রবীণদের দেখা স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে পারে এটাই তাদের প্রত্যাশা॥
লেখক: জাসিন্তা আরেং
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
Tags:
প্রবীণ সমাচার