ভালবাসা হল বিশ্বাসের সম্পর্ক
জ্যাষ্টিন গোমেজ : যে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি অতিরিক্ত স্নেহ প্রায় সময় খুবই আনন্দদায়ক হতে পারে। এমন কি কোনো কাজ কিংবা খাদ্যের প্রতিও। আর এই অতি আনন্দদায়ক অনুভূতিই হলো ভালোবাসা। পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর সম্পর্ক হচ্ছে ভালোবাসার সম্পর্ক। ভালোবাসার কাঁধে ভর করেই দাঁড়িয়ে থাকে একেকটি সম্পর্ক। আর তাতে আস্তর হিসেবে প্রলেপ পরে বিশ্বাসের আর অনুভূতির। এভাবেই জুড়ে থাকে ভালোবাসা জগত-সংসারে। ভালোবাসা, যা কখনো লুকিয়ে রাখা যায় না। সবাই ভালোবাসে, সবাই প্রেমে পড়ে। যদিও সময় ও পরিবেশের ক্ষেত্রে এর প্রকাশভঙ্গি একরকম হয় না। এটি হল একটি মানবিক অনুভূতি এবং আবেগকেন্দ্রিক অভিজ্ঞতা। বিশেষ কোন মানুষের জন্য স্নেহের শক্তিশালী বহিপ্রকাশ। খুবই আশ্চর্য লাগে যখন দেখা যায় এই ভালবাসার জন্য কেউ তার পরিবার-পরিজন ত্যাগ করে, বন্ধুদের ত্যাগ করে। ভালবাসার শক্তি আসলে অপরিসীম। তা না হলে সবচেয়ে কাছের মানুষদের কিভাবে ত্যাগ করা যায়!
বর্তমানে এটি এখন খুব বেশিমাত্রায় লক্ষণীয় যে ভালবাসার গভীরতা আজ আর আগের মতো নেই। যেটুকু ভালবাসা দেখা যায় তাও নিজের স্বার্থের। বয়ফ্রেন্ড কিংবা গার্লফ্রেন্ড থাকা আজ একটা স্ট্যাটাস। ফলস্বরূপ ভালবেসে বিয়ে করে অতি দ্রুত বিচ্ছেদ হওয়া যেন অতি স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক ব্যাপার হয়ে গিয়েছে। ঠিক কোথায় যেন আমরা সবাই ধীরে-ধীরে নিমজ্জিত হয়ে যাচ্ছি। যেখানে আমাদের ভালবাসা, বিশ্বাস, আস্থা সব হারিয়ে যাচ্ছে। তাই তো ইংরেজ সাহিত্যিক শেকস্পীয়ার যথার্থই বলেছিলেন, “সবাইকে ভালবাস, বিশ্বাস করে অল্প কয়েকজনকে।” আজ কালকার প্রেমে পড়ার কাহিনী শুনলে দেখে যায় তারা কখনও মন দেখে একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়নি। তাদের প্রেমে পড়ার ইতিহাস থেকে দেখা যায় কেউ কোন অনুষ্ঠানে গিয়েছে সেখানে প্রথম দেখাতেই প্রেম। কিংবা একই সাথে লাইব্রেরিতে পড়াশুনা করে সেই থেকেই প্রেম। কিংবা অজানা মোবাইল থেকে ম্যাসেজ/ভয়েস শুনে প্রেম। কিংবা সামান্য আকর্ষণ থেকে জন্ম নেয় ভালবাসা যা সত্যিকার অর্থে দীর্ঘস্থায়ী নয়। কেননা সত্যিকারের ভালবাসা এভাবে গড়ে ওঠে না। সত্যিকারের ভালবাসা সেতো অনেক সাধনা ও ত্যাগ এর ফল। আর এখন এ ত্যাগ ও সাধনার স্থানে স্থান করে নিয়েছে দেহলালসা ও নিজ স্বার্থ হাসিল। এমনকি নির্মম বর্বরতারও পরিচয় পাওয়া গিয়েছে। স্বার্থসিদ্ধির চরম অভিব্যক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে এটি। যার ফলে টিকে থাকছে না কোন সর্ম্পক দীর্ঘ সময় ধরে। সম্পর্ক তৈরি করা যত না সহজ, সেটি রক্ষা করা তার চেয়েও অনেক বেশি কঠিন। ছোট একটি ভুলই একটি সম্পর্ক শেষ করে দেয়। আর সম্পর্কের এ টানাপোড়নে দুই পক্ষই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন। আর হয় সেটি মানসিক দিক দিয়ে।
ভালোবাসার মূল ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস। কারণ সত্যিকারের ভালোবাসায় বিশ্বাসের কোনো কমতি থাকে না। প্রেমে পড়া কিংবা প্রেম করা যতটা সহজ, প্রেমের সম্পর্কটি টিকিয়ে রাখা কিংবা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ততটা সহজ নয়। শুধু আবেগ নয়, প্রয়োজন পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, দায়িত্ববোধ, ও বিশ্বাস। সম্পর্কে তখনই সমস্যা দেখা দিতে থাকে, যখন একজন ভেবে নেন যে তার সঙ্গী ঠিক তার মতো করেই ভাবছেন। আর উল্টোটা হলেই তখন তৈরি হতে থাকে অভিমানের পাহাড়। কিন্তু দিনের পরে দিন এরকম চলতে থাকলে, কয়েকদিন পড়ে দেখা যায় যে, সম্পর্কের দাড়িপাল্লায় প্রেমের থেকে পাল্লা ভারী অহং বোধ এবং ঘৃণার। তখন সম্পর্কের মধ্যে ইতি টানার প্রশ্ন জাগে এভাবে চলে আসে দূরত্ব। এর এই দূরত্ব থেকেই সম্পকের্র ভাঙন।
তাই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্যে প্রয়োজন একটু ভালো করে কথা বলা। মতামতের গুরুত্ব দেয়া ও পছন্দের অপছন্দের খোঁজ-খবর রাখা। এগুলো সম্পর্ককে আরও বেশি গভীর করে তোলে। তাই যতোটা সম্ভব ভালো ব্যবহার করাই শ্রেয়। এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে এগুলো যেন আবার কৃত্রিম না হয়। সবকিছুর উৎসস্থল যেন হয় আন্তরিকতা থেকে। মনে রাখতে হবে আদর্শিক কনসেপ্ট এর মিল থাকলে ভালবাসার মধ্যে বিশ্বাস তৈরি হয়, একে অন্যের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত হয়। একটা নির্দিষ্ট আইডিওলজিকে প্রতিষ্ঠা করতে দুইজনের আপ্রাণ চেষ্টা ভালবাসার গভীরতা আরো বাড়িয়ে দেয়। একটি সম্পর্ক চারা গাছের মত। একটি গাছকে যেমন যত্ন করে বড় করে তুলতে হয়। ঠিক তেমনি সম্পর্কের ক্ষেত্রেও একটু যত্ন, বিশ্বাস আর অনেকখানি ভালোবাসার প্রয়োজন।
ভালবাসাহীন পৃথিবীতে কেউই চাই না বাঁচতে। সবাই চায় একটুখানি জীবন, যেখানে আস্থা, আবেগ, ভালবাসা আর বিশ্বাস নতুন করে প্রাণে জোয়ার যোগাবে। জীবনে দুঃখ আসবে, দুর্দশা আসবে, বাঁধা আসবে, ও বিপত্তি আসবে কিন্তু তাতে কি! ভালবাসার শক্তি সব বাঁধা ভেঙ্গে দেয়। শেখায় নতুন করে বাঁচতে। তাই আমাদের উচিত সংকীর্ণ ভালবাসাকে আকাশের মত উদার করে কার্পণ্যতাকে দূর করা। বিখ্যাত লেখক ডেল কার্নেগি লিখেছিলেন, “পৃথিবীতে ভালবাসার একটি মাত্র উপায় আছে.... সে হল প্রতিদানের আশা না করে ভালবেসে যাওয়া।” আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত আদর্শিক কনসেপ্ট, আউটলুক নয়।
Tags:
জীবন