অস্তিত্ব সংকটে ফিলিস্তিন ও ইসরাইল।। যুদ্ধের দাবানলে উত্তপ্ত বিশ্ব রাজনীতি

জীবন ও সমাজ ডেস্ক:  অস্তিত্ব সংকটে ফিলিস্তিনিদের আর তা টিকিয়ে রাখতে ইসরাইলের হামলা। যার পরিণতি বিশ্ব যুদ্ধ। ইতিমধ্যে বিশ্বের মধ্যে একটি বিভাজনও তৈরি হয়ে গিয়েছে।

শনিবার (৭ অক্টোবর ২০২৩) ইসরাইলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হামলার পর থেকেই উত্তপ্ত বিশ্ব রাজনীতি। পশ্চিমারা ছাড়াও ইসরাইলের পক্ষে দাঁড়িয়েছে বহু দেশ। ঠিক তেমনি ফিলিস্তিনের পাশে আছে ইরান, কাতার ও লেবাননের মতো দেশগুলো।

১৯২০ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে ইউরোপ থেকে দলে দলে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে যেতে শুরু করেন। ইউরোপে ইহুদি নিপীড়ন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভয়ংকর ইহুদি নিধনযজ্ঞের পর সেখান থেকে পালিয়ে তারা নতুন এক মাতৃভূমির স্বপ্ন দেখছিল। আর সেই স্বপ্ন ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড দখলের মধ্যদিয়ে বাস্তবে রূপ নেয়।

প্রাণ বাঁচাতে যখন ফিলিস্তিনিরা ঘরবাড়ি ছাড়ছে, সেই সুযোগেই তাদের বেশিরভাগ অঞ্চল দখল করে নেয় ইসরাইল


১৯৪৭ সালে জাতিসংঘে ভোটাভুটিতে ফিলিস্তিনকে দুই ভাগ করে দুটি আলাদা ইহুদি ও আরব রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়। জেরুজালেমকে করা হয় আন্তর্জাতিক নগরী। ইহুদি নেতারা এই প্রস্তাব মেনে নিলেও, আরব নেতারা তা প্রত্যাখ্যান করায় সে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি।

অন্যদিকে, ব্রিটিশরা সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ হয়ে ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন ছাড়লে ইহুদি নেতারা ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিলে শুরু হয় যুদ্ধ। যেখানে যোগ দেয় প্রতিবেশী আরব দেশগুলোর সৈন্যরাও।

প্রাণ বাঁচাতে যখন ফিলিস্তিনিরা ঘরবাড়ি ছাড়ছে, সেই সুযোগেই তাদের বেশিরভাগ অঞ্চল দখল করে নেয় ইসরাইল। এরপর ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের পূর্ব জেরুজালেম, পশ্চিম তীর, সিরিয়ার গোলান মালভূমি, গাজা ও মিশরের সিনাই অঞ্চল দখল করে নেয়। আর ফিলিস্তিনিরা শরণার্থী হয়ে গাজা ও পশ্চিম তীরে বসবাস শুরু করেন।

এতেই ক্ষান্ত হয়নি ইসরাইল। নিজেদের আগ্রাসন টিকিয়ে রাখতে দীর্ঘ ৭৫ বছর ধরেই নিরিহ ফিলিস্তিনিদের ওপর চালিয়ে যাচ্ছে নির্যাতন। ইহুদি রাষ্ট্র গড়তে প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে নিরিহ ফিলিস্তিনিদের।

মানচিত্র দেখলেই বোঝা যায়, কীভাবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের ঘরবাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়েছেন ফিলিস্তিনিরা। যেখানে ১৯১৭ সালে পুরো ভূখণ্ডই ছিল ফিলিস্তিনিদের, সেখানে ১৯৪৭ সালে এসে তা দাঁড়ায় মাত্র ৪৪ শতাংশে।

১৯৬৭ সালে আরও ভূখণ্ড দখলের পর তা ২২ শতাংশে নেমে আসে। সবশেষ ২০২০ সালের মানচিত্রে ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ড মাত্র ১৫ শতাংশ। দিন দিন আয়তন আরও কমছে। আর আন্তর্জাতিক আইনে এগুলো ‘অবৈধ বসতি’ বলে উল্লেখ করলেও, ইসরাইল বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে।

দীর্ঘদিন ধরে চলমান ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকট নিরসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্তই ছিল দুই পক্ষের জন্য আলাদা দুটি রাষ্ট্র। আর এই দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের তত্ত্বটি এসেছিল ১৯৯৩ সালে অসলো শান্তি আলোচনার মাধ্যমে। দু’পক্ষই তাতে সম্মত ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি এখন অনেকটাই বদলে যাওয়ায় আদৌ তা সম্ভব হবে কিনা বা ফিলিস্তিনিরা এই নিপীড়নের হাত থেকে রেহাই পাবে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কা আরও গভীর হয়েছে।

বহু বছর ধরেই অমীমাংসিত এক সংঘাতে লিপ্ত ইসরাইল ও ফিলিস্তিন। তবে নিরীহ ফিলিস্তিনিরা বরাবরই নির্যাতিত। প্রতিনিয়তই তাদের দখল হয়ে যাওয়া জমিতে গড়ে উঠছে অবৈধ স্থাপনা। মানচিত্র দেখলেই বোঝা যায়, ১৯১৭ সালে যেখানে পুরো ভূখণ্ডই ছিল ফিলিস্তিনিদের; সেখানে ২০২০ সালে তা দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৫ শতাংশে।


সূত্র: নিউ ইউয়র্ক টাইমস


[জীবন ও সমাজে- পাঠাতে পারেন আপনারও বস্তুনিষ্ঠ লেখা প্রবন্ধ, গল্প ও ফিচার। 
লেখা পাঠানোর ঠিকানা : jibonoshomaj@gmail.com ] 

Post a Comment

Previous Post Next Post