অনুভূতি ও প্রত্যাশায় নতুন বছর ২০২৩

অনুভূতি ও প্রত্যাশায় নতুন বছর ২০২৩


রত্না বাড়ৈ


নববর্ষ, ১লা জানুয়ারি পৃথিবীর প্রায় সকল জাতিসত্ত্বার ঐতিহ্যের একটি অনিবার্য অংশ। সমস্ত জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বছরের প্রথম দিনটিকে প্রত্যেকেই সুন্দরভাবে পরিপাটির সঙ্গে একটি নতুন জীবনের সূচনায়  মিলন বন্ধনে আবদ্ধ করে।ঐতিহ্যকে আনন্দ উৎসবে ধরে রাখে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই দিনটিকে অতিবাহিত করে। ধারণ করে রাখে স্মৃতির পাতায় কাটানো অতীত সুখ দুঃখে অবহিত সময়গুলোকে । নববর্ষ, অর্থাৎ ১লা জানুয়ারি সুপ্রাচীনকাল থেকে বাঙালি তথা পুরো বিশ্ব বছরের প্রথম দিনটিকে নববর্ষ, Happy New Year হিসেবে পালন করে আসছে।



আমেরিকায় New Year এ 31,st ঠিক রাত ১২: ১ মিনিটে নিউইৰ্য়াকের সি,টি ম্যানহাটনের "টাইম স্কয়ারে বল ড্রপ" অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একটি আনন্দ ঘন পরিবেশে দিনটি উদযাপন করা হয়।


সরকারিভাবে অবশ্য "টাইম স্কয়ার" এই নামটি ৮ই এপ্রিল ১৯০৪ থেকে চালু হয়ে যায় । প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এই স্থানের উন্নতি আরো দ্রুত করা হয়েছিল। বিভিন্ন নামী থিয়েটার, হোটেল, রেস্তোরা, সঙ্গীত কেন্দ্র সমৃদ্ধ "টাইম স্কয়ার" এখন নিউ ইয়র্কের প্রধান সাংস্কৃতিক, ব্যবসায়িক , পর্যটন পীঠস্থান । এই বিল্ডিং এখন ওয়ান টাইম বিল্ডিং নামেই পরিচিত, যার ছাদে প্রতি বছর বর্ষবরণ রাতে এক বিশালাকার আলোকিত গোলক (বল ড্রপ) বর্ষবরণ করা হয়।  (টাইম স্কয়ার বল ড্রপ ) দেখতে বহু মানুষের সমাগম হয় সেখানে। দুর দুর্দান্ত থেকে অগণিত মানুষের ভিড় এতটুকু পা ফেলার অবস্থা থাকে না। আমেরিকান টিভি চ্যানেলগুলোতে অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারিত হয়। যার পর নাই ঘরে বসে অনেকেরই অনুষ্ঠান উপভোগ করার সুযোগ থাকে। পৃথিবীর সমস্ত চার্চগুলোতে  আরাধনা প্রার্থনা করা হয়। সবার বাড়িতেই মজাদার খাবার রান্না করা হয়। জনগণ সমগ্র দিনটি  বিশেষ উৎসাহ উদ্দীপনায়  উপভোগ করে থাকে।


জীবন যেখানে যেমন। হাসি-কান্নার প্রোপাগান্ডার মধ্যে দিয়ে মানুষের জীবনযাত্রা।  আমার জীবনেও এই তারিখটি বড্ড বিস্ময়করভাবে এসেছিল দু' দিক থেকে, যেমন:- "একটি ছিল উজ্জ্বলতার, অন্যটি ছিল স্তব্ধতার" ! এই দিনটিতে আমার একমাত্র সন্তান কোল জুড়ে ঘর উজ্জ্বল করে এই পৃথিবীতে এসেছিল। আবার এরকম একটি দিনে আমার বড়দি বড় বোন অত্যন্ত প্রিয়, "মায়ের সমতুল্য" আমাদেরকে স্তব্ধ করে দিয়ে ঈশ্বরের ডাকে সারা দিয়ে, চলে গিয়েছেন ওই না ফেরার দেশে! জন্মদিন-মৃত্যুদিন  দুই' যে আমার অতি প্রাণের প্রিয় ব্যক্তির; কি আর করা? সব কিছুই যে করুণাময়ের হাতে। কেননা ওনার ইচ্ছা ব্যতিরেকে গাছের একটি পাতাও যে ঝড়ে পরতে পারেনা।

পৃথিবীর মানুষগুলো তো প্রত্যাশা নিয়েই বেঁচে থাকতে চায়। কারো প্রত্যাশা প্রস্ফুটিত হয়। আবার কারো প্রত্যাশা নিমজ্জিত হৃদয়ের গভীরে! তার পরেও মানুষ খুঁজে পেতে চায় একটুখানি শান্তির নীড়।


দুঃসময়ের পৃথিবী আজ একটি চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে গিয়েছে ! বিশ্ব মুক্ত হোক এই ভয়াবহ করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে। আসুন আমরা এই ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর তাণ্ডব করোনা ভাইরাসের প্রতিকূলতা পেরিয়ে অনুগ্রহের হাত বাড়িয়ে দেই। সেবাদানে একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠি। আর মিলন বন্ধনে হই একতাবদ্ধ।  সম্প্রীতির শিখরে অভাবী এবং দীন-দরিদ্রের পাশে থেকে সাহায্য দানে নিজেদের অনুপ্রাণিত করি। নুতন বছরের আনন্দকে আন্তরিকতার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেই।  সঞ্চারিত হোক নতুন দিগন্ত। জেগে উঠুক আশার আলো। আর উদ্দীপনায়' অনাবিল আনন্দ ও শান্তির নিশান ধ্বজা। দূরীভূত হোক অসত্য, অন্ধকার, হিংসা, ভয়, দাম্ভিক, অহংকার, মিথ্যাচার, দুরাচার। বয়ে আনুক অনাবিল সুখ ও শান্তি। এই প্রত্যাশা করছি


নববর্ষ, Happy New Year শুধুমাত্র সহস্র বছর নয়, মনুষ্য সন্তানেরা আমরণ এই ইতিহাস, ঐতিহ্য, রীতি-নীতি, প্রথা, আচার অনুষ্ঠান ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক সব কিছুই আগলে রাখছে। সম্প্রীতির বন্ধনে এ দিনে পুরনো বছরের ব্যর্থতা, নৈরাশ্য, ক্লেদ-গ্লানি ভুলে গিয়ে নতুন বছরকে মহানন্দে বরণ করে নেয়, সমৃদ্ধি ও সুখময় জীবন প্রাপ্তির প্রত্যাশায়।  নতুন বছর বয়ে আনুক সকলের অন্তর আত্মায় একটি সুস্থ ও নতুন জীবনের সন্ধিক্ষণ। অঙ্গীকার হোক, সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে। 

Post a Comment

Previous Post Next Post