নারীরা ভীতসন্ত্রস্ত



সমাজে প্রাপ্য মর্যাদা, সম্মান ও স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা নিয়ে বেঁচে থাকা বসবাসরত সকলেরই অধিকার। সেখানে পুরুষ ও নারীর স্বাধীনতা, সম্মান এবং নিরাপত্তার কথা ভিন্নভাবে প্রসঙ্গে আনার প্রয়োজনই নেই । কারণ পুরুষ এবং নারী উভয়ই সম নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও মর্যাদার লাভের অধিকারী। কিন্তু এ সমাজের কতিপয় নিকৃষ্ট শ্রেণির লোকেরা সেই মর্যাদা, সম্মান ও স্বাধীনতাকে প্রতিনিয়ত ক্ষুন্ন করে চলেছে। আজ নারীদের প্রতি তাদের পশুসমতুল্য আচরণ এবং সম্মানহানী করার মত ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হচ্ছে। পুরুষশাসিত সমাজ ব্যবস্থায় বর্বরতার গহীন জলে নারীরা আজ কচুরীপানার মতই ভাসমান জীবন-যাপন করছে। তাদের অস্তিত্ব, সম্মান ও স্বাধীনতা আজ পরম সঙ্কটের মুখে। নারীর স্বাধীনতাকে প্রতিনিয়ত খর্ব করে চলেছে এ সমাজে বসবাসরত কতিপয় মানুষ নামের নিকৃষ্ট প্রাণী। সেসব নরপশুদের কাছে নারীরা নিতান্তই ভোগের বস্তুুতে পরিণত করেছে। যাদের খারাপ চিন্তা-ভাবনা ও অনিয়ন্ত্রিত শারীরিক আকাক্সক্ষা ও ভোগের শিকার হচ্ছে নারীরা। অন্যদিকে নারীকে শুধুমাত্র ধর্ষণ করেই নরপশুরা থেমে নেই বরং তাদের হত্যা করে কেড়ে নেয়া হচ্ছে লড়াই করে বেঁচে থাকার প্রত্যাশাটুকু । প্রাণ কেড়ে নেয়ার সাথে-সাথে ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে নিজের প্রতি অন্যায়ের ন্যায্য বিচার চাওয়ার অধিকারকে। ধর্ষিতা হত্যা ও ঘৃণ্য কাজকে ধামাচাপা দেয়ার মত প্রচেষ্টার মাধ্যমে কৃত পাপ হতে নিস্তার পেতে চায় বর্বরতা ও পশুত্বের দাসেরা। সম্প্রতি চলন্ত বাসে নার্স তানিয়াকে গণধর্ষণ এবং নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা সেই বর্বরতারই জলন্ত উদাহরণ। যার ফলে সারাদেশ প্রতিবাদে উত্তাল, মানববন্ধন ও পথ-অবরোধ অব্যাহত রয়েছে। প্রতি বছর ঘটে যাওয়া এমন অনাকাক্সিক্ষত ধর্ষণের ঘটনা আমাদের হৃদয়কে বির্দীণ করে। দেশে কঠোর আইনী ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বাস্তবিকতার রূপ পাচ্ছে, আটককৃত অপরাধীরা প্রাপ্য সাজা পাচ্ছে না যা সত্যিই অনুশোচনীয় এবং লজ্জাজনক। এর ফলশ্রুতিতে প্রচলিত সমাজে নারীদের নিরাপত্তা হয়ে উঠেছে মুখ্য আলোচ্য বিষয়। 
নারীরা ভীতসন্ত্রস্ত 

নারীদের নিরাপত্তা জোরদার করা যেকোন রাষ্ট্রেরই অন্যতম নৈতিক দায়িত্ব। বর্তমানে শিক্ষা-ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, গণপরিবহণ, ফুট-পাথ, রাস্তা-ঘাট এবং নিজ-নিজ কর্মক্ষেত্রেও নারীরা শিকার হচ্ছে শ্লীনতাহানী ও পাশবিক নির্যাতনের। সমাজের মুক্ত কারাগারে বন্দী নারীরা নিয়ত নিজের সম্মান, মর্যাদা ও স্বাধীনতাকে অচীরেই হারাচ্ছে। নিজ এলাকা, নিজ দেশ এবং নিজের মানুষের মাঝে থাকার পরও নারীর মনে নিরাপত্তাহীনতা ও সংশয় উঁকি দেয়। রাস্তায় বেরুলেই নারীরা শিকার হচ্ছে নানান সমস্যার সম্মুখিন। এমন বর্বরতা ও অমানবিকতার এই হিংস্র রুপ দেখে নারীসমাজ আজ ভীষণভাবে শঙ্কিত ও ভীত। যদি কতিপয় লোকের ঘৃণ্য কর্মযজ্ঞ এভাবেই চলতে থাকে, তবে নারীরা কখনো নিজের স্বাধীনতা  সঠিকভাবে চর্চা করতে পারবে না। নারীরা তাদের সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে যদি বেঁচে থাকতে না পারে, তবে সে জীবন মূল্যহীন। নারীদের নিরাপত্তা জোরদার ও তা ফলপ্রসুভাবে নিশ্চিত করা বাঞ্ছনীয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নারীদের শ্রেণি-পেশা ও জাত বিভেদের উর্ধ্বে গিয়ে চিন্তার প্রতিফলন ঘটানোও দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। বর্তমানে দেশে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে যে অস্থিরতা ও শঙ্কা বিরাজ করছে তা অনতিবিলম্বে নিরসন ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। সমাজে নারীরা যেন সুষ্ঠু-সুন্দর পরিবেশে ও নিরাপদে জীবন-যাপন করতে পারে তা নিশ্চিত করা আমার, আপনার এবং সকলের নৈতিক দায়িত্ব। এ সমাজে সেসকল পুরুষের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি ও নৈতিকতায় আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কেননা তাদের সহযোগীতা, সক্রিয় অংশগ্রহণই পারে আমাদের মহৎ লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে যা তাদের ভাসমান জীবনে কিনারার সন্ধান দিতে পারে। তাই আসুন দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে নারীদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার অধিকার সংরক্ষণ করি এবং তা চর্চায় সম্মিলিতভাবে প্রসারিত করি সহযোগীতার হাত । 

লেখক : জাসিন্তা আরেং
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে

Post a Comment

Previous Post Next Post