ধর্মীয় অনুশাসনের ঘাটতি, সারাজীবনের জন্যে দায়বদ্ধতা

ধর্মীয় অনুশাসনের ঘাটতি, সারা জীবনের জন্যে দায়বদ্ধতা


ধর্মীয় অনুশাসন মানুষকে চরিত্রবান করে তুলে। মানুষের মধ্যে বিবেক জাগ্রত করে। খারাপ পথে যাওয়া ও চলার ব্যাপারে ভয়-ভীতির সৃষ্টি করে। বিবেকের শাসনে শাসিত হওয়ায় অভ্যস্ত করে ধর্মীয় অনুশাসন। মানুষের মধ্যে মায়া, ভালবাসা, সহনশীলতা তৈরি করে। তাই ধর্মীয় শিক্ষা প্রত্যেক স্তরে চর্চা করা উচিৎ।  ধর্মই মানুষকে নৈতিক শিক্ষা দেয়। আর সব ধর্মেই এই শিক্ষা রয়েছে। ধর্মীয় মূল্যবোধ যাদের থাকে তারা ইয়াবা, ফেনসিডিল কিংবা এইধরনের মাদক সেবন করতে পারে না। বেপয়োরা জীবন যাপন করতে পারে না।
ধর্মীয় অনুশাসনের ঘাটতি, সারা জীবনের জন্যে দায়বদ্ধতা


এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, ধর্মীয় অনুশাসন, সামাজিক নৈতিকতা, পারিবারিক সংস্কৃতি, স্তরভিত্তিক সামাজিক বৈষম্য ও ভুলশিক্ষা এসব কিছু এই প্রজন্মের কাছে জগাখিচুরি হয়ে যাচ্ছে। আর এইভাবে নতুন কোন এক বাংলা সংস্কৃতির জন্ম নিচ্ছে। এবং এটা লক্ষ্যহীন এক জাতির পরিচয় বহন করছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এখানে অসংখ্য মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের আধুনিক ও ইংরেজী মিডিয়াম শিক্ষার নামে শিশুকাল থেকেই ধর্মীয় শিক্ষার বাইরে রাখা হচ্ছে। আর পরিবারের মধ্যে ধর্মীয় অনুশাসনের অনুপস্থিতি ও শিথিলতাও নতুন কথা নয়। বিশ্বের সাথে তাল মিলানোর নামে অনৈতিক সম্পর্ক, পরকীয়া, পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, বিত্ত-বৈভবে গা ভাসিয়ে দেয়া, অতি বিলাসী পোশাক, উগ্র সাজসজ্জা, বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে অবাধ মেলামেশার দৃশ্য ও কাহিনী নিত্যদিনের দর্পণ। ফল দাঁড়াচ্ছে স্বকীয়তা এবং অধিকাংশ মানুষের নিজস্ব সংস্কৃতি চাপা পড়ে যাচ্ছে। সমাজ ও পরিবার থেকে ধর্মীয় শিক্ষা ও শিক্ষার প্রভাব ক্রমেই কমে আসার কারণ মূলত মানুষের বিশেষ করে তরুণ সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের জন্ম দিচ্ছে। আর তাই তো ফেনসিডিল, গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবা, পেথিডিন ইত্যাদি নেশায় আসক্ত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বন্ধুত্বের নামে অবাধ যৌনাচার যেন নিছক খেলার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও একটু ভালভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, তরুণ সমাজের মুখের ভাষা বদলে যাচ্ছে। স্মার্টনেসের নামে যোগ হচ্ছে কিছু উদ্ধত শব্দের অপ্রয়োজনীয় প্রয়োগ। নিয়ম ভাঙ্গার প্রবণতা, রাত জাগার প্রবণতা, নিজের ঘরে একা থাকার প্রবণতা। সন্তানরা রীতিমত তাদের বাবা-মাকে উপেক্ষা করে নির্লিপ্ত মূল্যবোধহীন এক জীবন কাটাচ্ছে।  


মূল্যবোধ ধারণাটি আপনা-আপনি তৈরি হয় না। আর আপনা-আপনি কিছুই সৃষ্টিও হয় না, উদ্ভব করতে হয়। আদিম যুগে পেশি শক্তিবল যেমন অস্থিশীলতা দেখা দিয়েছে আর তার দমনে সমাজকে টিকিয়ে রাখার জন্য একটি ধারণার দরকার হয়েছিল। আর মূল্যবোধ হল সেই অতি উন্নত একটি ধারণা। এর প্রয়োগে মানবজাতিকে ভেঙ্গে পড়ার হাত থেকে বাঁচায়। মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে সাংস্কৃতিক অস্থিতিশীলতা। নিয়ন্ত্রণহীন আকাশসংস্কৃতির কুপ্রভার, ইন্টারনেটসহ আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার, মাদকের অতি সহজলভ্যতা তরুণ সমাজকে বিপথে নেয়ার ক্ষেত্রে মারাত্মক উপকরণ হিসেবে কাজ করছে। এক্ষেত্রে স্বীকার করতে হবে, ধর্মীয় শিক্ষা এবং মূল্যবোধ রক্ষাকবচ (প্রটেকশন ওয়াল) হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, আজ ধর্মীয় শিক্ষা ও মূল্যবোধ সমাজে শুধু গুরুত্বহীনই নয়, সমাজ থেকে তা বিদায় নেয়ার পথে। এই অবক্ষয়ের হাত খেকে সমাজকে রক্ষা করতে হলে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। আর পরিবার থেকেই সেটা শুরু করতে হবে। পরিবারের দায়িত্ব সবচাইতে বেশি। শুধু টাকা-পয়সা দিয়ে সন্তানকে মানুষ করা যায় না। দিতে হয় স্নেহ-ভালবাসা। তাকে নৈতিকতা অর্জনের পথে চলার জন্য বোঝাতে হবে। উদ্বুদ্ধ করতে হবে। পরিবারই হচ্ছে এখানে মূল বিষয়। নিয়ন্ত্রণ পরিবার খেকেই থাকতে হবে।  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার ঘাটাতে হবে। আর এই শিক্ষাকে কোন স্তরের গন্ডিতে আবদ্ধ রাখা যাবে না। মাদকের সহজলভ্যতা বন্ধ করতে হবে। পিতা-মাতাকে সন্তানের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, অবহেলার ত্রুটিই কিন্তু সারাজীবনের জন্যে দায়বদ্ধতাও হতে পারে। সন্তানকে মানুষ করতে হবে। ধর্ম বিদ্বেষ বন্ধ ও সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। 



 লেখক : জ্যাষ্টিন গোমজে

Post a Comment

Previous Post Next Post