মানুয়েল চাম্বুগং :
আজকাল মানুষেরা মনুষ্যত্ব হারিয়ে পাষাণ, হৃদয়হীন ও বিবেকহীনতার পরিচয় দিচ্ছে। ধর্ষণ-খুন যে মারাত্মক পাপ এই বোধটুকু তাদের মধ্যে এখন আর কাজ করে না। কোনো ধর্মীয় নীতিশিক্ষারও ধার ধারে না। লোভের বশবর্তী হয়ে সমাজের কিছু পুরুষ লাগামহীনভাবে আমাদের মা-বোনদের সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। মধুপরে চলন্ত বাসে রূপা নামের মেয়েটির ধর্ষণ ও হত্যার লোমহর্ষক ঘটনাটিই এর চাক্ষুষ প্রমাণ। নারীরা কেনই বা বারংবার এমন বর্বর নির্যাতন, ধর্ষণ ও খুনের শিকার হচ্ছে। তবে, এসবের পিছনে কারণগুলো ভিন্ন রকমের। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হলে দেখা যাবে যে, অশিক্ষিত, বর্বর ড্রাইভার-হেলপার; বিত্ত ও ক্ষমতাশালীদের ছত্রছায়া; নারী নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচারের অভাব; অনেকাংশে মেয়েদের অমার্জিত পোশাক; নারীকে ভোগ্যপণ্য হিসেবে গণমাধ্যমে উপস্থাপন ও ভুক্তভোগী নারীদের নীরব প্রতিবাদ প্রভৃতিই ধর্ষকদের এসব ন্যাক্কারজনক কাজকে উৎসাহিত করছে। সম্প্রতি, ঘটে যাওয়া ধর্ষিত দুজন মেয়ের ঘটনাকি সত্যিই সকলকে মর্মাহত করেছে। এছাড়া, যারা অফিসে বা বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত হ্যনস্তা ও অপমানের শিকার হচ্ছে, তারা কখনও প্রতিবাদ করছে না। অনেক সময় নিজেদের চাকরী বাঁচাতে এসব দুষ্ট কর্মকে বাহবা দিয়ে চলেছে। পরিবারের লোকেরাও এগুলোকে বাড়তি ঝামেলা বলেই এড়িয়ে চলে। মেয়েদের এমন নীরব প্রতিবাদ ও অপরাধীদের বিচারের অভাবে নারীর ওপর নির্যাতন, ধর্ষণ ও খুনের হার বেড়েই চলেছে। জানি না এর শেষ পরিণতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। অন্যদিকে, কোন নারী ধর্ষিত হলে এক শ্রেণির লোকেরা কেবলমাত্র পুরুষদেরই দায়ী করে থাকে। নরপশুদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করে থাকে। তবে, সেটা অন্যায় নয়। কিন্তু নারীদের পক্ষে ন্যায় করতে গিয়ে সকল পুরুষদের একই নজরে দেখাটাও অন্যায়। আমরা অনেক সময় একই দাঁড়িপাল্লায় অন্যদের বিচারের কাতারে ফেলি। যা মোটেই ইতিবাচক নয়।
![]() |
ধর্ষিতাদের প্রতি মানবিক হই |
ইদানীং মেয়েদের সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে যা প্রশংসনীয়। ন্যায্য বিচারের আশায় তারা আইনের আশ্রয় নিচ্ছে। নিজেদের উপর ঘটে যাওয়া নির্যাতনের প্রবল প্রতিবাদ করছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কিছু সংখ্যকবাদে অধিকাংশ নারীই তাদের ন্যায্য বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পুলিশের কাছে গিয়ে তাদের বরং আরও চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। বলা হয় যে, একটি মেয়ে ধর্ষিত হলে তাকে আরো কয়েকবার ধর্ষণের শিকার হতে হয়। কেননা পুলিশ ও ডাক্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের কারণে আরও বেশি অমানবিক হয়ে দাঁড়ায়। কাঁটা গায়ে নুনের ছিঁটে দেয়ার মত হয়। অশ্লীল ও অমানবিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয় ধর্ষিতাদের; যা ধর্ষণের সমতুল্য। এজন্যই হয় তো কবি, লেখক, প্রাবন্ধিক হুমায়ূন আজাদ তাঁর নারী প্রবন্ধে বলেছিলেন, ‘ধর্ষিত হওয়া নারীর জন্য মৃত্যু থেকেও মারাত্মক......।’ তাই আসুন, ধর্ষিতাদের প্রতি মানবিক আচরণ করি এবং স্বাভাবিক জীবন যাপনে সহায়তা করি ॥