শিশুবান্ধব পরিবেশ


বর্তমান বিশ্বে সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষা ও গড়ে তোলা নিয়ে কম-বেশি সকলেই উদ্বিগ্ন। তাছাড়া তারও অধিক উদ্বিগ্নের কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে শহরে বেড়ে্ উঠা শিশুরা। কেননা, শহরে বসবাসরত শিশুরা সুষ্ঠু-সুন্দর শিশুবান্ধব পরিবেশ থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত। বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় বসবাসরত ছেলেমেয়েদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই অধিক এবং তাদের বয়স অনুর্ধ্ব আঠারো। কারো-কারো জন্মের পর থেকেই ঘরের বা ছাদের সীমাবদ্ধ জায়গার মধ্যেই শৈশব কেটেছে। তাছাড়া পড়াশুনার ভীষণ মানসিক চাপতো আছেই। সারাদিন স্কুল-কোচিং ও প্রাইভেট টিউশনের মধ্যেই চক্রাকারভাবে তারা ছেলেবেলা অতিবাহিত করছে। তাছাড়া, শহরের বদ্ধ পরিবেশে খেলাধুলার পরিবেশ না থাকায় সমবয়সী ছেলেমেয়েদের সাথে মেলামেশার সুযোগ কম পেয়ে থাকে। তারা ঘরোয়া খেলাধুলা, ডিজিটাল গেমস, মোবাইল, ট্যাব, টেলিভিশন ইত্যাদির মাঝেই তাদের শৈশব কাটে। এমনকি যারা খেলাধুলা করতে আগ্রহী তাদের প্রায়ই দেখা যায় শহরের অলি-গলিতে, বাড়ির ছাদে ক্রিকেট খেলতে। সকলের সাথে খেলাধুলা, মেলামেশা ও গল্প-গুজবের মাধ্যমে একে-অন্যের মধ্যে একটা মধুর সম্পর্ক গড়ে ওঠে।  

শিশুবান্ধব পরিবেশ 


শহরের পিতামাতারা অধিকাংশই কর্মজীবি হওয়ার ফলে সন্তানদের বেড়ে উঠায় শিশু বান্ধব পরিবেশ বেড়ে উঠার দিকটি অবহেলায় থেকে যায়। যার ফলে তারা সুষ্ঠুভাবে বেড়ে উঠতে পারতে পারছে না। যদিও অধিকাংশ পিতামাতাই শিক্ষিত ও কিন্তু শিশুর মেধা ও মনন বিকাশে যে শিশুবান্ধব পরিবেশের প্রয়োজন আছে তা সম্পর্কে তারা অবগত নন। অন্যদিকে গ্রামের শিশুরা তুলনামূলকভাবে শহরের শিশুদের তুলনায় সম্পূর্ণ অন্যরকম শৈশব পার করে থাকে। তারা গ্রামীণ পরিবেশে পড়াশুনার পাশাপাশি বাড়ির মস্ত বড় আঙিনায় বা বাড়ির আশেপাশের বিশাল মাঠে খেলাধুলা করে, গাছে চড়ে, নদীতে ও পুকুরে মাছ ধরে এবং সাঁতার কেটে দুরন্ত শৈশব পার করে থাকে। যা তাদের সুষ্ঠু মন-মানসিকতা বিকাশে ও সুন্দর শৈশব গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যদিও গ্রামীণ পরিবেশে বেড়ে উঠা শিশুরা শহরের চোখ ধাঁধানো অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা পায় না ঠিকই কিন্তু সেখানে শিশুবান্ধব পরিবেশের অভাব নেই বললেই চলে। তাই তারা শহরের শিশুদের চেয়ে মানসিকভাবে সুস্থ, সুন্দর  ও সমৃদ্ধির অধিকারী হয়ে থাকে।

আজকাল শহরে শিশুবান্ধব পরিবেশের অভাব এতটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে, এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা অত্যাবশ্যকীয়। শিশুবান্ধব পরিবেশে বেড়ে না ওঠার কারণে শিশুরা বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। অল্প বয়সে বিষন্নতার শিকার হচ্ছে যা প্রত্যাশিত নয়। আজকাল যে ঢাকা শহরের অক্সিজেন গ্রহণ করাও মানুষের জন্য মোটেই নিরাপদ নয়, সেখানে শিশুদের জন্য শিশুবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা যেন কল্পনাতীত। ঢাকা শহরের কর্মজীবি পিতামাতারা সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যত গঠনের প্রত্যাশায় বিভিন্ন নামী-দামী স্কুলে প্রেরণ করে থাকেন। শিশুদের প্রয়োজনের বাইরেও সুন্দর-সাবলীল জীবন গঠনে ব্যাপৃত কিন্তু অনুতাপের বিষয় হল তারা ভুলতে বসেছেন যে শিশুদের সুষ্ঠু জীবন গঠনে শিশুবান্ধব পরিবেশও তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে । 

সুষ্ঠু ও সুন্দর শিশুবান্ধব পরিবেশের গুরুত্ব শিশুদের সাবলীল জীবন গঠনে সহায়ক ও অনস্বীকার্য। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শিশু ও শিশু অধিকার রক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন সংস্থা শিশুবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে শিশুবান্ধব পরিবেশের গুরুত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন সেমিনার ও উৎসাহমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। বিশ্বায়নের যুগে সম্পর্কে সচেতন হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। শিশুবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা এখন শুধু সময়ের দাবী নয় বরং শিশুদের অন্যতম অধিকার। কাজেই ঢাকা শহরকে শিশুবান্ধব শহর হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সোচ্চার হতে হবে শিশুদের অধিকার রক্ষায়। ঢাকা শহরকে শিশুবান্ধব শহরের উপযোগী করতে হলে এখানে বসবাসরত সকলকেই সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে কেননা, সাধু বাসিল মেরী মরো বলেছেন, “একা মিলে গড়ে না কেউ, গড়ে অনেকে মিলে।” সকল সচেতন নাগরিক তাদের সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে ঢাকা শহরকে শিশুবান্ধব শহর হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম। শিশুবান্ধব পরিবেশ গড়ায় আজকের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের শিশুদের সুন্দর ও উজ্জ্বল আগামী উপহার দিতে পারে।। 

জাসিন্তা আরেং 
জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় থেকে

Post a Comment

Previous Post Next Post